সাপ্তাহিক জুমুআর বয়ান। বিষয়: ইবাদতে ইখলাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ভূমিকা: অন্তরের আমলসমূহের প্রথম আমল হল ইখলাস, যা ইবাদতের মগজ ও রুহ এবং আমল কবুল হওয়া বা না হওয়ার মানদণ্ড। আর ইখলাস অন্তরের আমলসমূহের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও সর্বোচ্চ চূড়া ও আমলসমূহের প্রধান ভিত্তি। আর এটিই হল, সমস্ত নবী ও রাসূলদের দাওয়াতের চাবিকাঠি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ ٓ﴾ [البينة: ٥]

“আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন একনিষ্ঠভাবে তথা ইখলাসের সাথে আল্লাহর ‘ইবাদাত করে। (আল-বায়্যিনাহ: ৫)

ক. ইখলাসের পরিচয়:

ইখলাস (إخلاص)শব্দটির অর্থ নিরেট বা খাটি বস্তু; কোনো বস্তু নির্ভেজাল ও খাটি হওয়া এবং তার সাথে কোন কিছুর সংমিশ্রণ না থাকাকে ইখলাস বলে।  আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

إِلَّاعِبَادَ اللهِ ٱلۡمُخۡلَصِينَ 

(লোকেরা অবশ্যই অন্যায় কাজের শাস্তি পাবে তবে)“আল্লাহর মুখলিস বা নির্ভেজাল বান্দাগণ ছাড়া”। (সফফাত: ৪০) । নিচে ইখলাসের পরিচয় সম্পর্কে আলেমদের মন্তব্য উল্লেখ করা হলো-

  • খালেস বস্তু বলতে বুঝায়, সে পরিষ্কার বস্তুকে, যা থেকে যাবতীয় মিশ্রণ দূরীভূত করা হয়েছে। [লিসানুল আরব ২৬/৭; তাজুল আরূস, পৃ. ৪৪৩৭]
  • ফিরোযাবাদী রহ. বলেন, أَخْلَصَ لِلَّهِ এ কথার অর্থ হল, “সে রিয়া তথা প্রদর্শনেচ্ছা বা লৌকিকতা ছাড়ল।” [আল-কামুসুল মুহীত, ৭৯৮]
  • আল্লামা জুরজানী রহ. বলেন,  “ইবাদতে ও আনুগত্যে রিয়া তথা প্রদর্শনেচ্ছা ও শিরক পরিহার করা। অন্যত্র বলেন, মানবাত্মার পরিচ্ছন্নতায় বিঘ্ন ঘটায় এ ধরনের যাবতীয় ময়লা-আবর্জনা থেকে অন্তর খালি করাকেই ইখলাস বলে।”[ তা‘রীফাত: ২৮]
  • ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন,“ইবাদতের দ্বারা একমাত্র এক আল্লাহর উদ্দেশ্য নেওয়া।[মাদারেজুস সালেকীন ২/৯১]
  • হুযাইফা আল মুরআশী রহ. বলেন, “বান্দার ইবাদত প্রকাশ্য ও গোপনে উভয় অবস্থাতে একই পর্যায়ের হওয়ার নাম ইখলাস”।[ আত-তীবইয়ান ফী আ-দাবে হামালাতিল কুরআন: ১৩]

যে ব্যক্তি তার ইবাদত ও আ’মালে ইখলাসকে যথাযথভাবে গ্রহণ করতে পেরেছে সে ব্যক্তিকে বলা হয়- মুখলিস।

খ. ইখলাস অবলম্বনের গুরুত্ব

১. আল্লাহর তা‘আলা তার কিতাবের একাধিক জায়গায় তার বান্দাদের ইখলাস অবলম্বন করার নির্দেশ দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, 

وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ 

“আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করে। (আল-বায়্যিনাহ: ৫)। আল্লাহ তা‘আলা তার নবী মুহাম্মাদ সা. কে ইবাদতে ক্ষেত্রে নিজেকে মুখলিস হিসেবে ঘোষণা করার নির্দেশ দেন এবং বলেন,

قُلِ ٱللَّهَ أَعۡبُدُ مُخۡلِصٗا لَّهُۥ دِينِي 

হে রাসূল আপনি তাদেরকে জানিয়ে দিন, ‘আমি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর-ই ইবাদত করি এবং আমার জীবনব্যবস্থা কেবল আল্লাহর জন্য নিবেদিত [যুমার : ১৪]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

 قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ  لَا شَرِيكَ لَهُۥۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرۡتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ 

বল, নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব। তার কোনো শরীক নেই এবং আমাকে এরই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর আমি মুসলিমদের মধ্যে প্রথম’। [আনআম- আয়াত: ১৬১, ১৬২]

২. মানুষের জীবন মৃত্যু তথা দুনিয়ার জীবনকে সৃষ্টিই করা হয়েছে উত্তম আ’মল তথা ইখলাসপূর্ণ আ’মল করা জন্য। আল্লাহ তা’আলা অন্যত্র বলেন,

ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلۡمَوۡتَ وَٱلۡحَيَوٰةَ لِيَبۡلُوَكُمۡ أَيُّكُمۡ أَحۡسَنُ عَمَلٗاۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡغَفُورُ 

“তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল”। [মুলুক, আয়াত: ২] – এখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো- ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা ব্যতীত কখনো আ’মল সুন্দর হবেনা।

৩. পরকালে রবের সাথে সাক্ষাতের পূর্ব শর্ত হলো ইখলাসপূর্ণ তথা শিরকমুক্ত আ’মল। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا 

“সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে। (সূরা কাহাফ: ১১০) 

৪. আল্লাহ তা‘আলা তার স্বীয় নবী ও তার উম্মতকে মুখলিসদের সাথে থাকার নির্দেশ দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَٱصۡبِرۡ نَفۡسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُۥۖ 

আর তুমি নিজকে ধৈর্যশীল রাখ তাদের সাথে, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে সকাল-সন্ধ্যায় তাঁকে ডাকে।  

৫. আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতিদের গুণাগুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “তারা দুনিয়াতে মুখলিস তথা কেবল আল্লাহর জন্যই সকল কর্ম সম্পাদন করেন।” আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿إِنَّمَا نُطۡعِمُكُمۡ لِوَجۡهِ ٱللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنكُمۡ جَزَآءٗ وَلَا شُكُورًا ٩﴾ [الانسان: ٩]

“তারা বলে, ‘আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদেরকে খাদ্য দান করি। আমরা তোমাদের থেকে কোনো প্রতিদান চাই না এবং কোন শোকরও না।” [ইনসান: ৯]

৬. ইখলাসপূর্ণ আমল অল্প হলেও বরকতপূর্ণ: রাসূল সা, বলেন,

أخلِص دينَكَ يَكْفيكَ العَملُ القليلُ

তথা তোমা দ্বীনের কাজকে খালিসভাবে পালন কর, তাহলে অল্প আমলেই (নাজাতের জন্য) যথেষ্ট হবে। (তারগিব ওয়াত তারহিব: ১/৩৯)

৭. পরিশুদ্ধ নিয়ত তথা ইখলাসের উপরই কাজের ফলাফল নির্ভর করে। ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« إنَّمَا الأعْمالُ باِلنِّيَّاتِ، وَإنَّمَا لكِّل امْرِئ مَا نَوَى…

তথা নিয়তের ধরণের উপরই কাজের ফলাফল নির্ভর করে। ব্যক্তি যেভাবে নিয়ত করে তার জন্য তাই রয়েছে। (বুখারি) দ্বীনের যে কোন কাজ যেমন, ঈমান, নামাজ, রোজা, হাজ্জ, যাকাত, জিহাদ ইত্যাদি প্রত্যেকটা কাজই ব্যক্তির নিয়ত তথা একনিষ্ঠতার উপর নির্ভর করে। দুয়েকটি আ’মল উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন:

তাওহীদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« مَا قَالَ عَبْدٌ لا إلَهَ إلِا الله قَطُّ مُخلصًا إلا فُتحتْ لَهُ أَبْوَابُ الَّسَماءِ حَّتى تُفْضِي إِلَى العَرْشِ مَا اجْتَنَب الكَبَائِرَ »

কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তথা ইখলাসের সাথে যখন কোন বান্দা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তার জন্য আসমানের দরজাসমূহ আরশ পর্যন্ত খুলে দেয়া হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে কবিরা গুনাহ না করবে। (তিরমিযি, হাদিস: ৩৫৯০)

জিহাদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« مَنْ غَزَا فِي سَبِيلِ الله وَلَمْ يَنْوِ إِلاَّ عِقَالا فَلَهُ مَا نَوَى »

“যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একটি উটের রশি লাভের উদ্দেশ্যে জিহাদ করল, সে তাই পাবে যার নিয়ত সে করল”। (নাসাঈ: ৩১৩৮) তথা জিহাদ আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার জন্য শর্ত হলো একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই জিহাদ করতে হবে।

৮. ইখলাস তথা একনিষ্ঠভাবে যারা আ’মল করেনি, কিয়ামতের দিন তাদের জন্য ভয়াবহ পরিণাম অপেক্ষা করছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

 إنِ أَخْوَف مَا أَخَافُ عَلَيْكُم الشِّرْكُ الأَصْغَرُ قَالُوا: وَمَا الشِّركُ الأصْغَرُ يَا رَسُولَ الله؟ قَالَ الرِّيَاءُ، يَقُولُ الله لهْم يْوَم القَياَمِة إذَِا جزي الناَّسُ بِأَعْمَالهِمْ: اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتم تُراءُونَ فِي الدُّْنيَا، فَانْظُرُوا هَلْ تَجدُونَ عِنْدَهْم جَزَاءً

“আমি তোমাদের উপর যে জিনিষটিকে বেশি ভয় করি, তা হল, ছোট শিরক। সাহাবীরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ছোট শিরক কি? তিনি উত্তর দিলেন, রিয়া। আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন যখন মানুষকে তাদের আমলের বিনিময় দেবেন, তখন রিয়াকারীকে বলবেন, যাও দুনিয়াতে যাদেরকে তোমরা তোমাদের আমল দেখাতে, দেখ তাদের নিকট কোন সাওয়াব পাও কিনা”? (আহমদ: ২৩৬৮১)


গ. ইখলাসের ফলাফল:

১. আমল কবুল হওয়া: আবু উমামা আল-বাহেলী রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« إِنَّ الله لاَ يَقْبَلُ من العَمَلِ إِلاَّ مَا كَانَ لَهُ خَالِصاً، وَابتغي بهِ وَجْهُه »

“আল্লাহ তা‘আলা শুধু সে আমল কবুল করবেন, যে আমল ইখলাসের সহিত কেবল আল্লাহর জন্য করা হবে এবং আমল দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা উদ্দেশ্য হবে”।[নাসায়ী: ৩১৪০] 

২. সাওয়াব লাভ করা: সা’আদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« إنكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبَتغِي بِها وَجْهَ الله إلِا أُجِرتَ عَلَيْهَا »

“যখন তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কোন খরচ করবে, তখনই তার উপর তোমাকে সাওয়াব দেয়া হবে”।[বুখারি: ৫৬]

৩. গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভ: ইখলাস গুনাহ মাপের অনেক বড় কারণ। ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, এক প্রকার আমল এমন আছে, যখন কোন মানুষ আমলটি পরিপূর্ণ ইখলাস ও আল্লাহর আনুগত্যের সাথে করে থাকে, আল্লাহ তা‘আলা এ আমলের দ্বারা তার কবিরা গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। যেমন- আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে হাদিস বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,

« يُصاُح برَجل مِنْ أُمَّتيِ يَوَْم القِيَامَة عَلَى رُُؤوسِ الَخلَائقِ، فَيُنشْر لَهُ تسْعةٌ وتسْعونَ سِجلا، كُلُّ سِجِل مَدّ الَبصَرِ، ثُمَّ يقُولُ الله هَلْ تُنْكِرُ منْ هذَا شَيْئاً؟ فَيَقُولُ: لاَ يَا ربِّ. فَيَقُولُ: لا ظُْلمَ عَلَيْكَ. فَتخْرج لُه بِطَاقَةٌ قدْرُ الكَفِّ فيِهَا شَهادَةُ أَن لا إلَهَ إلِاَّ الله. فَيَقُولُ: أَيْنَ تَقع هذِهِ البطاقَةُ مَع هَذِهِ السِّجِلاَّتِ؟! فتوضُع هذِهِ البطَِاقَةُ فِي كَفَّةٍ وَالسِّجِلَّاتُ فِي كَفَّةٍ، فَثَقُلَتِ البِطَاقَةُ، وَطَاشَتِ السِّجِلاَّتُ»

“কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে সমগ্র মাখলুকের সামনে উপস্থিত করা হবে, তারপর তার জন্য নিরানব্বইটি দফতর খোলা হবে, প্রতিটি দফতর চোখের দৃষ্টির সমান দূরত্ব। তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি কি এর কোন কিছুকে অস্বীকার কর, তখন সে বলবে, না, হে আমার প্রভূ। তখন আল্লাহ বলবে, তোমার উপর কোন জুলুম করা হবে না। তারপর তার জন্য হাতের তালুর সমপরিমাণ একটি কাগজের টুকরা বের করা হবে, তাতে লিপিবদ্ধ থাকবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই; (যে কথাটি সে দুনিয়াতে ইখলাসের সহিত তথা একনিষ্ঠভাবে বলেছিল)। তখন সে বলবে, এত গুলো বড় বড় দফতরের মুকাবেলায় এ কাগজের টুকরাটি কোথায় পড়ে থাকবে? তারপর এ কাগজের টুকরাটি একটি পাল্লায় রাখা হবে এবং দফতরসমূহ অপর পাল্লায় রাখা হবে। তখন কাগজের টুকরার পাল্লাটি ভারি হয়ে যাবে এবং দফতরসমূহ হালকা হয়ে পড়বে।[তিরমিযি: ২৬৩৯] 

অপর একটি হাদিসে বর্ণিত,

 إنَّ امْرَأَةً بَغِيًّا رَأْت كَلباً فِي يَوْمٍ حَارٍّ يطيِفُ ببِئر قَدْ أَدْلَعَ لِسَانَهُ مِنَ الْعَطَشِ، فنَزَعْت لَه بمُوقِهَا – أي: سَقَتْه بِخُفِّهَا- فَغُفِرَ لَهَا

“একজন ব্যভিচারী মহিলা একটি কুকুরকে একটি কুপের নিকট দেখতে পেল সে পানির পিপাসায় কাতরাচ্ছে। মহিলাটি তার পায়ের মোজা খুলে তাকে পানি পান করালে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন”।[মুসলিম: ২২৫৬] যেহেতু মহিলাটি তার অন্তরে গাথা বিশুদ্ধ ও পরিপূর্ণ ঈমান তথা ইখলাসের সহিত নিয়ে কুকুরটিকে পানি পান করালেন, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দিলেন। অন্যথায় যত ব্যভিচারী মহিলা কোন কুকুরকে পানি করাবে সবাইকে ক্ষমা করে দেবেন এমন কথা এখানে বলা হয়নি।[মাজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে ইবনে তাইমিয়্যাহ: ২২১-২১৮] 

৪. আমল না করেও আমলের সাওয়াব লাভ করা: রাসূল সা. বলেন,

« مَن سَأَلَ الشَّهَادَةَ بصِدْقٍ بَلَّغَه الله مَنَازِلَ الشُّهَدَاءِ؛ وَإنْ مَاتَ عَلَى فرِاشهِ » 

“যে ব্যক্তি অন্তর থেকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট শাহাদাত কামনা করবে, আল্লাহ তাকে শহীদদের মর্যাদা দান করবে। যদিও লোকটি বিছানায় মারা যায়।[মুসলিম: ১৯০৯]  

অনুরূপভাবে ধনী লোক তার সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে যে পরিমাণ সাওয়াব লাভ করে থাকে, একজন গরীব লোক তার নিয়ত ভালো হওয়ার কারণে সে আল্লাহর রাস্তায় দান না করেও অনুরূপ সাওয়াব লাভ করবে। আবু কাবশা আল-আনমারি রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 

« مَثَلُ هَذِهِ الأمُّةِ كَمثَلِ أَرْبَعَةِ نَفَرٍ: رَجُلٌ آتَاهُ الله مَالا وَعِلْمًا، فَهُوَ يْعَملُ فِي مَالهِِ يُنفِقُهُ فِي حَقِّهِ، وَرَُجلٌ آتَاهُ الله عِلْمًا وَلَم يُؤْتهِِ مَالا فَهُوَ يَقُولُ: لَوْ كَانَ لِي مِثْلُ هَذَا عَمِلْتُ فِيهِ مِثْلَ الَّذي يْعَملُ قَال فَهُمَا فِي الأجر سَواءٌ » 

“এ উম্মতের উপমা চার শ্রেণীর লোকের অনুরূপ। এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা‘আলা মাল ও জ্ঞান উভয়টি দান করেছেন। লোকটি তার মালকে যথাযথ ব্যয় করে। আর এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞান দান করেছে, তাকে মাল দেয় নাই। সে মনে মনে বলে, যদি আমার নিকট লোকটির মত সম্পদ থাকত, তাহলে আমিও তার মত ব্যয় করতাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারা উভয়ে সমান সাওয়াবের অধিকারী হবেন।[ইবনে মাযাহ: ৪২২৮] 

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা প্রয়োজন, তা হল, একজন লোক আমলে অক্ষম নয়, তবে সে কাজ করার আশা রাখে, কিন্তু করে না। আর সে ধারণা করে, তাকে তার ভালো কাজের আশার কারণে সাওয়াব দেয়া হবে। সে তার এ ধরনের নিয়তকে নেক নিয়ত বলে বিবেচনা করে। কিন্তু বাস্তবতা হল, এ ধরনের নিয়ত ও আশা শয়তানের ওয়াস-ওসা ও আত্মার ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। 

৫. শয়তানে কু-মন্ত্রণা হতে নফসকে হেফাজত করা:

শয়তান যখন আল্লাহ তা‘আলাকে প্রতিশ্রুতি দেন, তখন সে মুখলিস বান্দাদের গোমরাহ করতে না পারার কথা বলেন। (সূরা সদ: ৮২-৮৩)

৬. দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি দূর হওয়া এবং রিজিক বৃদ্ধি পাওয়া: আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, 

ُ «مَنْ كانتِ الآخرةُ هُمَّه؛ جعَلَ الله غِنَاهُ فِي قَلْبِه، وَجََمَع لَهُ شَمْلَهُ، وَأَتَتْهُ الدُّنْيَا وَهِيَ راغمة، ومَنْ كانْت الدُّْنيَا هَّمُه؛ جعَلَ الله فَقْرُه بيْنَ عَينيه، وَفَرَّقَ عَلَيْهِ شَملَهُ، وَلَمْ يَأْتِهِ مِنْ الدُّنْيَا إلِا مَا قُدِّرَ لَه» 

“যার লক্ষ্য হবে, আখেরাত অর্জন করা, আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তর থেকে অভাবকে দূর করে দেবেন। আর তার জন্য যাবতীয় উপকরণ সহজ করে দেবে। আর দুনিয়া তার নিকট অপদস্থ হয়ে ধরা দেবে। আর যার লক্ষ্য বস্তু হবে, দুনিয়া অর্জন করা, আল্লাহ তা‘আলা অভাবকে তার চোখের সামনে তুলে ধরবে এবং যাবতীয় উপকরণকে তার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। আর দুনিয়া তার ভাগ্যে ততটুকু মিলবে, যতটুকু তার জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে”।[তিরমিযি: ২৪৬৫] 

ঘ. ইখলাস না থাকার ক্ষতি:

যেমনি ভাবে ইখলাসের অনেক উপকারিতা ও ফলাফল রয়েছে, যা একজন মুসলিম স্বীয় ইখলাসের মাধ্যমে অর্জন করে, অনুরূপভাবে ইখলাস না থাকারও অনেক ক্ষতি রয়েছে, যেগুলোতে একজন গাইরে মুখলিস ব্যক্তি আক্রান্ত হয়। এ সব ক্ষতিসমূহ হতে কতক নিম্নে আলোচনা করা হল। 

১. জান্নাতে প্রবেশ না করা: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« مَن تَعلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بهِِ وَجْهُ الله لا يَتَعلَّمُه إلِا ليُصيبَ بِه عرضاً مِنْ الدُّنْيَا لَم يَجدْ عَرف الجَنةَِّ يْوَم القياَمةِ يعْنِي رِيحَهَا » 

“যে ইলম দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হয়ে থাকে, সে ইলমকে যদি কোন ব্যক্তি দুনিয়াবি কোন উদ্দেশ্যে শেখে, কিয়ামতের দিন সে জান্নাত পাবে না, এমনকি সুঘ্রাণও পাবে না”।[আবু দাউদ: ৩৬৬৪] 

২.জাহান্নামে প্রবেশ করা:  আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,

«إن أَولَ الناَّسِ يقضى يْوَم القيامِة عَلَيْهِ: رَجل اسُتشِهَد فَأُتَي بهِِ فَعَرَّفُه نعمَه فَعرَفهَا، قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فيِهَا؟ قَالَ: قَاتلتُ فيِكَ حتَّى اسُتشِهْدتُ. قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكنكَّ قَاتَلْتَ لأن يُقَالَ: جَرِيءٌ، فَقَدْ قِيلَ. ثُّم أُمِر بهِ فَسحبَ عَلى وَجههِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي الناَّرِ وَرجل تَعَلَّمَ الْعلمَ وَعَلَّمه وقَرَأَ القُرْآنَ، فَأُتِي بهِ فَعَّرَفُه نعَمَه فَعرَفهَا، قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فيِهَا؟ قَالَ: تَعَلَّمْت العِلْمَ وَعَّلمْتُهُ وقَرَأْتُ فيِكَ القُرْآنَ. قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكنكَ تَعَلَّمْت العلَم ليُقَالَ: عَالِمٌ، وَقَرَأْتَ القُرْآنَ ليقَالَ: هُوَ قَارِئٌ، فَقَدْ قِيلَ.ثم أُمَر بهِ فَسحبَ عَلى وَجْههِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ. وَرَُجلٌ وَسَّع الله عَلَيْهِ وَأَعطَاهُ مِن أَْصناَفِ المَالِ كُلِّهِ، فَأُتِيَ بهِ فَعرَّفُه نعَمَه فَعرَفهَا، قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فيِهَا؟ قَالَ: مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبيِلٍ تُحبُّ أَنْ يُنفْقَ فيِهَا إلا أَنْفَقْتُ فيِهَا لكَ. قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكنِكَّ فَعَلْتَ ليُقَالَ: هُوَ جَوَاٌد، فَقَدْ قِيلَ. ثُّم أُمِرَ بهِ فَسحبَ عَلى وَجْهِهِ ثُمَّ أُلْقِيَ فِي الناَّرِ»

কিয়ামতের দিন সর্ব প্রথম যে ব্যক্তির বিচার করা হবে, তিনি হলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হন, তারপর তাকে ডাকা হবে এবং তার নিকট তার নিয়ামতসমূহ তুলে ধরা হলে সে তা চিনতে পারবে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি এ সব নিয়ামতের মুকাবালায় কি আমল করছ? সে বলল, তোমার রাহে আমি যুদ্ধ করছি এবং শহীদ হয়েছি। সে বলল, তুমি মিথ্যা বলছ, তুমি যুদ্ধ করছ, যাতে মানুষ তোমাকে বাহাদুর বলে। তা তোমাকে বলা হয়েছে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপের নির্দেশ দেয়া হলে, তাকে তার চেহারার উপর উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়। এক ব্যক্তি ইলম অর্জন করল, মানুষকে শেখাল এবং কুরআন পড়ল। তারপর তাকে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত করা হল এবং তার উপর আল্লাহর নিয়ামতসমূহ তুলে ধরা হলে, সে তা চিনতে পেল। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, তুমি এ বিষয়ে কি আমল করছ? বলল, আমি ইলম শিখেছি এবং শিখিয়েছি। তোমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন পড়েছি। সে বলল, তুমি মিথ্যা বলছ, তুমি ইলম শিখেছ, যাতে তোমাকে আলেম বলা হয়। আর কুরআন তিলাওয়াত করেছ, যাতে তোমাকে এ কথা বলা হয়, লোকটি ক্বারি। আর দুনিয়াতে তোমাকে তা বলা হয়েছে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপের নির্দেশ দেয়া হলে, তাকে তার চেহারার উপর উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়।[মুসলিম: ১৯০৫] 

কা’ব বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ طَلَبَ العِلَم ليِجَاري بهِِ العُلَمَاءَ، أَوْ ليِمَارِيَ بهِِ السُّفَهَاءَ، أَوْيَصْرِفَ بِهِ وجُوَه الناَّسِ إِلَيْهِ؛ أَدْخَلَهُ الله النَّارَ »

“যে ব্যক্তি এলম তালাশ করে, যাতে ইলম দ্বারা আলেমদের মুকাবালা করে অথবা জাহেলদের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে অথবা মানুষের দৃষ্টি তার প্রতি আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবে”।[তিরমিযি: ২৩৮২] 


৩. আমল কবুল না হওয়া:

«قَالَ الله تَبَارَكَ وَتَعالَى: أَنَا أَغْنىَ الشركَاءِ عَنْ الشِّركِ، مَنْ عِمَل عَمَلًا أَشرك فِيهِ مِعي غَيْري تَرَكْتُه وشَركهُ »

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা আমার সাথে যে সব শরীকদের শরীক সাব্যস্ত কর, আমি তা হতে পবিত্র। যে ব্যক্তি কোন আমল করে, কিন্তু তা ইখলাসের সহিত না করে তাতে আমার সাথে অন্য কাউকে শরিক করে, আমি তার আমল ও শিরক উভয়টিকে ছুড়ে ফেলে দেই।[মুসলিম: ২৯৮৫]

 আবু উমামা আল বাহেলী রাদিয়াল্লাহু আনুহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال: أرأيت رجلا غزا يلتمس الأجر والذكر ما له؟ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم«لا شَيْءَ لَهُ » فَأَعَادَهَا ثَلَاَث مَرَّاتٍ، يُقوُل لَهُ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم « لا شَيْءَ لَهُ » ثم « قَالَ إن الله لا يَقْبَلُ مِنْ العَمَلِ إلِا مَا كَانَ لَهُ خَالِصاً، وَاْبتُغي بهِِ وَجْهُه » 

“এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এক ব্যক্তি আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করে এবং সে সুনাম অর্জন ও সাওয়াব কামনা করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে কিছুই পাবে না। লোকটি তিনবার জিজ্ঞাসা করল,প্রতিবারই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য কিছুই মিলবে না। আল্লাহ তা‘আলা কেবল ঐসব আমল কবুল করেন, যা একমাত্র আল্লাহর জন্য করা হয় এবং যে আমল দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়।[নাসায়ী: ৩১৪০] 


৪. আমলের সাওয়াব নষ্ট হওয়া: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

 وَقَدِمۡنَآ إِلَىٰ مَا عَمِلُواْ مِنۡ عَمَلٖ فَجَعَلۡنَٰهُ هَبَآءٗ مَّنثُورًا 

তথা কিয়ামতের দিন অনেক আমলকারীর আমলকে (ইখলাসের সহিত না হওয়া তথা শিরক ও রিয়া মিশ্রিত হওয়ার কারণে) আমি ধুলোর ন্যায় উড়িয়ে দিব। (ফুরকান: ২৩)

হাদিসে কুদসীতে বর্ণিত, আল্লাহ তা‘আলা রিয়াকারীদের বিষয়ে বলেন,

«اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُم تُراءُونَ فِي الدُّنيَا، فَانْظُرُوا هَلْ تِجدُونَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً »

“দুনিয়াতে তোমরা যাদের দেখানোর জন্য আমল করতে তাদের নিকট যাও, দেখ, তাদের নিকট কোন বিনিময় পাও কিনা”? [আহমদ: ২৩৬৮১] 

উপরোক্ত বয়ানের আরবী অনুবাদ (সংক্ষিপ্ত মূলবক্তব্য)

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ ، أَمَّا بُعْدُ . . . . . . . . . . . . . . .

أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامَ

مَوْضُوعُنَا اليَوْمِ: أَهَمِّيَّةُ الْإِخْلَاصِ فِي الْعِبَادَةِ وَفَضِيْلَتُهُ

أَوَّلُ أَعْمَالِ الْقَلْبِ هُوَ الْإِخْلَاصُ، وَهُوَ الْقَلْبُ وَالرُّوحُ لِلْعِبَادَة وَمِعْيَارُ قَبُولِ الْعَمَلِ أَوْ عَدَمُ قَبُولِهِ. وَالْإِخْلَاصُ هُوَ أَهَمُّ أَعْمَالِ الْقَلْبِ وَأَعْلَى قِمَّةٍ وَأَسَاسِ الْأَعْمَالِ. وَهَذَا هُوَ مِفْتَاحُ دَعْوَةِ جَمِيعِ الْأَنْبِيَاءِ وَالْمُرْسَلِينَ. قَال تَعَالَى:

﴿وَمَا أُمِرُوا إلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ االدَّيْنُ ﴾ [الْبَيِّنَةِ: ٥]

أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الْكِرَامُ-

ألْآنَ نَحْنُ نُبَيِّنُ أَمَامَكُمْ عَنْ  هَوِيِّةِ الْإِخْلَاصِ:

كَلِمَةُ إخْلَاصٍ تَعْنِي الْمَادَّةُ النَّقِيَّةُ أَوِ الصُّلْبَة. الْإِخْلَاصُ هُوَ الشَّيْءُ النَّقِيّ الَّذِي لَا يُخَالِطُهُ شَيْءٌ.

أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الْكِرَامُ

ألآنَ نَحْنُ نُبَيِّنُ أَمَامَكُمْ عَنْ   أَهَمِّيَّةِ الْإِخْلَاصِ:

1. أَمَرَ اللَّهُ تَعَالَى عِبَادَهُ بِاِتِّخَاذِ الْإِخْلَاصِ فِي عِدَّةِ مَوَاضِعَ مِنْ كِتَابِهِ. قَالَ تَعَالَى:

وَمَا أُمِرُوا إلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّيْنُ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَوة وَيُؤْتُوا الزَّكَوةَ وَذَلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ(الْبَيِّنَة: 5).

وَقَالَ اللَّهُ تَعَالَى أَيْضًا: قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ. لَا شَرِيْكَ لَهُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ. [الْأَنْعَام – الْايَات: 161، 162]

2. وَ خُلِقَتِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لِلْعَمَلِ الصَّالِحِ وَالْعَمَل الخَالِصِ. وَيَقُولُ اللَّهُ فِي مَكَان آخَرَ:  ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلۡمَوۡتَ وَٱلۡحَيَوٰةَ لِيَبۡلُوَكُمۡ أَيُّكُمۡ أَحۡسَنُ عَمَلٗاۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡغَفُورُ  [الْمُلُوك، الْايَة: 2] – الْمُهِمّ هُنَا أَنَّهُ بِدُونِ الْإِخْلَاصِ  لَا يَكُونُ الْعَمَلُ جَمِيلًا أَبَدًا.

أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الْكِرَامُ

ألآنَ نَحْنُ نُبَيِّنُ أَمَامَكُمْ عَنْ  نَتَائِجَ الْإِخْلَاصِ:

1. قَبُوْلُ الْأَعْمَالِ: عَنْ أَبِي أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:

« إِنَّ الله لاَ يَقْبَلُ من العَمَلِ إِلاَّ مَا كَانَ لَهُ خَالِصاً، وَابْتُغِيَ بِهِ وَجْهُه » [النَّسَائِيّ: 3140].

2. كَسْبُ الْأَجْرُ: عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:

« إِنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهُ اللَّهِ إلَّا أُجِرْتَ عَلَيْهَا » [الْبُخَارِيُّ: 56].

أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الْكِرَامُ

ألآنَ نَحْنُ نُبَيِّنُ أَمَامَكُمْ عَنْ  أَضْرَارِ عَدَمِ الإِخْلَاصِ:

فَكَمَا أَنَّ هُنَاكَ فَوَائِدَ وَنَتَائِجَ كَثِيرَةً لِلْإِخْلَاص، الَّذِي يُحَقِّقُهُ الْمُسْلِمُ بِإِخْلاصِه، فَإِنَّ هُنَاكَ أَيْضًا إضْرَارًا كَثِيرًا لِنَقْصِ وَعَدَمِ الْإِخْلَاصِ. وَنَحْنُ نُنَاقِشُ الآنَ بَعْضَ هَذِهِ الخَسَائِرِ والأَضْرَارِ.

1. عَدَمُ دُخُولِ الْجَنَّةِ: عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:

مَن تَعلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بهِِ وَجْهُ الله لا يَتَعلَّمُه إلِا ليُصيبَ بِه عرضاً مِنْ الدُّنْيَا لَم يَجدْ عَرف الجَنةَِّ يْوَم القياَمةِ يعْنِي رِيحَهَا »  [أَبُو دَاوُد: 3664].

2. دُخُولُ النَّارِ: عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ:

إن أَولَ الناَّسِ يقضى يْوَم القيامِة عَلَيْهِ: رَجل اسُتشِهَد فَأُتَي بهِِ فَعَرَّفُه نعمَه فَعرَفهَا، قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فيِهَا؟ قَالَ: قَاتلتُ فيِكَ حتَّى اسُتشِهْدتُ. قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكنكَّ قَاتَلْتَ لأن يُقَالَ: جَرِيءٌ، فَقَدْ قِيلَ. ثُّم أُمِر بهِ فَسحبَ عَلى وَجههِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي الناَّرِ وَرجل تَعَلَّمَ الْعلمَ وَعَلَّمه وقَرَأَ القُرْآنَ، فَأُتِي بهِ فَعَّرَفُه نعَمَه فَعرَفهَا، قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فيِهَا؟ قَالَ: تَعَلَّمْت العِلْمَ وَعَّلمْتُهُ وقَرَأْتُ فيِكَ القُرْآنَ. قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكنكَ تَعَلَّمْت العلَم ليُقَالَ: عَالِمٌ، وَقَرَأْتَ القُرْآنَ ليقَالَ: هُوَ قَارِئٌ، فَقَدْ قِيلَ.ثم أُمَر بهِ فَسحبَ عَلى وَجْههِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ. وَرَُجلٌ وَسَّع الله عَلَيْهِ وَأَعطَاهُ مِن أَْصناَفِ المَالِ كُلِّهِ، فَأُتِيَ بهِ فَعرَّفُه نعَمَه فَعرَفهَا، قَالَ: فَمَا عَمِلْتَ فيِهَا؟ قَالَ: مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبيِلٍ تُحبُّ أَنْ يُنفْقَ فيِهَا إلا أَنْفَقْتُ فيِهَا لكَ. قَالَ: كَذَبْتَ، وَلَكنِكَّ فَعَلْتَ ليُقَالَ: هُوَ جَوَاٌد، فَقَدْ قِيلَ. ثُّم أُمِرَ بهِ فَسحبَ عَلى وَجْهِهِ ثُمَّ أُلْقِيَ فِي الناَّرِ» [مُسْلِمٌ: 1905].

3. عَدَمُ قَبُولِ الْأَعْمَالِ: «قَالَ الله تَبَارَكَ وَتَعالَى: أَنَا أَغْنىَ الشركَاءِ عَنْ الشِّركِ، مَنْ عِمَل عَمَلًا أَشرك فِيهِ مِعي غَيْري تَرَكْتُه وشَركهُ » [مُسْلِمٍ: 2985]

  وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ الْبَاهِلِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فقال: أَرَأَيْتَ رَجُلًا غَزَا يَلْتَمِسُ الأَجْرَ وَالذِّكْرَ مَا لَهُ؟ فقال رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم«لا شَيْءَ لَهُ » فَأَعَادَهَا ثَلَاَث مَرَّاتٍ، يُقوُل لَهُ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم « لَا شَيْءَ لَهُ » ثُمَّ قَالَ إنَّ اللهَ لا يَقْبَلُ مِنَ العَمَلِ إلَّا مَا كَانَ لَهُ خَالِصاً، وَاْبتُغي بِهِ وَجْهُهُ.  [النَّسَائِيّ: 3140].

بَارَكَ اللَّهُ لِي وَلَكُمْ فِي الْقُرْآنِ الْعَظِيمِ، وَنَفَعَنِي وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيهِ مِنَ الْايَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيمِ. أَقُولُ قَوْلِي هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيمَ الْجَلِيل، لِيْ وَلَكُمْ وَلِسَائِرِ الْمُسْلِمِينَ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ فَاسْتَغْفِرُوه أَنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.

মূল কনসেপ্ট: শাইখ মু. সালেহ আল-মুনাজ্জিদ; সংকলন, সম্পাদনা ও পরিমার্জন: ইমরান মাহমুদ (পিএইচডি গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাবি) পুনর্মূল্যায়ন: মুফতি ইসমাঈল হোসাইন (খতিব ও দাঈ)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore

Scroll to Top