Title: Importance and necessity of utilization of time in the flow of life
Writer: Hasan Bin Hashemi, Researcher and Teacher, Birshreshtha Munshi Abdur Rouf Public College, Mobile: +880 1913-655527
Abstract:
Time is the most important blessing bestowed by the Great Allah. Time is the sum total of life. Those who have used their time wisely have been successful. And those who have wasted their time have failed. Allah Ta’ala has mentioned time in many places in the Holy Quran to make people aware of time. Our beloved Prophet (peace be upon him) used to give the utmost importance to time. Therefore, we should also give the utmost importance to time and use it properly. Then only will individual and collective life be filled with success, and the country and nation will prosper.
সারসংক্ষেপ:
মহান আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত নেয়ামত সমূহের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেয়ামত হল সময়। সময়ের সমষ্টিই জীবন। যারা সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়েছেন তারাই সফলকাম হয়েছেন। আর যারা সময় অপচয় করেছে তারা ব্যর্থ হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের বহু জায়গায় সময়ের উল্লেখ করে মানুষকে সময় সম্পর্কে সচেতন করেছেন। আমাদের প্রিয় রাসূল (সাঃ) সময়ের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন। তাই আমাদেরও সময়ের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সময়ের যথাযথ ব্যবহার করা দরকার। তাহলেই ব্যক্তি ও সামষ্টিক জীবন সফলতায় ভরে ওঠবে, দেশ ও জাতি উন্নত হবে।
ভূমিকা:
আল্লাহ তায়ালার অগণিত নেয়ামতের মধ্যে মৌলিক ও প্রধান হচ্ছে সময়। এটি মানব জীবনের মূলধন ও শ্রেষ্ঠ সম্পদ। সময়ের দৃষ্টান্ত প্রখর রোদের মধে রাখা বরফ খণ্ডের মতো। যা ব্যবহৃত না হলেও গলে যাবেই। মানুষের সফলতা ব্যর্থতা নির্ণিত হয় সময়ের সদ্ব্যবহারকে কেন্দ্র করেই। এ কারণেই সময়ের নিয়ন্তা মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মানব জীবনের ধ্বংসলীলা ও মুক্তিনামা তুলে ধরেছেন সময় নামক সূরা ‘আসরে’।[1] অথচ আনমনে, অবহেলায় আমাদের সময় বয়ে যায়। আমরা সময়ের মূল্য দেই না, এর মূল্য বুঝি না, যদিও সময়ের সমষ্টিই হল জীবন।
ইসলামের সকল কর্মপদ্ধতিতে সময়ের মূল্য অপরিসীম। নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত সব ইবাদাতের সংগেই সময়ের নিবিড় যোগসূত্র বিদ্যমান। নামায সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,
اِنَّ الصَّلٰوۃَ کَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ کِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا
“নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়েম করা মু’মিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। ” (সুরা নিসা: ১০৩)।
একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিয়তসহ পানাহার, কামাচার ও পাপাচারমুক্ত থাকাকে সংযম সাধনা বলা হয়েছে।[2] পবিত্র হজব্রতেও নির্দিষ্ট স্থানের পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের শৃঙ্খলা রয়েছে।[3] সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা- ইসলাম একটি সময়ানুবর্তী জীবনদর্শন, যা মানুষকে নিয়মানুবর্তিতা, সময়ানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলাবোধ শিক্ষা দেয়।
বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে আমরা সময়ের পরিচয়, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, সময় ব্যবস্থাপনা, সময় অপচয়ের কুফল, সময়ের উপযোগী ব্যবহার কৌশল ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করবো।
সময়ের পরিচয়:
এটি বাংলা শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হল: কাল, বেলা, অবসর, ফুরসত, নির্দিষ্টকাল, সুযোগ, দিনকাল, সুদিন, আয়ুষ্কাল।[4]
সময় হল মহাবিশ্বের মৌলিক কাঠামোর একটি অংশ, যা একটি বিশেষ মাত্রা এবং যেখানে ভৌত ঘটনাসমূহ একটি ক্রমধারায় ঘটে।[5]
সময়ের গুরুত্ব:
সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সত্যিই তাই। বরফ খণ্ডের মতই সময়ও গলে যায়। ঠিক যেমন নদীর স্রোতও তার নিজস্ব গতিতে বয়ে যায়। এগুলো আটকানো যায় না।
সময়ের এতো মূল্য থাকার কারণেই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বারবার সময়ের উল্লেখ করেছেন। সময়ের কসম করেছেন, এমনকি একটি সূরার নামকরণ করেছেন ‘আসর’ তথা সময়। এছাড়াও সময়ের বিভিন্ন অংশ নির্দেশক শব্দাবলী দ্বারাও কুরআনের একাধিক সূরার নামকরণ করা হয়েছে। যথাঃ- ৮৯ নাম্বার সূরা ফজর- ভোর, ৯২ নাম্বার সূরা লাইল- রাত, ৯৩ নাম্বার সূরা দোহা- মধ্যাহ্ন এবং ১১৩ নাম্বার সূরা ফালাক- প্রভাত। এর দ্বারা সহজেই বোঝা যায়, আল্লাহ তায়ালা সময়কে কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন।
পবিত্র কুরআনে সময়ের আরবি প্রতিশব্দ আসর (সূরা আসর: ০১), ওয়াক্ত ( আরাফ: ১৮৭) সাআ ( আরাফ: ১৮৭), দাহার (ইনসান: ০১), হাওল (বাকারা: ২৩৩), হীন (ইউনুস: ৯৮), আজাল (ইউনুস: ৪৯), নাহার- দিন ( ইউনুস: ৫০), ইয়াওমুন- দিবস ( ইউনুস: ৫০), লাইল- রাত (বাকারা: ৫১) ইত্যাদির অত্যধিক উল্লেখ সময়ের গুরুত্ব প্রকাশ করে থাকে।
মহানবী (সাঃ) ও সময়ের সঠিক ব্যবহারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন,
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ لاَ تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ ”
ইবনু মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত:
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
” কিয়ামতের দিন মানুষের পা তার প্রভূর নিকট থেকে মোটেও সরাতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না তার নিকট পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর তা হলো: ১, নিজের জীবনকাল সে কোন কাজে অতিবাহিত করেছে। ২, যৌবনের শক্তি সামর্থ্য কোথায় ব্যয় করেছে। ৩, তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হতে তা উপার্জন করেছে ৪, এবং তা কোন কোন খাতে খরচ করেছে ৫, এবং সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মুতাবিক কী কী আমল করেছে।[6]
অন্য একটি আয়াতে পাঁচটি জিনিষের জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার সাথে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে।
اِنَّ اللّٰہَ عِنۡدَہٗ عِلۡمُ السَّاعَۃِ ۚ وَ یُنَزِّلُ الۡغَیۡثَ ۚ وَ یَعۡلَمُ مَا فِی الۡاَرۡحَامِ ؕ وَ مَا تَدۡرِیۡ نَفۡسٌ مَّاذَا تَکۡسِبُ غَدًا ؕ وَ مَا تَدۡرِیۡ نَفۡسٌۢ بِاَیِّ اَرۡضٍ تَمُوۡتُ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ
“কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহ তায়ালার নিকট আছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনি জানেন যা জরায়ুতে আছে। কেউ জানেনা আগামীকাল সে কি অর্জন করবেএবং কেউ জানেনা কোন স্থানে তার মৃত্যু হবে।নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত। (সূরা লুকমান: ৩৪)।
যেহেতু সময়ের কোন পর্যায়ে কী ঘটবে তার সুস্পষ্ট ধারণা আমাদের নেই। তাই, বর্তমান সময়কে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগাতে হবে।
মহানবী (সাঃ) সময়ের কাজ সময়মত করতেন। কখনো এক সময়ের কাজ অন্য সময়ের জন্য ফেলে রাখতেন না।
সময়ের সঠিক ব্যবহারে মানুষের ঔদাসিন্যের কারণে মহানবী (সাঃ) মানুষকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন,
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنْ النَّاسِ الصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ
” মানুষ দুটি নেয়ামত সম্পর্কে খুবই উদাসীন: সুস্থতা ও অবসর।[7] কারণ, মানুষ সুস্থ থাকাকালীন সময়ে অলসতা করে এবং অবসরের সময়কে গুরুত্ব দেয়না।
আখেরাতে কাফেররা দোযখের ভয়াবহ শাস্তির শিকার হয়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করবে,তাদেরকে পুনরায় পৃথিবীতে ফেরত পাঠালে তারা নিষ্ঠাবান বান্দা হবে। কিন্তু সময়ের অপব্যবহারের পর তার সদ্ব্যবহারের সুযোগ আর আসবেনা। মহানবী (সাঃ) বলেন,
اغتنم خمساً قبل خمس، شبابك قبل هرمك، وصحتك قبل سقمك، وغناك قبل فقرك، وفراغك قبل شغلك، وحياتك قبل موتك
পাঁচটি বিষয়ের পূর্বে পাঁচটি বিষয়কে সম্পদ মনে করো: (১) তোমার বার্ধক্যে জর্জরিত হওয়ার পূর্বে তোমার যৌবনকালকে, (২) তোমার ব্যধিগ্রস্ত হওয়ার পূর্বে তোমার স্বাস্থ্যকে, (৩) তোমার দারিদ্র্যপীড়িত হওয়ার পূর্বে তোমার অভাবমুক্ত বা সম্পদশালী অবস্থাকে, (৪) তোমার ব্যস্ত হয়ে পড়ার পূর্বে তোমার অবসর সময়কে এবং (৫) তোমার মৃত্যু আসার পূর্বে তোমার জীবনকালকে।”[8]
বাংলায় বিখ্যাত প্রবাদ আছে, “সময়ের একফোঁড় অসময়ের দশফোঁড়।[9] অর্থাৎ প্রতিটি কাজ তার যথার্থ সময়েই করা উচিত। অন্যথায় কাজটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।
মানুষের সুকোমল মনোবৃত্তির অংশ তার সময় জ্ঞান। পৃথিবীতে মানুষই একমাত্র প্রাণী যাকে আদর্শবান প্রাণী হতে হয়। গরু গরু হয়ে জন্মায় এবং গরুই থেকে যায়। কিন্তু অন্য সকল প্রাণীর মতই মানুষ মানুষ হয়ে জন্মালেও তাকে ধর্ম, নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধের জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভংগির যোগ্যতা অর্জনের মধ্য দিয়ে মানুষ হতে হয়। প্রকৃত মানুষ হতে হলে তাকে অবশ্যই কর্তব্যপরায়ণ ও সময়নিষ্ঠ হতে হয়৷ দৈহিক ও জৈবিক তাড়না বৈশিষ্ট্য ও স্বাভাবিকতায় মানুষ ও ইতর প্রাণীর মধ্যে প্রভেদ হলো ইতর প্রাণীর যোগ্যতা প্রকৃতিগত। অন্যদিকে মানুষকে তার অর্জিত যোগ্যতার মাধ্যমে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে হয়। কাজেই সময়ের মূল্য অনুধাবন ছাড়া মানব জন্ম বৃথা। পাপ ও পতন এই জন্মের একমাত্র পরিণতি।
জীবন চলার বাঁকে বাঁকে, সুখ-দুঃখের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ মানুষ ব্যাধি ও জরাগ্রস্ত হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। কাজেই সবাইকে সময় সচেতন হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
اَللّٰہُ الَّذِیۡ خَلَقَکُمۡ مِّنۡ ضُؔعۡفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنۡۢ بَعۡدِ ضُؔعۡفٍ قُوَّۃً ثُم جَعَلَ مِنۡۢ بَعۡدِ قُوَّۃٍ ضُؔعۡفًا وَّ شَیۡبَۃً ؕ یَخۡلُقُ مَا یَشَآءُ ۚ وَ ہُوَ الۡعَلِیۡمُ الۡقَدِیۡرُ
” আল্লাহ, তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন দুর্বল অবস্থায়, দুর্বলতার পর তিনি দেন শক্তি; শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।” (সূরা রূম: ৫৪)।
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ يُخْرِجُكُمْ طِفْلًا ثُمَّ لِتَبْلُغُوا أَشُدَّكُمْ ثُمَّ لِتَكُونُوا شُيُوخًا وَمِنْكُمْ مَنْ يُتَوَفَّى مِنْ قَبْلُ وَلِتَبْلُغُوا أَجَلًا مُسَمًّى وَلَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ هُوَ الَّذِي يُحْيِي وَيُمِيتُ فَإِذَا قَضَى أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ
” তিনিই তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন, পরে শুক্রবিন্দু হতে, তারপর আলাকা হতে,তারপর তোমাদেরকে বের করেন শিশুরূপে, অতঃপর যেনো তোমরা উপনীত হও তোমাদের যৌবনে, তারপর হয়ে যাও বৃদ্ধ। আর তোমাদের মধ্যে কারো মৃত্যু ঘটে এর পূর্বেই! যাতে তোমরা নির্ধারিত কাল প্রাপ্ত হও এবং যেনো তোমরা অনুধাবন করতে পারো।
তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান এবং যখন তিনি কিছু করার স্থির করেন তখন তিনি তার জন্য বলেন, ‘হও’, আর তা হয়ে যায়।” (সূরা মু’মিন: ৬৭-৬৮)।
আয়াত দুটি থেকে সহজেই প্রতীয়মান হয়, চিরদিন মানুষের শক্তি ও সামর্থ্য থাকেনা, বরং একটি নির্দিষ্ট সময় পরে মানুষ দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে যায়, বার্ধক্যে উপনীত হয়।৷ তাই সময়ের প্রতিটি অংশকে সদ্ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।
সময়: আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একটা সুযোগ –
আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে যেসব নিয়ামত দান করেছেন তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম হল সময়। তাই আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাকে এই সময়ের মাধ্যমেই পরীক্ষা করে থাকেন। তাকে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন। এই অবসর ও অবকাশ সময় বান্দা কতটুকু কাজে লাগালো তা আল্লাহ তায়ালা যাচাই করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَلَوْ يُؤَاخِذُ اللَّهُ النَّاسَ بِمَا كَسَبُوا مَا تَرَكَ عَلَى ظَهْرِهَا مِنْ دَابَّةٍ وَلَكِنْ يُؤَخِّرُهُمْ إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِعِبَادِهِ بَصِيرًا
“আল্লাহ মানুষকে তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দিলে ভূপৃষ্ঠে কোনো জীব-জন্তুকেই রেহাই দিতেননা, কিন্তু তিনি একটি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর তাদের নির্দিষ্ট কাল এসে গেলে আল্লাহ তো আছেন তাঁর বান্দাদের সম্যক দ্রষ্টা। (সূরা ফাতির: ৪৫)।
সময় সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা নিজেই বান্দাকে সচেতন করেছেন। যেমন:
وَهُمْ يَصْطَرِخُونَ فِيهَا رَبَّنَا أَخْرِجْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا غَيْرَ الَّذِي كُنَّا نَعْمَلُ أَوَلَمْ نُعَمِّرْكُمْ مَا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَنْ تَذَكَّرَ وَجَاءَكُمُ النَّذِيرُ فَذُوقُوا فَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ نَصِيرٍ
সেখানে তারা আর্তনাদ করে বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে।মুক্তি দাও, আমরা সৎকাজ করবো,পূর্বে যা করতাম তা করবোনা।’ আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাদেরকে এতো দীর্ঘ জীবন দান করি নাই যে, তখন কেউ সতর্ক হতে চাইলে সতর্ক হতে পারতো? তোমাদের নিকট তো সতর্ককারীও এসেছিলো। সুতরাং শাস্তি ভোগ করো; যালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই। (সূরা ফাতির: ৩৭)।
সুতরাং, আল্লাহ প্রদত্ত এই অবকাশকে সঠিক উপায়ে কাজে লাগাতে হবে। কোনোভাবেই সময়ক্ষেপণ বা নষ্ট করা যাবে না। অন্যথায় আখিরাতের শাস্তি স্বচক্ষে দেখে বৃথা আক্ষেপ ও অনুশোচনা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
أَوْ تَقُولَ حِينَ تَرَى الْعَذَابَ لَوْ أَنَّ لِي كَرَّةً فَأَكُونَ مِنَ الْمُحْسِنِينَ
“অথবা শাস্তি দেখিলে যেনো কাউকে বলতে না হয়, ‘আহা, যদি একবার পৃথিবীতে আমার প্রত্যাবর্তন ঘটতো তবে আমি সৎকর্ম পরায়ণ হতাম!” (সূরা যুমার: ৫৮)।
আমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাস আল্লাহর পক্ষ থেকে এক একটি অপার সুযোগ। প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে আমাদের জীবনকাল ক্ষয় হচ্ছে। শ্বাস-প্রশ্বাস যেনো একটি ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটার মতো, প্রতিমুহূর্তে বর্তমানকে অতীতে নিক্ষেপ করছে। অবচেতনভাবে মানুষের জীবনকে শূন্যের কোঠায় নিয়ে যাচ্ছে। যখন অক্সিজেন গ্রহণের পাত্র আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক শেষ হয়ে যাবে, তখন আর নিঃশ্বাস গ্রহণ করা যাবে না। প্রতিটি দিন ও রাত আমাদেরকে এভাবে দুনিয়া থেকে বিদায় করার কাজে নিয়োজিত। আল্লাহর কাছে ফিরে যাবার চেতনা ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করাই হচ্ছে এসবের লক্ষ্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الْإِنْسَانُ إِنَّكَ كَادِحٌ إِلَى رَبِّكَ كَدْحًا فَمُلَاقِيهِ
“হে মানুষ! তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট পৌঁছা পর্যন্ত কঠোর সাধনা করে থাকো,পরে তুমি তাঁর সাক্ষাৎ লাভ করবে।” (সূরা ইনশিকাক: ৬)।
কুরআনে আরেকটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা প্রায় একইভাবে উল্লেখ করেছেন
قُلْ لَا أَمْلِكُ لِنَفْسِي ضَرًّا وَلَا نَفْعًا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ لِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ إِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ فَلَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ
“বলো, ‘আল্লাহ তায়ালা যা ইচ্ছা করেন্তা ব্যতীত আমার নিজের ভালোমন্দের ওপর আমার কোনো অধিকার নেই।’ প্রত্যেক জাতির এক নির্দিষ্ট সময় আছে; যখন তাদের আওময় আসবে তখন তারা মুহূর্তকালও বিলম্ব বা ত্বরা করতে পারবেনা।” (সূরা ইউনুস: ৪৯)।
আমাদের এই শ্বাস-প্রশ্বাস শুধুই আল্লাহর পক্ষ থেকে সুযোগ বা অবকাশ নয়, বরং জীবন বাণিজ্যের একমাত্র প্রকৃত পুঁজিও। কেননা, জীবনের প্রতিটি নিঃশ্বাসের দ্বারা এক একটি অমূল্য চিরস্থায়ী সম্পদের ভাণ্ডার লাভ করা যায়। আয়ষ্কুালের সময় ছাড়া আর কোন মূলধন নেই। যে মুহূর্ত অতিবাহিত হলো তা আর ফিরে আসবে না। কেননা, মৃত্যু পর্যন্ত যতগুলো নিশ্বাস ফেলবে, তা আল্লাহর নিকট গণনা করা ও নির্দিষ্ট আছে। তদপেক্ষা অধিক একটি নিঃশ্বাসও ফেলবার অবসর দেয়া হবে না। আয় শেষ হয়ে গেলে বাণিজ্য সম্ভব নয়। আয়ু অতি সংকীর্ণ। পরকালে অনন্ত পরমায়ু লাভ হবে, কিন্তু সেখানে কিছুই করার নেই। প্রতিটি দিন ও রাত মানুষের শিক্ষা নেয়ার জন্য যে, প্রতিদিন আল্লাহ তায়ালা দয়া করে নতুন জীবন দান করেন। কারণ, ঘুম এক প্রকার মৃত্যু। ঘুমন্ত অবস্থায় মরে গেলে আশা থেকে যেত, হায় যদি একদিনের অবকাশ পেতাম, তবে নিজের কাজ কিছুটা সংশোধন করে নিতাম, গুছিয়ে নিতাম। তাই অদ্যকার প্রতিটি নিঃশ্বাসকে এক একটি অমূল্য রত্ন জ্ঞানে সদ্ব্যবহার করা উচিত।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي أَنْفُسِكُمْ فَاحْذَرُوهُ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ
“এবং জেনে রাখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের মনোভাব জানেন। সুতরাং তাঁকে ভয় করো এবং জেনে রাখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, পরম সহনশীল। (সূরা বাকারা:২৩৫)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
حَتَّى إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ
لَعَلِّي أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ كَلَّا إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَائِلُهَا وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ
“যখন তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন সে বলে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে পুনরায় প্রেরণ করো,
যাতে সৎকর্ম করতে পারি যা আমি পূর্বে করিনাই।’ না, এ হবার নয়।এতো তার একটি বুলি মাত্র। তাদের সামনে উত্থান দিবস পর্যন্ত বারযাখ থাকবে।” (সূরা মুমিনুন: ৯৯-১০০)।
মহানবী (সাঃ) বলেন,
“ما من يوم ينشقُّ فجره إلا ويُنادي: يا ابن آدم أنا خلقٌ جديد، وعلى عملك شهيد، فتزوّد منِّي فإني إذا مضيتُ لا أعود .. إلى يوم القيامة”
“প্রতিদিন ভোরবেলা দুজন ফেরেশতা ডেকে বলেন,হে আদম সন্তান! আমি একটি নতুন দিন। আমি তোমার কাজের সাক্ষী। অতএব তুমি আমাকে কাজে লাগাও। কেননা, আমি কিয়ামত দিবসের পূর্বে আর ফিরে আসবোনা” [10]
আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত অনন্ত নীরবতার গভীরে হারিয়ে যায়, যা আর ফিরে পাবার আশা নেই। জীবনকালের সাথে আরো কতোগুলো জীবনকাল একত্রে যোগ করলে তাও অনুল্লেখযোগ্য স্বল্প সময়। কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের কাছে আছে মাত্র একটি জীবনকাল। তা আর কতো সময়! কিন্তু এর প্রতিটি মুহূর্ত অনন্ত নীরবতার মধ্যে হারিয়ে যাওয়া থেকে আমরা রক্ষা করতে পারি। যদি আমরা প্রতিটি মুহূর্তে কিছু একটি উপকারী কাজ করি, তা যতোই ক্ষুদ্র হোক।
সময়ের আপেক্ষিকতা:
সময় একটি চির আপেক্ষিক বিষয়, বিশেষত ইহ ও পরকালীন প্রেক্ষাপটে। ইহজাগতিক প্রেক্ষাপটের পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান হবে পরকালীন সময়ের একটি দিন।[11] মুসনাদে আহমদে হযরত আবু সাইদ রাঃ হতে বর্ণিত নবী সাঃ কে জিজ্ঞেস করা হল পরকালীন যে দিনটি পার্থিব পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান হবে সেটা তো তাহলে খুবই দীর্ঘ হবে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ! আল্লাহ তায়ালা মুমিনের উপর এই দিনকে এত হালকা করে দেবেন যে, দুনিয়ায় তার এক ওয়াক্ত ফরয নামায আদায় করতে যেটুকু সময় লাগতো ঐ দিনকে এটুকু সময়েরও কম বলে তার কাছে অনুভূত হবে।[12]
এ প্রসংগে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ
“ফেরেশতা এবং রূহ আল্লাহর দিকে উর্ধ্বগামী হয় এমন এক দিনে, যার পরিমাণ পার্থিব পঞ্চাশ হাজার বছর।” (সূরা মাআরিজ: ০৪)।
এ ছাড়াও পবিত্র কুরআনে এমন দিনের কথাও বলা হয়েছে যার স্বাভাবিক ব্যপ্তি আমাদের গণনার হাজার বছরের সমান। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ أَلْفَ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّونَ
“তিনি আকাশ হতে পৃথিবী পর্যন্ত সকল বিষয় পরিচালনা করেন, অতঃপর একদিন সকল কিছুই তাঁর সামনে উত্থিত হবে- যে দিনের পরিমাণ হবে তোমাদের হিসাবে হাজার বছর।” (সূরা আস সাজদা: ০৫)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,
وَيَسْتَعْجِلُونَكَ بِالْعَذَابِ وَلَنْ يُخْلِفَ اللَّهُ وَعْدَهُ وَإِنَّ يَوْمًا عِنْدَ رَبِّكَ كَأَلْفِ سَنَةٍ مِمَّا تَعُدُّونَ
“তারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে, অথচ আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রতিশ্রুতি কখনো ভঙ্গ করেন না।তোমার প্রতিপালকের নিকট একদিন তোমাদের গণনার হাজার বছরের সমান।” (সূরা আল হাজ্জ্ব: ৪৭)।
মহানবী (সাঃ) এর আরেকটি হাদিসেও আমরা সময়ের আপেক্ষিকতার প্রমাণ পাই। শেষ যামানায় দাজ্জালের আগমন নিয়ে মহানবী সাঃ বলেন, যমিনে তার অবস্থান হবে ৪০ দিন। যার একদিন এক বছরের সমান। তারপর এক দিন এক মাসের সমান। তারপর এক দিন এক সপ্তাহের সমান। তারপর তার অন্যান্য দিনগুলি তোমাদের দিনের ন্যায়।[13]
সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করে যারা সফল হয়েছেন:
মহান স্রষ্টা প্রদত্ত সবচেয়ে দামী সম্পদ সময়ের যথাযথ ব্যবহার ও প্রয়োগ করে যারা ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন তাদের কিছু দৃষ্টান্ত এখানে তুলে ধরা হলো:
বিখ্যাত দার্শনিক আল রাজী প্রায় ২৪০ টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার ‘জুদারী ওয়াল হাসাবাহ’ নামক পুস্তক টি শুধু ইংরেজি ভাষাতেই চল্লিশ বার মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়েছে। মাত্র এক বছরেই তিনি বিশ হাজার পৃষ্ঠার মৌলিক রচনা লিখেছিলেন। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ষাট পৃষ্ঠা করে লিখতেন![14]
আল কিন্দী একাধারে বারোটি স্বতন্ত্র বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার পরও ছয়টি ভাষাতে অসাধারণ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন এবং প্রায় ৩৬৫ টি গ্রন্থ রচনা করেন।[15]
ইমাম ইবনে জারীর আল তাবারী (রঃ) জ্ঞানানুশীলনে তার জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি ক্রমাগত চল্লিশ বছর যাবত দৈনিক চল্লিশ পৃষ্ঠা করে মৌলিক রচনা লিখতেন। অর্থাৎ প্রায় পাঁচ লক্ষ চুরাশি হাজার পৃষ্ঠা। [16]
আল ফারাবী দশটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন এবং ছয়টি স্বতন্ত্র বিষয়ে তার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। প্রায় সত্তরটি বিশাল নোটবুকে তিনি দর্শনশাস্ত্রের সারাংশ লিপিবদ্ধ করেছিলেন। ফারাবী এরিষ্টটলের আত্মা সম্বন্ধীয় গ্রন্থটি একশরও বেশি বার এবং পদার্থবিজ্ঞান বিষয়টি চল্লিশ বার পাঠ করেছিলেন।[17]
এখানে উল্লেখ্য যে, প্রাচ্যের সুধী সমাজে এরিষ্টটল মুয়াল্লিম আউয়াল বা আদিগুরু ও ফারাবী মুয়াল্লিম সানী বা দ্বিতীয় গুরু হিসেবে পরিচিত।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ওপর প্রচণ্ড রণাঙ্গনে যুদ্ধ চলাকালেও নাযিল হতো মহাগ্রন্থ আল-কুরআন; আর তিনি তা যথাযথভাবে আত্মস্থ করতেন। হযরত আলী (রা) এর ব্যক্তিগত হাদীস সংকলন ‘সহীফা’ সংরক্ষিত থাকতো সর্বদা তাঁর তলোয়ারের খাপের ভিতর। আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট অন্য লোকদের সাথে কথোপকথনের সময় ফাঁকে ফাঁকে দিয়ে বই পড়তেন এবং গ্রামে ভ্রমণের সময় প্রতিদিন প্রায় তিনটি করে বই পড়তেন। আর নেপোলিয়ান যুদ্ধে গেলেও তার সাথে থাকতো একটি চলমান লাইব্রেরি এবং যুদ্ধক্ষেত্রেও তিনি বই পড়তেন। ক্যাডম্যান বার বছর বয়সে খনির মজুর হিসাবে জীবন আরম্ভ করেন। ঝুড়ি থেকে কয়লা খালাসের পর প্রতি দুই মিনিট অবকাশে খনির অন্ধকারে মৃদু আলোতে দাঁড়িয়ে একটু বই পড়ে নিতেন। আহারের সময়ও তিনি পড়া চালিয়ে যেতেন। সোহরাওয়ার্দির কোষ্ঠকাঠিন্য ছিল, টয়লেটে বেশি সময় লাগতো তাই কমোডে বসেই তিনি সেদিনের পত্রিকা পড়ে শেষ করতেন।[18]
সময়: একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ –
সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, দিবস, মাস আর কিছু বছরের সমষ্টি হচ্ছে আমাদের জীবন। যেমন কেউ যদি বাংলাদেশের গড় আয়ু অনুযায়ী বাহাত্তর বছর[19] বাঁচে তবে তা ঘন্টার হিসাবে হবে ৬৩০৭২০ ঘন্টা ; সংখ্যাটা অনেক বড় মনে হয়। কিন্তু হিসাব কষলেই বুঝব জীবনটা কত ছোট! যেমন শৈশবের অপরিপক্কতা ও বার্ধক্যের দুর্বলতার জন্যে যথাক্রমে পাঁচ ও দশ বছর হিসাব থেকে বাদ দিলে মোট বছর থাকে সাতান্ন । এর মধ্যে ঘুম ও বিশ্রামে যাবে প্রতিদিন কমপক্ষে আট ঘণ্টা। দাঁতব্রাশ থেকে শুরু করে টয়লেট ,ওযু , নামায, গোসল, খাওয়া, পত্রিকা পড়া. কাপড় পরা, যাতায়াত, গাড়ির জন্যে অপেক্ষা, যানজট, চা-নাস্তা, খেলাধুলা, টিভি দেখা, গল্প করা ইত্যাদি দৈনন্দিন আনুষঙ্গিকতায় কমপক্ষে প্রতিদিন যায় ছয় ঘণ্টা। সুতরাং মৌলিক কাজের সময় থাকলো প্রতিদিন মাত্র দশ ঘণ্টা। অর্থাৎ সাতান্ন বছর মানে সারা জীবনে মাত্র ২০৮০৫০ কর্মঘণ্টা। তার মধ্যে আবার প্রায় পঁচিশ বছর কেটে যায় লেখাপড়ায় অর্থাৎ প্রস্তুতিমূলক কাজে। অতঃপর মূলকাজের জন্যে থাকে বত্রিশ বছরে মাত্র ১১৬৮০০ কর্মঘন্টা। দশ বছর বয়স থেকে প্রতিদিন এক ঘন্টা করে ফেসবুক বা অনলাইনে সময় কাটালে মোট সময় যাবে ২০৮০৫ ঘণ্টা, যা জীবনের মোট কর্মসময়ের ৫ ভাগের এক ভাগ। সুতরাং কর্মের তুলনায় জীবনের পরিধি খুবই কম। আর তাই সময় নষ্ট করা মানে ভবিষ্যৎ ধ্বংস করা, জীবনকে ধ্বংস করা ।
মূল্যবান সময়:
মানবজীবনের প্রতিটি সেকেন্ডই মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ। তদুপরি আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসূল সাঃ কিছু কিছু সময়কে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ করেছেন, মহিমান্বিত করেছেন এবং অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। সে সময় গুলো আল্লাহর নিকট খুবই প্রিয় এবং সে সময় গুলোতে মানুষের কাজে আল্লাহ তায়ালা অত্যধিক বরকত দিয়ে থাকেন। যথা:
শেষরাত্রি:
এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا
“রাত জাগরণ করো, কিছু অংশ ব্যতীত।” (সূরা মুযাম্মিল: ০২)।
তাফসীরকারকগণ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লাইল বলতে শেষ রাতকে বুঝিয়েছেন।
তাছাড়া হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ يَقُولُ مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ ”.
শেষ রাতে আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দাদের বলতে থাকেন, কেউ আছোকি আমার কাছে ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কেউ আছোকি আমার কাছে কোনো কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দান করবো।[20]
সময় ব্যবস্থাপনা:
কীভাবে সময়-ব্যবস্থাপনা করা যায় তা বুঝতে হলে, প্রথমেই বুঝতে হবে সময়-ব্যবস্থাপনা বিষয়টা আসলে কী। সময়-ব্যবস্থাপনা আসলে সময়কে নিয়ন্ত্রণ করার মতো কোনো বিষয় নয়। কেননা ব্যবহারিক অর্থে যার উপর নিয়ন্ত্রণ নেই, তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়না! (আমরা কি সময়কে ধরে রাখতে কিংবা দ্রুত পার করতে পারি!)
“টাইম ম্যানেজমেন্ট” হ’ল কীভাবে সময়কে নির্দিষ্ট ক্রিয়াকলাপের মধ্যে ভাগ করতে হয় তা সংগঠন এবং পরিকল্পনার প্রক্রিয়া। ভাল সময় ব্যবস্থাপনার সাহায্যে আরও সহজে এবং স্মার্টলি কাজ করা যায়। যাতে সময় কম এবং চাপ বেশি থাকলেও কম সময়ে আরও বেশি কাজ করা যায়। অন্যথা সময় পরিচালনার ব্যর্থতা আমাদের কার্যকারিতাকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে এবং অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে।
সময় ব্যবস্থাপনা হচ্ছে নিজেকে এমনভাবে পরিচালনা করা যাতে আমরা যে সময়ের গণ্ডিতে আবদ্ধ, সেই সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। এমনটি আসলে কীভাবে করা যায়?
বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The Effective Executive’[21] এর লেখক পিটার ড্রাকার, সময়-ব্যবস্থাপনার জন্য তিনটি ধাপ অনুসরণের সুপারিশ করেন। বইটির যে অধ্যায়ে তিনি এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন, তিনি সেই অধ্যায়টার নাম দিয়েছেন: “নিজের সময়কে জানুন”
১) সময়ের বিশ্লেষণ করা।
২) নিষ্ফল বা নিরর্থক চাহিদাগুলো ছাঁটাই করা।
৩) হাতে সময় নিয়ে কাজগুলো সম্পন্ন করার লক্ষ্য স্থির করা।[22]
একজন চৌকস মুসলমানের প্রাত্যহিক জীবনাচারের আলোকে উপরোক্ত ধাপ তিনটি কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সে সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
১, সময়ের বিশ্লেষণ করা:
কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় নিয়ে নিজের সময়কে লিপিবদ্ধ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এক সপ্তাহে কতো সময় অপচয় করা হলো তা উপলব্ধি করার জন্য বুকে সাহস থাকা চাই। তবে নিজের সাথে সত্যবাদীর মতো আচরণ করাটাই হলো প্রতিকারের প্রথম পদক্ষেপ। সময় লিপিবদ্ধ করার দুই ধরনের পদ্ধতি আছে:
ক, সাথে একটি ডাইরি রাখা এবং প্রতি ঘন্টায় কী কী করা হলো, তা লিখে রাখা।
খ, যখন সময় বিশ্লেষণ করা হবে, তখন কাউকে সাক্ষী রাখা ভালো। কারণ, সময় সততার সাথেই লিপিবদ্ধ করা হয়।
২, নিষ্ফল বা নিরর্থক কাজগুলো ছাঁটাই করাঃ
সময় বিশ্লেষণের পর মনে একটা দুঃখবোধ জাগ্রত হতে পারে। এমন অনেক কিছুই করা হয় যা একেবারেই ছেঁটে ফেলা যায়। সকালবেলা নাস্তা করার জন্য ক্যাফেতে বসে একঘণ্টা সময় বৃথা নষ্ট না করে বাড়িতেই তা করা যেতো। টিভির চ্যানেল হাতড়ে বা ইন্টারনেট ঘেঁটে প্রতিদিন দুই ঘন্টা সময় ব্যয় করা কি সত্যিই জরুরি? এসব থেকে কি সময় বাঁচানো যায় না? চেষ্টা করলেই পারা যাবে ইনশাআল্লাহ। মহানবী (সাঃ) অনর্থক কোনো কাজ করতেন না।[23]
তাই নিষ্ফল বা নিরর্থক চাহিদাগুলো ছাটাই করতে যে কাজ গুলি করা যেতে পারে তা হচ্ছে:
ক, অনিচ্ছায় শুধুমাত্র পরিবারের খুশির জন্য কোনো কাজ করা:
খ, একাকিত্ব থেকে মুক্তি পেতে সম্পর্ক স্থাপন:
কাউকে ভালোবেসে তার সাথে সম্পর্কে জড়ানো কোনো অপরাধ অথবা সময়ের অপচয় নয়। কারণ, ভালোবাসা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের জীবনে সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হোক সেটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক অথবা অন্য যে কোনো সামাজিক সম্পর্ক।
কিন্তু কিছু কিছু সম্পর্কের কারণে সময়ের অপচয় হতেও পারে। সম্পর্কটি জীবনে কীরকম প্রভাব ফেলছে? সম্পর্কটি কি জীবন গড়তে সাহায্য করছে নাকি আরও পেছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে?
সম্পর্ক হতে হবে কেবল আল্লাহ তায়ালার জন্য। মহানবী (সাঃ) বলেছেন,
عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إِلاَّ لِلَّهِ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ
” ঈমানের স্বাদ কেবল সে ব্যক্তিই আস্বাদন করতে পারবে যে অন্য কাউকে শুধু আল্লাহর জন্য ভালবাসবে।[24]
গ, নিজের দক্ষতা জেনেও অন্যের মতামতের জন্য অপেক্ষা করা:
কী পারব আর কী পারব না তা অন্য কারও ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। আমাদের যোগ্যতা আমাদের চেয়ে ভালো কেউ জানে না। হ্যাঁ, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন যাকে দেখি তিনিই আমাদেরকে পৃথিবীর সবার চেয়ে ভালো চেনেন, তিনিই আমাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু।
অন্যের মতামতের অপেক্ষা করে কাটানো মুহূর্তগুলো কিন্তু আর ফিরে আসবে না।
ঘ, উদ্দেশ্যহীন এগিয়ে চলা:
প্রত্যেকের জীবনেরই একটা না একটা উদ্দেশ্য থাকা উচিত। আমরা কী করতে চাই? কেন করতে চাই? এ বিষয়ে আমাদের পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। কারণ যখনই আমাদের কাছে কাজ করার একটি উপযুক্ত কারণ থাকবে, তখন কাজের আগ্রহ হাজার গুণ বেড়ে যাবে। তখন সময় নষ্ট করার কথা আর মনে ঠাঁই পাবে না। তাছাড়া মুমিন জীবনের উদ্দেশ্য হল আল্লাহর ইবাদত করা[25] ও সর্বোত্তম কাজ করা[26]। তাই সে সময় নষ্ট করতে পারেনা।
ঙ, একসাথে সকলের সমস্যা দূর করার চেষ্টা করা:
মানুষকে সাহায্য করতে চাওয়া চমৎকার একটি গুণ। কিন্তু তারও একটি সীমারেখা আছে। আমরা যদি সবাইকেই সাহায্য করতে চাই, সবার সমস্যাই দূর করতে চাই তাহলে অবশেষে দেখা যাবে কাউকেই সাহায্য করতে পারছিনা। সবার মনের ইচ্ছা পূরণ করা কারও পক্ষেই সম্ভব না। তাই কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে যার সত্যিই আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন তাকে সাহায্য করাই ভালো।
সাধবান! আল্লাহর জন্য বরাদ্দ সময় বাঁচানো যাবে না! “সময় বাঁচানো”-র নামে কিছু লোক মসজিদে সালাত আদায় করতে যায় না। এই রকম সময় বাঁচানো নিষ্ফল কর্ম। মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক।[27] অতএব, সময় বাঁচানোর নামে দ্বীনের কাজের সময় কমানো যাবে না।
৩, হাতে সময় নিয়ে আমাদের কাজগুলো সম্পন্ন করার লক্ষ্য স্থির করতে হবে:
যখন আমরা কঠিন কিছু নিয়ে কাজ করছি এবং পুরোপুরি কাজের মধ্যে নিমগ্ন হয়ে আছি, ঠিক তখনই একটা ফোন কল বা ই-মেইল কিংবা মেসেজ এলার্ট কি বিরক্তিকর নয়? এই তৃতীয় ধাপ বা কৌশলটিতে মূলত যা বলা হচ্ছে তা হলো, আমাদের সময় ভাগ করে নিতে হবে এবং তা করতে হবে আমাদের জন্য সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সময় খণ্ডে। (অনেকের মতে, এক নাগাড়ে সর্বোচ্চ ৯০ মিনিট মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব। তবে এই ৯০ মিনিট হতে হবে বিরতিহীন)। সামান্য পরিমাণ কাজ করে সর্বোচ্চ পরিমাণ সুফল পেতে এই পদ্ধতি সহায়তা করবে। কারণটা খুব সহজ। আর তা হলো, আমরা এভাবে কাজ করলে একটি কাজের প্রতি আমাদের সবটুকু মনোযোগ নিবিড়ভাবে এবং নির্বিঘ্নে কাজে লাগবে। এক ঘণ্টার একটি কাজ করতে আমাদের ৪ ঘণ্টা লেগে যাবে যদি প্রতি ১০-১৫ মিনিটে আমরা বিরতি নেই বা বাধা প্রাপ্ত হই।
সময়ের অপচয় করার কুফল:
পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ সময় অপচয় করার মতো বোকামি আর হয়না। এর রয়েছে নানাবিধ কুফল।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
اِنَّ الۡمُبَذِّرِیۡنَ کَانُوۡۤا اِخۡوَانَ الشَّیٰطِیۡنِ ؕ وَ کَانَ الشَّیۡطٰنُ لِرَبِّہٖ کَفُوۡرًا
“যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার প্রতপালকের প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।” (বনী ইসরায়েল: ২৭)।
সময় অপচয়ের কুফলগুলো নিম্নরূপ:
ক, মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর ইবাদত করার জন্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ
“আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এজন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।” (সূরা যারিয়াত: ৫৬)।
কিন্তু সময় নষ্ট করলে মানুষ ইবাদত করতে পারবেনা। কেননা নেক নিয়তে করলে[28] মানুষের জাগতিক কাজও ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়।
খ, একটি প্রসিদ্ধ ও যথার্থ সত্য বাগধারা:
الدنيا مزرعةالاخرة
দুনিয়া আখিরাতের শস্যক্ষেত।[29] তাই এ দুনিয়ার প্রতি মূহুর্ত সময় মানুষকে আখিরাতের জন্য কাজে লাগাতে হয়। কিন্তু সময় নষ্ট করলে মানুষ তার ক্ষেত্রকেই নষ্ট করবে। ফলত তার আখেরাতও নষ্ট হবে।
গ, ব্যক্তির সময় নষ্টের প্রভাব জাতীয় পর্যায়েও পড়বে। এমনকি সময় নষ্টের ফলে শিক্ষা-দীক্ষা থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে জাতি বা দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সময়ের সদ্ব্যবহার করার উপায়:
‘সময়- Time’ প্রকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যার সাথে এই সৌরজগতের প্রতিটি প্রাণ, গ্রহ-উপগ্রহ, নক্ষত্র মোটকথা স্রষ্টার প্রতিটি সৃষ্টির সাথে এক গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। আর এই সময়ের একক হিসেবে আমরা ‘সেকেন্ড’ হিসেব করে থাকি। যেখানে আমাদের জীবন হতে অতিবাহিত হওয়া প্রতিটি সেকেন্ডের মূল্য অতুলনীয়। আমরা প্রত্যেকেই সৃষ্টিকর্তার বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এ পৃথিবীতে এসেছি। যদিও সেই নির্দিষ্ট সময়টুকু আমাদের অজানা। আমরা সবাই জানি- “Man is mortal”[30] অতঃএব আমাদের প্রত্যেকের জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত মধ্যকার সময়ের প্রতিটি সেকেন্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা কি আদৌ সেই সময়টাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছি? সিংহভাগ ব্যক্তিরই উত্তর হবে- “না”। আর এই উত্তর “না” হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান হলো অপরিকল্পিত জীবন ব্যবস্থার। আমরা সবাই জীবনে সফল হতে চাই কিন্তু সফলতা পেতে হলে যা করণীয় তা করি না। বিশেষ করে আমরা আমাদের জীবন ব্যবস্থার প্রতিটি পদে সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারি না। অথচ আমরা একটু সাবধানতা অবলম্বন করলেই অতিবাহিত হওয়া জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড’ই সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক আমরা কিভাবে আমাদের মূল্যবান সময়গুলো শিডিউল করে সঠিকভাবে ব্যবহার করবো।
ক, ভোরে ঘুম থেকে ওঠা:
“ভোরের মুখে সোনা রং থাকে”।
সকালে ওঠার প্রয়োজনীয়তা এই উপমা থেকেই বোঝা যায়। যারা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেন অন্যদের তুলনায় কাজ করার সময় বেশি পান। গবেষণায় দেখা গেছে, যখন কোনো ব্যক্তি ভোরে উঠেন, তখন অন্যদের তুলনায় তিনি বেশি সক্রিয় থাকেন, প্রোডাক্টিভিটিও বেড়ে যায়। কোনো ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে, পরিকল্পনা ও লক্ষ্য অর্জনে অধিক পারদর্শী হন। সকালে ঘুম থেকে উঠলে জীবনে ইতিবাচক দিক বেড়ে যায়, হতাশায় কম ভোগেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেগণ এক গবেষণায় দেখেছেন, যারা ভোরে ঘুম থেকে উঠে, তারা দেরিতে ঘুম থেকে উঠা শিক্ষার্থীদের তুলনায় ভালো ফল করে। ঘুমের মান ভালো হওয়া ও কাজের উৎপাদনশীলতার সঙ্গেও একে যুক্ত করা যায়। এ কারনেই ইসলাম ভোরের ঘুম ভাঙাতে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ঘোষণা করেছে, নিশ্চয়ই ঘুম থেকে নামায উত্তম।[31]
খ, চিন্তায় ও কর্মে গভীর মনোনিবেশ:
একাগ্র মনের চিন্তার নাম ধ্যান। এটি শুধু মনকেই কেন্দ্রীভূত করে না, শরীর যন্ত্রেরও উপকার করে। আর সত্যিকথা বলতে কি, মানুষের শক্তির উৎস হলো মন। মন যখন শান্ত থাকে মানুষ তার মস্তিষ্ককে সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারে। আর মনকে স্থির করার একটি পদ্ধতি হলো ধ্যান। আমাদের মন স্থির থাকলে আমাদের কাজের গতি এবং কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ে। তাছাড়া আমাদের নবী (সাঃ)ও নবুওয়াত পূর্বকালে হেরা গুহায় ধ্যানে মগ্ন ছিলেন।[32]
গ, কার্যতালিকা বা কার্যসূচি ব্যবহার করা:
দিনের শুরুতেই সারাদিনের কাজের তালিকা তৈরি করে নেয়া উচিত। সবসময় নিজের কাছে একটি নোটবুক রাখা যেতে পারে। অথবা স্মার্ট ফোনের To-Do list Apps ব্যবহার করা যেতে পারে। সেখানে সারাদিনের সবগুলো কাজ লিখে নেয়া যায়। যেকোনো কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে কার্যতালিকা তৈরি করা সবার জন্য অনেক জরুরী।মানুষের জীবন এখন বেশ ব্যস্ততায় ঘেরা। এই আবেশে হুট করে যেকোনো দরকারি কাজ করার কথা ভুলে যাওয়াই স্বাভাবিক। অন্য কোনো কাজ আমরা পারি বা না পারি ভুলে যেতে আমরা ওস্তাদ। সে লক্ষ্যেই কার্যসূচির প্রচলন হয়েছে। কার্যসূচি কোন কাজ জরুরী আর কোন কাজ অপেক্ষাকৃত কম জরুরী তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে সাহায্য করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ অফিসের কয়েকটি কাজ লিপিবদ্ধ করা হলো। অতঃপর একটি কাজ শেষ হয়ে এলে সেটির পাশে টিক দিয়ে অপর কাজে হাত দিলাম। এতে কিন্তু সময়কে খুব দারুণভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাই নয় কি? এছাড়াও কোনো কাজ শেষ হয়ে গেলে কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে এবং নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাস বেড়ে যায়। কাজের তালিকা সঠিকভাবে মেইনটেইন করলে আমাদের মূল্যবান সময়ের অপচয় হবে না, আমাদের কোনো কাজই বাদ পড়বে না এবং সময়মত হবে, ফোকাসও ঠিক থাকবে।
ঘ, কার্যতালিকার সবচেয়ে কঠিন কাজটি সবার আগে করা:
নিজের কাজের তালিকায় সবচেয়ে কঠিন যেই কাজটি সেই কাজটি সকালে আগে করা উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন এবং কঠিন কাজটি তালিকার শুরুতে লিখা উচিত। পর্যায়ক্রমে সহজ এবং সহজতর। দিনের শুরুতেই কঠিন কাজটি করে ফেললে আমরা থাকবো টেনশনমুক্ত এবং পরের কাজগুলো করা সহজ হবে। সহজ কাজগুলি আগে করে ফেললে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়বো। কঠিন কাজ করা আরো কঠিন হবে।
ঙ, স্যোশাল মিডিয়া থেকে বিরত থাকা:
এক জরিপে দেখা গিয়েছে, দিনের সবচেয়ে বেশি সময় নষ্ট হয় বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য। অনেকেই দেখা যায় কাজ করতে করতে ৫ মিনিট পর পর ফোনে উঁকি মারেন। ঘনঘন ফোনের নোটিফিকেশন দেখার অভ্যাস আমাদের কাজে মন বসানোর ক্ষমতা ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। সময় যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য মোবাইল ফোন দূরে কোথাও রাখা যেতে পারে। মেসেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপের নোটিফিকেশন অফ করে রেখে অবসর সময়ে ব্যবহার করা যায় এমনভাবে ব্যবস্থা করা উচিত। এতে করে কাজের সময় মনোযোগ বিঘ্নিত হবে না।
চ, POMODORO টেকনিক ব্যবহার:
(Pomodoro) পোমোডোরো ইটালিয়ান শব্দ যার অর্থ হচ্ছে টমেটো । আশির দশকে Francesco Cirillo[33] নামের একজন সাধারণ ছাত্র ছিলেন, উনি অনেক পড়াশুনা করতে চাইতেন, কিন্তু ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারতেন না। এতে তার রেজাল্ট খুব খারাপ হয়। তাই তিনি অনেক চিন্তা করে একটি টেকনিক আবিষ্কার করলেন, যার নাম দিলেন পোমোডোরো টেকনিক। সে তার সময়কে পোমোডোরোতে ভাগ করে নিল। প্রতি পোমোডোরো ছিল ৩০ মিনিট করে, যার মধ্যে ২৫ মিনিট মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আর ৫ মিনিট বিশ্রাম।
POMODORO টেকনিক যেটা দু ধরনের কাজ করে:
১। অনেক বেশী কাজ বা পড়ার চাপ থাকলে তা ভাগ করে কমিয়ে দেয়।
২। কম সময়ে অনেক বেশি কাজ করতে সাহায্য করে যার মানে কর্মদক্ষতা বাড়ায়।
১০/১২ টা পোমোডোরো দিলে একদিনে অনেক কিছু পড়া হয়ে যাবে। একঘেয়ামিও লাগবে না। এই টেকনিক ব্যবহার করে যে কাজ ১ সপ্তাহেও শেষ হতো না , তা ১ ঘন্টাতেই হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
ছ, না বলতে শিখতে হবে:
জীবনে না বলতে শেখাটা অনেক বেশি জরুরী, আমরা সবাইকে খুশি করে চলতে পারব না। সবাইকে খুশি করে চলতে গেলে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে ক্ষতি হবে। তাই কারো অনুরোধ রাখতে না পারলে সরাসরি সুন্দর করে না বলে দেওয়াই উত্তম।
জ, মাল্টিটাস্কিং বন্ধ করতে হবে:
অনেকে অ্যাসাইনমেন্ট করাকালীন মোবাইলে টুকুর টুকুর করে চ্যাটিং করেন ঐ দিকে আবার টিভিটাও খুলে রাখেন। এটি বাহ্য দৃষ্টিতে সকল কাজ একই সাথে হয়ে যাচ্ছে মনে হলেও আসলে তা হয়না। অনেকেই মনে করে একসাথে অনেক কাজ করতে পারা বড় কোনো গুন, আসলে মোটেও তা নয়। সত্যি বলতে, ব্রেন মাল্টিটাস্কিংয়ে অনুপযোগী। মানুষের ব্রেন একসাথে অনেকগুলো কাজের কমান্ড নিতে পারে না। যদি সব কাজকেই সমানভাবে করতে চাইলে কোন কাজই করা হবেনা। ‘If everything is important, than nothing will be’. তাই একটা সময়ে একটা কাজের প্রতি ফোকাস করি আসুন, এতে করে আমাদের প্রোডাক্টিভিটি বেড়ে যাবে আমাদের কাজও ভালোভাবে শেষ হবে।
ঝ, যানজটকে কাজে লাগনো:
ঢাকার রাস্তায় বের হওয়া মানেই ২ ঘণ্টা জ্যামে আটকে থাকা । এই ট্রাফিক জ্যামের সময়টিকেও কাজে লাগানো যায়। জ্যামে বসেই মোবাইলে রেকর্ড করা লেকচারগুলো অথবা কোন মোটিভিশনাল ভিডিও অথবা AUDIO BOOK, কুরআন তিলাওয়াত, হাদীস পাঠ ইত্যাদি কাজগুলোও করা যেতে পারে। কাজের পরিকল্পনা ছকও প্রস্তুত করা যায় জ্যামে বসেই। ট্রাফিক জ্যামকে আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করতে না দিয়ে, তাকে পরিকল্পনা মাফিক কাজে ব্যবহার করার প্রতি মনোনিবেশ করা উচিত।
এখনই সময়:
সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তাকে কাজে লাগাতে কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত হয়ে পড়ার বিকল্প নেই। কিন্তু তা কখন থেকে? অবশ্যই এখন থেকে।
তাছাড়া পৃথিবী খুবই ক্ষণস্থায়ী। হাদীসে আছে,
عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَهُ “ يَا عَلِيُّ ثَلاَثٌ لاَ تُؤَخِّرْهَا الصَّلاَةُ إِذَا آنَتْ وَالْجَنَازَةُ إِذَا حَضَرَتْ وَالأَيِّمُ إِذَا وَجَدْتَ لَهَا كُفْؤًا ” . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ حَسَنٌ .
“তিন কাজে বিলম্ব করতে নেই। যথা: (ক) যখন নামাযের সময় হয়; (খ) যখন জানাযার জন্য লাশ উপস্থিত করা হয় এবং (গ) যখন বালেগ পাত্রীর উপযুক্ত পাত্র পাওয়া যায়।[34] অন্য বর্ণনায় আছে, গুনাহ হলে তাওবা করা এবং ঋণ থাকলে পরিশোধ করা। প্রকৃতপক্ষে মানুষের জীবনে ওই কাজ আর কখনোই করা হয় না যা সুযোগ ও অবসরের জন্য রেখে দেওয়া হয়।একটি কাজ শেষ না হতেই চলে আসে আরো হাজারো কাজ।অনেক অসুবিধা ও অজুহাত। বুদ্ধিমানেরা প্রতিটি কাজ নগদে নগদে সেরেই ফেলেন না, বরং একটি কাজের ফাঁকে আরেকটি কাজ জোর করে হলেও ঢুকিয়ে দেন। দেখা যায় দুটি কাজই তার হয়ে যায়।
উপসংহার:
জীবনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু করতে হলে তা শুরু করার এখনই উপযুক্ত সময়। কারণ, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) সমাজ সংস্কারে হিলফুল ফুযুল নামক সাহায্য সংগঠন গড়ে তোলতে তাঁর চাচাদের সাথে মাত্র পনেরো বছর বয়সে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[35] মুহাম্মদ বিন কাসিম মাত্র ১৭ বছর বয়সে সিন্ধু বিজয় করেছিলেন।[36] সুতরাং আর সময় ক্ষেপণ নয়, এখন থেকেই শুরু হোক সময়ের সদ্ব্যবহারের অভিযান। মুসলিম রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমেদের ভাষায় আমরাও গেয়ে উঠি:
“ছিঁড়ে ফেল আজ আয়েশী রাতের মখমল-অবসাদ নতুন পানিতে হাল খুলে দাও, হে মাঝি সিন্দবাদ!”[37]
[1] আল কুরআন, সূরা আসর: ০১।
[2] ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, নবম-দশম শ্রেণি,জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা: ১০২।
[3] ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, পৃষ্ঠা:১০৬।
[4] ড. এনামুল হক (সম্পাদিত) বাঙলা উচ্চারণ অভিধান, বাংলা একাডেমি, দ্বিতীয় সংস্করণের তৃতীয় পুনর্মুদ্রণ, মাঘ ১৪১৪/ ফেব্রুয়ারী ২০১৮, পৃষ্ঠা, ৪৬৭।
[5] https://bn.m.wikipedia.org/wiki/ সময় 10/12/2019 , 10:00 pm
[6] তিরমিযী, কিয়ামত ও মর্মস্পর্শী বিষয়, বাব: ১, হাদীস নং ২৪১৬।
[7] বুখারী, কোমল ও বিনয়ী হওয়া, বাব – ৮১/১ হাদীস নং ৬৪১২।
[8] মেশকাত, কিতাবুর রিকাক, ২য় ফাসল, হাদীস নং ২০।
[9] ড. সৌমিত্র শেখর, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, অগ্নি পাবলিকেশন, পৃষ্ঠা: ১৬৮।
[10] আবু হাতেম আর রাযী (রঃ) এর কিতাব থেকে মা’ছারুন-নাবিয়্যি (সাঃ) এ উদ্ধৃত।
[11] সহীহ মুসলিম, যাকাত, বাব ৬, হাদীস নং ২১৮০।
[12] মুসনাদে আহমদ, ৩/৭৫; আল্লামা ইবনে কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল আজীম, পৃষ্ঠা: ২৮৬।
[13] সহীহ মুসলিম, ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী, হাদীস নং ৭২৬৩।
[14] মুহাম্মদ রোকনুদ্দৌলাহ, মুসলিম মনীষী আল রাজি, দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১৩ মার্চ, ২০১৬।
[15] ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, পৃষ্ঠা: ১৯৪।
[16] রোকেয়া মামুন, তাফসীর ও ইতিহাসের জনক ইমাম তাবারি, আলোকিত বাংলাদেশ, ০৯ মার্চ, ২০১৭।
[17] শেখ মুহাম্মদ ইবরাহীম, আবু নসর মুহাম্মদ আল ফারাবী, মাসিক তরজুমান এ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত, ফেব্রু-মার্চ, ২০১৯ সংখ্যা।
[18] আহসান হাবীব ইমরোজ, মোরা বড় হতে চাই, পৃষ্ঠা-৪৫।
[19] বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর মনিটরিং দি সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্টাটিসটিক্স অব বাংলাদেশ (এম এস ভি এস বি) কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন, ১১ জুন, ২০১৯।
[20] সহীহ বুখারী, তাহাজ্জুদ, রাতের শেষ ভাগ ও সালাতে দোয়া করা, হাদীস নং ১১৪৫।
[21] Peter F. Drucker, The effective executive, the definitive guide to getteng the right things done, Harper Business.
[22] প্রকাশক, Harper business, January 3, 2006।
[23] নাসায়ী, কিতাবুল জুমুয়া, খুতবা সংক্ষেপকরণ মুস্তাহাব হওয়া, হাদীস নং ১৪১৪।
[24] সহীহ বুখারী,কিতাবুল ঈমান, ঈমানের সুস্বাদ, হাদীস নং ১৬।
[25] আল কুরআন, সূরা আয যারিয়াত: ৫৫।
[26] আল কুরআন, সূরা আল মুলক: ০২।
[27] সহীহ মুসলিম, মসজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ, বাব ৪২, জামায়াতে সালাত আদায়ের ফজীলত এবং তা পরিত্যাগকারীর প্রতি কঠোরতা, হাদীস নং ১৩৬৮।
[28] সহীহ বুখারী, ওহীর সূচনা, বাব ১, আল্লাহর রাসূলের প্রতি ওয়াহী শুরু হয়েছিল যেভাবে, হাদীস নং ০১।
[29] এটিকে হাদীস বলা হলেও এটি হাদীস নয়। এটি এক্টি বিখ্যাত আরব উক্তি। মোল্লা আলী কারী তার আল আসরারুল মারফুআহ গ্রন্থের ১২৩ পৃষ্ঠায় এটি হাদীস না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
[30] আল কুরআন, আল আম্বিয়া: ৩৫।
[31]সুনানে আন নাসায়ী, আযান, বাব, ফজরের আযানে আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম বর্ধিত করা, হাদীস নং ৬৪৭।
[32] সহীহ মুসলিম, ঈমান, বাব ৭৩, হাদীস নং ২৯৩।
[33] Owner of cirillo consulting
[34] জামে আত তিরমিজি, সালাত, বাব, ১৫, হাদীস নং ১৭১।
[35] মূল- আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপুরী, অনুবাদ- খাদিজা আখতার রেজায়ী, আর রাহীকুল মাখতুম, আল কোরআন একাডেমি লন্ডন, পৃষ্ঠা: ৭৯।
[36] Muhammad bin qasim, History of sub continent and sindh, page: 11.
[37] ফররুখ আহমেদ, সাত সাগরের মাঝি, সিন্দবাদ, স্টুডেন্ট ওয়েজ প্রকাশনী, তৃতীয় মুদ্রণ, একুশে বইমেলা ২০১৪, পৃষ্ঠা: ১২।