সাপ্তাহিক জুমু’আর বয়ান। বিষয়: আত্মসমালোচনার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও পদ্ধতি

ভূমিকা: মানুষ হলো সৃষ্টির সেরা জীব। সৃষ্টির সেরা হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো- মানুষ নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী মন্দ কাজ করতে পারে আবার নিজেকে মন্দ কাজের বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারে এবং নিজেকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রেখে সঠিক পথে চলতে পারে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের আত্মা বা নফস কিংবা মানব সত্ত্বা তিন ধরণের।  

১. নাফসে আম্মারাহ (সর্বদা মন্দ কাজে ধাবিত করে);

২. নফসে লাউওয়ামাহ (মন্দ কাজ করার পর নিজেকে তিরস্কার করে এবং মন্দ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করে);

৩.নাফসে মুতমাইন্নাহ (প্রায় সর্বদা নিজেকে সঠিক পথে পরিচালিত করে);

আল্লাহ বলেন,

إِنَّ النَّفْسَ لأَمَّارَةٌ بِالسُّوْءِ إِلاَّ مَا رَحِمَ رَبِّيْ

‘নিশ্চয়ই মানুষের মন বা নাফস মন্দ কর্মপ্রবণ। কিন্তু সে মন বা নাফস নয়, আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন’ (ইউসুফ: ৫৩)।  অধিক হারে মন্দকাজ বান্দার অন্তরকে কঠিন করে তোলে ও ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যখন বান্দা কোন পাপ করে তখন তার অন্তরে কালো দাগ পড়ে যায়। যখন সে তওবা করে তখন সেটা তুলে নেওয়া হয়। আর ইস্তেগফারের মাধ্যমে অন্তরকে পরিষ্কার করা হয়। আর যদি পাপ বাড়তেই থাকে তাহ’লে দাগও বাড়তে থাকে। আর এটাই হ’ল মরিচা (তিরমিযী: ৩৩৩৪)।  যেমন আল্লাহ বলেন, ‘বরং তাদের কৃতকর্মের ফলেই মনের উপর মরিচা জমে গেছে’ (মুতাফফিফীন: ১৪)।  দুনিয়াতে প্রতিটি মানবসত্তাই মন্দ কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। তাই তা থেকে বেঁচে থাকার জন্য নিজের সমালোচনা তথা আত্মসমালোচনা একান্ত প্রয়োজন। প্রতিদিন মানুষ নিজেই নিজের পাপের হিসাব নেওয়ার মাধ্যমে পুনরায় ঐ পাপে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে। এছাড়া ব্যক্তির মাঝে যে পাপবোধ সৃষ্টি হয় আত্মসমালোচনা তাকে ক্ষমা লাভের উপযুক্ত করে তোলে। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পেশ করা হ’ল।

আত্মসমালোচনার পরিচয় :

আভিধানিক অর্থে আত্মসমালোচনা হ’ল নিজের সম্পর্কে সমালোচনা করা। একে আরবীতে বলা হয়, مُحَاسَبَةُ النفس অর্থাৎ নিজ আত্মার হিসাব নিকাশ করা। ইংরেজীতে একে বলা হয়, self-criticism বা self-accountability অর্থাৎ আত্মসমালোচনা।

পারিভাষিক অর্থে আত্মসমালোচনা বলতে বুঝায়, যে কোন কাজ করার পূর্বে ও পরে নিজেকে শরীয়তের মানদণ্ডের ভিত্তিতে প্রশ্ন করা, হিসাব-নিকাশ করা, যাচাই বাছাই করা এবং চূড়ান্তভাবে নিজেকে ভালকাজের ব্যাপারে উৎসাহিত করা এবং মন্দ কাজের ব্যাপারে তিরস্কার করা।

আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম (রহ.) বলেন, আত্মসমালোচনার অর্থ হ’ল প্রতিটি কাজে সর্বপ্রথম আল্লাহর হক্ব সমূহের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া; অতঃপর সে হক্বগুলো যথাযথভাবে আদায় করা হচ্ছে কি-না সেদিকে লক্ষ্য রাখা (আল-ফাওয়ায়েদ)

আত্মসমালোচনার গুরুত্ব :

‘মুহাসাবাতুন নাফস’ বা আত্মসমালোচনাকে প্রত্যেক মুমিনের জন্য অপরিহার্য ঘোষণা করে আল্লাহ বলেন,

 يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ بِمَا تَعْمَلُوْنَ، وَلاَ تَكُونُوْا كَالَّذِيْنَ نَسُوا اللهَ فَأَنْسَاهُمْ أَنْفُسَهُمْ أُوْلَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ

অর্থাৎ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উচিত আগামী কালের জন্য (অর্থাৎ আখিরাতের জন্য) সে কি প্রেরণ করেছে, তা চিন্তা করা। আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা করে দিয়েছেন। নিশ্চয়ই তারা ফাসিক’ (হাশর: ১৮)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আত্মসমালোচনাকারীদের প্রসংশা করে বলেন,

إِنَّ الَّذِيْنَ اتَّقَواْ إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُواْ فَإِذَا هُمْ مُّبْصِرُوْنَ

‘যাদের মনে আল্লাহর ভয় রয়েছে, তাদের উপর শয়তানের আগমন ঘটার সাথে সাথেই তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনা শক্তি জাগ্রত হয়ে উঠে’ তথা তারা নিজের কাজের প্রতি দৃষ্টি দেয় (আ‘রাফ: ২০১)  

আত্মসমালোচনার গুরুত্ব সম্পর্কে ওমর (রাঃ)-এর একটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন,

حَاسِبُوْا أَنْفُسَكُمْ قَبْلَ أَنْ تُحَاسَبُوْا، وَزِنُوْا أَنْفُسَكُمْ قَبْلَ أَنْ تُوْزِنُوْا. فَإِنَّهُ أَهْوَنُ عَلَيْكُمْ فِيْ الْحِسَابِ غَدًا، أَنْ تُحَاسَبُوْا أَنْفُسَكُمُ الْيَوْمَ، وَتَزَيَّنُوْا لِلْعَرْضِ الأَكْبَرِ يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُوْنَ لاَ تَخْفَى مِنْكُمْ خَافِيَةٌ

অর্থাৎ ‘তোমরা নিজেদের আমলনামার হিসাব নিজেরাই গ্রহণ কর, চূড়ান্ত হিসাব দিবসে তোমাদের কাছ থেকে হিসাব গৃহীত হবার পূর্বেই। আর তোমরা তোমাদের আমলনামা মেপে নাও চূড়ান্ত দিনে মাপ করার পূর্বেই। কেননা আজকের দিনে নিজের হিসাব নিজেই গ্রহণ করতে পারলে আগামীদিনের চূড়ান্ত মুহূর্তে তা তোমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে। তাই সেই মহাউপস্থানের দিনের জন্য তোমরা নিজেদেরকে সুসজ্জিত করে নাও, যেদিন তোমরা (তোমাদের আমলসহ) উপস্থিত হবে এবং তোমাদের কিছুই সেদিন গোপন থাকবে না’ (তিরমিযী: ২৪৫৯)

অনুরূপভাবে হাসান বছরী (রহ.) বলেন,

المُؤمِنُ قَوَّامٌ عَلَى نَفْسِهِ يُحَاسِبُ نَفْسَهُ للهِ، وَإِنَّمَا خَفَّ الحِسَابُ يَوْمَ القِيَامَةِ عَلَى قَوْمٍ حَاسَبُوْا أَنْفُسَهُمْ فِي الدُّنْيَا، وَإِنَّمَا شَقَّ الْحِسَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى قَوْمٍ أَخَذُوا هَذَا الْأَمْرَ مِنْ غَيْرِ مُحَاسَبَةٍ .

অর্থাৎ মুমিন ব্যক্তিকে স্বীয় আত্মার পরিচালক হিসাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই আত্মসমালোচনা করতে হবে। যারা দুনিয়াতে আত্মসমালোচনা করবে, ক্বিয়ামতের দিন অবশ্যই তাদের হিসাব হালকা হবে। আর যারা এ থেকে বিরত থাকবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের হিসাব কঠিন হবে (ইগাছাতুল লাহফান, ১:৭৯)।

ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন,

أَعْقَلُ النَّاسِ مَنْ تَرَكَ الدُّنْيَا قَبْلَ أَنْ تُتْرَكَهُ، وَأَنَارَ قَبْرَهُ قَبْلَ أَنْ يُّسْكِنَهُ، وَأَرْضَى رَبَّهُ قَبْلَ أَنْ يَّلْقَاهُ وَصَلَّى الْجَمَاعَةَ قَبْلَ أَنْ تُصَلَّي عَلَيْهِ الْجَمَاعَةُ، وَحَاسَبَ نَفْسَهُ قَبْلَ أَنْ تُحَاسَبَهُ

অর্থাৎ সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি সে-ই যে দুনিয়াকে পরিত্যাগ করে দুনিয়া তাকে পরিত্যাগ করার পূর্বেই। কবরকে আলোকিত করে কবরে বসবাস করার পূর্বেই। স্বীয় প্রভুকে সন্তুষ্ট করে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ লাভের পূর্বেই, জামা‘আতে ছালাত আদায় করে তার উপর জামা‘আতে ছালাত (অর্থাৎ জানাযার ছালাত) পঠিত হবার পূর্বেই। নিজের হিসাব নিজেই গ্রহণ করে হিসাব দিবসে তার হিসাব গ্রহণ করার পূর্বেই।

মালেক বিন দীনার (রহঃ) বলেছেন,

رَحِمَ اللَّهُ عَبْدًا قَالَ لِنَفْسِهِ: اَلَسْتِ صَاحِبَةٌ كَذَا؟ اَلَسْتِ صَاحِبَةٌ كَذَا ؟ ثُمَّ ذَمَّهَا، ثُمّ خَطَمَهَا، ثُمّ أَلْزَمَهَا  في كِتَابِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ فَكَانَ لَهَا قَائِدًا .

অর্থাৎ আল্লাহর রহম ঐ বান্দার প্রতি যে তার নফসকে (কোন মন্দ কাজের পর) বলে, তুমি কি এর সাথী নও? তুমি কি এর সঙ্গী নও? অতঃপর তাকে নিন্দা করে, অতঃপর তার লাগাম টেনে ধরে, অতঃপর আল্লাহর কিতাবের উপরে তাকে আটকে রাখে তখন সে হয় তার পরিচালক(ইগাছাতুল লাহফান, ১:৭৯)।

মাইমুন বিন মিহরান বলেন,

لَا يَكُونُ الْعَبْدُ تَقِيًّا حَتَّى يَكُونَ لِنَفْسِهِ أَشَدُّ مُحَاسَبَةً

অর্থাৎ কোন বান্দা প্রকৃত মুত্তাক্বী হ’তে পারে না, যতক্ষণ না অন্তরের হিসাব করে

আত্মসমালোচনার উপকারিতা:

১. নিজের দোষ-ত্রুটি নিজের সামনে প্রকাশ করার মাধ্যমে মানুষ স্বীয় ভুল-ত্রুটি জানতে পারে। ফলে তার হৃদয় ভাল কাজের দিকে আকৃষ্ট হয় এবং মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকতে পারে।

২. আত্মসমালোচনা দ্বীনের উপর দৃঢ়তা অর্জনের সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম, যা মানুষকে আল্লাহর দরবারে মুহসিন ও মুখলিছ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে।

৩. আত্মসমালোচনার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নে‘মতসমূহ, অধিকারসমূহ জানতে পারে। আর সে যখন আল্লাহর অনুগ্রহ ও তার অবস্থান সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে, তখন সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ে উদ্বুদ্ধ হয়।

৪. আত্মসমালোচনার মাধ্যমে মানুষের মাঝে পরকালীন জওয়াবদিহিতার উপলব্ধি সৃষ্টি হয়।

৫. আত্মসমালোচনা জীবনের লক্ষ্যকে সবসময় সজীব করে রাখে। এর মাধ্যমে আমরা অনুভব করতে পারি আমাদেরকে এই পৃথিবীর বুকে অনর্থক সৃষ্টি করা হয়নি। পার্থিব জীবন শুধু খাওয়া-দাওয়া, হাসি-ঠাট্টার নয়, এ জীবনের পরবর্তী যে অনন্ত এক জীবন, তার জন্য যে আমাদের সবসময় প্রস্ত্তত থাকতে হবে, আত্মসমালোচনা আমাদেরকে সর্বক্ষণ তা স্মরণ করিয়ে দেয়।

৬. মুহাসাবা তথা আত্মসমালোচনার ফলে কোন পাপ দ্বিতীয়বার করতে গেলে বিবেকে বাধা দেয়। ফলে পাপের কাজ থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়।

আত্মসমালোচনা না করার ফলাফল :

আত্মসমালোচনা করার কারণে ব্যক্তিজীবনে যা হত; আত্মসমালোচনা না করা হলে ঠিক বিপরীত প্রভাব সৃষ্টি করে; যেমন:

১. নিজের দোষ-ত্রুটি নিজের সামনে প্রকাশিত হয়না। ফলে তার হৃদয় চলমান কাজের সাথেই সর্বদা যুক্ত থাকে।

২. আত্মসমালোচনা না করার কারণে দ্বীনের উপর দৃঢ়ভাবে থাকা যায়না, ফলে মানুষকে আল্লাহর দরবারে কপট ও মুনাফিক করে তুলে।

৩. আত্মসমালোচনা না করার কারণে মানুষ আল্লাহর অনুগ্রহ ও অবস্থান সম্পর্কে বেখবর থাকে। আর সে যখন আল্লাহর অনুগ্রহ ও তার অবস্থান সম্পর্কে উদাসীন থাকে, তখন সে আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়।

৪. আত্মসমালোচনা না করার কারণে মানুষের মাঝে পরকালীন জওয়াবদিহিতার উপলব্ধি সৃষ্টি হয় না।

৫. আত্মসমালোচনা না করার কারণে জীবনের লক্ষ্যকে সবসময় অস্থির করে রাখে। ফলে মানুষ সারাক্ষণ ভোগ-বিলাসের দিকে ধাবিত হয়। পার্থিব জীবন শুধু খাওয়া-দাওয়া, হাসি-ঠাট্টার নয়, এ জীবনের পরবর্তী যে অনন্ত এক জীবন, তা নিয়ে কোন চিন্তা করার সুযোগ হয়না।

আত্মসমালোচনার পদ্ধতি :

১. যে কোন আমল করার পূর্বে নিশ্চিত হওয়া যে, উক্ত আমলটা শরিয়ত সম্মত কি না বা এ পেছনে সহিহ দলিল আছে কি না। দলিল না থাকলে তা হতে বিরত থাকা। কারণ দলিল বিহীন আলম বিদআত হিসেবে আল্লাহর নিকট প্রত্যাখ্যাত হবে।

২. আমল করার সময় মনে মনে ভাবা যে, আমলটি করার পেছনে আমার উদ্দেশ্য কি? আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন না কি লোকদেখানো? লোক দেখানো নিয়ত থাকলে নিয়তকে খালিস ভাবে আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা। কেননা, কেউ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়ত ছাড়া কোনো আমল করে তাহলে তা রিয়া হিসেবে আল্লাহর নিকট প্রত্যাখ্যাত হবে। (এটি শিরকে আসগার বা ছোট শিরক)।

৩. আমল করার পর পর্যালোচনা করা যে, আমি কি আল্লাহর হক যথাযথভাবে আদায় করতে পেরেছি? বা আমলটা যেভাবে করা দরকার সেভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে? অত:পর এ ক্ষেত্রে যদি ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়ে তাহলে আল্লাহর নিকট তওবা করে তা সংশোধন করা এবং পরবর্তীতে আরও সতর্ক হওয়া।

৪. এ ছাড়া সামগ্রিক জীবনের দোষত্রুটি, পাপাচার, আল্লাহর নাফরমানী, দায়িত্ব-কর্তব্য, করণীয়-বর্জনীয় ইত্যাদি নিজে নিজে হিসাব করার পর দোষত্রুটি সংশোধন করা, সে জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া এবং আগামী দিনে আরও যত্মসহকারে ও সুন্দরভাবে আল্লাহর নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।

৫. পূর্ণ সতর্কতার পরও যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে কোন পাপ হয়ে যায়, তাহ’লে সঙ্গে সঙ্গে লজ্জিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা ও তওবা করা। সাথে সাথে সৎআমল দ্বারা এই অপরাধের ক্ষতিপূরণ করার চেষ্টা করা। আল্লাহ বলেন,

إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّـيِّئَاتِ ذَلِكَ ذِكْرَى لِلذَّاكِرِيْنَ

 নিশ্চয়ই ভালকাজ মন্দকাজকে দূর করে দেয়, আর এটা স্মরণকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ (হূদ: ১১৪) রাসূল (স.) বলেন,

 اتَّقِ اللهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا

অর্থাৎ তুমি যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় কর। কোন পাপ কাজ সংঘটিত হয়ে গেলে সাথে সাথে সৎআমল কর যাতে তা মিটে যায়(মিশকাত: ৫০৮৩)।

পূর্ববর্তী নেককার মানুষদের আত্মসমালোচনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত:

এক. আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত। তিনি বলেন,

خَرَجْتُ مَعَهُ حَتَّى دَخَلَ حَائِطًا فَسَمِعْتُهُ وَهُوَ يَقُوْلُ وَبَيْنِيْ وَبَيْنَهُ جِدَارٌ وَهُوَ فِيْ جَوْفِ الْحَائِطِ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ أَمِيْرُ الْمُؤْمِنِيْنَ بَخٍ بَخٍ وَاللهِ لَتَتَّقِيَنَّ اللهَ أَوْ لَيُعَذِّبَنَّكَ

অর্থাৎ ‘আমি একবার ওমর (রাঃ)-এর সাথে বের হ’লাম। পথিমধ্যে তিনি একটি বাগানে ঢুকলেন। এমতাবস্থায় আমার ও তাঁর শুধু একটি দেয়াল ছিল তথা আমি তার খুব নিকটে ছিলাম। আমি তাঁকে বলতে শুনলাম, তিনি নিজেকে নিজে বলছেন, খাত্ত্বাবের পুত্র ওমার! হে মুমিনদের আমির! আল্লাহর শপথ! অবশ্যই তোমাকে আল্লাহর ভয়ে ভীত হ’তে হবে। অন্যথায় তিনি তোমাকে অবশ্যই শাস্তি দিবেন’(মুওয়াত্ত্বা মালেক: ৩৬৩৮)।

দুই. হাদীসে এসেছে-

عَنْ هَانِئِ مَوْلَى عُثْمَانَ قَالَ: كَانَ عُثْمَانُ إِذَا وَقَفَ عَلَى قَبْرِ بَكَى حَتَّى يَبُلَّ لِحْيَتَهُ، فَقِيلَ لَهُ: تَذَكَّرَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ فَلَا تَبْكِي وَتَبْكِي مِنْ هَذَا؟ فَقَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- قَالَ: «إنْ الْقَبْرَ أَوَّلُ مَنْزِلٍ مِنْ مَنَازِلِ الْاخِرَةِ، فَإِنْ نَجَا مِنْهُ فَمَا بَعْدَهُ أَيْسَرُ مِنْهُ، وَإِنْ لَمْ يَنْجُ مِنْهُ فَمَا بَعْدَهُ أَشَدُّ مِنْهُ .

’উছমান (রাঃ) যখন কোন কবরের নিকট দাঁড়াতেন তখন তিনি কাঁদতেন। যাতে তাঁর দাড়ি ভিজে যেত। তাকে বলা হ’ল জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনায় আপনি কাঁদেন না, অথচ কবর দেখলে আপনি কাঁদেন কেন? জবাবে তিনি বললেন, রাসূল (স.) বলেছেন যে, ‘কবর হ’ল পরকালের পথের প্রথম মনযিল। যদি এখানে কেউ মুক্তি পায় তাহ’লে পরের মনযিলগুলি তার জন্য সহজ হয়ে যায়। আর যদি এখানে মুক্তি না পায় তাহ’লে পরেরগুলি আরও কঠিন হয়ে যায়’। রাসূল (স.) বলেছেন, ‘আমি কবরের চাইতে ভয়ংকর কোন দৃশ্য আর দেখিনি’(মিশকাত: ১৩২)

তিন. বারা বিন আযেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূল (স.)-এর সাথে ছিলাম। হঠাৎ তিনি একদল লোককে দেখতে পেয়ে বললেন, ওরা কি উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়েছে? একজন বললেন, এরা একটি কবর খুড়ছে। রাবী বলেন, একথা শুনে রাসূল (স.) আতংকিত হয়ে পড়লেন এবং সঙ্গী-সাথীদের আগে দ্রুতবেগে কবরের নিকটে পৌঁছে হাঁটু গেড়ে বসলেন। রাবী বলেন, তিনি কি করছেন তা দেখার জন্য আমি তাঁর মুখোমুখি বসলাম। তিনি কেঁদে ফেললেন, এমনকি অশ্রুতে মাটি ভিজে গেল। অতঃপর তিনি আমাদের দিকে ফিরে বসে বললেন, হে ভাইয়েরা! এ রকম দিবসের জন্য রসদ প্রস্ত্তত রেখো’ (সিলসিলা ছহীহাহ: ১৭৫১)

চার. অপর হাদীসে এসেছে-

عَنْ حَنْظَلَةَ الأُسَيِّدِيِّ، قَالَ – وَكَانَ مِنْ كُتَّابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ – لَقِيَنِي أَبُو بَكْرٍ فَقَالَ كَيْفَ أَنْتَ يَا حَنْظَلَةُ قَالَ قُلْتُ نَافَقَ حَنْظَلَةُ قَالَ سُبْحَانَ اللَّهِ مَا تَقُولُ قَالَ قُلْتُ نَكُونُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ وَالْجَنَّةِ حَتَّى كَأَنَّا رَأْىَ عَيْنٍ فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَافَسْنَا الأَزْوَاجَ وَالأَوْلاَدَ وَالضَّيْعَاتِ فَنَسِينَا كَثِيرًا قَالَ أَبُو بَكْرٍ فَوَاللَّهِ إِنَّا لَنَلْقَى مِثْلَ هَذَا ‏.‏ فَانْطَلَقْتُ أَنَا وَأَبُو بَكْرٍ حَتَّى دَخَلْنَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قُلْتُ نَافَقَ حَنْظَلَةُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ وَمَا ذَاكَ ‏”‏ ‏.‏ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ نَكُونُ عِنْدَكَ تُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ وَالْجَنَّةِ حَتَّى كَأَنَّا رَأْىَ عَيْنٍ فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِكَ عَافَسْنَا الأَزْوَاجَ وَالأَوْلاَدَ وَالضَّيْعَاتِ نَسِينَا كَثِيرًا ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنْ لَوْ تَدُومُونَ عَلَى مَا تَكُونُونَ عِنْدِي وَفِي الذِّكْرِ لَصَافَحَتْكُمُ الْمَلاَئِكَةُ عَلَى فُرُشِكُمْ وَفِي طُرُقِكُمْ وَلَكِنْ يَا حَنْظَلَةُ سَاعَةً وَسَاعَةً ‏”‏ ‏‏ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ‏.‏ 

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাতিব হানযালাহ আল উসাইয়িদী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আবু বকর সিদ্দীক (রাযিঃ) আমার সঙ্গে দেখা করলেন এবং আমাকে প্রশ্ন করলেন, হে হানযালাহ! তুমি কেমন আছ? তিনি বলেন, জবাবে আমি বললাম, হানযালাহ্ তো মুনাফিক হয়ে গেছে। সে সময় তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ তুমি কি বল্‌ছ? হানযালাহ্ (রাযিঃ) বলেন, আমি বললাম, আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে থাকি, তিনি আমাদের জান্নাত জাহান্নামের কথা শুনিয়ে দেন, যেন আমরা উভয়টি চাক্ষুষ দেখছি। সুতরাং আমরা যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সন্নিকটে থেকে বের হয়ে আপনজন স্ত্রী-সন্তান এবং ধন-সম্পদের মধ্যে নিমগ্ন হয়ে যাই তখন আমরা এর অনেক বিষয় ভুলে যাই। আবু বকর (রাযিঃ) বললেন, আল্লাহর কসম আমারও একই অবস্থা। নিশ্চয়ই আমরা এ বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎ করবো।

তারপর আমি এবং আবু বকর (রাযিঃ) রওনা করলাম এবং এমনকি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! হানযালাহ্ মুনাফিক হয়ে গেছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা কী?

আমি বললাম, আমরা আপনার কাছে থাকি, আপনি আমাদের জান্নাত-জাহান্নামের কথা মনে করিয়ে দেন, যেন আমরা তা সরাসরি দেখতে পাই। তারপর আমরা যখন আপনার নিকট হতে বের হই এবং স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদের মধ্যে নিমগ্ন হই সেসময় আমরা এর অনেক বিষয় ভুলে যাই। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে সত্তার হাতে আমার জীবন আমি তার কসম করে বলছি! আমার কাছে থাকাকালে তোমাদের যে অবস্থা হয়, যদি তোমরা সবসময় এ অবস্থায় স্থির থাকতে এবং সার্বক্ষণিক আল্লাহর যিকরে পড়ে থাকতে পারতে তাহলে অবশ্যই ফেরেশতাগণ তোমাদের বিছানায় ও রাস্তায় তোমাদের সাথে মুসাফাহ করত। কিন্তু হে হানযালাহ! ধীরে ধীরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাও (মুসলিম: ২৭৫০)।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلمُؤمِنُونَ لَعَلَّكُم تُفلِحُونَ

তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে আস, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার (সূরা নূর: ৩১)।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

إِنَّهُ لَيُغَانُ عَلَى قَلْبِى وَإِنِّى لأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ فِى الْيَوْمِ مِائَةَ مَرَّةٍ

অর্থাৎ (কখনও কখনও) আমার অন্তরের উপর পর্দা ফেলা হয়; আর আমি দৈনিক একশতবার আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি (মুসলিম: ৭০৩৩)।

উপরোক্ত পর্যালোচনা থেকে আত্মসমালোচনার গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। পরকালের মুক্তির জন্য সর্বদা নিজেকে প্রশ্নের সম্মুখিন করা এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার আবশ্যকতা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়।

উপরোক্ত বয়ানের আরবী অনুবাদ (সংক্ষিপ্ত মূলবক্তব্য)

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ ، أَمَّا بُعْدُ . . . . . . . . . . . . . . .

أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامَ

مَوْضُوعُنَا اليَوْمِ: أَهَمِّيَّةُ  وَأُسْلُوبُ مُحَاسَبَةِ النَّفْسِ .

اَلْإِنْسَانُ هُوَ أَفْضَلُ مَخْلُوقٍ فِي الْخَلْقِ. وَمِنْ أَسْبَابِ خَيْرِ الْخَلْقِ أَنَّ الْإِنْسَانَ يَسْتَطِيعُ أَنْ يَفْعَلَ الشَّرَّ بِإِرَادَتِهِ، وَيَسْتَطِيعُ أَنْ يَسْأَلَ نَفْسَهُ عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَمْتَنِعَ عَنِ السَّيِّئَاتِ وَيَسِيرُ عَلَى الطَّرِيقِ الصَّحِيحِ. وَمِنْ هَذَا الْمُنْطَلَقِ فَإِنَّ النَّفْسَ الْإِنْسَانِيَّةَ ثَلَاثَةُ أَنْوَاعٍ. 

1. نَفْسٌ عَمَّارَةٌ (الِانْغِمَاسُ فِي الْأَفْعَالِ الشَّرِّيَّةِ دَائِمًا)؛

2. نَفْسٌ لَوَّامَةٌ (تَوْبِيخُ النَّفْسِ بَعْدَ فِعْلِ الشَّرّ وَمُحَاوَلَةُ الِامْتِنَاعِ عَنْ الشَّرّ)؛

3. نَفْسٌ مُطْمَئِنَّةٌ (تَرْشُدُ نَفْسُهُ إلَى الطَّرِيقِ الصَّحِيحِ دَائِمًا).

قَالَ تَعَالَى، إِنَّ النَّفْسَ لأَمَّارَةٌ بِالسُّوْءِ إِلاَّ مَا رَحِمَ رَبِّيْ  (يوسف: 53)

أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الْكِرَامُ-

ألْآنَ نَحْنُ نُبَيِّنُ أَمَامَكُمْ عَنْ   أَهَمِّيَّةِ  مُحَاسَبَةِ النَّفْسِ، إنَّ “مُحَاسَبَةَ النَّفْسِ أَمْرٌ ضَرُورِيٌّ لِكُلِّ مُؤْمِنٍ، يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ بِمَا تَعْمَلُوْنَ، وَلاَ تَكُونُوْا كَالَّذِيْنَ نَسُوا اللهَ فَأَنْسَاهُمْ أَنْفُسَهُمْ أُوْلَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ (الحشر: 18) وَقَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ أيْضًا: إِنَّ الَّذِيْنَ اتَّقَواْ إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُواْ فَإِذَا هُمْ مُّبْصِرُوْنَ (الأعراف: 201) وَهُنَاكَ مَقُولَةٌ عَنْ عُمَرَ (رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ) عَنْ أَهَمِّيَّةِ مُحَاسَبَةِ النَّفْسِ. هُوَ قَالَ . حَاسِبُوْا أَنْفُسَكُمْ قَبْلَ أَنْ تُحَاسَبُوْا، وَزِنُوْا أَنْفُسَكُمْ قَبْلَ أَنْ تُوْزِنُوْا. فَإِنَّهُ أَهْوَنُ عَلَيْكُمْ فِيْ الْحِسَابِ غَدًا، أَنْ تُحَاسَبُوْا أَنْفُسَكُمُ الْيَوْمَ، وَتَزَيَّنُوْا لِلْعَرْضِ الأَكْبَرِ يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُوْنَ لاَ تَخْفَى مِنْكُمْ خَافِيَةٌ، كَما قَالَ الحَسَنُ البُوْصُوْري عَنها: المُؤمِنُ قَوَّامٌ عَلَى نَفْسِهِ يُحَاسِبُ نَفْسَهُ للهِ، وَإِنَّمَا خَفَّ الحِسَابُ يَوْمَ القِيَامَةِ عَلَى قَوْمٍ حَاسَبُوْا أَنْفُسَهُمْ فِي الدُّنْيَا، وَإِنَّمَا شَقَّ الْحِسَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى قَوْمٍ أَخَذُوا هَذَا الْأَمْرَ مِنْ غَيْرِ مُحَاسَبَةٍ .

أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الْكِرَامُ

ألآنَ نَحْنُ نُبَيِّنُ أَمَامَكُمْ عَنْ   طَرِيْقَةِ مُحَاسَبَةِ النَّفْسِ:

1. قَبْلَ الْقِيَامِ بِأَيِّ عَمَلٍ، تَأَكَّدُوا مِنْ أَنَّ الْعَمَلَ الْمَذْكُورَ مُتَوَافِقٌ مَعَ الشَّرِيعَةِ أَمْ لَا، أَوْ إنْ هُنَاكَ مُسْتَنَدًا صَحِيْحًا وَرَاءَهُ. إذَا لَمْ يَكُنْ هُنَاكَ وَثِيقَةً، اَلِامْتِنَاعُ عَنِ الْقِيَامِ بِذَلِكَ. لِأَنَّ الْعَمَلَ بِلَا دَلِيلٍ هُوَ كَبِدْعَةٍ.

2. أَثْنَاءَ الْقِيَامِ بِهَذَا العَمَلِ، فَكِّرُوْا فِي نَفْسِكُمْ، مَا هُوَ هَدَفَيْ مِنْ وَرَاءِ الْقِيَامِ بِهَذَا العَمَلِ؟ إلَّا تَنَالُوا رِضَا اللَّهِ أَوَتُظْهِرُه لِلنَّاسِ؟ وَإِذَا كَانَتْ هُنَاكَ نِيَّةٌ لِلْإِظْهَار لِلنَّاس، فَيَجِبُ أَنْ تَكُونَ النِّيَّةُ خَالِصَةً لِلَّهِ. لِأَنَّ مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَا يُقْصَدُ بِهِ مَرْضَاةَ اللَّهِ فَهُوَ رَدٌّ. (هَذَا هُوَ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ).

5. إذَا ارْتَكَبَ الذَّنْبَ رَجُلٌ دُونَ قَصْدٍ مَع الْحَذَرِ الْكَامِلِ،  عَلَيْهِ أَنْ يَسْتَحْيَا عَلَى الْفَوْرِ وَيَسْتَغْفِرَ اللَّهَ وَيَتُوْبَ إلَيْهِ وَفِي نَفْسِ الْوَقْتِ أنْ يُحَاوِلَ أَنْ يَتَعَوَّضَ عَنْ هَذَا الْإِسَاءَةِ بِالْعَمَلِ الصَّالِحِ. قَالَ اللهُ تَعَالَى فِي القُرآنِ: إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّـيِّئَاتِ ذَلِكَ ذِكْرَى لِلذَّاكِرِيْنَ

أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الْكِرَامُ

ألآنَ نَحْنُ نُبَيِّنُ أَمَامَكُمْ  مِثَالًا رَائِعًا عَلَى مُحَاسَبَةِ النَّفْسِ لِلرِّجَالِ الطَّيِّبِيْنَ السَّابِقَيْنَ: جَاءَ فِي الحَدِيْثِ كَثِيْرٌ مِّنَ الأَمْثِلَةِ، مِنْهَا:

عَنْ حَنْظَلَةَ الأُسَيِّدِيِّ، قَالَ – وَكَانَ مِنْ كُتَّابِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ – لَقِيَنِي أَبُو بَكْرٍ فَقَالَ كَيْفَ أَنْتَ يَا حَنْظَلَةُ قَالَ قُلْتُ نَافَقَ حَنْظَلَةُ قَالَ سُبْحَانَ اللَّهِ مَا تَقُولُ قَالَ قُلْتُ نَكُونُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ وَالْجَنَّةِ حَتَّى كَأَنَّا رَأْىَ عَيْنٍ فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَافَسْنَا الأَزْوَاجَ وَالأَوْلاَدَ وَالضَّيْعَاتِ فَنَسِينَا كَثِيرًا قَالَ أَبُو بَكْرٍ فَوَاللَّهِ إِنَّا لَنَلْقَى مِثْلَ هَذَا ‏.‏ فَانْطَلَقْتُ أَنَا وَأَبُو بَكْرٍ حَتَّى دَخَلْنَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قُلْتُ نَافَقَ حَنْظَلَةُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ وَمَا ذَاكَ ‏”‏ ‏.‏ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ نَكُونُ عِنْدَكَ تُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ وَالْجَنَّةِ حَتَّى كَأَنَّا رَأْىَ عَيْنٍ فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِكَ عَافَسْنَا الأَزْوَاجَ وَالأَوْلاَدَ وَالضَّيْعَاتِ نَسِينَا كَثِيرًا ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنْ لَوْ تَدُومُونَ عَلَى مَا تَكُونُونَ عِنْدِي وَفِي الذِّكْرِ لَصَافَحَتْكُمُ الْمَلاَئِكَةُ عَلَى فُرُشِكُمْ وَفِي طُرُقِكُمْ وَلَكِنْ يَا حَنْظَلَةُ سَاعَةً وَسَاعَةً ‏”‏ ‏‏ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ‏.‏  وَقَالَ اللهُ تَعَالَ أَيْضًا : وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ المُؤمِنُونَ لَعَلَّكُم تُفلِحُونَ. يُمْكِنُ فَهْمُ أَهَمِّيَّةِ مُحَاسَبَةِ النَّفْسِ مِنَ الْمُرَاجَعَةِ الْمَذْكُورَةِ أَعْلَاهُ. وَتَبَيَّنَتْ بِوُضُوحٍ ضَرُورَةُ السُّؤَالِ الدَّائِمِ لِلنَّفْسِ بِاِعْتِبَارِ الشَّرِيْعَةِ وَضَرُوْرَةُ الِاسْتِغْفَارِ مِنَ اللَّهِ لِلنَّجَاةِ فِي الْآخِرَةِ.

بَارَكَ اللَّهُ لِي وَلَكُمْ فِي الْقُرْآنِ الْعَظِيمِ، وَنَفَعَنِي وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيهِ مِنَ الْايَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيمِ. أَقُولُ قَوْلِي هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيمَ الْجَلِيل، لِيْ وَلَكُمْ وَلِسَائِرِ الْمُسْلِمِينَ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ فَاسْتَغْفِرُوه أَنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.

মূল কনসেপ্ট: মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ; সংকলন, সম্পাদনা, পরিমার্জন ও আরবী অনুবাদ: ইমরান মাহমুদ (পিএইচডি গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাবি) পুনর্মূল্যায়ন: মুফতি ইসমাঈল হোসাইন (খতিব ও দাঈ)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore

Scroll to Top