ভূমিকা: ইসলাম এমন একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যা কেবলমাত্র সৎকাজের আদেশ (أمر بالمعروف) নয়, বরং অসৎ ও অন্যায় কাজের বিরুদ্ধেও দাঁড়ানো (نهي عن المنكر) আবশ্যক করে তোলে। ইসলাম শুধু ব্যক্তি নয়, বরং সামগ্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রের নৈতিকতা রক্ষায় দায়িত্বশীলতা আরোপ করে। যে সমাজে মানুষ ভালো কাজকে উৎসাহিত করে কিন্তু মন্দ কাজকে নিরবতা দিয়ে প্রশ্রয় দেয়, সে সমাজ ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়।
কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে “নাহি আনিল মুনকার” কেবল একটি নৈতিক উপদেশ নয়, বরং ঈমানের অন্তর্ভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি এমন এক ইবাদত, যার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজে যেমন কল্যাণের পথে অগ্রসর হয়, তেমনি সমাজকেও দুর্নীতি, জুলুম ও অন্যায় থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করে।
বর্তমান বিশ্বে যেখানে অন্যায়, অবিচার, অশ্লীলতা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয় ভয়ংকরভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানে ইসলামি আদর্শে গঠিত সমাজের রূপায়ণে “নাহি আনিল মুনকার” এর যথাযথ বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। এ আলোচনায় আমরা কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে নাহি আনিল মুনকারের গুরুত্ব, তাৎপর্য, বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও আধুনিক প্রেক্ষাপটে এর প্রাসঙ্গিকতা সবিস্তারে তুলে ধরব।
১. নাহি আনির মুনকার এর ব্যাখ্যা:
- نَهْيٌ : অর্থ—নিষেধ, বাধা প্রদান, বিরত রাখা।
- مُنْكَرٌ : অর্থ—যা অগ্রহণযোগ্য, নিন্দনীয়, শরিয়তের দৃষ্টিতে গুনাহর কাজ এবং প্রাকৃতিক বিবেকবোধেও জঘন্য মনে হয়। ইবনু ফারিস বলেন: “মুনকার হল এমন কাজ, যা শরিয়ত এবং সুস্থবুদ্ধি উভয়ই নাকচ করে।”
“নাহি আনিল মুনকার” বলতে বোঝায়— “যে কোনো অন্যায়, অপকর্ম, গুনাহ বা সমাজবিরোধী কাজকে নিরুৎসাহিত করা, বাধা দেওয়া, ও তা থেকে মানুষকে বিরত রাখার চেষ্টা করা।”
২. نَهْيٌ عَنِ الْمُنْكَرِ (নাহি আনিল মুনকার)-এর গুরুত্ব:
ইসলামের মৌলিক নীতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হল—সমাজে সৎকাজ প্রতিষ্ঠা এবং অসৎকাজের প্রতিরোধ। কুরআন ও হাদীসে এই বিষয়ে অসংখ্য আয়াত ও হাদীসের মাধ্যমে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। নাহি আনিল মুনকার কেবল একটি নৈতিক আদর্শ নয়, বরং এটি একটি শরঈ নির্দেশ, যা মুসলিম উম্মাহকে ঈমানদার জাতি হিসেবে দায়িত্বশীল করে তোলে।
ক. উম্মতের শ্রেষ্ঠত্বের শর্ত: আল্লাহ তা’আলা বলেন,
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ، تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ…
তোমরা তো সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির কল্যাণে তোমাদেরকে বের করা হয়েছে—তোমরা সৎকাজের আদেশ করো, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করো এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখো…। (আলে ইমরান: ১১০)
খ. সংঘবদ্ধভাবে এই দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে: আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ، وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ، وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ، وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ”
“তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল থাকা উচিত যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে। তারাই সফলকাম।”(আলে ইমরান: ১০৪)
গ. এই কাজ প্রকৃত মুমিন নর-নারীর বৈশিষ্ট: আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ، يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ، وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ…”
“মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী পরস্পরের অভিভাবক; তারা সৎকাজের আদেশ করে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে…” (সূরা আত-তাওবা: ৭১) হাদীসে এসেছে-
مَن رَأَى مِنكُم مُنكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِن لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِن لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَٰلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ“
“তোমাদের কেউ যদি কোনো অন্যায় কাজ দেখে, তবে সে যেন তা নিজের হাতে প্রতিরোধ করে; যদি না পারে তবে মুখে (বাক্য দ্বারা); আর যদি এটাও না পারে তবে অন্তরে তা ঘৃণা করুক—এটাই ঈমানের দুর্বলতম স্তর।”(মুসলিম: ৪৯) অপর হাদীসে এসেছে-
“أَفْضَلُ الْجِهَادِ كَلِمَةُ عَدْلٍ عِندَ سُلْطَانٍ جَائِرٍ”
“সর্বোত্তম জিহাদ হল—একজন জালিম শাসকের সামনে ন্যায় ও সত্য কথা বলা। (আহমাদ: ১৮৮২৮)”
মুনাফকিরা ঠিক এর বিপরীত কাজটি করে: আল্লাহ তা’আলা বলেন,
اَلْمُنَافِقُونَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُمْ مِنْ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمُنْكَرِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوفِ
‘মুনাফিক পুরুষ ও নারী পরস্পরে সমান। তারা অসৎকাজের নির্দেশ দেয় ও সৎকাজে নিষেধ করে’ (তাওবা: ৬৭)
ঘ. এই কাজে (অন্যায়ের প্রতিরোধ) ব্যর্থ হওয়ায় অতীত জাতি ধ্বংস হয়েছিল: আল্লাহ তা’আলা বলেন,
لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِن بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَىٰ لِسَانِ دَاوُودَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ، ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا وَّكَانُوا يَعْتَدُونَ، كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَن مُّنكَرٍ فَعَلُوهُ، لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ
“ইসরাঈলের কাফেররা দাঊদ এবং মারিয়াম–পুত্র ঈসার মাধ্যমে অভিশপ্ত হয়েছিলেন; কারণ তারা অবাধ্য ছিল, সীমালঙ্ঘন করত। তারা একে অপরকে অন্যায় কাজ করতে নিষেধ করত না—কতই না নিকৃষ্ট ছিল তাদের কার্যকলাপ।” (আল-মায়েদা: ৭৮-৭৯) হাদীসে এসেছে-
إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوُا الظَّالِمَ فَلَمْ يَأْخُذُوا عَلَى يَدَيْهِ، أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمُ اللَّهُ بِعِقَابٍ
“যখন কোনো জাতি কোনো জালিমকে দেখে কিন্তু তার হাত ধরে (থামিয়ে) না দেয়, তখন আল্লাহ তাদের সকলকে তাঁর শাস্তিতে গ্রেপ্তার করেন।” (মিশকাত: ৫১৪২)
ঙ. অন্যায়ের প্রতিবাদ না করলে বিপদের মুহূর্তের দুআ কবুল হবেনা: হাদীসে এসেছে-
হুযায়ফা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন,
وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُونَهُ فَلاَ يُسْتَجَابُ لَكُمْ
‘যার হাতে আমার জীবন নিহিত তার কসম করে বলছি, অবশ্যই তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। নইলে সত্বর আল্লাহ তার পক্ষ হতে তোমাদের উপর শাস্তি প্রেরণ করবেন। অতঃপর তোমরা দো‘আ করবে। কিন্তু তা আর কবুল করা হবে না’। (মিশকাত: ৫১৪০)
৩. نَهْيٌ عَنِ الْمُنْكَرِ (অন্যায়ের প্রতিবাদ) – এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
ইসলামে নাহি আনিল মুনকার কেবল একটি সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও রাষ্ট্রীয় মূলনীতির অংশ। এর উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পাপ রোধ নয়, বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন যেখানে নৈতিকতা ও ইনসাফ প্রাধান্য পায়, এবং আল্লাহর বিধান সর্বোচ্চ হয়। নিচে নাহি আনির মুনকারের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য তুলে ধরা হলো-
ক. সমাজে ন্যায় ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করা: আল্লাহ তা’আলা বলেন,
اِنَّ اللّٰهَ یَاۡمُرُ بِالۡعَدۡلِ وَ الۡاِحۡسَانِ وَ اِیۡتَآیِٔ ذِی الۡقُرۡبٰی وَ یَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡكَرِ وَ الۡبَغۡیِ
নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ, সদাচার ও নিকট আত্মীয়দের দান করার আদেশ দেন এবং তিনি আশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন (নাহল: ৯০)।
খ. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও গজব থেকে বাঁচা ও দুনিয়াতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা:
নাহি আনিল মুনকার আল্লাহর একটি নির্দেশ। এটিকে অমান্য করা মানেই আল্লাহর গজবকে ডেকে আনা। আল্লাহ তা’আলা পূর্ববর্তী অভিশপ্ত ও গজবপ্রাপ্ত জাতির বৈশিষ্ট উল্লেখ করেছেন-
“كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَن مُّنكَرٍ فَعَلُوهُ، لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ”
“তারা পরস্পরকে অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখত না—কতই না নিকৃষ্ট ছিল তাদের কাজ!” (মাইদা: ৭৯)
অন্যায়ের প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ না করার ফলাফল সম্পর্কে রাসূল সা. একটি দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন,
مَثَلُ الْمُدْهِنِ فِىْ حُدُوْدِ اللهِ وَالْوَاقِعِ فِيْهَا مَثَلُ قَوْمٍ اسْتَهَمُوْا سَفِيْنَةً، فَصَارَ بَعْضُهُمْ فِىْ أَسْفَلِهَا وَصَارَ بَعْضُهُمْ فِىْ أَعْلاَهَا، فَكَانَ الَّذِىْ فِىْ أَسْفَلِهَا يَمُرُّوْنَ بِالْمَاءِ عَلَى الَّذِيْنَ فِىْ أَعْلاَهَا، فَتَأَذَّوْا بِهِ، فَأَخَذَ فَأْسًا، فَجَعَلَ يَنْقُرُ أَسْفَلَ السَّفِيْنَةِ، فَأَتَوْهُ فَقَالُوْا مَا لَكَ قَالَ تَأَذَّيْتُمْ بِى، وَلاَ بُدَّ لِىْ مِنَ الْمَاءِ، فَإِنْ أَخَذُوْا عَلَى يَدَيْهِ أَنْجَوْهُ وَنَجَّوْا أَنْفُسَهُمْ، وَإِنْ تَرَكُوْهُ أَهْلَكُوْهُ وَأَهْلَكُوْا أَنْفُسَهُمْ-
‘(অপরাধ দমনে) আল্লাহর বিধানসমূহ বাস্তবায়নে অলসতাকারী এবং অপরাধী ব্যক্তির দৃষ্টান্ত ঐ লোকদের মত, যারা একটি জাহাযে আরোহণের জন্য লটারী করল। তাতে কেউ উপরে ও কেউ নীচতলায় বসল। নীচতলার যাত্রীরা উপরতলায় পানি নিতে আসে। তাতে তারা কষ্ট বোধ করে। তখন নীচতলার একজন কুড়াল দিয়ে পাটাতন কাটতে শুরু করল। উপরতলার লোকেরা এসে কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলল, উপরে পানি আনতে গেলে তোমরা কষ্ট বোধ কর। অথচ পানি আমাদের লাগবেই। এ সময় যদি উপরতলার লোকেরা তার হাত ধরে, তাহলে সে বাঁচল তারাও বাঁচল। আর যদি তাকে এভাবে ছেড়ে দেয়, তাহ’লে তারা তাকে ধ্বংস করল এবং নিজেরাও ধ্বংস হল’। (বুখারি: ২৬৮৬)
গ. মুসলিম উম্মাহর সম্মিলিত শক্তি ও ঐক্য রক্ষা:
নাহি আনিল মুনকার ইসলামী উম্মাহর একটি সম্মিলিত ফরজ। এটি সমাজে একতা, সহযোগিতা ও আল্লাহর বিধান অনুসরণের আবহ তৈরি করে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى، وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ”
“তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতিতে একে অপরকে সাহায্য করো, গুনাহ ও জুলুমে একে অপরকে সাহায্য করো না।” (মাইদা: ২)
ঘ. আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়ার চর্চা
অন্যকে অন্যায় থেকে নিষেধ করার আগে নিজের নফসকেও নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এভাবে নাহি আনিল মুনকার ব্যক্তি ও সমাজ—উভয়ের মধ্যে তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধি সৃষ্টি করে। কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেন,
كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّهِ أَن تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ
তোমরা নিজেরা যা করনা সে বিষয়ে অন্যকে নির্দেশ দেওয়া আল্লাহর নিকট অনেক বড় অন্যায়। (সফ: ৩)
৪. অন্যায়ের প্রতিরোধ তথা নাহি আনিল মুনকারের কার্যপদ্ধতি:
ক. মন্দকে ভাল দ্বারা প্রতিরোধ করা: আল্লাহ বলেন,
وَلاَ تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلاَ السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ- وَمَا يُلَقَّاهَا إِلاَّ الَّذِينَ صَبَرُوا وَمَا يُلَقَّاهَا إِلاَّ ذُو حَظٍّ عَظِيمٍ
‘ভাল ও মন্দ সমান নয়। তুমি ভাল দ্বারা মন্দকে প্রতিরোধ কর। ফলে তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা রয়েছে, সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত হয়ে যাবে’। ‘এগুণের অধিকারী কেবল তারাই হতে পারে যারা ধৈর্য ধারণ করে। আর এ চরিত্র কেবল তারাই লাভ করে যারা মহা সৌভাগ্যবান’ (হা-মীম সাজদাহ: ৩৪-৩৫)।
একদিন এক বেদুঈন এসে মসজিদের মধ্যে দাঁড়িয়ে পেশাব করল। সাহাবীগণ ক্ষেপে গেল। রাসূল (সা.) তাদের নিষেধ করলেন ও এক বালতি পানি এনে তাতে ঢেলে দিতে বললেন। অতঃপর লোকটিকে কাছে ডেকে বললেন, إِنَّ هَذِهِ الْمَسَاجِدَ لاَ تَصْلُحُ لِشَىْءٍ مِنْ هَذَا الْبَوْلِ وَلاَ الْقَذَرِ إِنَّمَا هِىَ لِذِكْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالصَّلاَةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ
‘দেখ এটি মসজিদ। এসব পবিত্র স্থানে পেশাব করা ও একে অপবিত্র করা ঠিক নয়। এগুলি তো কেবল আল্লাহর যিকর, ছালাত ও কুরআন তেলাওয়াতের জন্য নির্ধারিত’। অতঃপর তিনি মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে বললেন, فَإِنَّمَا بُعِثْتُمْ مُيَسِّرِينَ، وَلَمْ تُبْعَثُوا مُعَسِّرِينَ ‘তোমরা তো প্রেরিত হয়েছ সহজকারী হিসাবে, কঠিনকারী হিসাবে নও’। (মিশকাত: ৪৯১-৯২)
খ. প্রথমে প্রজ্ঞাপূর্ণ আচরণ ও সুন্দর উপদেশ দেওয়া এবং প্রয়োজনের আলোকে উত্তম পন্থায় বিতর্ক ও বিবাদে যাওয়া : আল্লাহ বলেন,
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ
‘তুমি মানুষকে তোমার প্রভুর পথে আহবান কর প্রজ্ঞা দ্বারা ও সুন্দর উপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে বিতর্ক বা বিবাদ কর উত্তম পন্থায়’ (নাহল: ১২৫)।
গ. একাকী ও সংঘবদ্ধভাবে উভয়পন্থায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করা: আল্লাহ বলেন,
انْفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالاً وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللهِ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ
‘তোমরা আল্লাহর পথে বের হও একাকী কিংবা দলবদ্ধভাবে এবং তোমাদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে’ (তওবা: ৪১)। এই প্রতিবাদের জন্য শারিরীক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করা আবশ্যক। হাদীসে এসেছে-
المُؤمِنُ الْقَوِىُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفِ
‘শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর নিকট উত্তম ও অধিকতর প্রিয় দুর্বল মুমিনের চাইতে’ (মিশকাত: ৫২৯৮)। অতএব ঐক্যবদ্ধ বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে সর্বদা হকপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী থাকতে হবে। নইলে আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকার বাস্তবায়িত হওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না।
ঘ. লক্ষ্যে স্থির থাকা ও ধৈর্যর সাথে মোকাবিলা করা:
অন্যায়ের প্রতিবাদ করা হলে, শয়তানের পক্ষ থেকে পাল্টা বাধা কিংবা হামলা আসার সম্ভাবনা প্রবল। এক্ষেত্রে লক্ষ্যে স্থির থেকে ধৈর্যর সাথে অন্যায়কে মোকাবিলা করা আল্লাহর নির্দেশ। কুরআনে এসেছে-
اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَ تَوَاصَوۡا بِالۡحَقِّ ۬ۙ وَ تَوَاصَوۡا بِالصَّبۡرِ
(সকল মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে) তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়েছে এবং (সত্যের উপদেশ দেওয়ার বাধা আসলে) পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে। (আসর:৩) অন্যত্র আছে-
فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُولُو الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ وَلاَ تَسْتَعْجِلْ لَهُمْ
‘অতএব তুমি ধৈর্যধারণ কর, যেমন ধৈর্যধারণ করেছিল (ইতিপূর্বে) দৃঢ়চিত্ত রাসূলগণ। আর তুমি তাদের (অর্থাৎ শত্রুদের কিংবা অপরাধিদের ব্যাপারে) ব্যতিব্যস্ত হয়ো না’ (আহক্বাফ: ৩৫)।
ঙ. সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাযোগ্য জ্ঞান অর্জন করা:
যে বিষয়ে আমরা প্রতিবাদ করব কিংবা যে বিষয়ে আমরা বাধা দিব সে বিষয় সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ আবশ্যক। এবং যাচাই বাছাই করে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত; অন্যথায় বিব্রতর ও লজ্জাজনক পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয়। পবিত্র কুরআনে এসেছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ
‘হে মুমিনগণ, যদি কোনো পাপী তোমাদের কাছে কোনো খবর আনে, তবে তোমরা তা পরীক্ষা করবে যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্থ না কর, এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও। (হুজরাত: ৬)
চ. সর্বদা মধ্যপন্থী হওয়া:
একজন মুসলিমের এটিই হ’ল সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধের ক্ষেত্রে এই চরিত্র বজায় রাখাই হ’ল সবচাইতে যরূরী। আল্লাহ বলেন, ‘এভাবে আমরা তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত করেছি। যাতে তোমরা মানব জাতির উপর সাক্ষী হতে পার এবং রাসূলও তোমাদের উপর সাক্ষী হতে পারেন’ (বাক্বারাহ: ১৪৩)। অর্থাৎ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যেন অহেতুক কঠোর না হয়ে যাই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
بَشِّرُوا وَلاَ تُنَفِّرُوا، يَسِّرُوا وَلاَ تُعَسِّرُوا
তোমরা সুসংবাদ দাও, তাড়িয়ে দিয়োনা। সহজ করো, কঠিন করো না। (বুখারি: ৬১২৪)। আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে বলেন,
قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لاَ تَغْلُوا فِي دِيْنِكُمْ غَيْرَ الْحَقِّ وَلاَ تَتَّبِعُوا أَهْوَاءَ قَوْمٍ قَدْ ضَلُّوا مِنْ قَبْلُ وَأَضَلُّوا كَثِيْرًا وَضَلُّوا عَنْ سَوَاءِ السَّبِيْلِ ‘
তুমি বল, হে আহলে কিতাবগণ! তোমরা তোমাদের দ্বীনের মধ্যে অন্যায়ভাবে বাড়াবাড়ি কর না এবং ঐসব লোকদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না, যারা অতীতে পথভ্রষ্ট হয়েছিল ও বহু লোককে পথভ্রষ্ট করেছিল এবং এখন তারা সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে’ (মায়েদাহ: ৭৭)। অন্যত্র আছে-
يُرِيدُ اللهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ
‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজটি চান, তিনি কঠিন করতে চান না’ (বাক্বারাহ: ১৮৫)
ছ. সমাজ সংস্কারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা: আল্লাহ তা’আলা নূহ (আঃ) সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
قَالَ رَبِّ إِنِّيْ دَعَوْتُ قَوْمِيْ لَيْلاً وَنَهَارًا- … ثُمَّ إِنِّيْ دَعَوْتُهُمْ جِهَارًا- ثُمَّ إِنِّيْ أَعْلَنْتُ لَهُمْ وَأَسْرَرْتُ لَهُمْ إِسْرَارًا- فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا
‘নূহ বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক আমি আমার সম্প্রদায়কে দিবারাত্রি দাওয়াত দিয়েছি’। … ‘অতঃপর আমি তাদেরকে আহবান করেছি উচ্চ স্বরে’। ‘অতঃপর আমি তাদের প্রকাশ্যে ও গোপনে উপদেশ দিয়েছি’। ‘আমি বলেছি তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি অতীব ক্ষমাশীল’ (নূহ: ৫, ৮-১০)।
৫. نَهْيٌ عَنِ الْمُنْكَرِ – বাস্তবায়নের পথে বাধা ও চ্যালেঞ্জ:
যদিও “নাহি আনিল মুনকার” একটি শারঈ দায়িত্ব এবং ঈমানদার জীবনের অন্যতম স্তম্ভ, বাস্তব জীবনে এটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অসংখ্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাধা সামনে আসে। এগুলো চিহ্নিত করে সমাধান ছাড়া এর প্রয়োগ পূর্ণতা পায় না। নিচের কতিপয় চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো-
ক. দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতা ও গাফেলতা
অনেকেই আজ জানেন না কোন কাজ “مُنْكَر” (নিন্দনীয় ও গুনাহর কাজ)। মানুষের ব্যক্তিগত ধারণাই হয়ে যায় ‘হালাল-হারামের মানদণ্ড। ফলে যারা অন্যায় করছে, তারা তা ‘অধিকার’ মনে করছে। যারা নিষেধ করছে, তাদের “উগ্র” বা “ধর্মান্ধ” বলে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে।
খ. ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ ও “ব্যক্তিস্বাধীনতা”-র অপব্যাখ্যা
আজকের সমাজে অনেকেই বিশ্বাস করে—“প্রত্যেকেই তার নিজের জীবন নিজের মতো করে চালাবে।” অন্যের কাজের নৈতিক বিচার করলে বলা হয়: “তুমি কে আমাকে বলার?”এই মনোভাব সরাসরি কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষার বিরোধী। ইসলামে সমাজ একে অপরের অভিভাবক (أولياء) (তাওবা: ৭১)।
গ. অন্যায়কে “সাধারণ বিষয়” হিসেবে স্বীকৃতি
টিভি, মিডিয়া, মিউজিক, সোশ্যাল মিডিয়া—সকল মাধ্যমের মাধ্যমে অন্যায় এমনভাবে স্বাভাবিক করা হচ্ছে যেন এগুলো কোনো অপরাধই না।
ঘ. ভীতি ও নির্যাতনের আশঙ্কা
“আল্লাহর পথে বললে লোকে হাসবে, চাকরি যাবে, বয়কট হবে!” এই ভয় অনেককে চুপ করে থাকতে বাধ্য করে। অনেক ক্ষেত্রেই সরকার বা কর্তৃপক্ষ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করে রাখে—বিশেষত ইসলামী আদর্শে।
ঙ. মুসলিম সমাজের মধ্যেই দলীয় বিভাজন ও হিংসা
অনেক সময় “নাহি আনিল মুনকার” করা হয় ব্যক্তিগত শত্রুতা বা দলীয় স্বার্থে। ইসলাম প্রচারের চেয়ে “মানহাজ/পন্থা”-নিয়ে ঝগড়া। সত্যের চেয়ে “কে বলছে সেটা” বেশি গুরুত্ব পায়।
চ. কেবল বক্তৃতা নির্ভরতা ও কর্মের অভাব
বাস্তবে “নাহি আনিল মুনকার” কেবল বক্তৃতা বা পোস্ট নয়। নিজে গুনাহ থেকে বাঁচা, পরিবারে প্রতিরোধ, পাড়ায় সমাজে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ—এসবই দরকার।
ছ. আলেমদের নিরবতা বা আপস
অনেক সময় আলেমগণ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক কারণে মুখ বন্ধ করে থাকেন, যাতে সরকার বা প্রভাবশালীদের অসন্তুষ্ট না করা হয়। অথচ ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (রহঃ) বলেন,
“إذا سكتَ العَالِمُ تقيَّةً، والجاهِلُ جهلاً، فمتى يُظهر الحق؟”
“যদি আলেম ভয় করে চুপ থাকে, আর অজ্ঞ অজ্ঞতার কারণে চুপ থাকে—তবে কখন সত্য প্রকাশিত হবে?”
উপসংহার:
ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এটি শুধুমাত্র ব্যক্তি-পর্যায়ের ইবাদত নির্ভর নয়—বরং এটি একটি সামষ্টিক দায়িত্ববোধসম্পন্ন জীবনব্যবস্থা। “نَهْيٌ عَنِ الْمُنْكَرِ” (নাহি আনিল মুনকার) – অর্থাৎ সমাজের অন্যায়, অশ্লীলতা, জুলুম, জঘন্যতা এবং আল্লাহর নাফরমানি প্রতিরোধের নির্দেশ—এই জীবনব্যবস্থার কেন্দ্রীয় একটি স্তম্ভ। এটি এমন একটি আমল যা ঈমানের পরিচয়, সমাজ সংস্কারের চাবিকাঠি, এবং আল্লাহর রহমতের মূল উপায়।
ইতিহাস সাক্ষী, যখন কোনো জাতি এই দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছে, তখন তারা আল্লাহর গজবে পতিত হয়েছে। আবার যারা সত্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় দাঁড়িয়েছে, তারা পেয়েছে নাজাত, ইজ্জত এবং নেতৃত্ব।
বর্তমান সময় এমন একটি যুগ, যেখানে গুনাহকে “স্বাধীনতা”, অশ্লীলতাকে “ফ্যাশন” এবং জুলুমকে “নীতি” হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে। এই সময়টাতেই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হিকমত, দাওয়াহ, সাহস এবং তাকওয়ার সাথে নাহি আনিল মুনকার আদায়ের। অতএব, আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো— নিজে গুনাহ থেকে বাঁচা, পরিবার ও সমাজকে সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করা, অন্যায় প্রতিরোধে মুখ খোলা।
উপরোক্ত বয়ানের আরবী অনুবাদ (সংক্ষিপ্ত ও মূলবক্তব্য)
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ ، أَمَّا بُعْدُ . . . . . . . . . . . . . . .
أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامُ – مَوْضُوعُنَا اليَوْمِ : اَلْإِسْلَامُ فِي النَهْيِ عَنِ الْمُنْكَرِ
أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامُ الآنَ أُلْقِي أَمَامَكُمْ عَنْ أَهَمِّيَةِ النَهْيِ عَنِ الْمُنْكَرِ
أَوَّلاً: هُوَ شَرْطٌ لِتَفْضِيْلِ أُمَّةِ المُحَمَّدِ عَلَى الآخَرِيْنَ: كَمَا قَالَ اللهُ تَعَالَى فِي القُرآنِ: كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ، تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ…
ثَانِيًا: أَمْرُ بِأَدَاءِ هَذَا الْوَاجِبِ عَلَى وَجْهٍ جَمَاعَةٍ بِلَا اخْتَلَافٍ: كَمَا قَالَ اللهُ تَعَالَى فِي القُرآنِ : وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ، وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ، وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ، وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ”
ثَالِثًا: هَذَا الْعَمَلِ مِنْ سِمَاتٍ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ كَمَا قَالَ اللهُ تَعَالَى فِي القُرآنِ: وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ، يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ، وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَر. كَمَا جَاءَ فِي الحَديْثِ: مَن رَأَى مِنكُم مُنكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِن لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِن لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَٰلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ، وَفِي حَدِيْثٍ آخَرَ: أَفْضَلُ الْجِهَادِ كَلِمَةُ عَدْلٍ عِندَ سُلْطَانٍ جَائِرٍ”
رَابِعًا: هَلَكَتْ الْأُمَمُ السَّابِقَةُ لِعَدَمِ النَّهْيِ عَنِ المُنْكَرِ : كَمَا قَالَ اللهُ تَعَالَى فِي القُرآنِ: لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِن بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَىٰ لِسَانِ دَاوُودَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ، ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا وَّكَانُوا يَعْتَدُونَ، كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَن مُّنكَرٍ فَعَلُوهُ، لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ. وَجَاءَ فِي الحَدِيْثِ: إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوُا الظَّالِمَ فَلَمْ يَأْخُذُوا عَلَى يَدَيْهِ، أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمُ اللَّهُ بِعِقَابٍ.
خَامِسًا: إِذَا لَمْ يُمْنَعُ المُنْكَرُ، فَلَنْ يُسْتَجَابَ الدُّعَاءُ عِنْدَ الْخَطَرِ: وَقَدْ وَرَدَ ذَلِكَ فِي الْحَدِيثِ. وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُونَهُ فَلاَ يُسْتَجَابُ لَكُمْ .
بَارَكَ اللَّهُ لِي وَلَكُمْ فِي الْقُرْآنِ الْعَظِيمِ، وَنَفَعَنِي وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيهِ مِنَ الْايَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيمِ. أَقُولُ قَوْلِي هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيمَ الْجَلِيل، لِيْ وَلَكُمْ وَلِسَائِرِ الْمُسْلِمِينَ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ فَاسْتَغْفِرُوه أَنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
সংকলন, সম্পাদনা, পরিমার্জন ও আরবী তরজমা: ইমরান মাহমুদ (পিএইচডি গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাবি) পুনর্মূল্যায়ন: মুফতি ইসমাঈল হোসাইন (খতিব ও দাঈ)