Title: Spread of Islamic teachings and values in modern Arabic poetry
Writer: MD. Kawsar Alam Shibly, Lecturer, Nazmul Hoq Madinatul Ulum Jamia Arabia Kamil Madrasah, M.Phil. Researcher, Arabic Department, DU Mobile:+880 1815-892426
Abstract:
This article explores the decline of Arabic language and literature following the fall of Baghdad in 1258 until Napoleon’s conquest of Egypt in 1798 and its development in modern era. It argues that despite the continuation of Muslim rule in certain regions, this period witnessed a stagnation in poetic innovation and intellectual engagement with literature. This lack of progress, with the exception of a few noteworthy contributions, led literary critics to label it as an “Era of Decline” (Asr ul-Inhitat). However, the pursuit of knowledge continued in other areas like Islamic philosophy, history, and linguistics. While acknowledging this broader intellectual development, the paper justifies the term “decline” when focusing specifically on the trajectory of Arabic poetry during this era. The article concludes by hinting at a subsequent flourishing of Arabic poetry in the modern era, with further sections presumably exploring the characteristics of this resurgence and the role of specific poets in integrating Islamic themes.
ভূমিকা
১২৫৮ সালে বাগদাদের পতনের পর ১৭৯৮ সালে (১২১৩ হি:) নেপোলিয়নের মিসর বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৫৪০ বৎসরের এ পরিসরে ব্যতিক্রমধর্মী কয়েকজন কবি সাহিত্যিকের সীমিত অবদান ছাড়া আরবী ভাষা ও সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি সাধিত হয়নি। এ সময় কবিতায় সৃষ্টি হয়নি নতুন কিছু, মননশীল কাব্যচর্চা এ সময় আদৌ ব্যাপকতা লাভ করেনি, সাহিত্য সমালোচকগণ এ সময়কে পতনের যুগ (আসরুল ইনহিতাত) হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এ সময়ে স্পেনের মুসলিম শাসন এবং তুরস্কে উসমানী খিলাফত বজায় থাকলেও আব্বাসী যুগের মত আরবী সাহিত্যে বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতা ছিল না। কাব্য রচনার ধারা একপ্রকার গতিহীন থেকে যায়। তবে তাতারীদের আঘাতে আরব জাহান বিধ্বস্ত হওয়ার পরও মিশর, হিন্দুস্তান ও উসমানী খেলাফতের অধীনস্থ অঞ্চলে মুসলিমদের জ্ঞান চর্চার ধারা অব্যাহত ছিল। আরবী কবিতার অগ্রগতি তেমন না হলেও ইসলামী দর্শন, ইতিহাস, অভিধানশাস্ত্র, আরবী ব্যাকরণ ও অলংকার ইত্যাদি বিষয়ে বিশাল কলেবরে অনেক জ্ঞানগর্ভ রচনা এ যুগে সম্পন্ন হয়েছিল। তবে শুধু আরবী কাব্যের ইতিহাস বিবেচনা করলে এ সময়কে পতনযুগ বলা সমীচীন।
এরপর আধুনিক যুগের সূচনাকাল থেকে অদ্যাবধি আরবী কাব্য অভাবনীয় বিস্তৃতি ও সমৃদ্ধি লাভ করে। আলোচ্য অধ্যায়ে প্রাসঙ্গিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে প্রথম পরিচ্ছেদে আধুনিক যুগের সূচনাকাল, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে এ যুগের আরবী কবিতায় বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন ও সমৃদ্ধি, এবং তৃতীয় পরিচ্ছেদে আধুনিক আরবী সাহিত্যে ইসলামী শিক্ষার উপাদানের প্রসারে উল্লেখযোগ্য কবিদের অবদান সংক্ষেপে আলোচিত হয়েছে।
১. আরবী সাহিত্যে আধুনিক যুগের সূচনা
নেপোলিয়নের মিসর বিজয়ে রাজনৈতিক অবস্থা যে রকমই হোক না কেন এর ফলে আরবী ভাষা সাহিত্যের ক্ষেত্রে নানা সম্ভাবনা পথ উম্মুক্ত হয়ে যায়। ইউরোপের সঙ্গে নতুনভাবে আরববিশ্বের পরিচয় ঘটে। ফরাসিরা এখানে দুটি শিক্ষা নিকেতন স্থাপন করে। প্রকাশ করে আল আশুর আল-মিশরী ও আল তানবীয়্যাহ নামে দুটি পত্রিকা, আর নাটক মঞ্চায়নের জন্য প্রতিষ্ঠা করে নাট্যশালা। জ্ঞানর্চচার জন্য একাডেমী ও গ্রন্থাগার। পুস্তকাদি মুদ্রণের জন্য স্থাপন করে প্রেস।[1] এ সবের প্রভাবে জেগে উঠে মিশরের সাহিত্য-সংস্কৃতির নিদ্রিত অঙ্গন।
আধুনিক আরবী কবিতার ক্রমবিকাশ
প্রখ্যাত বাংলা সাহিত্যিক সৈয়দ আলী আহসান সাহিত্যের আধুনিকায়ন প্রসঙ্গে বলেন,
নতুন সময়ে এবং নতুন চিন্তাধারার পরিপ্রেক্ষিতে যে কোন গতানুগতিক রীতিই পূর্বভাবের অনুষঙ্গে ভারাক্রান্ত। তাই নতুন তাৎর্পযে তা কখনো বহমান হতে পারে না। এছাড়া মানুষ প্রতিমূহর্তে তার স্বাভাব অনুসারে এবং সাময়িক অবস্থার শাসনে একটি বিশিষ্ট প্রকাশরীতি আবিস্কারের জন্য উৎকন্ঠিত থাকে। পূর্বতন রীতি মানুষের বর্তমান অবস্থার পরিচয়কে প্রকাশ করতে সাধারনতঃ সক্ষম হয় না। আমরা তাই দেখি যে কবিতা বা চিত্রকলার ভাব বৈলক্ষনের সংগে সংগে শিল্প পদ্ধতির পরির্বতন ঘটেছে।[2]
আরবী কাব্য এর ব্যতিক্রম নয়। প্রাচীন রচনা শৈলীর নিগড় ভেঙ্গে আরবী কবিতা বৈচিত্র্যময় নতুন ধারার দিকে ধাবিত হয়েছে ক্রমশঃ। আরবী কবিতায় আধুনিক ধারার বিকাশকে দু’টি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়।
- প্রথম পর্যায়, প্রাচীন রীতির অনুসরণ ও নবজাগরণ
উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে আরবী কাব্য উসমানী যুগের রচনারীতি থেকে মুক্ত না হলেও দ্বিতীয়ার্ধে কবিতার উপস্থাপন পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন সাধিত হয়। আরবরা ইউরোপীয় সভ্যতা-সংস্কৃতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের সংস্পর্শে ও সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে আরবী সাহিত্যে নতুনত্ব আনয়নে সচেষ্ট হয়। এ সময় জাহিলী ও আব্বাসী যুগের প্রসিদ্ধ দীওয়ানসমূহ পুনঃমুদ্রিত হয়। প্রাচীন রীতিকে সমানে রেখে নতুন রূপে নতুন ধাঁচে কবিতা লিখতে শুরু করে এ সময়ের কবিরা। রচনাশৈলীর ক্ষেত্রে পুরাতন ধারা দৃশ্যমান হলেও রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও ইউরোপীয় সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রভাবে স্বাভাবিকভাবে কবিতায় নতুনত্বের ছোয়া লাগে।
অন্যদিকে ১৮৮২ সালে ইংরেজদের হামলা ও প্রভুত্বের কারনে আরবী কবিতায় ধ্বনিত হয় বিদ্রোহের সুর। বিখ্যাত সংস্কারক জামালুদ্দীন আফগানী ১৮৭১ সাল থেকে ১৮৭৯ সাল পর্যন্ত মিসরে অবস্থান করেন। তিনি ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য এক সাংস্কার আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। তার প্রভাবে আরবী কবিদের মনে ব্যক্তিস্বত্তা, জাতীয় অনুভূতি ও সমাজ সচেতনতা স্থান পায়।[3] তার সংস্কার আন্দোলনে মিসরের যে সকল কবি অংশ নেন তাদের মদ্যে আল-বারুদী (১৮৩৯-১৯০৪ খৃ.) অন্যতম। কবিতায় নতুন ধারা নির্মানের ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। তাকে আধুনিকতার পতাকা উত্তোলনকালী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আহমদ হাসান আয্-যয়্যাতের মতে ‘কসীদা’ রীতিতে যদি ইমরুউল কায়েস অনন্য আর কবিতা, উন্নতি ও সৌন্দর্য বিধানে যদি বাশশার একক কৃতিত্বের অধিকারী হয়ে থাকে, তাহলে কবিতায় জাগরণ ও নবায়নেন ক্ষেত্রে আল-বারুদীর কৃতিত্ব একক ও অনন্য।[4] বাক্যশিল্পের ক্ষেত্রে আল-বারুদীর দুই ধরনের ভূমিকা লক্ষ্যণীয় :
ক. প্রাচীন রীতির পুনর্জাগরণ।
খ. স্তুতিগাথা ও রোজগার করার উপায় থেকে কবিতাকে মুক্তি দান।
আল-বরুদী রেনেসা যুগের প্রথম পর্যায়ের কবি। এজন্য কবিতার বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে তিনি আধুনিক এবং ভাষা ও রচনারীতির দিক দিয়ে প্রাচীন। তিনি পুরাতন রীতির অনুসারী হলেও একবোরে অন্ধ আনুগত্য করেননি। তিনি জীবন ও জগৎকে নিজস্ব দৃষ্টিতে দেখেন। তার কাব্যমালায় তার সমকালের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের চিত্র অংকিত হয়েছে। মূলতঃ বারুদীই প্রথম প্রধান কবি যার কবিতার আরশীতে আধুনিকতা ঝলমল করে উঠে।[5] আল-বারুদীর কাব্য থেকে প্রতীয়মান হয় যে তিনি আরবী ভাষা-সাহিত্যের মূল ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য রচনা নীতির প্রাচীন কাঠামো ভেঙ্গে দেননি, বরং তিনি পুরাতন রীতির পুনর্জাগরণ করে তাতে নতুন কলাকৌশল ও সৌন্দর্যের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন।[6]
এ পর্যায়ের আরেকজন উল্লেখযোগ্য কবি হলেন আহমদ শাওকী। তিনি একজন শক্তিশালী নাট্যকারও। তিনি একাধারে রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা, ধর্ম, দেশপ্রেম, প্রসংশা, শোক, প্রকৃতি ইত্যাদি বিষয়াদির উপর কাব্য রচনা করেছেন। চার খণ্ডে সমাপ্ত তাঁর দীওয়ান আরবী কাব্যের এক উল্লেখযোগ্য সম্পদ। শাওকী অনেকটা আল-বারুদীর মতই পুরাতন রীতিতে নতুন ভাব ও বিষযের বহিঃপ্রকাশ ঘটিছেন। কবিতা রচনায় তিনি আব্বাসীয় যুগের আল-মুতানাব্বীর দ্বারা প্রভাবিত হলেও ভাষা ও ভাবের ক্ষেত্রে তার মৌলিকত্ব অনস্বীকার্য।[7] আহমদ শাওকী রচিত কাব্যনাট্য এ যুগের উল্লেখযোগ্য সংযোজন। প্যারিসের আধুনিক নাট্যশালায় প্রচুর নাটক দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে শাওকীর। আহমদ শাওকী একজন শক্তিশালী কবি। তিনি রচনারীতিরি দিক দিয়ে প্রাচীন আর ভাব ও বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে আধুনিক।
এ সময়ের আরেকজন কবি, যার কাব্যে দেশপ্রেম ও নবজাগরণের সূর ধ্বনিত, তিনি হলেন হাফিজ ইবরাহীম (১৮৭০-১৯৩২ খ্রিঃ)। তার কাব্যে প্রচুর বৈচিত্র পরিলক্ষিত হয়। সামাজিক ও রাজণৈতিক সমস্যাবহুল বিষয়বস্তু তার কবিতার প্রধান উপজীব্য।[8] হাফিয তার কবিতার উন্নতি লগ্নে ঘনিষ্ঠভাবে মিসরীয় জনগনের অনুভূতি ও আশা-আকাঙ্খার প্রতিনিধিত্ব করেন। তার কবিতায় দেশপ্রেম, স্বজাত্যবোধ ও বিদ্রোহের সুর ধ্বনিত হওয়ায় তিনি “শাইরুন নাইল” বা “নীল নদের কবি” হিসেবে সমাদৃত হন।[9]
এ পর্যায়ের আরেকজন উল্লেখযোগ্য কবি হলেন ইরাকের মারুফ রুসাফী (১৮৭৩-১৯৪৫ খৃ.)। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তার ছিল অবাধ বিচরণ। সামজের বঞ্চিত শ্রেনীর শোচনীয় জীবন চিত্র তার কবিতার মূল প্রাণ। উম্মুল-ইয়াতীম (অনাথ-জননী), আল-ইয়াতীম ফিল-ঈদ, (ঈদের দিনে অনাথ), আল-ইয়াতিমূল-মাখদু (প্রতারিত অনাথ), আস-সিজনু ফী বাগদাদ (বাগদাদের কারাগার), আল-মুতাল্লাকা (তালাকপ্রাপ্তা) ইত্যাদি শিরোনামে রচিত কবিতাগুলো এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য।
রুসাফী স্তুতি, ব্যঙ্গ, কৌতুক, প্রেম, শোকগাধা, গৌরবগাঁথা, রাজনীতি ও সমাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে কবিতা লিখেছেন। তবে লক্ষ্যনীয় যে, রাজনীতি ও সামাজিক কবিতার ক্ষেত্রে রুসাফীর স্বকীয়তা সার্থকভাবে প্রতিফলিত।[10] অন্যক্ষেত্রে তিনি গতানুগতিক রীতিতে বিচরণ করেছেন। এ ভাবে আল-বারুদী, আহমদ শাওকী ও তাদের অনুসরণকারী সমকালীন অন্যান্য কবিদের প্রচেষ্টায় আরবী কবিতা গতানুগতিক নিগড় ভেঙ্গে যে সকল যে সব বিষয়বস্তু দিয়ে সমৃদ্ধ হয়, সেগুলো হলো-
- দেশাত্মবোধক
- জাতীয়তাবাদ
- জাগরণমূলক
- সামাজিক
- ধর্মীয়
- প্রকৃতি
- বিষয়ক
- স্তুতিমূলক
- শোকগাথা ইত্যাদি।[11]
- দ্বিতীয় পর্যায়, নবায়ন
বিংশ শতাব্দীর সূচনা লগ্নেই এমন একদল কবির আবিভার্ব ঘটলো যারা কবিতার শরীর থেকে প্রাচীন আভরণ খুলে নতুন আভরণে সুসজ্জিত করার প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করলেন। ১৯০০ সালে প্রকাশিত ‘আল মাজাল্লাতুল মিসরীয়্যাহ’ নামক পত্রিকার মাধ্যমে খলীল মুতরান আপামর আরবী কবিদের উদাত্ত আহবান জানান যেন কবিতাকে প্রাচীন রীতির বন্ধ প্রকোষ্ট থেকে মুক্ত করা হয়। ১৯০৮ সালে প্রকাশিত তাঁর দীওয়ানে এ আহবান আরও স্পষ্ট। তাঁকে অনুসরন করে কবিতা লিখেন আবদুর রহমানী শুকরী (১৮৮৬-১৯৫৮), ইব্রাহীম আল-মাযিনী (১৮৯০-১৯৪৯) ও আব্বাস মাহমুদ আল-আক্বাদ (১৮৮৯-১৯৬৪) প্রমুখ কবিরা। বস্তুত আরবী কবিতা নবায়নের ক্ষেত্রে এ চার কবির কাব্য আন্দোলন যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।[12]
১২৫৮ সালে আব্বাসীয় যুগের পতনের পর ১৭৯৮ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৫৪০ বৎসর আরবী কাব্যে যে বন্ধ্যাত্ব নেমেছিল তা দূর হয় আধুনিক যুগের কবিদের অনবদ্য প্রচেষ্টায়। তাদের লক্ষ্য ছিল প্রাচীন বা গতানুগতিক রীতি থেকে মুক্ত করে আরবী কবিতাকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কাব্যের মর্যদায় উন্নীত করা। তাদের শৈল্পিক চেতনা ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রচেষ্টায় আরবী কবিতা ক্রমে নতুনরূপে সজ্জিত হয় এবং নতুন ভাবধারায় অলংকৃত হয়ে আত্মপ্রকাশ করে।
২. আধুনিক আরবী সাহিত্যে বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন ও সমৃদ্ধি
আধুনিক আরবী কবিতায় রেনেসাঁর গতিধারায় আরবী কবিতার বৈশিষ্ট্যেও পরিবর্তন আসে। জাহিলী যুগ থেকে রেনেসাঁর পূর্বযুগ পর্যন্ত এক ধরনের বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। রেনেসাঁর পর আধুনিক আরবী কবিতার বিষয়বস্তু ও ভাবধারা সমৃদ্ধি লাভ করেছে। এ সময় কবিতাও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে উঠে। কবি মাহমুদ সামী আল বারূদীর আত্মপ্রকাশের পর কবিতা নতুন বৈশিষ্ট্য পরিগ্রহ করে। তিনি কবিতায় আব্বাসীয় রচনারীতির অনুকরণ করলেও ভাব ও বিষয়ে নতুনত্ব নিয়ে আসেন। তিনি আধুনিক আবিষ্কার, ইতিহাস ঐতিহ্য কবিতায় তুলে ধরেন। তার কাব্যধারায় কবিতা নতুন রূপে বৈশিষ্ট্যমপ্তিত হয়। নিম্নে আধুনিক আরবী কবিতার বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন সমূহ উল্লেখ করা হলো:
- আধুনিক আরবী কবিতায় প্রাচীন কবিতার বিষয়াবলী যেমন প্রশংসা, নিন্দা, শোকগাথা, গুণকীর্তন, প্রণয়মূলক, গৌরবগীথা, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ইত্যাদি স্থান পেয়েছে তবে তাতে বাক্যশৈলীগত সমৃদ্ধি এসেছে। তাছাড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, দার্শনিক, শিক্ষামূলক কবিতা, দেশাতৃবোধ, দেশের প্রতি অনুরাগ, ইত্যাদি উদ্দেশ্যে কবিতা রচিত হয়েছে।[13]
- ব্যক্তি গৌরবগাঁথা পরিত্যাগ করে দেশ ও জাতির প্রতি অনুরাগ জাগ্রত হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ ও সামাজিক দোষক্রটির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা হয়েছে। এভাবে কবিতায় স্বাধীনতা লাভের প্রতি আগ্রহের কথা ব্যক্ত হয়েছে।
- একক বিষয়ে কবিতা ও একক বিষয়ে কাব্য সংকলন বা দীওয়ান প্রকাশিত হয়েছে।
- কবিতা একক কাফিয়া থেকে মুক্ত হয়ে মুক্ত কবিতা, ছন্দবিহীন কবিতা ও গদ্য কবিতায় রূপ নিয়েছে।[14]
- কবিতার ওজনে নতুনত্ব এসেছে। কবি বারূদী এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি উনিশ বয়ত বিশিষ্ট্য কবিতা রচনা করেন ছন্দে। কবি আহমদ শাওকীও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে একই ছন্দে কবিতা রচনা করেছেন।[15]
- প্রহসন জাতীয় কবিতার প্রসার লাভ ঘটেছে। এক্ষেত্রে ইলিয়া আবু মাদী এবং সাফী তাজফীর নাম উল্লেখযোগ্য।
- বিভিন্ন ভুল ত্রান্তির ব্যাপারে আত্মার সহানুভূতি আধুনিক আরবী কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে। যেমন: কবি মাহমুদ হাছুন ইসমাঈল ক্ষুধা দারিদ্রের জন্য বিদ্রোহী হওয়ার অভিযোগ পেশ করেছেন।[16]
- আধুনিক কবিতায় প্রতীকীবাদ কবিতার সৃষ্টি। এটি কবিতায় নতুন বৈশিষ্ট্য সংযোজন করেছে। প্রতীকীবাদী কবি সম্প্রদায় এ জাতীয় কবিতায় মার্জিত শব্দরূপ, ভাবের বৈচিত্রতা ও কাল্পনিক চিত্রের মাধ্যমে মনোভাব ফুটিয়ে তুলতেন। তারা হলেন মিসরের আবু শাদী, সিরিয়ার তিযার কুবানী, লেবাননের সালাহ আমীর, মাহজারী কবি ইলিয়া আবু মাদী।[17]
- পাশ্চাত্য সাহিত্যের অনুকরণে আধুনিক আরবী কবিতায় পরাবাস্তববাদী কবিতার উদ্ভব। এ ধারার কবিতা রচয়িতার মধ্যে রয়েছেন: কামিল আমীন, জাওরজ হোসাইন, কামিল জুহায়রী এবং ফুয়াদ কামিল অন্যতম।[18]
- আধুনিক আরবী কবিতায় প্রেমকাব্য বৈষয়িকতার উর্ধ্বে উঠে অনেক জীবন ঘনিষ্ঠ হয়েছে। প্রাচীন কবিতায় নারীদের রূপ, সৌন্দর্য বর্ণনায় অনেকটা অশ্লীলতার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। আধুনিক কবিতায় তা থেকে কবিতা মুক্ত।
- কাহিনীমূলক কবিতা আধুনিক আরবী কবিতায় অনন্য বৈশিষ্ট্য সংযোজন করেছে।
- নাট্য কবিতা আধুনিক আরবী কবিতার এক নতুন উদ্ভাবন। যা আরবী কবিতাকে নতুনভাবে বৈশিষ্ট্যমপ্তিত করেছে। কবিসম্রাট আহমদ শাওকীর হাতে এ কবিতার উত্থান। তার নাট্যকাব্য বিষয়বস্তর দিক থেকে ক্লাসিক ধারার। তিনি নাট্যকাব্যে স্থান, কাল, পাত্র ও বিষয়গত ঐক্যের বাধ্যবাধকতা মানেননি। যে নিয়ম ফরাসী নাট্যকাব্যে মানা হয়েছে। তিনি ফরাসী ও ইউরোপীয় নাট্যসাহিত্য দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। পরবর্তী পর্যায়ে আযীয আবাজা এ ক্ষেত্রে অবদান রাখেন।[19]
- প্রাচীন কবিতায় অলংকারিক অতিরঞ্জন, কঠিন শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। আধুনিক কবিতা তা থেকে মুক্ত। আধুনিক কবির মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ, দৃষ্টির পরিচ্ছন্নতা ও সহজীকরণ প্রবণতা কবিতায় দৃশ্যমান।[20]
- হরেক রকম বিষয় ও উদ্দেশ্যের বিভিন্নতা আধুনিক আরবী কবিতার অনুপম বৈশিষ্ট্য । যেমন: দার্শনিক চিন্তাধারা মুলক কবিতা, শিক্ষামূলক কবিতা।
- মাহজারী কবিদের কবিতার অনন্য গতিধারা আধুনিক আরবী কবিতার বৈশিষ্ট্যকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। পাশ্চাত্য কবিতার সাথে আধুনিক কবিতার মেলবন্ধন পাশ্চাত্যের সংস্কৃতি, চিন্তা-চেতানার প্রভাবে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়েছে।[21]
- আধুনিক আরবী কবিতায় ইসলামী চিন্তাধারার আলোকে কবিতা রচিত হয়েছে। বিশেষ করে ইসলামী দাওয়াত মূলক কবিতা। এক্ষেত্রে কবিসম্রাট আহমদ শাওকী, হাফিজ ইব্রাহীম, আহমদ মুহাররম, মাহমুদ গুণাইম, মারুফ রূসাফী, মুহম্মদ হাসান আওয়াদ, ইব্রাহীম গাযওয়াবী, হাসান আল কুরশী, মাহমুদ আরেফ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন।[22]
আধুনিক আরবী সাহিত্যে এ পরিবর্তনগুলো আরবী সাহিত্যকে করেছে আরো সমৃদ্ধ। এ নতুন ও সমৃদ্ধ ধারায় উল্লেখযোগ্য অন্তর্ভুক্তি ইসলামী কবিতা। পরবর্তী পরিচ্ছেদে কবিতায় ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা উপস্থাপন করা হয়েছে।
৩. কবিতায় ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার
পূর্ববর্তী পরিচ্ছেদে আধুনিক যুগে আরবী সাহিত্যের বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে। পাশাপাশি এটিও আমাদের নিকট স্পষ্ট হয়েছে যে, আধুনিক আরবী সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ইসলামী সাহিত্য। বলাবাহুল্য, যেসব অগ্রনায়কের হাত ধরে আধুনিক আরবী কবিতা নতুনত্ব ও সমৃদ্ধি লাভ করেছে, তারা সকলেই ছিলেন ইসলামী ভাবধারার কবি। এ যুগের কবিতার বিকাশধারার যে দুটি দিক পূর্বে আলোচিত হয়েছে, ইসলামী কাব্যগুলোকে বিশ্লেষণ করলেও এ দুটি দিক দৃশ্যমান হয়। অর্থাৎ, একটি হচ্ছে- পূর্বের ধারা অনুসৃত কবিতায় ইসলামী মূল্যবোধের সংযোগ এবং অপরটি হচ্ছে- আরবী সাহিত্যে নব-উদ্ভাবিত ধারার কবিতায় ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার। এ পরিচ্ছেদে উভয় ধারার উল্লেখযোগ্য কিছু উদাহরণ পেশ করা হয়েছে।
১. পূর্বের অনুসৃত ধারার কাব্যে ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার
আধুনিক যুগের কবিগণ অনেকক্ষেত্রে জাহিলী যুগ থেকে আব্বাসী যুগ পর্যন্ত আরবী কাব্যের গতানুগতিক ধারায় উল্লিখিত বিষয়গুলো অর্থাৎ প্রশংসা, নিন্দা, গৌরবগাঁথা, শোকগাঁথা, প্রণয়গীতি, হিজা বা ব্যাঙ্গাত্মক, ওয়াসফ বা বর্ণনামূলক কবিতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভাষাগত ব্যবহারের নবায়ন ও তাতে ইসলামী মূল্যবোধের প্রবেশ ঘটিয়েছেন। এ ধরনের কবিতার কিছু উদাহরণ নিম্নরূপ-
প্রশংসামূলক কবিতা
প্রশংসাসূচক কবিতাগুলোর ক্ষেত্রে এ যুগের কবিরা অনেকাংশেই ইসলামী যুগের অনুসরণের চেষ্টা করেছেন। অর্থাৎ, জাহিলী, উমাইয়্যা ও আব্বাসী যুগে প্রশংসাসূচক কাব্যগুলোতে যে অতিরঞ্জন লক্ষ্য করা যায় তার পরিবর্তে আধুনিক কবিগণ ইসলামী যুগের মত সহজবোধ্য বাক্যশৈলী ও বাস্তবমুখী প্রশংসা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। যেমন, খুলাফায়ে রাশীদিনের অন্যতম হজরত আলী (রা:) এর প্রশংসায় কবি মাহমুদ সামী আল বারুদী হিজরতের প্রাক্বালের ঘটনা তুলে ধরে বলেন-
نادى عليا فأوصاه وقال له لا تخش والبس ردائي أمنا ونم
ومربا لقوم يتلو وهو منصرف ليس وهي شفاء النفس من وصم[23]
অর্থ: তিনি (রাসূল সা:) আলী (রা:)কে ডাকলেন এবং আমানতের সকল সম্পদ মালিকদের নিকট বুঝিয়ে দেওয়ার আদেশ করলেন। এবং বললেন, ভয় পেয়োনা! আমার চাদর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়। অতঃপর তিনি কুরআন পাঠরত অবস্থায় তাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, কিন্তু তারা দেখতে সক্ষম হয়নি।
উক্ত কবিতায় কবি রাসূল (সা:) এর প্রতি আলী (রা:) এর আনুগত্যের কথা তুলে ধরেছেন। এতে তিনি বাস্তববিবর্জিত কাল্পনিক কোন প্রশংসা করেননি। আবার উচ্চমার্গের আলংকারিক বর্ণনার আশ্রয়ও নেননি।
প্রশংসাসূচক কবিতার ক্ষেত্রে আরো লক্ষণীয় যে, পূর্বের যুগগুলোতে শুধুমাত্র ব্যক্তির প্রশংসায়ই কবিতা রচনা বেশি হতো। এ যুগে ব্যক্তির পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিকও অন্তর্ভুক্ত হয়। যেমন, কবি আহমদ শাওকী আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশংসায় বলেন-
قم في فم الدنيا وحي الأزهر وانثر على سمع الزمان الجواهرا
واجعل مكان الدر ان فصلته في مدحه خرز السماء النيرا[24]
অর্থ: উঠে দাঁড়াও! এবং দুনিয়াব্যাপী যার প্রশংসা সেই আযহারের দিকে অগ্রসর হও। সময়ের শ্রুতিতে ছড়িয়ে দাও আযহারের মণি, জহরত। যদি তুমি উহার সাথে মিলিতি হও তবে মনি মুক্তার স্থানকে আপন করে নাও। কেননা উহার প্রশংসায় আলোকময় জ্যোতিষ্ক আসমান থেকে ঝরে পড়ছে।
আধুনিক যুগে প্রশংসাসূচক কাব্যের উন্নতি ও বিকাশ ঘটেছে সুস্পষ্টভাবে। প্রশংসা কেবল সাহসিকতা, বীরত্ব ও বদান্যতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, আধুনিক যুগে তা দেশপ্রেম, দেশের জনগণের অধিকার রক্ষা ও জনসেবার মত ইত্যাদি গুণাবলী যা জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও সংগ্রামী মানুষের বৈশিষ্ট্য, তাও একীভূত করে নিয়েছে। প্রশংসিত ব্যক্তির নিকট থেকে কোন কিছু প্রপ্তির আশায় কবিতা রচনার ধারা আধুনিক যুগে দেখা যায়না। বিশেষত এ যুগে রাসূলুল্লাহ (সা:) এর প্রশংসামূলক কবিতা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এ যুগে আহমদ শাওকী, হাফিজ ইবরাহীম, আহমাদ মুহাররম প্রমুখ কবিরা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।[25]
শোকগাঁথা
শোকগাঁথা আরবী কবিতার একটি প্রাচীন দিক। বিষয়টি আধুনিক যুগেও বিদ্যমান। তবে পূর্বের শোকগাঁথাগুলোতে আবেগতাড়িত দুঃখ প্রকাশ বেশি ঘটতো। এ যুগে শোকগাঁথায় মৃত ব্যক্তির গুণাবলী ও তার সম্মান, মর্যাদা, ইত্যাদির উল্লেখ পাওয়া যায়।[26] কবিগণ জ্ঞানী গুণী, নেতৃবৃন্দ, নিকট আত্মীয়দের শোকগাঁথা রচনা করেছেন। যেমনিভাবে আধুনিক যুগে শহর নগর এবং রাষ্ট্র নিয়েও শোকগাঁথা রচিত হয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা স্পেনের নাম উল্লেখ করতে পারি। আহমদ শাওকী স্পেন ও তুরস্কের বিভিন্ন শহর, তুকী খেলাফত সম্পর্কে শোকগাঁথা রচনা করেছেন। স্পেনকে নিয়ে তাঁর রচিত শোকগাঁথার প্রথম দুই চরণ নিম্নরূপ:
يا نائح الطلح أشباه عوادينا نشجى لواديك أم نأسى لوادينا
ماذا تقص علينا غير أن يدا قصت جناحك جالت فى حواشينا[27]
অর্থ: হে আমাদের উপত্যকার বৃষ্টির ফোঁটার মত বিলাপকারী, আমরা কি তোমার উপত্যকার জন্য আকুল হব, নাকি ভুলে যাব? আমাদেরকে আর কী বলবে? যে হাত তোমার ডানা ভেঙ্গে আমাদের চারপাশে বিচরণ করছে, তা ব্যতিত?
ব্যক্তি বিশেষের জন্য রচিত শোকগাঁথাগুলোর মধ্যে হাফিজ ইবাহীম রচিত বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ইমাম মুহাম্মদ আবদুহু (১৮৪৯-১৯০৫ খৃ.) এর স্মরণে লিখিত কবিতা অন্যতম। উদাহরণ স্বরূপ কবিতাটির দুটি পংক্তি নিম্নরূপ:
وقفْتُ عليه حاسر الرأس خاشعا كأنّي حِيال القبر في عرفاتِ
لقد جهِلوا قدْرَ الإِمام فأوْدَعوا تجَالِيدَهُ في مُوحِشٍ بفَلاةِ[28]
অর্থ: আমি তাঁর কাছে দাঁড়িয়ে থাকি খালি মাথায় বিনয়ের সাথে, যেন আমি আরাফাতের কবরের নিকট দাঁড়িয়ে আছি। তারা ইমামের কাজের ব্যাপারে অজ্ঞ ছিল, ফলে তারা তাঁর কাজগুলোকে নির্জন জায়গায় জমা করেছিল।
বীরত্বগাঁথা
গৌরব ও বীরত্বগাঁথা আরবী কবিতার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই উদ্দেশ্যে কবিগণ পূর্বে কবিতা রচনা করেছেন। আধুনিক যুগে কবিগণ আরব জাতি, আরব মুসলিমদের গৌরব ও মুসলিম বীর মুজাহিদদের বীরত্বগাঁথা বর্ণনা করেছেন। আহমদ মুহররাম, শাওকী, বারূদীর কবিতায় পাওয়া যায়। আধুনিক যুগে এই বিষয় বৃহত্তর নতুন ভাষাশৈলীতে আবর্তিত হয়েছে। কবি মাহমুদ সামী আল বারূদীর এ জাতীয় কবিতার একটি চরণ নিম্নরূপ:
إذا استل منا سيد غرب سيفه تفزعت الافلاك والتفت الدهر[29]
অর্থ: যখন আমাদের নেতা তেজস্বী রূপে তরবারির কোষ উন্মুক্ত করে ভূমণ্ডল ভয়ে কেঁপে উঠে এবং যুগ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
২. নতুন ধারার কাব্যে ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার
আধুনিক যুগে কাব্য রচনার ধারায় রাজনৈতিক, সামাজিক, দার্শনিক, শিক্ষামূলক কবিতা, দেশাতৃবোধ, দেশের প্রতি অনুরাগ, ইত্যাদি নতুন বিষয়ের আবির্ভাব ঘটে এবং সে সব কবিতায় নতুন ভাষাশৈলীর মাধ্যমে ইসলামী মূল্যবোধের জাগরণ লক্ষ্য করা যায়। এ ধরণের কবিতার উল্লেখযোগ্য কিছু উদাহরণ নিম্নরূপ:
রাজনীতি ও দেশাত্মবোধ
ফিলিস্তীন, মিসর, সিরিয়া, ইরাক, হিজায, লেবানন অঞ্চলগুলো যখন উপনিবেশ শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামরত ছিল, তখন আরব কবিরা তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিজয়ের গৌরবগাথা কবিতায় চিত্রিত করে তাদেরকে উৎসাহ ও প্রেরণা দিতেন। নিজেদের ভূমি থেকে উপনিবেশবাদীদের বিতাড়িত করে মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার জন্য যোদ্ধাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। যেমন ইরাকের কবি মারুফ রুসাফী তাঁর الوطن والجهاد কবিতায় বলেন,
يا قومُ إنَّ العِدا قد هاجموا الوطنا فانضوا الصوارمَ واحموا الأهل والسكنا
واستنفروا لعدوِّ الله كلَّ فتى ممن نأى في أقاصي أرضكم ودَنا
واستنهضوا من بني الإسلام قاطبة من يَسكن البدو والأرياف والمدُنا
واستقتلوا في سبيل الذود عن وَطن به تقيمون دين الله والسُّننا [30]
অর্থ: “হে আমার স্বদেশবাসী! শত্রু আমাদের মাতৃভূমির উপর আক্রমণ করেছে। সুতরাং তোমরা অসি কোষমুক্ত কর, পরিবার-পরিজন ও দেশবাসীকে রক্ষ কর। প্রত্যেক যুবকের উচিত, আল্লাহর দুশমনদের বিরূদ্ধে যুদ্ধে রেরিয়ে পড়া। সে তোমাদের দেশের দূরবর্তী অঞ্চলে থাকুক কিংবা দূরে। ইসলামের সন্তানগন! তোমরা একসাথে সবাই উঠে দাড়াও। যারা মরুভূমি, গ্রামে ও শহরে- যেখানেই থাকনা কেন। দেশ থেকে শক্র তাড়াতে সাহস ও বীরত্ব দেখাও। যে দেশে তোমরা আল্লাহর দীন ও সুন্নাহ প্রতিষ্ঠা করবে।
সামাজিকতা
আধুনিক যুগের কবিতার উল্লেখযোগ্য একটি দিক সামাজিকতা । কবিগণ তাদের কবিতায় যে সামাজিক বিষয়গুলো তুলে ধরেছন তা হল, সামাজিক জীবনের চিত্র, সামাজিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কর্মপন্থা। এ যুগে আরব বিশ্বে সমাজ-সংস্কারমূলক বিভিন্ন সংগঠন গড়ে ওঠে। এই সংগঠনগুলোর উদ্দেশ্য ছিল সমাজের বহুমূখী সংস্কার। কবিগণ এসব সংগঠনের উদ্দেশ্যের সাথে একিভূত হন। তারা সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কার আন্দোলনের অগ্রনায়ক হয়ে কাজ করেন। কবিগণ এসব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মচেষ্টা ও মানবিক সেবামূলক কর্মকাণ্ড সুন্দর ও সার্থকভাবে কবিতায় তুলে ধরেছেন।
এ সময়ে মানুষের সবচাইতে বড় সমস্যা ছিল অভাব অনটন। সমাজ সচেতন ও সমাজ সেবী ব্যক্তিগণের পাশাপাশি কবি-সাহিত্যকগনও কবিতা রচনার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করেছেন। তাদের রচিত কবিতায় আরব সমাজের সমস্যার স্বরূপ, কারণ ও প্রতিকারের কথা বলেছেন। তারা অভাবী মানুষের কষ্ট, দুঃখ-দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেছেন। উদাহরণস্বরূপ, এ যুগের কবিদের মধ্যে সবচেয়ে অভাবী পরিবার থেকে বেড়ে উঠা কবি হাফিজ ইবরাহীমের কবিতার কয়েকটি চরণ নিম্নরূপ:
قَــضَّيــتُ عَهــدَ حَــداثَــتــي مــا بَــيــنَ ذُلٍّ وَاِغـتِـراب
لَم يُــغـنِ عَـنّـي بَـيـنَ مَـش رِقِهـا وَمَـغـرِبِهـا اِضطِراب
صَــفِــرَت يَـدي فَـحَـوى لَهـا رَأســي وَجَــوفـي وَالوِطـاب
لَم يَــبـقَ مِـن أَهـلي سِـوى ذِكــرٍ تَــنـاسـاهُ الصِـحـاب
أَمــشــي يُـرَنِّحـُنـي الأَسـى وَالبُـؤسُ تَـرنـيـحَ الشَراب[31]
অর্থ: আমি আমার শৈশব কাটিয়েছি অপমানের মধ্যে প্রবাসী হিসেবে। পূর্ব-পশ্চিমে আমার অস্থিরতা কখনও দূর হয়নি। আমার হাত শূন্য হয়ে পড়েছে আর সে জন্য আমার মাথা, পেট ও থলিও শূন্য হয়েছে। আমার পরিবারের কিছুই অবশিষ্ট নেই। কিছু স্মৃতি ছাড়া, যা ভুলে যাওয়ার ভান করে বন্ধুরা। আমি যখন চলি দুঃখ-কষ্ট আমাকে গান শোনায়। আর দুর্ভাগ্য শোনায় মদ পানের আসরের গান।
শিক্ষা
আধুনিক যুগের কবিগণ শিক্ষাব্যবস্থাকে কাব্য রচনার একটি স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মুসলিম সমাজের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এ যুগের কবিদের ভাবনা সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মাহমুদ সামী আল বারুদী, মারুফ রুসাফী, আহমদ শাওকী, হাফিজ ইবরাহীম, আহমদ মুহাররম প্রমুখ এ বিষয়ে কলম ধরেছেন। মারুফ রুসাফী স্বয়ং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন দীর্ঘদিন। তাঁর রচিত “التربية و الأمهات” (শিক্ষা ও মাতৃত্ব) এ ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা। এর কয়েকটি চরণ নিম্নরূপ:
هِـيَ الْأَخْـلَاقُ تَـنْـبُـتُ كَـالـنَّـبَاتِ إِذَا سُـقِـيَـتْ بِـمَـاءِ الْـمَـكْـرُمَـاتِ
تَــقُــومُ إِذَا تَــعَـهَّـدَهَـا الْـمُـرَبِّـي عَـلَـى سَـاقِ الْـفَـضِـيلَةِ مُثْمِرَاتِ
وَتَــسْــمُــو لِـلْـمَـكَـارِمِ بِـاتِّـسَـاقٍ كَـمَـا اتَّـسَـقَـتْ أَنَـابِـيـبُ الْـقَـنَاةِ
وَتُنْعِشُ مِنْ صَمِيمِ الْمَجْدِ رُوحًا بِأَزْهَـــارٍ لَـــهَــا مُــتَــضَــوِّعَــاتِ
وَلَــمْ أَرَ لِــلْـخَـلَائِـقِ مِـنْ مَـحِـلٍّ يُــهَــذِّبُــهَــا كَـحِـضْـنِ الْأُمَّـهَـاتِ
فَـحِـضْـنُ الْأُمِّ مَـدْرَسَـةٌ تَسَامَتْ بِــتَــرْبِـيَـةِ الْـبَـنِـيـنَ أَوِ الْـبَـنَـاتِ[32]
অর্থ:
নারী অধিকার
সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে জন্য নারীশিক্ষা একটি অপরিহার্য দিক। ব্যক্তিগত ও মৌলিক শিক্ষা অর্জন করার পরও যদি কোন নারী অসাধারণ প্রজ্ঞা ও মানসিক যোগ্যতার অধিকারী হয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় উচ্চশিক্ষা লাভ করতে চায়, তাহলে ইসলামী শরী‘য়ত তাকে সব ধরনের শিক্ষার অনুমতি দিয়েছে। ইসলামে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বর্ণযুগেই। কিন্তু আধুনিক যুগে এসে নারীরা সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে তাদের শিক্ষাগত অধিকারের ক্ষেত্রে। তাই এ যুগের কবিরা এ বিষয়ে দৃষ্টি দিয়েছে। কবি আহমদ শাওকীর কবিতার একটি উদাহরণ এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। যেমন, তিনি বলেন:
وجد المُساعِدَ غيرُكم وحُرِمتمُ في مصرَ عوْنَ الأمهاتِ جليلا
وإذا النساءُ نشأنَ في أُميَّةٍ رضَعَ الرجالُ جهالةً وخمولا[33]
অর্থ: তোমাদের ছাড়াই সহযোগিতা পাওয়া গেছে। তবে তোমরা (মিশরের মাতৃকুলকে) সুশিক্ষিত করার সহযোগিতা থেকে ব্যাপকভাবে বঞ্চিত করেছ। যদি নারীরা নিরক্ষরতা নিয়ে বড় হয় তখন পুরুষরাও অজ্ঞতা ও মূর্খতার মাঝে লালিত পালিত হয়।
যুবসমাজের প্রতি সচেতনতা
যুব সমাজের সমস্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা। সমাজ সংস্কারক ও চিন্তাশীল ব্যক্তিদেরকে যা ভাবিয়ে তোলে। তারা এ ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে যুব সমাজকে মুক্ত করতে বিভিন্ন কর্মপন্থা গ্রহণ করেন। আধুনিক আরবী কবিতায় যুবসমাজের সমস্যা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দেখা যায়। যেমন, কবি আহমদ মুহাররম বলেন,
ذهب العصر الذي شبينا وأرى عصر الشباب الملحدين
عيرونا أن عبدنا ربنا وحفظنا عهده في الحافظين[34]
অর্থ: যে যুগ চলে গেছে, যা আমাদেরকে বৃদ্ধ করেছে। এখন আমরা দেখছি নাস্তিক যুবকদের যুগ। তারা আমাদেরকে এ কারণে লজ্জিত করে যে, আমরা আমাদের রবের ইবাদত করি ও তাঁর অঙ্গীকার পূরণ করি।
শিশুতোষ কবিতা
ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। শৈশব-কৈশরই হচ্ছে শিক্ষার ভিত্তিকাল। স্বচ্ছ মেধা, সুস্থ বুদ্ধি, সরল চিন্তা ও স্পষ্ট মনোযোগের কারণে শিশুরা সহজেই সবকিছু আয়ত্ত করতে পারে। ফলে আধুনিক যুগে শিশুদের জন্য সহজবোধ্য সাহিত্য রচনার মাধ্যমে শিক্ষাদান একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুদের মাঝে ইসলামী মূল্যবোধ জাগ্রতকরণে এ যুগের কবিগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। উদাহরণস্বরূপ, আল্লাহ তায়ালার সত্তা ও কুদরত অনুধাবনে কবি মারুফ রুসাফী রচিত শিশুদের জন্য ‘الله’ (আল্লাহ) কবিতা এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। এর কয়েকটি চরণ নিম্নরূপ:
انظر لتلك الشجرة ذات الغصون النضرة
كيف نمت من حبة وكيف صارت شجرة
فانظر وقل من ذا الذي يخرج منها الثمرة
ذاك هو الله الذي أنعمه منهمرة [35]
অর্থ: তাজা ডালবিশিষ্ট ঐ গাছের দিকে তাকাও। (এবং ভাবো) কীভাবে এটি একটি বীজ থেকে বেড়ে ওঠে এবং কীভাবে এটি একটি গাছে পরিণত হয়? তাই দেখে বলো, কে তা থেকে ফল উৎপন্ন করেন? সেই আল্লাহ, যার নিয়ামত বর্ষিত হচ্ছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের বিবরণ
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমূলক কবিতা আধুনিক যুগের উল্লেখযোগ্য আরেকটি দিক। এ যুগে প্রকৃতিপ্রেমে রচিত কবিতাগুলোর মধ্যেও একাধিক ধারা লক্ষ্য করা যায়। অনেক কবিই রোমান্টিসিজমের সাথে প্রকৃতিপ্রেমের সংযোগ ঘটিয়েছেন, আবার অনেকেই নিছক কল্পনাশ্রিত কবিতা হিসেবেই প্রকৃতির সৌন্দর্য্য বর্ণনা করেছেন। তবে ইসলামী মূল্যবোধে উজ্জীবিত কবিদের মধ্যে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য বর্ণনার মাধ্যমে আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় ও তাঁর কুদরতের মহিমা প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। যেমন, কবি আহমদ শাওকী বলেন,
تلك الطبيعة قف بنا يا ساري حتى أريك بديع صنع الباري
الأرض حولك و السماء اهتزنا لرواتو الآيات والآثار
من كل ناطقة الجلال كأنها أم الكتاب على لسان القاري
دلت على ملك الملوك فلم تدع لا ذلة الفقهاء والأجساد[36]
অর্থ: ঐ মনোরম প্রকৃতি কতই না সুন্দর। হে সারেং, তুমি আমাদের নিয়ে একটু থামো। যেন আমি তোমাকে স্রষ্টার আশ্চর্য সৃষ্টি দেখাতে পারি। তোমার চারপাশের নিদর্শনাবলির দ্বারা আকাশ ও পৃথিবী আন্দোলিত হচ্ছে। এর প্রত্যেকেই আল্লাহর মহিমা এমনভাবে ব্যক্ত করছে, যেন তা ক্বারীর কন্ঠে আল কুরআনের ধ্বনি। এগুলো বাদশাহদের বাদশার অস্তিত্ব প্রমাণ করছে। সুতরাং, পণ্ডিত ও বিবেকবানদের জন্য আর প্রমাণের প্রয়োজন নেই।
[1] আহমদ হাসান যাইয়্যাত, তারিখুল আদাবিল আরাবি, (বৈরুত: দারুশ শারকীল আরাবী, ২০০৬), পৃ. ৪১৬।
[2] সৈয়দ আলী আহসান, আধুনিক বাংলা কবিতা: শব্দের অনুষঙ্গে, (ঢাকা: গতিধারা প্রকাশনী, ২০০১), পৃ. ৪১৬।
[3] জুরজী যায়দান, তারিখু আদাবিল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ, (মিসর: মাতবা’আতুল হিলাল, ১৯১১), পৃ. ৬৪২।
[4] আহমদ হাসান যাইয়্যাত, প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৯৩।
[5] শাওকী দ্বইফ, আল আদাবুল আরাবিয়্যিল মু’আসির ফি মিসর, (কায়রো: দারুল মা’আরিফ, ১০ম সংস্করণ, ২০১০), পৃ. ৯৩।
[6] প্রাগুক্ত, পৃ. ১৭৩।
[7] ড. হাসান শাযিলী ফারহুদ, আল আদাব ওয়ান নুসূস, (রিয়াদ: ওয়াযারাতুল মা’আরিফ, ১৯৮১), পৃ. ১৩২।
[8] ড. শাওকী দ্বইফ, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৮।
[9] প্রাগুক্ত।
[10] আনওয়ার আল জুনদী, আদ্বওয়াউন ‘আলাল আদাবিল আরাবিয়্যিল মু’আসির, (কায়রো: দারুল কিতাবিল আরাবী, ১৯৬৮), পৃ. ১৪১।
[11] প্রাগুক্ত।
[12] Haywood, Jhon A., Modern Arabic Literature (1800-1970), (London: Lund Humphries, 1971), p. 97.
[13] আহমদ কাব্বিশ, ফি তারিখিশ শি’রিল আরাবিয়্যিল হাদীস, (বৈরুত: দারুল জীল, তা.বি.), পৃ. ৭৫১।
[14] ড. নু’মাত আহমদ ফুয়াদ, খাসাইসু শি’রিল আরাবিয়্যিল হাদীস, (বৈরুত: দারুল ফিকরিল আরাবী, তা.বি.), ৩৩।
[15] মো: মাহফুজুল করীম, আধুনিক আরবী কবিতায় রেনেসাঁর গতিধারা, পিএইচ.ডি. অভিসন্দর্ভ, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২০২২, পৃ. ২৪৭।
[16] প্রাগুক্ত, পৃ. ২৪৮।
[17] ড. নু’মাত আহমদ ফুয়াদ, খাসাইসু শি’রিল আরাবিয়্যিল হাদীস, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫১-৫৭।
[18] মো: মাহফুজুল করীম, আধুনিক আরবী কবিতায় রেনেসাঁর গতিধারা, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৪৯।
[19] ড. নু’মাত আহমদ ফুয়াদ, খাসাইসু শি’রিল আরাবিয়্যিল হাদীস, প্রাগুক্ত, পৃ. ৬৭-৬৯।
[20] প্রাগুক্ত, পৃ. ৫১।
[21] প্রাগুক্ত, পৃ. ৭৩-৭৮।
[22] মো: মাহফুজুল করীম, আধুনিক আরবী কবিতায় রেনেসাঁর গতিধারা, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৪৯।
[23] মাহমুদ সামী আল বারুদী, কাশফুল গুম্মাহ, (কায়রো: মাতবাআ’তুল জারিদাহ, ১৯০৯), পৃ. ২০।
[24] মুহাম্মদ বিন সা’দ বিন হুসাইন, আল আদাবুল হাদীস, (রিয়াদ: দারু আব্দিল আজিজ আস সুলাইমান, ৬ষ্ঠ সংস্করণ, ১৯৭৮), খ. ১ পৃ. ২৭।
[25] মো: মাহফুজুল করিম, প্রাগুক্ত, পৃ. ২১৮।
[26] ড. মুস্তফা মাহমুদ ইউনুস, মিন আদাবিনাল মু’আসির, (কায়রো: মাতবা’আতুল ফাজরিল জাদীদ, ১৯৮০), পৃ. ৪৭।
[27] আহমদ শাওকী, আশ শাওকীয়্যাত, (মিসর: মুয়াসসাসাতু হিনদাভী, ২০১২), পৃ. ২৫৭।
[28] হাফিজ ইবরাহীম, দীওয়ানু হাফিজ ইবরাহীম, (মিসর: মুয়াসসাসাতু হিনদাভী, ২০১২), পৃ. ২৪১।
[29] মুহাম্মদ বিন সাদ বিন হুসাইন, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৯।
[30] মারুফ রুসাফী, দীওয়ানু মা’রুফ আর রুসাফী, (মিসর: মুয়াসসাসাতু হিনদাভী, ২০১৪), পৃ. ৭০৯।
[31] হাফিজ ইবরাহীম, দীওয়ানু হাফিজ ইবরাহীম, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৬০।
[32] মারুফ রুসাফী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৬৫।
[33] আহমদ শাওকী, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৪৬।
[34] ড. মুস্তফা মাহমুদ ইউনুস, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৬।
[35] মারুফ রুসাফী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৭৬৫।
[36] আহমদ শাওকী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৮৫