ভূমিকা
ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন একটি বিস্তৃত ও বহুমাত্রিক কর্মপ্রয়াস, যার মূল লক্ষ্য হলো সমাজে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং আল্লাহর দেওয়া দীনকে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনের প্রতিটি স্তরে বিজয়ী করা। এই আন্দোলন শুধুমাত্র ধর্মীয় আবেগ বা নৈতিক আহ্বানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি একটি সচেতন, সংগঠিত ও কৌশলগত পরিবর্তনের ধারা, যা মানুষের চিন্তা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, শিক্ষা ও অর্থনীতির প্রতিটি স্তরে প্রভাব বিস্তার করতে চায়।
বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ইসলামী আন্দোলনের পথ কেবল আদর্শিক বা আকিদাগত চ্যালেঞ্জে সীমাবদ্ধ নেই; বরং এটি একটি বহুমুখী বুদ্ধিবৃত্তিক ও প্রযুক্তিগত সংগ্রামের নাম। একদিকে যেমন ইসলামবিরোধী শক্তি নানা রকম আধুনিক কৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের মতবাদ প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে, তেমনি অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অনেকক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে দক্ষতার ঘাটতি, সুশৃঙ্খল পরিকল্পনার অভাব, ও পেশাগত দুর্বলতা। এই প্রেক্ষাপটে অর্থাৎ ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকদের ব্যক্তিগত দক্ষতা, নেতৃত্বগুণ, টিমওয়ার্ক, মিডিয়া ব্যবহার, আইটি দক্ষতা, প্রশাসনিক পরিকল্পনা ও কৌশলগত চিন্তাশক্তি—অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
পেশাগত দক্ষতা শুধুমাত্র চাকরি বা ক্যারিয়ারের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় নয়, বরং তা ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সফলতা, প্রসার এবং টিকে থাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একজন আদর্শ কর্মী কেবল আল্লাহভীরু হলে চলবে না, তাকে যুগোপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক দক্ষতাও অর্জন করতে হবে। এর মাধ্যমেই সে নিজেকে একজন দক্ষ দাঈ, সংগঠক ও চিন্তাশীল মুসলিম নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।
এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব—
- ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের স্বভাব ও প্রয়োজনীয়তা,
- নাগরিকদের পেশাগত দক্ষতার মৌলিক উপাদানসমূহ,
- কেন এটি ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের জন্য অপরিহার্য,
- এবং কীভাবে আমরা এই দক্ষতাগুলো অর্জন ও চর্চা করতে পারি।
১. ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের স্বভাব ও কর্মপদ্ধতি
ইসলামী আন্দোলন একটি দাওয়াতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রকল্প, যার লক্ষ্য হলো মানুষের জীবনে আল্লাহর বিধানকে বাস্তবায়ন করা এবং তাওহীদভিত্তিক ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন করা। এটি কেবল তাত্ত্বিক মতবাদ নয়, বরং একটি চর্চিত বাস্তবতা—যা রাসূল ﷺ-এর মক্কা ও মাদানী জীবনের মাধ্যমে আমাদের সামনে একটি আদর্শ রূপরেখা হিসেবে হাজির হয়েছে।
১.১ আদর্শিক ভিত্তি ও লক্ষ্য
ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের ভিত্তি কুরআন ও সুন্নাহ। এর মূল লক্ষ্য হলো মানুষের ইবাদতের পরিপূর্ণতা, সমাজের অশান্তি দূর করে ইনসাফভিত্তিক শাসন কায়েম, এবং জুলুম, শিরক ও ফিতনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় সংস্কার বা খানকাভিত্তিক আত্মশুদ্ধির আন্দোলন নয়; বরং এটি হলো সর্বাঙ্গীন সামাজিক পরিবর্তনের এক বিস্তৃত কর্মধারা। ইসলামী আন্দোলনের মাধ্যমে সৃষ্ট একটি রাষ্ট্রের মৌলিক কাজ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এসেছে-
আমি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং সৎ কাজের আদেশ করবে ও অসৎ কার্য হতে নিষেধ করবে। সকল কাজের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে। (হাজ্জ: ৪১)
১.২ ব্যক্তি গঠনের গুরুত্ব
ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সূচনা হয় ব্যক্তিকে বদলানোর মধ্য দিয়ে। একজন মানুষের আকীদা, চরিত্র, আখলাক ও চিন্তাপদ্ধতির ইসলামায়ন ছাড়া আন্দোলন শক্তি অর্জন করতে পারে না। তাই প্রত্যেক কর্মীকে হতে হয় ইখলাসসম্পন্ন, ইলমী যোগ্যতাসম্পন্ন ও আত্মনিয়ন্ত্রণে দক্ষ।
১.৩ সংগঠিত কাঠামো ও নেতৃত্বের প্রয়োজন
ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ব্যক্তিগঠনের বিশেষ গুরুত্ব থাকলেও এটি কখনো শুধু ব্যক্তিকেন্দ্রিক কার্যক্রম নয়। এটি একটি সংগঠিত কাঠামোতে চলমান ধারাবাহিক প্রচেষ্টা। এর মধ্যে আছে নেতৃত্বের আনুগত্য, শূরা ভিত্তিক সিদ্ধান্ত, দায়িত্ব ভাগাভাগি ও নিরবিচারে জবাবদিহি। এই কাঠামোর শক্তি ও সুসংগঠিত রূপ ইসলামী আন্দোলনের টেকসই সাফল্যের পূর্বশর্ত। এই ব্যাপারে হযরত উমর রা. থেকে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে-
জামা’আত ছাড়া ইসলাম নেই, আর নেতৃত্ব ছাড়া জামা’আত হয়না এবং আনুগত্য ছাড়া নেতৃত্ব টিকেনা। ফলে প্রজ্ঞা ও গভীর জ্ঞানের ভিত্তিতে জাতি যে ব্যক্তিকে তাদের নেতা হিসেবে নির্বাচন করবে, সে হবে তার নিজের জন্য ও তার জাতির জন্য জীবন সমতুল্য। আর , প্রজ্ঞা ও গভীর জ্ঞান ব্যতীত অন্য কিছুর ভিত্তিতে জাতি যে ব্যক্তিকে তাদের নেতা হিসেবে নির্বাচন করবে, সে তার নিজের ও জাতির জন্য ধ্বংসের কারণ হবে। (দারেমি: ২৫৭)
১.৪ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও কৌশল
রাসূল ﷺ মক্কা থেকে মদিনা পর্যন্ত তাঁর দাওয়াতি জীবনে যেভাবে ধাপে ধাপে সমাজ রূপান্তরের জন্য কৌশল গ্রহণ করেছেন, সেভাবেই আজকের ইসলামী আন্দোলনেও প্রয়োজন রয়েছে সময়োপযোগী, প্রজ্ঞাপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার। এতে প্রয়োজন হয় চিন্তাশীল নেতৃত্ব ও পরিণত কর্মশক্তির, যারা কেবল আবেগ নয়, বরং তথ্য, বিশ্লেষণ ও বাস্তবতার ভিত্তিতে পথচলা জানে। প্রজ্ঞাপূর্ণ কর্মপরিকল্পনার ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
اُدۡعُ اِلٰی سَبِیۡلِ رَبِّكَ بِالۡحِكۡمَۃِ وَ الۡمَوۡعِظَۃِ الۡحَسَنَۃِ
তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর (সূরা নাহল: ১২৫)
১.৫ সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে নিজেদেরকে উপযোক্ত করা
আজকের বিশ্ব একটি প্রযুক্তিনির্ভর, মিডিয়াকেন্দ্রিক ও তথ্য-অভিভূত বিশ্ব। এখানে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে কেবল বক্তব্য বা লিফলেট যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবস্থাপনা, জনমত তৈরি, কৌশলগত জোট ও আন্তর্জাতিক পরিসরে ইতিবাচক ভাবমূর্তি নির্মাণ। এর জন্য আন্দোলনের প্রকৃতি, ভাষা, উপস্থাপনা ও কৌশলেও পরিবর্তন আনতে হয়, ইসলামী মূলনীতি অক্ষুণ্ণ রেখেই।
এই অধ্যায়ের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এক গভীর, বহুমুখী ও সুসংগঠিত প্রয়াস—যা আবেগ নয়, বরং জ্ঞান, শৃঙ্খলা ও দক্ষতার সমন্বয়ে পরিচালিত হতে হয়। আর এজন্যই নাগরিকদের পেশাগত দক্ষতা একটি অপরিহার্য উপাদান হয়ে দাঁড়ায়, যা আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে বিশদভাবে আলোচনা করব।
২. নাগরিকদের পেশাগত দক্ষতা: ধারণা ও উপাদান
২.১ পেশাগত দক্ষতা বলতে কী বোঝায়?
পেশাগত দক্ষতা অর্থ হলো ব্যক্তি বা সংগঠনের পেশাগত দক্ষতা, নেতৃত্ব, ব্যবস্থাপনা ও যোগাযোগে উন্নয়ন সাধন। এটি কেবল একটি চাকরি বা পেশায় অগ্রসর হওয়ার কৌশল নয়; বরং এটি একটি সামগ্রিক আত্মউন্নয়ন প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ ও দক্ষতা এমনভাবে গড়ে তোলে, যাতে সে নিজেকে সমাজে অধিক কার্যকর, দূরদর্শী ও নেতৃত্বদানে সক্ষম করে তুলতে পারে।
ইসলামী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে, নাগরিকদের পেশাগত দক্ষতা এমন এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা লোকদেরকে কেবল দাওয়াতি বা ধর্মীয় জ্ঞানে নয়, বরং বাস্তব জীবনের জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলায়ও প্রস্তুত করে। এটি আন্দোলনের কাঠামোকে করে সুসংগঠিত, এবং লোকদেরকে করে পরিণত, দৃঢ় ও দূরদর্শী।
২.২ পেশাগত দক্ষতার প্রধান উপাদানসমূহ
ক) নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা
একজন ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার কর্মীর জন্য শুধু অনুসরণ করাই যথেষ্ট নয়; তাকে একসময় নেতৃত্বও দিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন হয়—
- কৌশলগত চিন্তাভাবনা
- সমস্যা সমাধান
- পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন ক্ষমতা
- দলে দায়িত্ব বণ্টন ও সমন্বয়
ইসলাম প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার অবস্থান অনুযায়ী নেতা ও দায়িত্বশীল হওয়ার ব্যাপারে প্রেরণা দেয়। হাদীসে এসেছে-
أَلا كلُّكُمْ راعٍ وكلُّكُمْ مسؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ
তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। (মিশকাত: ৩৬৮৫)
একই সাথে সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রে একজন নেতার কর্মপদ্ধতি কেমন হবে সেব্যাপারেও কুরআন নির্দেশনা দিয়েছে-
فَاعۡفُ عَنۡهُمۡ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ وَ شَاوِرۡهُمۡ فِی الۡاَمۡرِ ۚ فَاِذَا عَزَمۡتَ فَتَوَكَّلۡ عَلَی اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُتَوَكِّلِیۡنَ
সুতরাং তাদের দোষ ক্ষমা করুন এবং আল্লাহর কাছে তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চান এবং কাজ-কর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন, অতঃপর যখন (কোন ব্যাপারে) সংকল্পবদ্ধ হোন, তখন আল্লাহরই প্রতি ভরসা করুন; নিশ্চয় আল্লাহ ভরসাকারীদেরকে পছন্দ করেন। (আল-ইমরান: ১৫৯)
খ) যোগাযোগ ও উপস্থাপনা দক্ষতা
বর্তমান দুনিয়া যোগাযোগনির্ভর। একটি সঠিক বার্তা ভুলভাবে উপস্থাপন হলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজন—
- যুক্তিপূর্ণ কথাবার্তা
- ভাষার ওপর দখল
- লিখিত ও মৌখিক উপস্থাপনা কৌশল
- অনলাইন ও অফলাইন মিডিয়ার ব্যবহার। পবিত্র কুরআনে এসেছে-
وَ جَادِلۡهُمۡ بِالَّتِیۡ هِیَ اَحۡسَنُ
(বিরোধীদের সাথে) সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর (সূরা নাহল: ১২৫)।
গ) আইটি ও প্রযুক্তি জ্ঞান
আজকের পৃথিবীর যে কোন আন্দোলন মাঠের চেয়ে অনেক বেশি প্রযুক্তিনির্ভর। মিডিয়া, ডিজিটাল প্রচার, ভিডিও কনটেন্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন—সবকিছুই প্রযুক্তি-নির্ভর। তাই ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী লোকদের পেশাগত দক্ষতায় অন্তর্ভুক্ত হতে হবে—
- বেসিক ও এডভান্সড কম্পিউটার স্কিল
- গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ভিডিও এডিটিং
- সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবস্থাপনা
- তথ্য নিরাপত্তা ও সাইবার সচেতনতা
ঘ) সময় ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা
ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী একজন নাগরিককে জানতেই হবে—
- সময়কে সর্বোচ্চভাবে ব্যবহার করা
- স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা
- টার্গেট নির্ধারণ ও মূল্যায়ন
- দলগত কাজে সময় ও সম্পদ বণ্টন
দৈনন্দিন জীবনের প্রাপ্ত সময়কে সঠিক পন্থায় কাজে লাগানোর ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য নির্দেশনা রয়েছে। তন্মধ্যে-
وَ الۡعَصۡرِ- اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لَفِیۡ خُسۡرٍ
সময়ের শপথ। মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে (ডুবে) আছে। (সূরা আসর: ১-২) হাদীসে এসেছে-
عَنْ أَبِي بَرْزَةَ الأَسْلَمِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ لاَ تَزُولُ قَدَمَا عَبْدٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ
আবূ বারযা আল-আসলামী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন বান্দার পদদ্বয় (কিয়ামত দিবসে) এতটুকুও সরবে না, তাকে এ কয়টি বিষয় সম্পর্কে যে পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ না করা হবে? কিভাবে তার জীবনকালকে অতিবাহিত করেছে (তিরমিজি: ২৪১৭)
ঙ) বুদ্ধিবৃত্তিক ও চিন্তাশীল প্রস্তুতি
প্রশ্নোত্তর, বিতর্ক, নীতি বিশ্লেষণ, রাজনৈতিক পাঠ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বোঝার দক্ষতা ছাড়া আন্দোলনের চিন্তনশীল কাঠামো তৈরি হয় না। এর জন্য দরকার—
- পড়ার অভ্যাস
- গভীর বিশ্লেষণ ক্ষমতা
- গবেষণাভিত্তিক চিন্তা
- বিরুদ্ধ মতাদর্শ বিশ্লেষণ ও জবাবের প্রস্তুতি। পবিত্র কুরআনে এসেছে-
قُلۡ هٰذِهٖ سَبِیۡلِیۡۤ اَدۡعُوۡۤا اِلَی اللّٰهِ ۟ؔ عَلٰی بَصِیۡرَۃٍ اَنَا وَ مَنِ اتَّبَعَنِیۡ
তুমি বলঃ এটাই আমার (আল্লাহর) পথ; প্রতিটি মানুষকে আমি ও আমার অনুসারিগণ আহবান করি সুস্পষ্ট জ্ঞানসহ। (সূরা ইউসুফ: ১০৮) অন্যত্র আছে-
“يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ”
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাঁদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা অনেক ধাপ উন্নীত করবেন।” (সূরা মুজাদিলা, ৫৮:১১)
এই উপাদানগুলো শুধু ব্যক্তি উন্নয়নের জন্য নয়, বরং ইসলামী আন্দোলনের সংগঠন, দাওয়াত, নেতৃত্ব ও সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। আন্দোলনের প্রতিটি স্তরে নাগরিকগণ যত বেশি দক্ষ হবে, তত বেশি বিশ্বাসযোগ্যতা, কার্যকারিতা ও প্রভাব তৈরি হবে সমাজে।
৩. ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে পেশাগত দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা
ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুধু একটি তাত্ত্বিক বিশ্বাসের প্রকাশ নয়; বরং এটি বাস্তব জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি স্তরে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি সুসংগঠিত প্রয়াস। এর জন্য প্রয়োজন হয় এমন কর্মীবাহিনী, যারা নীতি-আদর্শে অনড়, আবার দক্ষতা ও বাস্তবতায়ও সমান পারদর্শী। বাস্তবতা হলো—আদর্শের প্রতি নিষ্ঠা ও তাকওয়া যেমন জরুরি, তেমনি সময়োপযোগী দক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও বিচক্ষণতাও অনিবার্য। এ জায়গাতেই পেশাগত দক্ষতা ইসলামী আন্দোলনের জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে।
ইসলামী আন্দোলনে নেতৃত্ব একটি গুরুতর দায়িত্ব। শুধু ধর্মীয় জ্ঞান থাকলেই নেতৃত্ব সফল হয় না। বর্তমান জটিল বিশ্বব্যবস্থায় একজন নেতার মধ্যে থাকতে হয়—
- বিশ্লেষণী ক্ষমতা,
- কৌশলী সিদ্ধান্ত গ্রহণ,
- বিভিন্ন মত ও শ্রেণির মানুষের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ,
- আন্তঃসংগঠন সমন্বয় এবং
- আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অনুধাবনের যোগ্যতা।
এসব গুণ অর্জনের জন্য একটি সুশৃঙ্খল ও পরিকল্পিত প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট অপরিহার্য। উপরোক্ত প্রতিটি গুণাবলীই আমাদের প্রিয় নবী রাসূল সা. এর ছিল। তাই, আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
لَقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ
অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। (আহযাব: ২১)
৩.২ সংগঠন ও কাঠামো পরিচালনায় দক্ষতার ভূমিকা
যে কোন আন্দোলনের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে এর প্রশাসনিক দক্ষতার ওপর। দায়িত্ব বণ্টন, রিপোর্টিং, পরিকল্পনা, মনিটরিং, ফাইনান্সিয়াল ট্র্যাকিং ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে পেশাগত দক্ষতা না থাকলে সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ে। একটি উদ্যমী আন্দোলনকর্মী যখন যথাযথ প্রশাসনিক দক্ষতা অর্জন করেন, তখনই তিনি দায়িত্ব পালনে কার্যকর হতে পারেন।
৩.৩ মিডিয়া ও জনমত গঠনে দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন
আধুনিক যুগে “মিডিয়া” একটি যুদ্ধক্ষেত্র। যে শক্তি মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে, সে জনমতও নিয়ন্ত্রণ করে। ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের বার্তা যদি সঠিকভাবে প্রেজেন্ট না হয়, ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়, কিংবা বিপক্ষের প্রচারণার মোকাবেলা করা না যায়—তাহলে সত্যও জনমতের আদালতে হার মানে। এজন্য দক্ষ মিডিয়া ট্রেনিং, কন্টেন্ট নির্মাণ, ডিজিটাল ক্যাম্পেইন কৌশল—এসব শেখা ও প্রয়োগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩.৪ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসলামী ভাবমূর্তি উপস্থাপনের জন্য
বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজ। মুসলিম উম্মাহর চ্যালেঞ্জগুলো এখন আন্তর্জাতিক পরিসরে চলে গেছে। ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী নাগরিকদের উচিত—
- আন্তর্জাতিক ভাষা (যেমন: আরবী, ইংরেজি ও ফ্রেঞ্চ ইত্যাদি) জানা,
- বৈশ্বিক আইন ও কূটনীতি সম্পর্কে ধারণা রাখা,
- আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও ফোরামে ইসলামের পক্ষে কথা বলার যোগ্যতা অর্জন করা।
এগুলো অর্জন ছাড়া ইসলামফোবিয়া ও পশ্চিমা প্রপাগান্ডার মোকাবেলা করা কঠিন। হাদীসে এসেছে-
হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত রা. আল্লাহর রাসূল ইয়াহুদীদের চিঠিপত্র পড়ার জন্য ইয়াহুদীদের ভাষা রপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন-
যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ইয়াহুদীদের লেখা (ভাষা) শিখার আদেশ দিলেন। আমি তদনুযায়ী ইয়াহুদীদের লেখা শিখলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহর শপথ! ইয়াহুদীরা আমার পক্ষ থেকে সঠিক লিখবে বলে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। বর্ণনাকারী বলেন, পনেরো দিন যেতে না যেতেই আমি তাদের লেখা আয়ত্ত করে ফেললাম। তিনি চিঠি পত্র লেখানোর ইচ্ছা করলে আমি লিখে দিতাম এবং তার নিকট চিঠিপত্র এলে আমি তা তাঁকে পড়ে শুনাতাম। (আবু দাউদ: ৩৬৪৫)
৩.৫ মেধা-যুদ্ধে টিকে থাকার উপায়
আজকের দুনিয়া “মেধার দুনিয়া।” পশ্চিমা চিন্তাবিদেরা শত শত গবেষণা, এনালাইসিস, নীতিগত প্রচারণা চালিয়ে ইসলাম ও ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এর জবাব দিতে হলে আমাদের প্রয়োজন—
- গবেষণাভিত্তিক চিন্তা,
- থিঙ্ক ট্যাংক বা চিন্তাবীদ তৈরি;
- নীতিগত কনটেন্ট তৈরি,
- এবং বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন।
এসব কিছু অর্জন করতে হলে প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট বাধ্যতামূলক। পবিত্র কুরআনের প্রথম নাযিলকৃত আয়াত হলো- “পড়”। অতপর কুরআনের অসংখ্য স্থানে চিন্তা ও গবেষণার কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
اَفَلَا یَتَدَبَّرُوۡنَ الۡقُرۡاٰنَ ؕ
তারা কি কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? (সূরা নিসা: ৮২) অন্যত্র আছে-
قُلۡ اِنَّمَاۤ اَعِظُكُمۡ بِوَاحِدَۃٍ ۚ اَنۡ تَقُوۡمُوۡا لِلّٰهِ مَثۡنٰی وَ فُرَادٰی ثُمَّ تَتَفَكَّرُوۡا
বল- আমি তোমাদেরকে একটি বিষয়ে নসীহত করছিঃ তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে দু’ দু’জন বা এক একজন করে দাঁড়াও, অতঃপর চিন্তা কর (সূরা সাবা: ৪৬) অন্যত্র আছে-
তিনিই রাত ও দিনকে তোমাদের উপকারে নিয়োজিত করেছেন। আর সুরুজ ও চাঁদকেও; এবং তারকারাজিও তাঁরই নির্দেশে নিয়ন্ত্রিত; চিন্তাশীল ও আকলওয়ালা লোকেদের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। (সূরা নাহল: ১২)
এই অধ্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, ইসলামী আন্দোলন যদি সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে চায়, তবে শুধু তাকওয়া নয়—পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও কৌশলগত চিন্তাভাবনা তার জন্য অপরিহার্য।
৪. বাস্তব উদাহরণ ও অভিজ্ঞতা
ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে পেশাগত দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা শুধু তাত্ত্বিক আলোচনা নয়, বরং ইতিহাস ও বাস্তবতাও এর জীবন্ত সাক্ষ্য বহন করে। ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে শুরু করে আধুনিককালের বহু আন্দোলনেই দেখা যায়, নেতৃত্ব, সংগঠন, প্রযুক্তি, মিডিয়া ও কূটনীতির ক্ষেত্রে যারা পেশাদারিত্ব ও কৌশল দেখিয়েছেন, তাদের কার্যক্রম অধিক সফল, প্রভাবশালী ও স্থায়ী হয়েছে। অন্যদিকে, যেখানে এ দিকটি অবহেলিত হয়েছে, সেখানেই এসেছে স্থবিরতা, বিভ্রান্তি বা পরাজয়।
৪.১ নবী করিম ﷺ-এর যুগে পেশাগত দক্ষতার বাস্তব উদাহরণ
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর দাওয়াতি জীবন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চরম দূরদর্শিতা ও কৌশলী পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করেছেন। তিনি পৃথিবীর বাস্তবতা, রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞানের গভীরতা অনুধাবন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ:
- হুদায়বিয়ার সন্ধি: আপাতদৃষ্টিতে মুসলমানদের ক্ষতির চুক্তি হলেও তা ছিল কৌশলগত এক মাইলফলক। পরে এই শান্তির সুযোগে বহু মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে।
- মুআখাত (ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা): মদিনায় আগমন করে তিনি মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে পারস্পরিক দায়িত্ববোধ ও অর্থনৈতিক সমতা সৃষ্টি করেন। এটি ছিল একটি সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনের মডেল।
- গোয়েন্দা তৎপরতা, চিঠিপত্র কূটনীতি: তিনি নিজ হাতে চিঠি লিখিয়ে বিশ্বের শাসকদের কাছে পাঠিয়েছেন, সিলমোহর ব্যবহার করেছেন—যা ছিল অত্যন্ত দক্ষতাসম্পন্ন এক রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গি।
৪.২ সাহাবায়ে কেরামের প্রফেশনাল দক্ষতা
- হযরত ওমর রা. খিলাফত পরিচালনায় প্রশাসনিক দক্ষতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। রাজস্ব ব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা, প্রশাসনিক বিভাগ—সবখানে ছিল সুসংগঠিত কাঠামো।
- হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. যুদ্ধক্ষেত্রে কৌশলগত বুদ্ধিমত্তা ও পেশাগত নেতৃত্বের মাধ্যমে বারবার বিজয়ী হয়েছেন।
৪.৩ সমসাময়িক ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নেতাদের অভিজ্ঞতা
- ইমাম হাসান আল বান্না (মিসর): মুসলিম ব্রাদারহুড গড়ে তোলার সময় তিনি যুবসমাজের মাঝে সংগঠন, শিক্ষা, মিডিয়া এবং সমাজসেবা—সবদিকেই দক্ষতা অর্জনের উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
- আবুল আ’লা মওদূদী (ভারত-পাকিস্তান): ইসলামি চিন্তাধারার পেশাগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি নির্মাণ করেন। তাঁর আন্দোলন ছিল চিন্তা, গবেষণা ও সাহিত্যনির্ভর।
- রাশিদ ঘানুশি (তিউনিশিয়া): রাজনীতি, কূটনীতি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে ইসলামি চিন্তাধারাকে চালু রাখার একটি ব্যতিক্রমী মডেল উপস্থাপন করেছেন।
৪.৪ ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ব্যর্থতার পেছনে পেশাগত দক্ষতার ঘাটতির দৃষ্টান্ত
- অনেক ইসলামী আন্দোলন সমর্থন থাকা সত্ত্বেও সংগঠনের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা, মিডিয়া ব্যবস্থার দুর্বলতা ও সময়োপযোগী পরিকল্পনার অভাবে জনমত হারিয়েছে কিংবা দমন হয়েছে।
- প্রযুক্তি ও আইটি ব্যবস্থায় অদক্ষতা থাকায় অনেক সংগঠন বৈশ্বিক ষড়যন্ত্রের মুখে আত্মরক্ষা করতে পারেনি।
- চিন্তাশীল নেতৃত্বের অভাবে আন্দোলন পরিণত হয়েছে আবেগনির্ভর, কৌশলহীন প্রতিবাদে—যা স্থায়ী পরিবর্তনের বদলে ক্ষণস্থায়ী আলোড়নই সৃষ্টি করেছে।
এই বাস্তব উদাহরণগুলো দেখায়—পেশাগত দক্ষতা ছাড়া ইসলামী আন্দোলন কেবল আবেগ, নিষ্ঠা ও ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর করলে তা টেকসই হয় না। বরং সময়ের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা অর্জন, কৌশল প্রয়োগ ও চিন্তাশীল নেতৃত্ব ছাড়া কোনো আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে না।
৫. কীভাবে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নাগরিকদের মাঝে পেশাগত দক্ষতা নিশ্চিত করা যায়
ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে পেশাগত দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই উন্নয়ন কীভাবে সংগঠিত করা যাবে? এ ক্ষেত্রে শুধু তত্ত্বগত আলোচনায় নয়, বাস্তবায়নযোগ্য কর্মপন্থা নির্ধারণ করা জরুরি। নিম্নে কিছু সুসংগঠিত উদ্যোগ ও প্রস্তাবনা তুলে ধরা হলো, যার মাধ্যমে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নাগরিকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রফেশনাল পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।
৫.১ কাঠামোবদ্ধ প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম চালু
- বিভিন্ন পর্যায়ে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট গঠন করা যেতে পারে, যেখানে নির্দিষ্ট সিলেবাস অনুযায়ী কর্মীদের স্কিল ট্রেইনিং দেওয়া হবে।
- প্রশিক্ষণগুলো হতে পারে নেতৃত্ব, ব্যবস্থাপনা, মিডিয়া, আইটি, গবেষণা ও যোগাযোগ-ভিত্তিক।
- প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যেতে পারে ওয়ার্কশপ, সিমুলেশন, বাস্তব প্রয়োগ, ফিল্ড এক্সপোজার।
নবুয়্যতের অন্যতম দায়িত্ব হলো প্রশিক্ষণ দেওয়া। পবিত্র কুরআনে এসেছে-
যেভাবে আমি তোমাদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি তোমাদের মধ্য থেকে, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়। আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেয় এমন কিছু যা তোমরা জানতে না। (বাকারা: ১৫১)
৫.২ পাঠ্যসূচি ও পাঠাগার আধুনিকায়ন
- নাগরিকদের চিন্তা ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা গঠনে পাঠ্যতালিকায় যুক্ত করা উচিত—
- ইসলামী রাজনীতি ও ইতিহাস,
- আধুনিক সমাজবিজ্ঞান ও মিডিয়া স্টাডিজ,
- কৌশলগত ব্যবস্থাপনা ও যোগাযোগ বিষয়ক বই,
- ইসলাম-বিদ্বেষী তত্ত্বের সমালোচনামূলক পাঠ।
- গ্রামে গ্রামে, পাড়ায় পাড়ায় একটি আপডেটেড লাইব্রেরি বা ডিজিটাল আর্কাইভ থাকা প্রয়োজন।
সমাজের বর্তমান ও অতীতকে নিবিড়ভাবে পাঠ করার ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে মৌলিক নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
বল, ‘তোমরা যমীনে ভ্রমণ কর, অতঃপর দেখ’ কীভাবে তিনি সৃষ্টির সূচনা করেছিলেন, তারপর আল্লাহই আরেকবার সৃষ্টি করবেন। (সূরা আনকাবুত: ২০) অন্যত্র আছে-
قُلۡ سِیۡرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ ثُمَّ انۡظُرُوۡا كَیۡفَ كَانَ عَاقِبَۃُ الۡمُكَذِّبِیۡنَ
বল, দুনিয়ায় পরিভ্রমণ কর, অতঃপর মনযোগসহ লক্ষ কর, সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের পরিণাম কী দাঁড়িয়েছিল। (সূরা আন’আম: ১১)
৫.৩ সেক্টরভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন
- দাওয়াতি কাজের পাশাপাশি ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নাগরিকদের মধ্যে যারা বিভিন্ন সেক্টরে (যেমন: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মিডিয়া, অর্থনীতি, আইন) কর্মরত আছে, সেসব লোকদেরকে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত।
- যেমন:
- যারা শিক্ষক, তাদের জন্য ইসলামী আদর্শে পেশাগত শিক্ষকতা প্রশিক্ষণ।
- মিডিয়া কর্মীদের জন্য কনটেন্ট ক্রিয়েশন, ভিডিও প্রডাকশন, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট।
- অর্থনৈতিক দায়িত্বে যারা, তাদের জন্য ইসলামিক ফাইন্যান্স, বাজেটিং ও অডিটিং স্কিল।
أَجِبْ عَنِّي اللَّهُمَّ أَيِّدْهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ
রাসূল সা. বলেন, হে হাসসান, তুমি আমার পক্ষ হতে উত্তর দাও। হে আল্লাহ! তাকে পবিত্র আত্মা (জিবরীল) দ্বারা সহযোগিতা করো। (মুসলিম: ২৪৮৫)
৫.৪ থিঙ্ক ট্যাংক (চিন্তাবীদ) ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা
- চিন্তাশীল নেতৃত্ব ও নীতিগত গাইডলাইন তৈরির জন্য ইসলামী থিঙ্ক ট্যাংক তথা চিন্তাবীদ অপরিহার্য।
- বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও তরুণ বুদ্ধিজীবীদেরকে গবেষণা, পলিসি এনালাইসিস ও চিন্তনশীল লেখালেখির জন্য উৎসাহ ও প্ল্যাটফর্ম প্রদান করতে হবে।
- এদের মাধ্যমে আন্দোলনের বুদ্ধিবৃত্তিক দিক পরিচালিত হবে, এবং চিন্তার ক্ষেত্রে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
রাসূল সা. আব্বাস রা. এর ব্যাপারে দুআ করেছিলেন,
اللَّهُمَّ فَقًَّهْهُ فِي الدِّيْنِ ، وَعَلِّمْهُ التأويلَ
হে আল্লাহ! আপনি তাকে দ্বীনের অধিক বুঝ দান করুন এবং বিশ্লেষণ দক্ষতা প্রদান করুন। (আহমাদ: ২৮৭৯) পরবর্তীতে এই ইবনে আব্বাস রা.ই ইসলামী সাম্রাজ্যের থিংক ট্যাংক হিসেবে আমৃত্যু জাতির খেদমত করেন। তৎকালীন প্রবীণ সাহাবা ও রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকগণ দ্বীনী সমস্ত জটিল কেইসের সমাধান তরুণ ইবনে আব্বাস রা. থেকে গ্রহণ করতেন।
৫.৫ আইটি ও ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধি
- প্রতি মহল্লায় কমপক্ষে কয়েকজন আইটি পারদর্শী সদস্য থাকতে হবে।
- ডিজিটাল নিরাপত্তা, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবস্থাপনা, অনলাইন কমিউনিকেশন টুলস ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।
- নিজস্ব অ্যাপ, ওয়েবসাইট, ডিজিটাল লাইব্রেরি ইত্যাদি তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণে স্বনির্ভরতা গড়ে তুলতে হবে।
৫.৬ ক্যারিয়ার উন্নয়নে সহায়তা ও উৎসাহ
- কর্মীদের পেশাগত অগ্রগতিকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
- ইসলামপন্থী যুবকদেরকে উৎসাহ দিতে হবে উচ্চশিক্ষা, স্কলারশিপ, সরকারি-বেসরকারি পেশায় প্রবেশে।
- আন্দোলনের অভ্যন্তরে ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং ও স্কিল গাইডেন্স ডেস্ক থাকতে পারে।
৫.৭ মূল্যায়ন, মনিটরিং ও জবাবদিহি
- শুধু প্রশিক্ষণ দিলেই হবে না; তার ফলাফলের মানদণ্ডও নির্ধারণ করতে হবে।
- পারফরম্যান্স ইভ্যালুয়েশন, দায়িত্ব অডিট এবং স্কিল আপগ্রেড প্ল্যান নিয়মিতভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
- নেতৃত্ব ও দায়িত্বপ্রাপ্তরা যাতে পেশাগতভাবে উদ্যমী থাকে, সে জন্য জবাবদিহি কাঠামো সক্রিয় রাখতে হবে। হাদীসে এসেছে-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «أَلا كلُّكُمْ راعٍ وكلُّكُمْ مسؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ فَالْإِمَامُ الَّذِي عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مسؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مسؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى بَيْتِ زَوْجِهَا وولدِهِ وَهِي مسؤولةٌ عَنْهُمْ وَعَبْدُ الرَّجُلِ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهُوَ مسؤولٌ عَنهُ أَلا فكلُّكُمْ راعٍ وكلكُمْ مسؤولٌ عَن رعيتِه
’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্বশীল, আর (পরকালে) নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে তোমাদের প্রত্যেককেই জবাবদিহি করতে হবে। সুতরাং জনগণের শাসকও একজন দায়িত্বশীল লোক, তার দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। আর প্রত্যেক পুরুষ তার পরিবারের একজন দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। আর স্ত্রী তার স্বামীর ঘর-সংসার ও সন্তান-সন্ততির ওপর দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। এমনকি কোনো গোলাম বা চাকর-চাকরাণীও তার মুনীবের ধন-সম্পদের উপর একজন দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। অতএব সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্বশীল, আর তোমাদের প্রত্যেককেই স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। (বুখারি: ৭১৩৮)
এইসব বাস্তবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের পেশাগত দক্ষতা কেবল একটি স্লোগান হয়ে থাকবে না; বরং তা পরিণত হবে কার্যকর ও টেকসই একটি বাস্তবতায়, যা আন্দোলনের সফলতা ও ভবিষ্যৎ রূপরেখাকে নিশ্চিত করবে ইন শা আল্লাহ।
উপসংহার
ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন কোনো সাময়িক স্লোগান নয়—এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, যার প্রয়োজন আদর্শিক দৃঢ়তা ও যুগোপযোগী দক্ষতার সমন্বয়। এই আন্দোলনের সফলতা নির্ভর করে একদিকে যেমন আল্লাহর প্রতি ঈমান, তাকওয়া ও তাওয়াক্কুলের ওপর; তেমনি অন্যদিকে প্রয়োজন সময়-সচেতন পরিকল্পনা, নেতৃত্ব গঠন, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার।
নাগরিকদের পেশাগত দক্ষতা এই যুগোপযোগী প্রস্তুতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ইতিহাসের প্রতিটি সফল ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেই আমরা দেখি—নেতৃত্ব ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে চিন্তাশীলতা, কৌশলগত মেধা ও পেশাদারিত্ব বিদ্যমান ছিল। একইভাবে, যেসব আন্দোলন আবেগনির্ভর ছিল কিন্তু প্রফেশনাল প্রস্তুতিতে দুর্বল ছিল, সেগুলোর মধ্যে টিকে থাকার সক্ষমতা দেখা যায়নি।
আজকের ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের আগ্রহী জনগোষ্ঠীর জন্য এই আলোচনার মূল বার্তা হলো—শুধু একজন দ্বীনদার মুসলিম নয়, বরং একজন দক্ষ, সংগঠিত ও চিন্তাশীল নেতৃত্বের অধিকারী হতে হবে। ” তাকওয়া হবে চালিকাশক্তি, আর পেশাগত দক্ষতা হবে বাস্তবায়নের হাতিয়ার “
সুতরাং, ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের প্রতিটি শাখা ও স্তরে পেশাগত দক্ষতাকে একটি কৌশলগত নীতিতে পরিণত করতে হবে। প্রশিক্ষণ, গবেষণা, প্রযুক্তি, মিডিয়া, নেতৃত্ব ও সংগঠনে দক্ষতার বিকাশ ছাড়া এই যুগে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা কঠিন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
اِنَّ اللّٰهَ لَا یُغَیِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتّٰی یُغَیِّرُوۡا مَا بِاَنۡفُسِهِمۡ
নিশ্চয় আল্লাহ কোন কওমের অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। (রা’দা: ১১)
উপরোক্ত বয়ানের আরবী অনুবাদ (সংক্ষিপ্ত ও মূলবক্তব্য)
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ ، أَمَّا بُعْدُ . . . . . . . . . . . . . . . أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامُ – مَوْضُوعُنَا اليَوْمِ : أَهَمِّيَّةُ المَهَارَاتِ المِهْنِيَّةِ لِلْمُوَاطِنِينَ فِي بِنَاءِ مُجْتَمَعٍ إِسْلَامِيٍّ
أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامُ الآنَ أُلْقِي أَمَامَكُمْ عَنْ طَبِيعَةِ وَمَنْهََاجِ حَرَكَةِ بِنَاءِ مُجْتَمَعٍ إِسْلَامِيٍّ
أَوَّلًا: اَلْأُسُسُ الْفِكْرِيَّةُ وَأَهْدَافُ الدَّوْلَةِ الْإِسْلَامِيَّةِ: كَمَا قَالَ اللهُ تَعَالَى فِي القُرآنِ: اَلَّذِیۡنَ اِنۡ مَّكَّنّٰهُمۡ فِی الۡاَرۡضِ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَوُا الزَّكٰوۃَ وَ اَمَرُوۡا بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ نَهَوۡا عَنِ الۡمُنۡكَرِ ؕ وَ لِلّٰهِ عَاقِبَۃُ الۡاُمُوۡرِ.
ثَانِيًا: تَتَطَلَّبُ حَرَكَةُ بِنَاءِ دَوْلَةٍ إِسْلَامِيَّةٍ هَيْكَلاً وَقِيَادَةً: كَمَا جَاءَ فِي الحَدِيْثِ: يَا مَعْشَرَ الْعُرَيْبِ، الْأَرْضَ الْأَرْضَ، إِنَّهُ لَا إِسْلَامَ إِلَّا بِجَمَاعَةٍ، وَلَا جَمَاعَةَ إِلَّا بِإِمَارَةٍ، وَلَا إِمَارَةَ إِلَّا بِطَاعَةٍ، فَمَنْ سَوَّدَهُ قَوْمُهُ عَلَى الْفِقْهِ، كَانَ حَيَاةً لَهُ وَلَهُمْ، وَمَنْ سَوَّدَهُ قَوْمُهُ عَلَى غَيْرِ فِقْهٍ، كَانَ هَلَاكًا لَهُ وَلَهُمْ.
ثَالِثًا: تَتَطَلَّبَ حَرَكَةُ بِنَاءِ دَوْلَةٍ إِسْلَامِيَّةٍ تَخْطِيطًا وَاِسْتِرَاتِيجِيَّةً طَوِيلَةً .كَمَا جَاءَ فِي القُرآنِ: اُدۡعُ اِلٰی سَبِیۡلِ رَبِّكَ بِالۡحِكۡمَۃِ وَ الۡمَوۡعِظَۃِ الۡحَسَنَۃِ.
أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامُ الآنَ أُلْقِي أَمَامَكُمْ عَنْ ضَرُورَةِ الْمَهَارَاتِ الْمِهْنِيَّةِ فِي حَرَكَةِ بِنَاءِ مُجْتَمَعٍ إِسْلَامِيٍّ:
أَوَّلًا: لِتَكْوِينِ قِيَادَةٍ فَاعِلَةٍ: فِي هَذِه المَجَالِ لَنَا قَائِدٌ مِثَالِيٌّ هُوَ مُحَمَّدٌ (صلى)، كَمَا جَاءَ فِي القُرآنِ: لَقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ.
ثَانِيًا: لِتَقْدِيمَ صُورَةِ الْإِسْلَامِ عَلَى السَّاحَةِ الدَّوْلِيَّةِ: كَمَا جَاءَ فِي الحَدِيْثِ: قَالَ زَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ: أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَعَلَّمْتُ لَهُ كِتَابَ يَهُودَ، وَقَالَ: إِنِّي وَاللَّهِ مَا آمَنُ يَهُودَ عَلَى كِتَابِي فَتَعَلَّمْتُهُ، فَلَمْ يَمُرَّ بِي إِلَّا نِصْفُ شَهْرٍ حَتَّى حَذَقْتُهُ، فَكُنْتُ أَكْتُبُ لَهُ إِذَا كَتَبَ وَأَقْرَأُ لَهُ، إِذَا كُتِبَ .
ثَالِثًا: لِلصُّمُودِ فِي حَرْبِ الْعُقُولِ: كَمَا قَالَ اللهُ فِي القُرآنِ: وَ سَخَّرَ لَكُمُ الَّیۡلَ وَ النَّهَارَ ۙ وَ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ ؕ وَ النُّجُوۡمُ مُسَخَّرٰتٌۢ بِاَمۡرِهٖ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِكَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّعۡقِلُوۡنَ .
أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامُ الآنَ أُلْقِي أَمَامَكُمْ عَنْ كَيْفِيَّةِ ضَمَانِ الْمَهَارَاتِ الْمِهْنِيَّةِ لَدَى أَفْرَادِ حَرَكَةِ بِنَاءِ مُجْتَمَعٍ إِسْلَامِيٍّ:
أَوَّلًا: إِدْخَالُ بَرَامِجَ تَدْرِيبِيَّةٍ مُنَظَّمَةٍ: كَمَا قَالَ اللهُ تَعَالَى فِي القُرآنِ: كَمَاۤ اَرۡسَلۡنَا فِیۡكُمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡكُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡكُمۡ اٰیٰتِنَا وَ یُزَكِّیۡكُمۡ وَ یُعَلِّمُكُمُ الۡكِتٰبَ وَ الۡحِكۡمَۃَ وَ یُعَلِّمُكُمۡ مَّا لَمۡ تَكُوۡنُوۡا تَعۡلَمُوۡنَ.
ثَانِيًَا: تَحْدِيثُ الْمَنَاهِجِ وَالْمَكْتَبَاتِ: كَمَا قَالَ اللهُ تَعَالَى فِي القُرآنِ: قُلۡ سِیۡرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ فَانۡظُرُوۡا كَیۡفَ بَدَاَ الۡخَلۡقَ ثُمَّ اللّٰهُ یُنۡشِیٴُ النَّشۡاَۃَ الۡاٰخِرَۃَ.
ثَالِثًا: تَطْوِيرُ الْمَهَارَاتِ الْقِطَاعِيَّةِ: مُنْذُ عَهْدِ النَّبِي مُحَمَّدٍ (صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ) ، كَلَّفَ الكَفَاءَاتِ فِي مُخْتَلِفِ الْقِطَاعَاتِ بِأَعْمَالِ خَاصَّةٍ تَتَنَاسَبُ مَعَ مَهَارَاتِهِمْ. عَلَى سَبِيلِ الْمِثَالِ: أَمَرَ حَسَّانَ بْنَ ثَابِتٍ (رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ) بِالِاحْتِجَاجِ عَلَى الْكُفَّارِ بِالشِّعْرِ. وَقَدْ وَرَدَ فِي الْحَدِيثِ: أَجِبْ عَنِّي اللَّهُمَّ أَيِّدْهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ.
بَارَكَ اللَّهُ لِي وَلَكُمْ فِي الْقُرْآنِ الْعَظِيمِ، وَنَفَعَنِي وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيهِ مِنَ الْايَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيمِ. أَقُولُ قَوْلِي هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيمَ الْجَلِيل، لِيْ وَلَكُمْ وَلِسَائِرِ الْمُسْلِمِينَ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ فَاسْتَغْفِرُوه أَنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
সংকলন, সম্পাদনা, পরিমার্জন ও আরবী তরজমা: ইমরান মাহমুদ (পিএইচডি গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাবি) পুনর্মূল্যায়ন: মুফতি ইসমাঈল হোসাইন (খতিব ও দাঈ)