ইমরান মাহমুদ, পিএইচডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্য সংগ্রহে: আখিরি জান্নাত আরফিনা, মাহিরা ফেরদৌস
শিরোনাম: বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা: বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি
Title: The relevance of Islamic politics in Bangladesh: Perspectives of university-level Muslim female students
Abstract: This study explores the perceptions of university-level Muslim female students in Bangladesh regarding Islamic politics—a theme that lies at the intersection of religion, governance, and youth consciousness. In a socio-political landscape marked by partisanship, corruption, and ideological polarization, the role of Islamic political parties often emerges as both promising and controversial. The research adopts a mixed-method approach, utilizing a structured Google Form to collect both quantitative and qualitative responses from 102 participants. Key findings reveal that a significant majority of respondents perceive Islamic political parties as potentially necessary for building a moral, just, and welfare-based state, while a smaller segment expresses skepticism regarding the politicization of religion. Respondents display a varied understanding of politics—ranging from idealistic visions of national service to critical views of current practices. Though Islamic values are generally respected, many participants also raise concerns about the organizational limitations and controversial history of certain Islamic parties in Bangladesh. The paper concludes that while Islamic politics remains relevant among educated women, its future acceptance largely depends on the ability to reconcile religious principles with transparent leadership, corruption-free, and popular governance.
১. ভূমিকা (Introduction):
রাজনীতি একটি রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যার মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রার মান নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশের মতো একটি ধর্মপ্রধান দেশে ইসলাম ও রাজনীতির সংযোগ নিয়ে আলোচনা সবসময়ই গুরুত্ব বহন করে। বর্তমান সময়ে ইসলামী রাজনীতি নিয়ে জনমত এবং বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নারী শিক্ষার্থীদের চিন্তাভাবনা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো— বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নারী শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে একটি চিত্র উপস্থাপন করা।
ইসলামী রাজনীতি এমন এক ধারা, যা কেবল ক্ষমতা অর্জনের জন্য নয় বরং সমাজে ন্যায়বিচার, মানবিকতা, কল্যাণ এবং আল্লাহর বিধান অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে কাজ করে। ইসলামী রাজনীতির মূল ভিত্তি হলো কুরআন ও সুন্নাহ। এতে পার্থিব ও আধ্যাত্মিক উভয় দিকের সমন্বয় থাকে। এই ধারায় নেতৃত্বের দায়িত্ব একটি আমানত হিসেবে বিবেচিত হয় এবং শাসক জনগণের নিকট দায়বদ্ধ থাকে।
বাংলাদেশের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দলীয় দন্দ্ব, দুর্নীতি ও অনৈতিকতার ছায়ায় আবৃত। এমন প্রেক্ষাপটে অনেকেই ইসলামী রাজনীতিকে একটি আদর্শিক বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। তবে বাস্তবতায় দেখা যায়, ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম, অভ্যন্তরীণ মতভেদ ও রাজনৈতিক কৌশল অনেক সময় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। একদিকে এই দলগুলো ধর্মীয় নৈতিকতা ও মূল্যবোধ প্রচার করে, অন্যদিকে কিছু কার্যক্রম জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি করে।
এই দ্বৈততা বিবেচনায় এনে এই গবেষণায় বিশ্লেষণ করা হয়েছে, নারীরা— বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষিত নারী সমাজ— ইসলামী রাজনীতি সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করেন এবং তাদের চিন্তায় এর ভবিষ্যৎ কী।
২. গবেষণা পদ্ধতি (Methodology)
এই গবেষণাটি একটি গুণগত ও পরিমাণগত (mixed-method) পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়েছে। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নারী শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির অবস্থান ও প্রাসঙ্গিকতা নির্ণয় করা।
গবেষণায় বর্ণনাত্মক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, যেখানে অংশগ্রহণকারীদের মতামত, অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে মৌলিক তথ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এতে ধর্ম, রাজনীতি এবং সমাজবিজ্ঞানের আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
গুগল ফর্মের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের বিশ্লেষণ পদ্ধতি
তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি স্ট্রাকচারড গুগল ফর্ম ডিজাইন করা হয়, যাতে উন্মুক্ত (open-ended) ও বন্ধ (close-ended) প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত ছিল।
এই ফর্মটি দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনলাইনে বিতরণ করা হয়। তন্মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সর্বমোট ১০২ জন উত্তরদাতা এই ফর্মে অংশগ্রহণ করেন।
অংশগ্রহণকারীদের বৈশিষ্ট: যাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে উক্ত গবেষণাটি সম্পন্ন হয়েছে তাদের বৈশিষ্ট নিম্নরূপ উল্লেখ করা হলো-
ক. বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের মুসলিম নারী শিক্ষার্থী;
খ. যাদের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তর স্কুল-কলেজ ছিল, তথা ধর্মীয় কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেনি;
গ. যারা বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ধর্মীয় কোন ডিপার্টমেন্ট যেমন: আরবী, ইসলাম শিক্ষা কিংবা থিওলজি এমন কোন ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী নয়;
ঘ. যাদের কেউ কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪১.২% শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত আর বাকি ৫৮.৮% কোন সংগঠনের সাথে যুক্ত নয়।
৩. সাহিত্য পর্যালোচনা (Literature Review):
ইসলামী রাজনীতি ও নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিয়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরাসরি গবেষণা অপেক্ষাকৃত কম হলেও, সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় নারীদের ধর্মীয় চেতনা, রাজনৈতিক অবস্থান ও সমাজে ইসলামি মূল্যবোধের অবস্থান নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
Alam, Biswas, Islam, এবং Roy (2024) তাদের গবেষণায় উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের অনেক নারী বিশেষত শহুরে ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ধর্মীয় মূল্যবোধকে জীবনযাত্রার অংশ হিসেবে মান্য করে থাকেন, তবে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তাদের বিশ্বাস দ্বিধান্বিত। তারা দেখিয়েছেন, নারীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়লেও দলগুলোর কার্যক্রমে নারীর অংশগ্রহণ সীমিত হওয়ায় নারীরা প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত হতে অনাগ্রহী। তাদের গবেষণায় আরও উঠে এসেছে যে, বাংলাদেশের মুসলিম নারীদের মধ্যে ইসলামী আদর্শের প্রতি নৈতিক গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও, বাস্তব রাজনীতির প্রতি আস্থা কম (Alam et al., 2024)।
Hasan (2020) বিশ্লেষণ করেছেন কীভাবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে “উম্মাহ চেতনা” এবং ইসলামি আদর্শের প্রতি অনুরাগ ইসলামী রাজনীতির প্রতি সমর্থন বাড়াতে সাহায্য করে। তবে তিনি সতর্ক করেছেন, যদি এই দলগুলো আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারে, তবে তরুণদের এ সমর্থন ক্ষণস্থায়ী হয়ে যাবে (Hasan, 2020)। এই বিশ্লেষণ নারী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যাদের মাঝে আদর্শিক আকর্ষণ থাকলেও বাস্তব রাজনৈতিক কাঠামোর প্রতি অসন্তোষ রয়েছে।
Huq (2013) গবেষণায় দেখিয়েছেন, ইসলামি দাওয়াহ চর্চায় উচ্চশিক্ষিত নারীদের অংশগ্রহণ ক্রমবর্ধমান, কিন্তু এই অংশগ্রহণ ধর্মীয় সীমারেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় রাজনীতির ক্ষেত্রে তারা নিজেদের গৌণ ভাবেন। তাঁর মতে, ধর্মীয় শিক্ষা ও রাজনীতির মধ্যে সমন্বয় না থাকলে নারীরা ইসলামী রাজনীতি থেকে নিজেদের দূরে রাখবে, যদিও তারা নৈতিক দিক দিয়ে একে সমর্থন করতে পারে (Huq, 2013)।
Asadullah এবং Chaudhury (2010) একটি তুলনামূলক গবেষণায় দেখিয়েছেন, ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরা সমাজে অধিক মূল্যবোধসম্পন্ন হলেও, তাদের মধ্যে আধুনিক রাজনৈতিক চিন্তার অভাব লক্ষ্য করা যায়। নারী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দ্বিগুণ — তারা ইসলামি আদর্শে আস্থা রাখলেও রাজনৈতিক কাঠামোতে নিজেদের যথাযথ স্থান খুঁজে পান না (Asadullah & Chaudhury, 2010)।
৪. গবেষণার প্রশ্ন (Research Questions):
ক. রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত নয় বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের এমন নারী শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গী কী?
খ. বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের নারী শিক্ষার্থীগণ বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির কেমন প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন?
গ. বাংলাদেশে বিদ্যমান ইসলামী দলগুলোর ভূমিকার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের নারী শিক্ষার্থীগণের ধারণা ও মূল্যায়ন কীরূপ?
৫. গবেষণার উদ্দেশ্য (Objectives of Research):
ক. সামগ্রীকভাবে বাংলাদেশের রাজনীতির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তরের নারী শিক্ষাদের দৃষ্টিভঙ্গী ও মূল্যায়ন নির্ণয়;
খ. বাংলাদেশের রাষ্ট্রপরিচালার জন্য ইসলামী রাজনীতির প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্তরের নারী শিক্ষার্থীদের মতামত ও প্রত্যাশা বিশ্লেষণ;
গ. বাংলাদেশের বিদ্যামান ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের সাধারণ নারী শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন বিশ্লেষণ;
৬. বিশ্লেষণ ও ফলাফল (Analysis & Findings)
৬.১ রাজনীতির প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের সাধারণ নারী শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি
৬.১. ক. রাজনীতির পরিচয় সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের সাধারণ নারী শিক্ষার্থীদের ধারণা ও মতামততের সারাংশ:
– It’s only mean to me that politics is power and the owner should utilize it to serve the people.
– জনগনের দাবী, চাওয়া, চাহিদা নিয়ে যে নীতি কাজ করে।
– রাজনীতি হলো রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামো। যে কাঠামো গঠিত হবে তৃণমূল পর্যায়ের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্য হিসেবে।
– সমগ্র দেশের মধ্যে থেকে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দেশ ও দেশের অবস্থা বিবেচনায় রেখে দেশকে সার্বিক দিক থেকে ( সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়) দেশের মঙ্গলের জন্য যেসব কাজ করে, এসবক কাজের সমষ্টিগতরূপ হল রাজনীতি।
– একটি দেশ সুষ্ঠভাবে পরিচালনার মূলমন্ত্র।
– রাজনীতি বলতে এমন বিষয় বা কর্মকান্ডকে বোঝায় যা সরকার ব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা, আইন ও জনসাধারনের ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পর্কিত
– Empowerment for public service
– সংঘবদ্ধভাবে মানুষের সেবার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করা
– প্রত্যেকটি মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সমাজ গঠনমূলক যে সকল কাজ করা হয়, যে সকল নীতির ভিত্তিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবয়ন করা হয় (স্থানীয়, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যেকোনো পরিসরেই হোক না কেনো) যে নীতি দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে কাজ করে, সেটিই রাজনীতি।
– শাসনকার্য পরিচালনার জন্য কতিপয় ব্যক্তিদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা নীতি নির্ধারণ করা।
– রাজনীতি হল একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতা পুঞ্জীভূত করা।
– চূড়ান্ত ক্ষমতার জন্য মানুষ যা করে, তাই রাজনীতি।
– দেশের গঠন মুলক কাজে সাহায্য এবং ভুল গুলো ধরিয়ে দেওয়া।
– রাজনীতি হলো নিজের স্বার্থকে এড়িয়ে, দেশ ও দশের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া।
রাজনীতির পরিচয় সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের সাধারণ নারী শিক্ষার্থীদের সকল মতামতের উপরোক্ত সারাংশ বিশ্লেষণের আলোকে রাজনীতির মৌলিক কয়েকটি উপাদান পাওয়া যায়। তন্মধ্যে- কিছু উপাদান ইতিবাচক আর কিছু নেতিবাচক।
ইতিবাচক উপাদান | নেতিবাচক উপাদান |
ক. সাধারণ জনগণের চাহিদা ও প্রত্যাশা খ. রাষ্ট্র পরিচালনার সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন গ. সংঘবন্ধভাবে কার্যক্রম ঘ. সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়ভাবে জনগণের কল্যাণ সাধন করা ঙ. নিঃস্বার্থ সেবাদান চ. সবার পক্ষে কাজ করার জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন | ক. চূড়ান্ত ক্ষমতা চর্চা খ. নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতা সীমাবদ্ধকরণ গ. ক্ষমতা স্থায়ী করার লক্ষ্যে সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর নানান ক্ষেত্রে অবৈধ বল প্রয়োগ |
৬.১.খ. সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশের রাজনীতির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের সাধারণ নারী শিক্ষার্থীদের ধারণা:
গবেষণায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ৯৭.১ % বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। বাকি ২.৯ % ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন।

৬.১.গ. বাংলাদেশের রাজনীতির ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণার কারণ:
গবেষণায় অধিকাংশ অংশহগ্রহণকারী বাংলাদেশের রাজনীতির ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। উক্ত মন্তব্যের পেছনে সুনির্দিষ্ট কারণও উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
– এদেশে ক্ষমতাই সত্য- মিথ্যার মাপকাঠি। ক্ষমতা লাভের পর ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত থাকেনা।
– রাজনীতিবিদরা জনগণের কল্যাণের ব্যাপারে দায়বদ্ধ থাকলেও নিজেকে বা নিজের দল কিংবা দলের লোকদেরকেকে বেশি প্রাধান্য দেয়। তখন জনগণ গৌণ এবং তাদের ক্ষমতা মুখ্য হয়ে উঠে।
– সাধারণ মানুষের কথা ভাবা হয়না, দলীয় সম্পর্কের খাতিরে মেধাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়না।
– এখানে প্রতিহিংসা বেশি। নিজ মতের বিরুদ্ধে হলেই তার বিরুদ্ধে একশন নেওয়া হয়। তথা সহনশীলতা কম।
– রাজনীতিবিদরা শুধু উন্নয়নের গল্প বলে কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারেনা।
– রাজনীতির ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রভাব বেশি এবং অধিকাংশ রাজনীতিবিদরাই অসৎ।
– বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিবীদরা গনতন্ত্রে নয়; ক্ষমতায় বিশ্বাসী।
– এই অঞ্চলের রাজনীতি পরিবার কেন্দ্রীক ও ভারত প্রভাব থেকে সহজে বের হতে পারেনা।
– উত্তম রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে না ওঠা এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া।
– অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের ব্যবহার হয়। লেজুড়বৃত্তিক কর্মকাণ্ড এবং চাটুকারিতায় পূর্ণ।
– যুগের সাথে সব কিছু তে যে ইতিবাচক সংস্কার প্রয়োজন তা বাংলাদেশে হয়নি। এখানে রাজনীতিতে ক্ষমতা ই একমাত্র আলোচ্য বিষয়। অথচ এই ক্ষমতায় লাগাম টানার মত কোনো নেই।
– রাজনৈতিকভাবে দেশের এই অবনতির পেছনে কোন দল বা দলনেতার দোষের চেয়ে সাধারণের দোষ বেশি, কারণ এই দেশের সাধারণ জনগণ রাজনৈতিক সচেতন নয়।
৬.২ ইসলামী রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা:
৬.২.ক. ইসলামী রাজনীতি বলতে কী বুঝায়?
ইসলামী রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধারণা লাভের পূর্বে ইসলামী রাজনীতি বলতে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের সাধারণ নারী শিক্ষার্থীরা ইসলামী রাজনীতি সম্পর্কে কী বুঝে সেটি বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের-
৮৫% মনে করেন, ইসলামী রাজনীতি বলতে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মুহাম্মদ সা. কর্তৃক নির্দেশিতপন্থায় রাজনীতি বুঝায়।
৫.৯% মনে করেন, মানুষের আবেগকে কাজে লাগানোর জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে যে রাজনীতি সেটাই ইসলামী রাজনীতি।
২.৯% মনে করেন, ইনক্লুসিভ সোসাইটি নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক পরিমন্ডলে ইসলামের সহনশীলতা ও গনতন্ত্র চর্চাকে বহুল প্রসারিত করার যে রাজনীতি এটাকে ইসলামি রাজনীতি বলা যেতে পারে।
২.৯% মনে করেন, কুরআন মোতাবেক দেশ চালানো হচ্ছে ইসলামী রাজনীতি।
৬.২.খ. দুর্নীতিমুক্ত, উন্নত ও কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসলামী রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা:
দুর্নীতিমুক্ত, উন্নত ও কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসলামী রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের সাধারণ মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের মতামত উল্লেখ করা হলো।
৬৭% শিক্ষার্থী মনে করেন, দুর্নীতিমুক্ত, উন্নত ও কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসলামী রাজনৈতিক দলের অতি প্রয়োজন। ২৬.৫% শিক্ষার্থী মনে করেন, মোটামুটি প্রয়োজন। আর ৫.৯% শিক্ষার্থী মনে করেন, মোটেও প্রয়োজন নেই। নিচের চিত্রে বিষয়টি আরো সুষ্পষ্টভাবে তুলে ধরা হলো।

৬.২.গ. যারা অতি প্রয়োজন মনে করেন তাদের যুক্তি:
– আমরা ইতিহাসে বিভিন্ন খেলাফত সম্পর্কে জেনেছি। ইসলামী রাজনৈতিক দলের শাসকগণ তখনকার মত শাসক, রাষ্ট্রব্যবস্থা হলে এমন দলের অতি প্রয়োজন।
– যদিও আমি বাংলাদেশের ইসলামিক দলগুলোর ব্যাপারে কোন ধারণা নেই, তবুও একজন মুসলিম হিসেবে রাসূল (সা:) জীবন আদর্শ ব্যতীত অন্য কিছু কল্পনা করতে পারিনা।
– ইসলামে সকল সমস্যা খুব সুন্দরভাবে সমাধানের পন্থা বলে দেওয়া আছে। যেসব মানুষগুলা সত্যিকার অর্থেই ধর্ম বোঝে আর পালন করে তারা দুর্নীতি কমাতে পারবে, নীতিমালা সঠিকভাবে ব্যবহার করবে, কারণ ধার্মীকরা আল্লাহকে তারা ভয় করে।
– যতটুকু জানি, যেহেতু আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা তাই, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রণীত আইনের মাধ্যমেই সমাজে সকল ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ করা যাবে এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
-আমার জানা মতে, ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলো ইসলামী শরিয়াহ মেনে চলে, তাই এমন রাজনৈতিক দলই একমাত্র পুরোপুরি দুর্নীতি দমন করতে পারবে।
– ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। তাই এই রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান দেশকে শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনা করতে পারবে।
– ইসলাম সমতায় বিশ্বাসী। দেশের প্রতিটি মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো দলমত দ্বারা সম্ভব নয়। ইসলামের শাসনকালের ইতিহাসে দেখা যায়, অন্য ধর্মের লোকেরাও ইসলামের ছায়াতলে নিরাপদ ছিল।
– দুনীর্তি, অন্যায়, অনাচার, ব্যাভিচার, পরকীয়া, সুদ ঘুষ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, চুরি ডাকাতি ইত্যাদির মতো ভয়ংকর অন্যায়গুলো শুধুমাত্র ইসলামই পারে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে।
৬.২.ঘ. যারা মোটামুটি প্রয়োজন মনে করেন, তাদের যুক্তি:
– বর্তমানে মানুষ লোক দেখানো ধার্মীক। তাই লোক দেখানো ধার্মিক মানুষ রাজনীতিতে আসে তাহলে দেশকে জাহান্নামে পরিণত করবে। এদের সংখ্যাই আমার মনে হয় বেশি তাই ধর্মভিত্তিক তথা ইসলামী রাজনৈতিক দলের মোটামুটি প্রয়োজন; অতি প্রয়োজন বলতে পারছিনা।
– ইসলামি শাসন আমাদের দেশে আগে দেখিনি। সেজন্য বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কেমন হবে আসলে জানি না।
– মুসলিম হিসেবে চাই ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো বিজয়ী হোক। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আমার কাছে অসম্ভব বলে মনে হয়। কেননা, বাংলাদেশের মানুষ রাজনৈতিক সচেতন নয়। ইসলামকে ভালোবাসে আবেগে কিন্তু ইসলামের নীতি মানতে নারাজ।
– ইসলাম আমাদের সততাসহ আরো অনেক গুণ শেখায়, যার জন্য আমি মনে করি- এটা জরুরি। কিন্তু বাধ্যতামূলক নয়, কারণ আমাদের দেশে ইসলাম বাদেও আরো অন্য ধর্মের মানুষ রয়েছে।
– প্রয়োজন তবে সেটা গতানুগতিক প্রচলিত তথাকথিত বাংলাদেশের অতি উৎসাহী ইসলামি রাজনৈতিক আদর্শ নয়। সেটি হবে উমাইয়া খেলাফতের জ্ঞান বিজ্ঞান ভিত্তিক আদর্শ, খলিফা ওমরের মত ন্যায়ভিত্তিক নেতৃত্ব, আবু বকর রা. এর সত্যবাদী শাসক। কারণ তাদের মত নেতৃত্বে প্রকৃত ইসলামের বার্তা পৌঁছে যাবে। কিন্তু এই যুগে এমন নেতৃত্ব পাওয়া দুষ্কর।
– বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান, তাই ইসলামের রীতিনীতি অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করার মোটামুটি প্রয়োজন মনে করি।
– ব্যক্তিগতভাবে সবকিছু ধর্মভিত্তিক পছন্দ করা সত্ত্বেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি মোটামুটি প্রয়োজন। কারণ বর্তমানের কোনো রাজনৈতিক দলই সেই ইসলামি আদর্শ মনে লালন করেনা যেটা আমাদের রাসূল সা. এর যুগে ছিলো। তাই এই সুযোগ সন্ধানীদের অভিলাষ পূরণের সুযোগ দেয়া হোক এটা চাইনা।
৬.২.ঙ. যারা প্রয়োজন মনে করেন না, তাদের যুক্তি:
– এই দেশে বিভিন্ন ধরণের সংস্কৃতি রয়েছে; তাই ইসলামী রাজনীতি এখানকার জন্য প্রযোজ্য নয়।
– ইসলামিক রাজনীতি যারা করে তারা নিজেরাই দুর্নীতিমুক্ত নয়।
– তাদের মাঝে অনেক গোড়ামি আছে। তারা দেশকে অশান্ত ফেলবে, এই আশংকা করি।
– পজিটিভ চেঞ্জ আনার জন্য আলাদা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক আদারাইজেশনের থেকেও বেশি জরুরি রাজনীতির কনফিগারেশনে রিফর্ম আনা। নেতাদের মধ্যে পজিটিভির চর্চা থাকলে রাজনীতি, প্রশাসন এমনি শুধরে যাবে।
– আমি ইসলাম বিদ্বেষী না। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে অন্য ধর্মের উপর তাদের মতাদর্শ চালিয়ে দিচ্ছে তা আমাদের মহানবী (সা.) এর আদর্শ বিরোধী। এবং তা যেকোনো ধরনের সামাজিক অস্থিরতার এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা জন্য দায়ী বলে আমি মনে করি।
৬.৩ বাংলাদেশে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা:
বাংলাদেশে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের নারী শিক্ষার্থীদের ধারণা নিচে বিশ্লেষণ করা হলো।
৬.৩.ক. বাংলাদেশে প্রচলিত ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের নারী শিক্ষার্থীদের ধারণা:
এক্ষেত্রে ৫২.৯% শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যমান ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশের জন্য ইতিবাচক মনে করেন। বাকি ৪৭.১% শিক্ষার্থী বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন।

৬.৩. খ. অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা ইসলামী দলগুলোর ব্যাপারে মূল্যায়নকালে যেসব ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর নাম উল্লেখ করেছে; শিক্ষার্থীদের উল্লেখ অনুপাতে প্রচলিত ইসলামী দলগুলোর নাম ক্রমানুসারে নিচে দেওয়া হলো অর্থাৎ যে দলের নাম বেশি উল্লিখিত হয়েছে সে দলের নাম ক্রমানুসারে উপরে রাখা হয়েছে।
- বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী
- বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির (যদিও এটি পূর্ণ রাজনৈতিক দল নয়, বরং একটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন কিন্তু শিক্ষার্থীরা এটিকে ইসলামী দল হিসেবে উল্লেখ করেছেন)
- ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ
- হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ
- ইসলামী ঐক্যজোট
- বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন
- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
- নেজামে ইসলাম পার্টি
- বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন
- তাবলিগ (যদিও এটি মোটেও রাজনৈতিক দল নয় কিন্তু কয়েকজন শিক্ষার্থী তাবলিগ কেও রাজনৈতিক দল হিসেবে উল্লেখ করেছেন)
৬.৩. গ. তাদের মূল্যায়নের পক্ষে যুক্তিসূমহ:
ইতিবাচক মূল্যায়নকারীদের যুক্তি (সারসংক্ষেপ):
– তারা আল কোরআন ও হাদিস মোতাবেক রাজনীতি করে;
– জনগণের কল্যাণে কাজ করার স্পৃহা আছে এবং ন্যায়নীতির সাথে কাজ করে;
– তারা ইসলামিক ধারায় রাষ্ট্র পরিচালনার চেষ্টা করে আর ইসলাম একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু এবং সুস্থ পরিবেশ নির্মাণের বৃহৎ হাতিয়ার, যার ফলে রাজনীতির ক্ষেত্রে ইসলামিক দল দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে বলে আশাবাদী;
– কোনো প্রকার অন্যায় ও দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত নয়;
– সাধারণ রাজনৈতিক দলগুলো থেকে তারা অনেক বেশি শান্তিপ্রিয়;
– সৎ, মেধাবী নেতা-কর্মী বেশি;
– দলগুলোতে তুলনামূলক জবাবদিহিতা ও সুশাসন বেশি;
নেতিবাচক মূল্যায়নকারীদের যুক্তি (সারসংক্ষেপ):
– তারা চাপিয়ে দেওয়া পন্থায় বিশ্বাসী;
– তারা পুরুষদের আধিপত্য বেশি প্রতিষ্ঠা করতে চায়;
– প্রচলিত ইসলামিক দলগুলো পরিপূর্ণ ইসলামী শরীয়াহ ফলো করছে না (ঘাটতি বিদ্যমান), তথা ইসলামের মূল তাৎপর্য থেকে দূরে;
– তারা জনগণের পালস বুঝতে ব্যর্থ হয়;
– বড় বড় ইসলামিক রাজনৈতিক দল হওয়া সত্ত্বেও তাদের কোনো দৃঢ় লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নাই;
– জনকল্যাণমূলক কাজের বিবেচনায় ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে তারা অনেক পিছিয়ে ও আশাব্যঞ্জক ভূমিকায় নেই;
– দলগুলোর কিছু অতি উৎসাহী নেতা যথেষ্ট চিন্তা না করে অদূরদর্শী কাজ ও বক্তব্যের মাধ্যমে সমাজকে অশান্ত করে তোলেন;
– জ্ঞান বিজ্ঞান, সাহিত্য সংস্কৃতি ও ইতিহাস ঐতিহ্যের, এবং নৃতাত্ত্বিক জাতিসত্বার ব্যাপারে নির্মম মনোভাব এবং যেকোনো বিষয়ের ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিতর্ক সৃষ্টি করা;
– আর জনগণের ধর্মীয় অনুভবকে ব্যবহার করার প্রবণতা এবং ইসলামকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করে;
– ইসলামিক দলগুলোর মধ্যে এমন কোন বৈশিষ্ট্য দেখিনা যে তাদের অন্য দলগুলো থেকে আলাদা রাখে;
– তাদের মধ্যে রাষ্ট্র চালানোর মতো দক্ষতা দেখা যায় না;
– তারা অন্য ধর্মকে সম্মান করতে ব্যর্থ হবে;
– তাদের নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য নেই।
৭. উপসংহার (Conclusion):
৭.১ ইসলামী রাজনীতির ভবিষ্যৎ:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ইসলামী রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই এক গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু বিতর্কিত জায়গা দখল করে আছে। এই গবেষণার ফলাফল থেকে বোঝা যায়, ইসলামী রাজনীতি এখনো শিক্ষিত নারীদের দৃষ্টিতে একটি নৈতিক, আদর্শভিত্তিক এবং ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে উপস্থিত, যদিও বাস্তবিক ক্ষেত্রে এর অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশ মনে করেন, ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো যদি সংগঠিত, স্বচ্ছ এবং সমসাময়িক সমস্যাগুলোর কার্যকর সমাধান উপস্থাপন করতে পারে, তবে তারা সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
৭.২ শিক্ষিত নারীদের দৃষ্টিকোণ থেকে এর প্রভাব:
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের নারী শিক্ষার্থীরা ইসলামী রাজনীতির প্রতি যেমন আকর্ষণবোধ করেন, তেমনি সমালোচনাও করেন—
– তারা ইসলামী মূল্যবোধকে প্রশংসা করেন, বিশেষ করে ন্যায়ের ধারণা, দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান এবং রাষ্ট্রীয় নৈতিকতা রক্ষার দিকগুলো।
– কিন্তু তারা এটাও লক্ষ্য করেছেন যে, অনেক ইসলামী দল নারীর সম্পৃক্ততা এবং নেতৃত্বের প্রশ্নে পশ্চাদপদ মানসিকতা বহন করে।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায় যে, শিক্ষিত নারীরা ইসলামী রাজনীতিকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত, তবে সেটি হতে হবে উন্নয়নমূলক, অংশগ্রহণমূলক এবং যুগোপযোগী।
৭.৩ গবেষণার সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ গবেষণার পরামর্শ:
এই গবেষণায় যেহেতু ১০২ জন নারী শিক্ষার্থীর ওপর সীমিত পরিসরে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তাই এটি পুরো দেশের নারীদের প্রতিনিধিত্ব করে না।
– অংশগ্রহণকারীরা শুধুমাত্র অনলাইন ফর্ম পূরণের সুযোগ পেয়েছেন; যেখানে গভীর সাক্ষাৎকার বা ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি, যা আরও বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ দিত।
৭.৪ ভবিষ্যৎ গবেষণার জন্য প্রস্তাবনা:
– বৃহৎ আকারে নারীদের নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি, অঞ্চল ও ধর্মীয় মতানুযায়ী বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।
– ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রমে নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে আলাদা করে গবেষণা করা প্রয়োজন।
– নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামী রাজনীতির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করাও গুরুত্বপূর্ণ।
সংযুক্তি: গবেষণায় মতামত সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত প্রশ্নমালা
১. আপনি বর্তমানে অথবা ইতিপূর্বে যে ধরণের সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন বা ছিলেন?
২. প্রকৃত অর্থে “রাজনীতি” বলতে কী বুঝায়? (বই-প্রত্রের উত্তর নয়, বরং আপনার ধারণা প্রদান করুন)
৩. বাংলাদেশের ওভারঅল রাজনীতি নিয়ে আপনার ধারণা কেমন?
৪. উপরোক্ত মতামতের ভিত্তিতে (ইতিবাচক হোক কিংবা নেতিবাচক) ২/১টি যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করুন
৫. ইসলামী রাজনীতি বলতে কী বুঝেন?
৬. দুর্নীতিমুক্ত, উন্নত ও কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইসলামী রাজনৈতিক দলের কেমন প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন?
৭. উপরোক্ত মতামতের ২/১টি যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করুন (কেন অতি প্রয়োজন বা মোটামুটি প্রয়োজন কিংবা প্রয়োজন নেই)
৮. বাংলাদেশে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপারে ওভারঅল আপনার ধারণা কেমন?
৯. উপরোক্ত মতামতের ভিত্তিতে আপনার পরিচিত ইসলামিক দলের (ইতিবাচক হোক বা নেতিবাচক) কয়েকটি মৌলিক বৈশিষ্ট উল্লেখ করুন-
১০. বাংলাদেশে “ইসলামী রাজনীতি” করে এমন কয়টি দলের নাম আপনার জানা আছে? (সংখ্যা বসান)
১১. উপরোক্ত মতের ভিত্তিতে আপনার জ্ঞাত দলের নামগুলো উল্লেখ করুন:
১২. আপনার দৃষ্টিতে বাংলাদেশে সবচেয়ে অগ্রগামী ও দেশের মানুষের জন্য কল্যাণকামী ইসলামী দল কোনটি? (একটিও না থাকলে, একটিও নেই লিখুন; একাধিক থাকলে একাধিন নাম উল্লেখ করুণ)
১৩. উপরোক্ত মতামতের ভিত্তিতে ২/১ যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করুন
রেফারেন্স:
- Alam, A., Biswas, S., Islam, N., & Roy, R. (2024). Population, Environment and Disease: Towards Health Geography. Google Books.
- Hasan, M. (2020). Islamization, Ummah Consciousness and Mass Support for Political Islam. In Islam and Democracy in South Asia (pp. 135–153). Springer.
- Huq, S. (2013). Religious Learning Circles and Da`wa: The Modalities of Educated Bangladeshi Women Preaching Islam. In Muslima Theology (pp. 87–102). Springer.
- Asadullah, M. N., & Chaudhury, N. (2010). Religious schools, social values, and economic attitudes: Evidence from Bangladesh. World Development, 38(2), 205–217.