সাপ্তাহিক জুমু’আর বয়ান। বিষয়:আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয়: গুরুত্ব, তাৎপর্য ও পদ্ধতি

ভূমিকা:

মানবজীবনে সম্পদের ভূমিকা অপরিসীম। তবে সম্পদের প্রকৃত মূল্য কেবল তখনই প্রকাশ পায়, যখন তা মানবকল্যাণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যয় করা হয়। সমাজে সম্পদের সুষম বণ্টন, দারিদ্র্য নিরসন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয়ের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এটি কেবল ধর্মীয় অনুশাসন নয়, বরং মানবতার এক মৌলিক দায়িত্ব। দান ও ব্যয়ের মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের লোভ, অহংকার ও আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে মুক্তি লাভ করে এবং সমাজে সহমর্মিতা ও সহযোগিতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। তাই আল্লাহর পথে ব্যয় কেবল অর্থনৈতিক কর্ম নয়, এটি এক ধরনের আত্মিক সাধনা, যা মানুষের ঈমানকে দৃঢ় করে এবং সমাজে নৈতিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে।

১. শাব্দিক  ব্যাখ্যা: ইনফাক শব্দটির মূল ধাতু নাফাক (نفق)  যার অর্থ সুড়ঙ্গ। সাধারণত সুড়ঙ্গের এক দিক দিয়ে প্রবেশ করে আরেক দিক দিয়ে বের হওয়া যায়। আর এই নাফাক শব্দটির সাথে মাল (সম্পদ) শব্দটি যোগ হলে এর অর্থ হয় সম্পদ খরচ করা, শেষ করা (আল মুনযেদ-আরবী উর্দু,১২তম সংস্করণ,১৯৯৪) । এর মানে হচ্ছে সম্পদ কারো হাতে কুক্ষিগত থাকার বস্তু নয়। সম্পদ এক দিক দিয়ে আসবে আবার আরেক দিক দিয়ে খরচ হবে।

২. পারিভাষিক ব্যাখ্যা:  কুরআনে যে ইনফাক বা দান এর কথা বলা হয়েছে এই ইনফাক এর সাথে আয় ও ব্যয়ে বৈধতার প্রশ্ন রয়েছে। অবৈধ উপায়ে আয় করে অবৈধ খাতে খরচ করলে কুরআনে বর্ণিত ইনফাক হবেনা। ইনফাক হতে হলে সম্পদ বৈধভাবে আয় করতে হবে এবং আল্লাহকে খুশী করার জন্য বৈধ খাতেই ব্যয় করতে হবে।

৩. প্রকারভেদ: সাধারণত ইনফাক দুই ধরণের- ক. আবশ্যকীয়- যেমন: যাকাত, ফিতরা। খ. ইচ্ছাধীন- সাধারণ দান।

৪. গুরুত্ব ও তাৎপর্য:

এক. ইসলাম ধর্মের মূল কাজ হলো ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করা।  আর জীবন ও সম্পদ ব্যয় করার মধ্য দিয়েই ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ تِجَارَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ (10) تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ.

অর্থ: হে মু’মিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেব যা তোমাদেরকে মর্মান্তিক ‘আযাব থেকে রক্ষা করবে? তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে। (৬১ সফ: ১০-১১) অন্যত্র আছে-

إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ

অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ মু’মিনদের কাছ থেকে তাদের জান আর মাল কিনে নিয়েছেন কারণ তাদের জন্য (বিনিময়ে) আছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে। অতঃপর (দুশমনদের) হত্যা করে এবং (নিজেরা) নিহত হয়। (৯ তাওবা: ১১১)

কারণ, ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাতিলের আক্রমণ আসবে। আর উক্ত আক্রমণকে প্রতিহত করতে সর্বদা নিজেদেরকে প্রস্তুত রাখতে হবে। আর এজন্য জান ও মাল উভয়েরই প্রয়োজন। তাই আল্লাহ তা’লা বলেন-

وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِن دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ

আর তাদের মুকাবিলার জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি ও অশ্ব বাহিনী প্রস্তুত কর, তা দ্বারা তোমরা ভয় দেখাবে আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদেরকে এবং এরা ছাড়া অন্যদেরকেও, যাদেরকে তোমরা জান না, আল্লাহ তাদেরকে জানেন। আর (এই প্রস্তুতির জন্য) তোমরা যা আল্লাহর রাস্তায় খরচ কর, তা তোমাদেরকে পরিপূর্ণ দেয়া হবে, আর তোমাদেরকে যুলম করা হবে না। (৮ আনফাল: ৬০)

দুই. আল্লাহর পথে ব্যয় করলে আল্লাহ তার যথার্থ প্রতিদান দিবেন:

وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ

তোমরা যা আল্লাহর রাস্তায় খরচ কর, তা তোমাদেরকে পরিপূর্ণ দেয়া হবে, আর তোমাদেরকে যুলম করা হবে না। (৮ আনফাল: ৬০)

শুধু তাই নয়, বরং যথার্থের চেয়ে আরো বেশি দিবেন-

مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ ۗ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ

অর্থ: যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ’ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (২ বাকারা: ২৬১)

তিন. দানকারীদের কোন ভয় ভীতি থাকবেনা:

ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُم بِٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ فَلَهُمۡ أَجۡرُهُمۡ عِندَ رَبِّهِمۡ وَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ

অর্থ: যারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে। অতএব, তাদের জন্যই রয়েছে তাদের রবের নিকট তাদের প্রতিদান। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (২ বাকারা: ২৭৪)

চার. গোপনে দানকারী কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া লাভ করবে:

নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “কিয়ামত দিবসে সাত শ্রেণীর মানুষ আরশের নিচে ছায়া    লাভ করবে।…তন্মধ্যে এক শ্রেণী হচ্ছে:

وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ

অর্থ: যে ব্যক্তি গোপনে এমনভাবে সাদাকা করে যে, তার ডান হাত যা দান করে বাম হাত তা জানতে পারে না। (বুখারি: ১৪২৩)

পাঁচ. যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে সর্বদা সদকা-খয়রাত করেন তাঁরা প্রকৃত ঈমানদার: আল্লাহ তা’আলা বলেন,

٢ ٱلَّذِينَ يُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ٣ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ حَقّٗاۚ لَّهُمۡ دَرَجَٰتٌ عِندَ رَبِّهِمۡ وَمَغۡفِرَةٞ وَرِزۡقٞ كَرِيمٞ

অর্থ: যারা সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে। (৮ আনফাল- ৩-৪)

ছয়. মৃত্যুর পরও দানের সাওয়াব পাওয়া যায় তথা এটি সাদাকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত: হাদিসে ইরশাদ হয়েছে,

إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩টি আমল বন্ধ হয় না- ১. সদকায়ে জারিয়া,  ২. এমন জ্ঞান (ইলম)- যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ও ৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দোয়া করে। সহিহ মুসলিম : ৪৩১০

সাত. যারা আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে নিজেদেরকে কৃপণতা থেকে বেঁচে থাকে তারাই সফল: 

وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِن قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِّمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ ۚ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

অর্থ: আর মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা মদীনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), আর যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে তাদেরকে ভালবাসে। আর মুহাজরিদেরকে যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোন ঈর্ষা অনুভব করে না। এবং নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। যাদের মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম। (৫৯ হাশর: ৯)

উক্ত আয়াতে মুহাজিরদের প্রতি আনসারদের উদারতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে।

বিপরীতে যারা কৃপণতা থেকে বাঁচতে পারবেনা তাদের ব্যাপারে কঠিন হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

هَٰٓأَنتُمۡ هَٰٓؤُلَآءِ تُدۡعَوۡنَ لِتُنفِقُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَمِنكُم مَّن يَبۡخَلُۖ وَمَن يَبۡخَلۡ فَإِنَّمَا يَبۡخَلُ عَن نَّفۡسِهِۦۚ وَٱللَّهُ ٱلۡغَنِيُّ وَأَنتُمُ ٱلۡفُقَرَآءُۚ وَإِن تَتَوَلَّوۡاْ يَسۡتَبۡدِلۡ قَوۡمًا غَيۡرَكُمۡ ثُمَّ لَا يَكُونُوٓاْ أَمۡثَٰلَكُم 

অর্থ: তোমরাই তো তারা, তোমাদের আহবান করা হচ্ছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করবে। অথচ তোমাদের কেউ কেউ কার্পণ্য করছে। তবে যে কার্পণ্য করছে সে তো নিজের প্রতিই কার্পণ্য করছে। আর আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত। যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি তোমাদের ছাড়া অন্য কোন কওমকে স্থলাভিষিক্ত করবেন। তারপর তারা তোমাদের অনুরূপ হবে না। (৪৭ মুহাম্মদ: ৩৮) অন্যত্র আরো আছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ كَثِيرًا مِّنَ الْأَحْبَارِ وَالرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُونَ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۗ وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ

হে মু’মিনগণ! অধিকাংশ আহবার এবং রুহবান (ইয়াহুদ ও খৃষ্টানদের আলেম ও ধর্ম যাজক) মানুষের ধন-সম্পদ শারীয়াত বিরুদ্ধ উপায়ে ভক্ষণ করে এবং আল্লাহর পথ হতে বিরত রাখে, আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করেনা, তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক এক শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দাও। (৯ তাওবা: ৩৪)

আট. কেউ দান করলে আল্লাহ তার উপর দান করেন: হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ قَالَ اللَّهُ أَنْفِقْ يَا ابْنَ آدَمَ أُنْفِقْ عَلَيْكَ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ বলেন, খরচ কর, হে, আদম সন্তান আমিও খরচ করবো তোমার প্রতি। (বুখারি: ৪৯৬১)

নয়. দানকারীরা আল্লাহর নিকটে থাকেন: হাদীসে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «السَّخِيُّ قَرِيبٌ مِنَ اللَّهِ قَرِيبٌ مِنَ الْجَنَّةِ قَرِيبٌ مِنَ النَّاسِ بَعِيدٌ مِنَ النَّارِ. وَالْبَخِيلُ بَعِيدٌ مِنَ اللَّهِ بَعِيدٌ مِنَ الْجَنَّةِ بَعِيدٌ مِنَ النَّاسِ قَرِيبٌ مِنَ النَّارِ. وَلَجَاهِلٌ سَخِيٌّ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنْ عَابِدٍ بَخِيلٍ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর নিকটবর্তী, জান্নাতের নিকটবর্তী, জনগণের নিকটবর্তী (সকলের কাছেই দানশীল ব্যক্তি প্রিয়) এবং জাহান্নাম থেকে দূরবর্তী। কিন্তু কৃপণ ব্যক্তি (যে অর্জিত ধনের হক আদায় করে না) সে আল্লাহর থেকে দূরে, জান্নাত হতে দূরে, জনগণ থেকে দূরে এবং জাহান্নামের নিকটবর্তী। (তিরমিজি: ১৯৬১)

দশ. পৃথিবীর বুকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার মূলে ছিল সমসাময়িক মানুষদের সর্বোচ্চ দান ও ত্যাগ:

যেমন. খাদিজা, আবু বকর, উমর, উসমান, আব্দুর রহমান ইবনে আউফদের দান। মক্কার মুহাজিরদের বাড়িঘর সহায় সম্পতি ত্যাগ। মদীনার আনসারদের নিঃস্ব মুহাজিরদের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার। তাদের জন্যই আল্লাহ আয়াত অবতীর্ণ করেছেন- আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট।

এগার. আল্লাহর পথে ব্যয় জাহান্নাম থেকে বাঁচাবে: হাদীসে এসেছে-

اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ ‏”‏ ‏.‏

এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও তোমরা অগ্নি থেকে বেঁচে থাক। যদি তা না পাও তবে অন্তত ৪ একটি ভাল কথার বিনিময়ে হলেও। (মুসলিম: ২২২২)

বার. যা দান করা হয় সবই আল্লাহ নিকট পাওয়া যাবে:

وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا ۚ وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ اللَّهِ هُوَ خَيْرًا وَأَعْظَمَ أَجْرًا ۚ وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ.

আর সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। আর তোমরা নিজদের জন্য মঙ্গলজনক যা কিছু অগ্রে পাঠাবে তোমরা তা আল্লাহর কাছে পাবে প্রতিদান হিসেবে উৎকৃষ্টতর ও মহত্তর রূপে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (মুজ্জাম্মেল: ২০)

তের. দান করার মাধ্যমে প্রভাব ও কর্তৃত্ব তৈরি হয়: আল্লাহ তা’আলা বলেন,

الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ

পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। (৪ নিসা: ৩৪)

চৌদ্দ. দান সাদাকা বিপদ-আপদ দূর করে: হাদীসে এসেছে-

الصَّدَقَةُ تَسُدُّ سَبْعِينَ بَابًا مِنَ السُّوءِ.

অর্থাৎ সাদাকা  সত্তর ধরণের বিপদ-মুসিবত দূর করে। (জামে সগির: ৫১২৫)

কীভাবে দান করব?

এক. যাকাত ফিতরার ক্ষেত্রে দান শরিয়তের নির্ধারিত পন্থায় আদায় করতে হবে। যেমন যাকাতের ব্যাপারে বলা হয়েছে- ৮ শ্রেণির মানুষকে যাকাত প্রদান করা যাবে। আল্লাহ তা’লা বলেন,

اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَ الۡمَسٰكِیۡنِ وَ الۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡهَا وَ الۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُهُمۡ وَ فِی الرِّقَابِ وَ الۡغٰرِمِیۡنَ وَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیۡمٌ حَكِیۡمٌ

অর্থ: সাদাকাহ হচ্ছে শুধুমাত্র গরীবদের এবং অভাবগ্রস্তদের, আর এই সাদাকাহর (আদায়ের) জন্য নিযুক্ত কর্মচারীদের এবং (দীনের ব্যাপারে) যাদের মন রক্ষা করতে (অভিপ্রায়) হয় (তাদের), আর গোলামদের আযাদ করার কাজে এবং কর্জদারদের কর্জে (কর্জ পরিশোধে), আর জিহাদে (অর্থাৎ যুদ্ধ সরঞ্জাম সংগ্রহের জন্য) আর মুসাফিরদের সাহায্যার্থে। এই হুকুম আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, অতি প্রজ্ঞাময়। (৯ তাওবা: ৬০)

দুই. স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল সর্বাবস্থায় দান করতে হবে:

اَلَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ فِى السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكظِمِيْنَ الْغَيْظَ وَالْعَافِيْنَ عَنِ النَّاسِ

অর্থ: যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল (৩ আল ইমরান: ১৩৪)

তিন. দান করতে হবে হালাল উপার্যন হতে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ، وَلاَ يَقْبَلُ اللَّهُ إِلَّا الطَّيِّبَ، وَإِنَّ اللَّهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ، كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ، حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الجَبَلِ»

যে ব্যক্তি হালাল কামাই থেকে একটি খেজুর সমপরিমাণ সদকা করবে (আর আল্লাহ তা‘আলা তো একমাত্র হালাল বস্তুই গ্রহণ করে থাকেন) আল্লাহ তা‘আলা তা ডান হাতে গ্রহণ করবেন। অতঃপর তা তার কল্যাণেই বর্ধিত করবেন যেমনিভাবে তোমাদের কেউ একটি ঘোড়ার বাচ্চাকে সুন্দরভাবে লালন-পালন করে বর্ধিত করে। এমনকি আল্লাহ তা‘আলা পরিশেষে সে খেজুর সমপরিমাণ বস্তুটিকে একটি পাহাড় সমপরিমাণ বানিয়ে দেন”। (সহীহ বুখারী: ১৪১০)

চার. প্রিয় বস্তু দান করতে হবে: আল্লাহ বলেন,

 لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتّى تُنْفِقُوْا مِمَّا تُحِبُّوْنَ

তোমরা তোমাদের প্রিয়বস্তু খরচ না করা পর্যন্ত কক্ষনো পুণ্য লাভ করবে না। (৩ আল ইমরান: ৯২)

পাঁচ. যথাসময়ে তথা প্রয়োজনের সময়ে দান করতে হবে, অন্যথায় হঠাৎ সময় ফুরিয়ে যাবে: আল্লাহ তা’আলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا مِمَّا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ يَوْمٌ لا بَيْعٌ فِيهِ وَلا خُلَّةٌ وَلا شَفَاعَةٌ وَالْكَافِرُونَ هُمُ الظَّالِمُونَ

হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি,সেদিন আসার পূর্বেই তোমরা তা থেকে ব্যয় কর, যাতে না আছে বেচা-কেনা, না আছে সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই হলো প্রকৃত যালেম। (২ বাকারা: ২৫৪)

ছয়. উত্তম দান হলো- যে দানের মাধ্যমে গ্রহিতার প্রয়োজন মিটে যায়: হাদীসে এসেছে-

عَنْ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يقول : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَفْضَلُ الصَّدَقَةِ أَنْ تُشْبِعَ كَبِدًا جَائِعًا

অর্থাৎ সর্বোত্তম দান হল প্রয়োজন মিটিয়ে পরিতৃপ্ত করা। (বায়হাকি)

সাত. দান করে খোটা দেওয়া যাবেনা, অন্যথায় দান গ্রহণযোগ্য হবেনা: আল্লাহ তা’আলা বলেন,

الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى ۙ لَّهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

অর্থ: যারা আল্লাহর রাস্তায় তাদের সম্পদ ব্যয় করে, অতঃপর তারা যা ব্যয় করেছে, তার পেছনে খোঁটা দেয় না এবং কোন কষ্টও দেয় না, তাদের জন্য তাদের রবের নিকট তাদের প্রতিদান রয়েছে এবং তাদের কোন ভয় নেই, আর তারা চিন্তিত হবে না। (২ বাকারা: ২৬২)

কোন দান সবচেয়ে উত্তম?

জিহাদের জন্য কৃত ব্যয়ই সর্বোৎকৃষ্ট ব্যয়। এই ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে ইরাশাদ করেন-

أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ الْحَاجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَجَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۚ لَا يَسْتَوُونَ عِندَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ (19) الَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ أَعْظَمُ دَرَجَةً عِندَ اللَّهِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ

অর্থ: তোমরা কি হাজীদের পানি পান করান ও মসজিদুল হারাম আবাদ করাকে ঐ ব্যক্তির মত বিবেচনা কর, যে আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান এনেছে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। তারা আল্লাহর কাছে বরাবর নয়। আর আল্লাহ যালিম কওমকে হিদায়াত দেন না। যারা ঈমান এনেছে, হিজরত করেছে, আর আল্লাহর পথে নিজদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করেছে, আল্লাহর কাছে তারা বড়ই মর্যাদাবান আর তারাই সফলকাম।  (তাওবা: ১৯- ২০)

কোন সময়ের দান সবচেয়ে উত্তম?

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَمَا لَكُمْ أَلَّا تُنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ لَا يَسْتَوِي مِنكُم مَّنْ أَنفَقَ مِن قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِينَ أَنفَقُوا مِن بَعْدُ وَقَاتَلُوا ۚ وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَىٰ ۚ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ.

অর্থাৎ তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করছ না ? অথচ আসমানসমূহ ও যমীনের উত্তরাধিকারতো আল্লাহরই? তোমাদের মধ্যে যারা মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে এবং যুদ্ধ করেছে তারা সমান নয়। তারা মর্যাদায় তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, যারা পরে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে। তবে আল্লাহ প্রত্যেকের জন্যই কল্যাণের ওয়াদা করেছেন। আর তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবগত। (৫৭ হাদীদ: ১০)

উপসংহার:

আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের কল্যাণে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এটি মানবতার উন্নয়ন, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও আত্মিক প্রশান্তির এক অপরিহার্য উপায়। যখন সমাজের বিত্তবানরা তাদের সম্পদ মানবকল্যাণে ব্যয় করে, তখন দরিদ্ররা আশ্রয় পায়, সমাজে ভারসাম্য সৃষ্টি হয়, এবং মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অন্যদিকে ব্যয়ের অভাব সমাজে বৈষম্য, হিংসা ও অন্যায়ের জন্ম দেয়। সুতরাং আল্লাহর পথে ব্যয় কেবল ধর্মীয় কর্তব্য নয়, এটি একটি নৈতিক ও মানবিক আহ্বানও বটে। এই চেতনা যদি ব্যক্তি ও সমাজের অন্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে এক ন্যায়ভিত্তিক, সমৃদ্ধ ও কল্যাণমুখী সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

উপরোক্ত বয়ানের আরবী অনুবাদ (সংক্ষিপ্ত মূলবক্তব্য)

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ ، أَمَّا بُعْدُ . . . . . . . . . . . . . . .

 أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامُ – مَوْضُوعُنَا اليَوْمِ : أَهَمِّيَّةُ وَفَضِيْلَةُ إِنْفَاقِ المَالِ فِي سَبِيلِ اللهِ وَسُلُوكُهُ:

قَالَ اللهُ تَعَالَى فِي القُرآنِ: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ تِجَارَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ (10) تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ.

أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامُ الآنَ أُلْقِي أَمَامَكُمْ عَنْ فَضِيْلَةِ الإِنْفَاقِ فِي سَبِيْلِ اللهِ.

 أَوَّلًا: إِذَا  أَنْفَقَ أَحَدٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، أَعْطَاهُ اللهُ الجَزَاءَ أَحْسَنَ الجَزَاءِ: كَمَا قَالَ اللهُ فِي القُرآنِ: وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ. وَأَعْطَى مَزِيْداً: كَما وَرَدَ فِي القُرآنِ: مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ ۗ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ.

ثَانِيًا: لَا خَوْفَ عَلَى الْمُنْفِقِينَ: كَمَا قَالَ اللهُ فِي القُرآنِ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُم بِٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ فَلَهُمۡ أَجۡرُهُمۡ عِندَ رَبِّهِمۡ وَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ.

ثَالِثًا: اَلْمُتَصَدِّقُونَ سِرًّا يَسْتَظِلُّونَ تَحْتُ عَرْشِ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: كَمَا وَرَدَ فِي الحَدِيْثِ: وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ.

رَابِعًا:  اَلْمُتَصَدِّقُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ هُمْ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا: كَمَا قَالَ اللهُ فِي القُرآن:   ٢ ٱلَّذِينَ يُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ٣ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ حَقّٗاۚ لَّهُمۡ دَرَجَٰتٌ عِندَ رَبِّهِمۡ وَمَغۡفِرَةٞ وَرِزۡقٞ كَرِيم.

خَامِسًا: مِنْ يَنْجُو مِنَ الْبُخْلِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ : كَمَا جَاءَ فِي القُرآنِ:  وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِن قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِّمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ ۚ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ.

بَارَكَ اللَّهُ لِي وَلَكُمْ فِي الْقُرْآنِ الْعَظِيمِ، وَنَفَعَنِي وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيهِ مِنَ الْايَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيمِ. أَقُولُ قَوْلِي هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيمَ الْجَلِيل، لِيْ وَلَكُمْ وَلِسَائِرِ الْمُسْلِمِينَ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ فَاسْتَغْفِرُوه أَنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.

সংকলন, সম্পাদনা, পরিমার্জন ও আরবী তরজমা: ইমরান মাহমুদ (পিএইচডি গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাবি) পুনর্মূল্যায়ন: মুফতি ইসমাঈল হোসাইন (খতিব ও দাঈ)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore

Scroll to Top