সাপ্তাহিক জুমুআর বয়ান। বিষয়: পরকালের যাত্রা: পর্ব- ৪: কিয়ামাত

ভূমিকা

কিয়ামাত, ইসলামের অন্যতম মৌলিক আকিদা, যা আমাদের ঈমানের ভিত্তি এবং জীবনের দিকনির্দেশনা। এটি এমন এক দিন, যখন পৃথিবীর সমস্ত কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে এবং আল্লাহ তাআলা সমগ্র সৃষ্টিকে পুনরুত্থিত করে তাদের কর্মফল অনুযায়ী বিচার করবেন। কিয়ামাতের এই মহা-ঘটনা কেবল একটি ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, বরং মানবজীবনের দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতার কেন্দ্রবিন্দু।

কুরআনুল কারিম ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসে কিয়ামাতের দিন সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। সেই দিনের ভয়াবহতা, সৃষ্টির ধ্বংসপ্রাপ্তি, পুনরুত্থান, এবং বিচার কার্য—সবকিছুই এক মহিমান্বিত বাস্তবতা যা আমাদের প্রত্যেকের সামনে উপস্থিত হবে।

এই আলোচনায় আমরা কিয়ামাত সংঘটিত হওয়ার ধাপসমূহ এবং এর চূড়ান্ত ফলাফল সম্পর্কে গভীরভাবে আলোকপাত করা হবে। আশা করি, এই আলোচনা আমাদের হৃদয়ে কিয়ামাতের দিন সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করবে এবং আমাদের আমলকে সংশোধনে অনুপ্রাণিত করবে, ইনশাআল্লাহ।

কিয়ামাত সংঘটিত হওয়ার সময়কাল: পবিত্র কুরআনে এসেছে-

إِنَّهُمْ يَرَوْنَهُ بَعِيدًا وَنَرَاهُ قَرِيبًا

‘‘তারা সেটিকে অনেক দূরে মনে করছে। কিন্তু আমি দেখছি তা অতি নিকটে’’। (মা‘আরেজ: ৬-৭)।

কুরআন ও হাদীসের বর্ণনার ভিত্তিতে কিয়ামত অতি নিকটে এটা বুঝায় যায় কিন্তু তবে ঠিক কোন সময়ে কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে তা কেউ জানেনা।  হাদীসে জিবরিলে রাসূল সা. বলেন,

قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ السَّاعَةِ. قَالَ: «مَا المسؤول عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ

জিবরিল বললেন, ’’আমাকে ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) সম্পর্কে বলুন।’’ উত্তরে তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ’’এ বিষয়ে যাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে তিনি প্রশ্নকারীর চাইতে অধিক কিছু জানেন না (মুসলিম: ৮)। পবিত্র কুরআনে আরো স্পষ্টভাবে এসেছে-

یَسۡـَٔلُوۡنَكَ عَنِ السَّاعَۃِ اَیَّانَ مُرۡسٰهَا ؕ قُلۡ اِنَّمَا عِلۡمُهَا عِنۡدَ رَبِّیۡ ۚ لَا یُجَلِّیۡهَا لِوَقۡتِهَاۤ اِلَّا هُوَ

তারা তোমাকে ক্বিয়ামাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে কখন তা সংঘটিত হবে। বল, ‘এ বিষয়ে জ্ঞান রয়েছে আমার প্রতিপালকের নিকট। তিনি ছাড়া কেউ প্রকাশ করতে পারে না কখন তা ঘটবে। (আ’রাফ: ১৮৭)

তাই কিয়ামতের বিষয়ে কোন বছর বা দিন ক্ষণ ঠিক করা অনুচিত ও কুরআন-হাদীস বিরুদ্ধ কাজ।

কিয়ামাতের আলামত

কিয়ামত ঠিক কখন সংঘটিত হবে তার সময় ক্ষণ জানা না গেলেও কিয়ামতের অনেক আলামত বা পূর্ববার্তা কুরআন ও হাদীসে পাওয়া যায়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা মানবজাতিকে সতর্ক করে বলেন,

فَهَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا السَّاعَةَ أَن تَأْتِيَهُم بَغْتَةً ۖ فَقَدْ جَاءَ أَشْرَاطُهَا ۚ فَأَنَّىٰ لَهُمْ إِذَا جَاءَتْهُمْ ذِكْرَاهُمْ

তারা কি শুধু এ জন্য অপেক্ষা করছে যে, কিয়ামত তাদের নিকট হঠাৎ এসে পড়ুক? কিয়ামতের আলামতসমূহ তো এসেই পড়েছে। অতঃপর কিয়ামত এসে পড়লে উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে?’’। (সূরা মুহাম্মাদ: ১৮)

কিয়ামতের আলামত ও লক্ষণসমূহ দুই ধরণের। প্রথম প্রকার আলামত প্রাথমিক ও ছোট ছোট আলামত, যার কিছু ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে; কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি; বরং দিন দিন প্রকাশিত হতেই থাকবে। আর দ্বিতীয় প্রকারের আলামত মূল। উক্ত আলামতগুলো বের হওয়ার পর পরই কিয়ামত সংঘটিত হবে। পুতির মালার সুতা ছিড়ে গেলে যেমন সবগুলো পুতি একের পর এক পর্যায়ক্রমে পড়ে যায়, ঠিক তেমনি বড় আলামতসমূহ থেকে একটি বের হয়ে গেলে পর্যায়ক্রমে সবগুলোই প্রকাশিত হবে এবং কিয়ামত সংঘটিত হবে।

কিয়ামতের আলামতের প্রথম প্রকার:

কিয়ামতের প্রথম শ্রেণীর আলামত ইতিমধ্যে অনেক প্রকাশিত হয়েছে; কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি; বরং দিন দিন প্রকাশ হতেই থাকবে।

ক. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন: কিয়ামতের গুরুত্বপূর্ণ একটি আলামত হলো শেষ নবী মুহাম্মদ সা. এর আগমন। হাদীসে এসেছে-

حَدَّثَنَا سَهْلُ بْنُ سَعْدٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ بِإِصْبَعَيْهِ هَكَذَا بِالْوُسْطَى وَالَّتِي تَلِي الإِبْهَامَ ‏ “‏ بُعِثْتُ وَالسَّاعَةَ كَهَاتَيْنِ ‏”‏‏.‏

সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দেখেছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মধ্যমা ও শাহাদাত আঙ্গুল দুটি এভাবে একত্রিত করে বলেছেন, কিয়ামত ও আমাকে এরূপে পাঠানো হয়েছে। (বুখারি: ৪৫৭৬) অর্থাৎ রাসূল সা. এর আগমনই কিয়ামত অতি নিকটে নির্দেশ করে।

খ. মিথ্যা নবীরি উদ্ভব: হাদীসে এসেছে-

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ وَلَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُبْعَثَ دَجَّالُوْنَ كَذَّابُوْنَ قَرِيْبًا مِنْ ثَلَاثِيْنَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم.

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন। কিয়ামত কায়িম হবে না যে পর্যন্ত প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাচারী দাজ্জালের আবির্ভাব না হবে। এরা সবাই নিজেকে আল্লাহর রাসূল বলে দাবী করবে। (বুখারি: ৩৬০৯)

গ. নানা ভ্রান্ত ফিরকা ও গোষ্ঠীর উদ্ভব:

কিয়ামতের পূর্বে নানা ভ্রান্ত ফিরকা ও গোষ্ঠীর উদ্ভব হবে; যারা হবে সুষ্পষ্টভাবে ইসলাম থেকে বিচ্যুত। মূলত উসমান রা. এর হত্যার পর থেকেই এই নানা ভ্রান্ত গ্রুপের উদ্ভব হয়েছে। খারেজি, রাফেজি, শিয়া, মু’তাজিলা, কাদেরিয়া, জাবেরিয়া ইত্যাদি নানা ভ্রান্ত মতের ফিরকার শুরু হয়েছে। এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত নতুন নতুন ভ্রান্ত গোষ্ঠী আসতে থাকবে। হাদীসে এসেছে-

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِي مَا أَتَى عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ حَتَّى إِنْ كَانَ مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ عَلاَنِيَةً لَكَانَ فِي أُمَّتِي مَنْ يَصْنَعُ ذَلِكَ وَإِنَّ بَنِي إِسْرَائِيلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي ‏”

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: বনী ইসরাঈল যে অবস্থায় পতিত হয়েছিল, নিঃসন্দেহে আমার উম্মাতও সেই অবস্থার সম্মুখীন হবে, যেমন একজোড়া জুতার একটি আরেকটির মতো হয়ে থাকে। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সাথে ব্যভিচার করে থাকে, তবে আমার উন্মাতের মধ্যেও কেউ তাই করবে। আর বনী ইসরাঈল ৭২ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আমার উন্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। শুধু একটি দল ছাড়া তাদের সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে দল কোনটি? তিনি বললেনঃ আমি ও আমার সাহাবীগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত। (তিরমিজি: ২৬৪১)

ঘ. বাইতুল মুকাদ্দাসের বিজয়: মুসলিমদের হাতেবাইতুল মুকাদ্দাসের বিজয় কিয়ামতের একটি নিদর্শন। হাদীসে এসেছে-

قَالَ عَوْف بْن مَالِكٍ، أَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ، وَهْوَ فِي قُبَّةٍ مِنْ أَدَمٍ فَقَالَ ‏ “‏ اعْدُدْ سِتًّا بَيْنَ يَدَىِ السَّاعَةِ، مَوْتِي، ثُمَّ فَتْحُ بَيْتِ الْمَقْدِسِ، ثُمَّ مُوتَانٌ يَأْخُذُ فِيكُمْ كَقُعَاصِ الْغَنَمِ، ثُمَّ اسْتِفَاضَةُ الْمَالِ حَتَّى يُعْطَى الرَّجُلُ مِائَةَ دِينَارٍ فَيَظَلُّ سَاخِطًا، ثُمَّ فِتْنَةٌ لاَ يَبْقَى بَيْتٌ مِنَ الْعَرَبِ إِلاَّ دَخَلَتْهُ، ثُمَّ هُدْنَةٌ تَكُونُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ بَنِي الأَصْفَرِ فَيَغْدِرُونَ، فَيَأْتُونَكُمْ تَحْتَ ثَمَانِينَ غَايَةً، تَحْتَ كُلِّ غَايَةٍ اثْنَا عَشَرَ أَلْفًا ‏”‏‏.

আউফ ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম। তিনি তখন একটি চর্ম নির্মিত তাবুতে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের পূর্বের ছয়টি আলামত গণনা করে রাখো। আমার মৃত্যু, তারপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়, তারপরও তোমাদের মাঝে ঘটবে মহামারী, বকরীর পালের মহামারীর মত, সম্পদের প্রাচুর্য, এমনকি এক ব্যাক্তিকে একশ’ দ্বীনার দেওয়া সত্ত্বেও সে অসন্তুষ্ট থাকবে। তারপর এমন এক ফিতনা আসবে যা আরবের প্রতি ঘরে প্রবেশ করবে। তারপর যুদ্ধ বিরতির চুক্তি-যা তোমাদের ও রোমকদের (খৃষ্টানদের) মধ্যে সম্পাদিত হবে। এরপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং আশিটি পতাকা উত্তোলন করে তোমাদের মোকাবিলায় আসবে; প্রত্যেক পতাকা তলে বার হাজার সৈন্য দল থাকবে। (বুখারি: ২৯৫২)

উক্ত হাদীসে বাইতুল মুকাদ্দাসের বিজয় ছাড়াও আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু কিয়ামতের আলামতের কথা বর্ণিত হয়েছে।

. নিকৃষ্ট লোকেরা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হবে:

মূর্খ, দুশ্চরিত্র, অভদ্র ও নিকৃষ্ট লোকেরা সমাজের সম্পদ ও ক্ষমতার মালিক হবে। তাদের নেতৃত্ব সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালিত হবে। হাদীসে এসেছে-  নবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَكُونَ أَسْعَدَ النَّاسِ بِالدُّنْيَا لُكَعُ ابْنُ لُكَعٍ

‘‘নিকৃষ্ট লোকের নিকৃষ্ট সন্তানরা দুনিয়ার সম্পদ লাভে সর্বাধিক ধন্য না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা’’। (তিরমিজি: ২২০৯) অপর হাদীসে আছে-

 قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ أَمَارَاتِهَا. قَالَ: «أَنْ تَلِدَ الْأَمَةُ رَبَّتَهَا وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ فِي الْبُنْيَانِ

জিবরিল বললেন, ’’তবে কিয়ামতের (কিয়ামতের) নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে বলুন।’’ তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ’’কিয়ামতের (কিয়ামতের) নিদর্শন হলো, দাসী তাঁর আপন মুনীবকে প্রসব করবে, তুমি আরো দেখতে পাবে- নগ্নপায়ী বিবস্ত্র হতদরিদ্র মেষ চালকেরা বড় বড় দালান-কোঠা নিয়ে গর্ব ও অহংকার করবে।’ (মুসলিম: ৮) অপর হাদীসে এসেছে-

إِذَا ضُيِّعَتِ الْأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ قَالَ كَيْفَ إِضَاعَتُهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ إِذَا أُسْنِدَ الْأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ

‘‘যখন আমানতের খেয়ানত হবে তখন কিয়ামত নিকটবর্তী হয়ে গেছে বলে মনে করবে। লোকটি আবার প্রশ্ন করলো, কিভাবে আমানতের খেয়ানত করা হবে? নবীজী বললেন, যখন অযোগ্য লোকদেরকে দায়িত্ব দেয়া হবে তখন কিয়ামতের অপেক্ষা করতে থাকো’’। (বুখারী: ৬৪৯৬)

. মসজিদ নিয়ে পরস্পর গর্ব করবে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَتَبَاهَى النَّاسُ فِي الْمَسَاجِدِ

‘‘যতদিন লোকেরা মসজিদ নিয়ে গর্ব না করবে ততদিন কিয়ামত হবে না’’। (সহীহুল জামে: ৭২৯৮)

ছ. অজ্ঞতা, ব্যভিচার, মদ্যপান ও নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে: হাদীসে এসেছে-

 عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ أَلاَ أُحَدِّثُكُمْ حَدِيثًا سَمِعْتُهُ مِنْ، رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لاَ يُحَدِّثُكُمْ أَحَدٌ بَعْدِي سَمِعَهُ مِنْهُ ‏ “‏ إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ وَيَظْهَرَ الْجَهْلُ وَيَفْشُوَ الزِّنَا وَيُشْرَبَ الْخَمْرُ وَيَذْهَبَ الرِّجَالُ وَتَبْقَى النِّسَاءُ حَتَّى يَكُونَ لِخَمْسِينَ امْرَأَةً قَيِّمٌ وَاحِدٌ ‏”‏ ‏.

আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের নিকট এমন একটি হাদীস আলোচনা করব, যা আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি এবং আমার পরে এমন কেউ তা তোমাদের নিকট উল্লেখ করবে না যিনি সরাসরি তার কাছ থেকে তা শুনতে পেয়েছে? আমি তার নিকট শুনেছি যে, কিয়ামতের নিদর্শনসমূহের অন্যতম হচ্ছে ইলম উঠিয়ে দেয়া, অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ, ব্যভিচার প্রসার হবে, মদ্যপান প্রচলিত হবে, পুরুষ (-এর সংখ্যা) হ্রাস পাবে, নারীরা অবশিষ্ট থাকবে, এমনকি পঞ্চাশজন নারী একজন পুরুষের তত্ত্বাবধানে থাকবে। (মুসলিম: ৬৬৭৯)।

জ. মুর্খরা জ্ঞান বিতরণ করবে: হাদীসে এসেছে-

عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، سَمِعْتُ عَبْدَ، اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ إِنَّ اللَّهَ لاَ يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ النَّاسِ وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ حَتَّى إِذَا لَمْ يَتْرُكْ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالاً فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا ‏”‏

উরওয়াহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন যে, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা মানুষের হৃদয় হতে ইলম ছিনিয়ে নেবেন না। তবে তিনি ’আলিম সম্প্রদায়কে কবয করে ইলম উঠিয়ে নিবেন। এমনকি যখন একজন আলিমও থাকবে না তখন মানুষেরা মূৰ্খ মানুষদেরকে নেতা বানিয়ে নিবে। মানুষ তাদের নিকট সমাধান চাইবে, এরপর তারা না জেনে ফাতাওয়া প্রদান করবে। ফলে তারা নিজেরাও গোমরাহ হবে এবং মানুষদেরও গুমরাহ করবে। (মুসলিম: ৬৬৮৯)

জ. কৃপণতা ও হত্যাকাণ্ড বৃদ্দি পাবে: হাদীসে এসেছে-

أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ يَتَقَارَبُ الزَّمَانُ وَيُقْبَضُ الْعِلْمُ وَتَظْهَرُ الْفِتَنُ وَيُلْقَى الشُّحُّ وَيَكْثُرُ الْهَرْجُ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا وَمَا الْهَرْجُ قَالَ ‏”‏ الْقَتْلُ ‏”‏ ‏.‏

আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামত সন্নিকটবর্তী হলে ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে, ফিতনাহ প্রসার হবে, কৃপণতা বেড়ে যাবে এবং হারজ বৃদ্ধি পাবে। লোকেরা বলল, হারজ কি? তিনি বললেন, কতল (হত্যা)। (মুসলিম: ৬৬৮৫)

কিয়ামতের আলামতের দ্বিতীয় প্রকার

প্রথম প্রকারে কিয়ামতের ছোট ও প্রাথমিক আলামতগুলো বর্ণনার পর কিয়ামতের চূড়ান্ত আলামতসমূহ উল্লেখ করা হলো। কুরআন ও হাদীসে এই ব্যাপারে যেসব স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে সেগুলোই আমরা আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

ক. ইমাম মাহদির আত্নপ্রকাশ: ইমাম মাহদির আগমন কিয়ামতের আলামতের চূড়ান্ত আলামতসমূহের একটি। পৃথিবীর শেষ মুহূর্তে ইমাম মাহদি ঈসা আ. এর সহযোগী হিসেবে আগমন করবেন।

لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَلِيَ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي يُوَاطِئُ اسْمُهُ اسْمِي وَاسْمُ أَبِيهِ اسْمُ أَبِي يَمْلَأُ الْأَرْضَ قِسْطًا وَعَدْلًا كَمَا مُلِئَتْ ظُلْمًا وَجَوْرًا”

ততদিন কিয়ামত হবে না, যতদিন না আমার পরিবারের একজন ব্যক্তি আরবদের শাসক হবেন। তাঁর নাম হবে আমার নাম এবং তাঁর পিতার নাম হবে আমার পিতার নাম। তিনি পৃথিবীকে ন্যায় ও ইনসাফে পরিপূর্ণ করবেন, যেমনটি তা অন্যায় ও অবিচারে পূর্ণ ছিল।” (মুসনাদে আহমাদ: ৬৪৫)

কিছু গোমরাহ সম্প্রদায় মাহদীর ব্যাপারে খুব বাড়াবাড়ি করেছে। এমনকি প্রত্যেক গোমরাহ সম্প্রদায় নিজেদের নেতাকে প্রতীক্ষিত মাহদী মনে করেছে। রাফেযীরা দাবি করে যে, তাদের প্রতীক্ষিত ইমামই মাহদী। তারা সামেরার গর্ত থেকে তাদের প্রতীক্ষিত ইমাম বের হবে বলে অপেক্ষা করছে। তারা তার নাম দিয়েছে মুহাম্মাদ ইবনে হাসান আল-আসকারী। তাদের মতে তিনি পাঁচশত বছর পূর্বে শিশুকালে সামেরার গর্তে প্রবেশ করেছেন। তারা তাদের ইমাম বের হওয়ার অপেক্ষা করছে।

শিয়াদের ফাতেমীয় সম্প্রদায় দাবি করে যে, তাদের নেতাই হবেন মাহদী। এভাবে যে কেউ মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করা, বিজয়ী হওয়া এবং তাদেরকে ধোঁকা দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছে, সে নিজেকে প্রতীক্ষিত মাহদী বলে দাবি করেছে। অনুরূপ সুফীদের যে কেউ মিথ্যাচার ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে, সে নিজেকে আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত সাইয়্যেদ বা আওলাদে রসূল বলে দাবি করেছে।

আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের লোকেরা মাহদীর ব্যাপারে মধ্যপন্থা অবলম্বন করেছেন। তারা সহীহ হাদীছ মোতাবেক মাহদীর আগমন সাব্যস্ত করেন। সহীহ হাদীছে তার নাম, পিতার নাম, বংশ, গুণাবলী ও তার বের হওয়ার সময়ের ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে সে অনুপাতে তারা মাহদীর আগমনে বিশ্বাসী। তারা এ ব্যাপারে সহীহ হাদীছের সীমালংঘন করেন না। তার বের হওয়ার পূর্বে অনেক আলামত দেখা দিবে, যা আলেমগণ তাদের কিতাবে উল্লেখ করেছেন।

খ. দাজ্জালের আগমন:

দাজ্জালের আগমন কিয়ামতের অতি নিকটবর্তী একটি আলামত। হাদীসে দাজ্জালের ব্যাপারে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। যেমন:

عَنْ النَّوَّاسِ بْنِ سَمْعَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الدَّجَّالَ ذَاتَ غَدَاةٍ… قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَا لَبْثُهُ فِي الْأَرْضِ؟ قَالَ: أَرْبَعُونَ يَوْمًا، يَوْمٌ كَسَنَةٍ، وَيَوْمٌ كَشَهْرٍ، وَيَوْمٌ كَجُمُعَةٍ، وَسَائِرُ أَيَّامِهِ كَأَيَّامِكُمْ… قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَذَلِكَ الْيَوْمُ الَّذِي كَسَنَةٍ، أَتَكْفِينَا فِيهِ صَلَاةُ يَوْمٍ؟ قَالَ: لَا، اقْدُرُوا لَهُ قَدْرَهُ.

নাওয়াস ইবনু সাম’আন (রাযি.) থেকে বর্ণিত: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন দাজ্জালের বিষয়ে আলোচনা করেন। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ! সে পৃথিবীতে কতদিন অবস্থান করবে?” তিনি বললেন, “চল্লিশ দিন। এর মধ্যে একটি দিন হবে এক বছরের সমান, একটি দিন হবে এক মাসের সমান, একটি দিন হবে এক সপ্তাহের সমান, এবং বাকি দিনগুলো হবে তোমাদের স্বাভাবিক দিনের মতো।”
তারা বললেন, “যে দিনটি এক বছরের সমান হবে, সেদিন কি আমাদের এক দিনের সালাত যথেষ্ট হবে?”
তিনি বললেন, “না। বরং তোমরা অনুমান করে সময় নির্ধারণ করে সালাত আদায় করবে। (মুসলিম: ২৯৩৭)”

আল্লাহ তা‘আলা দাজ্জালের হাতে অনেক অস্বাভাবিক জিনিস সৃষ্টি করবেন। এর মাধ্যমে তিনি যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করবেন। মুমিনগণ এগুলো দেখেও ঈমানের উপর অটল থাকবেন। তাদের ঈমানের সাথে আরো ঈমান বৃদ্ধি পাবে এবং হেদায়াতের সাথে আরো হিদায়াত বৃদ্ধি পাবে। হেদায়াতের প্রদীপ ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম এ গোমরাহ মিথ্যুক ধোঁকাবাজের জীবদ্দশাতেই বের হবেন। মুমিনগণ ঈসা ইবনে মারইয়ামের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হবেন। আল্লাহর মুত্তাকী বান্দারা তার সাথে যোগদান করবেন। তিনি তাদেরকে নিয়ে দাজ্জালের উদ্দেশ্যে বের হবেন। দাজ্জাল তখন বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে যেতে থাকবে। তাকে দেখে দাজ্জাল পালানোর চেষ্টা করবে। অতঃপর ঈসা আলাইহিস সালাম লুদ্দ শহরের ফটকের নিকট তার সাক্ষাত পাবেন। দাজ্জাল যখন লুদ্দ শহরে প্রবেশ করতে চাইবে তখন ঈসা আলাইহিস সালাম বর্শার আঘাতে তাকে হত্যা করবেন। তিনি তখন দাজ্জালকে লক্ষ্য করে বলবেন, আমি তোমাকে একটি আঘাত করবো, যা থেকে তুমি কখনো পালাতে পারবেনা। ঈসা আলাইহিস সালামের সামনে পড়ার সাথে সাথে সে পানিতে লবণ গলার মতই গলতে থাকবে। তারপরও তিনি অগ্রসর হয়ে লুদ্দ শহরের গেইটের নিকট যুদ্ধের বর্শা দিয়ে তাকে একটি আঘাতের মাধ্যমে হত্যা করবেন। সেখানেই সে মারা যাবে। এভাবেই দাজ্জালের পরিসমাপ্তির কথা একাধিক সহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তার উপর আল্লাহর লা’নত বর্ষিত হোক। সহীহ হাদীছের বর্ণনা মোতাবেক ইমাম ইবনে কাছীরের বর্ণনায় সংক্ষিপ্তভাবে এখানেই দাজ্জালের কাহিনী শেষ হলো। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহাইয়া ও মুসলিম: ২৯৩৭ এর সমন্বিত বর্ণনার সারাংশ)

দাজ্জাল ও তার ফিতনা সম্পর্কিত হাদীছগুলো প্রমাণ করে যে, যারা দাজ্জালের আহবানে সাড়া দিবে, সে তাদের জন্য আসমানকে বৃষ্টি বর্ষণ করতে বলার সাথে আসমান বৃষ্টি বর্ষণ করবে, যমীনকে ফল ও ফসল উৎপন্ন করার আদেশ দেয়ার সাথে সাথে যমীন তা উৎপন্ন করবে। তা থেকে তারা ও তাদের পশু-পাখিগুলো আহার করবে। এতে করে তাদের পশুপাল মোটা-তাজা ও প্রচুর দুধ ওয়ালা হয়ে যাবে।

আর যারা তার আহবানে সাড়া দিবে না; বরং তার প্রতিবাদ করবে, তারা দুর্ভিক্ষ, ফসলহানি, অনাবৃষ্টি, ধন-সম্পদের কমতি, চতুষ্পদ জন্তুর প্রাণহানি, জান-মাল ও ফলফলাদির ঘাটতিসহ আরো অনেক বিপদাপদে নিপতিত হবে। আর দাজ্জালের পিছনে ভূগর্ভস্থ গুপ্তধন মৌমাছির ন্যায় ছুটে চলবে। সে একজন মুমিন যুবককে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে। (মুসলিম: ২৯৩৭ নং হাদীসের বর্ণনার আলোকে)

গ. ঈসা আ. এর আগমন:

দাজ্জালের আগমনের পরেই ঈসা আ. এর আগমন ঘটবে। তাই ইসা আ. আর আগমনও কিয়ামতের অতি নিকটবর্তী একটি নিদর্শন। তিনি দাজ্জালকে সন্ধান করে তাকে ধ্বংস করে দিবেন। তারপর তিনি সাত বছরের জন্য এমন ন্যায় ও ইনসাফের শাসন প্রতিষ্ঠান করবেন, এসময় দু’ ব্যক্তির মধ্যেও কোন শত্রুতা থাকবে না (মুসলিম: ২৯৪০ নং হাদীসের আলোকে)। অপর হাদীসে রাসূল সা. বলেন,

وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَيُوشِكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ فِيكُمُ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلًا فَيَكْسِرَ الصَّلِيبَ وَيَقْتُلَ الْخِنْزِيرَ وَيَضَعَ الْجِزْيَةَ

‘‘ঐ আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে। অচিরেই ন্যায় বিচারক শাসক হিসাবে ঈসা (আ.) তোমাদের মাঝে আগমন করবেন। তিনি ক্রুশচিহ্ন ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং জিযিয়া কর প্রত্যাখ্যান করবেন’’। ( বুখারী: ৩৪৪৮)

ঘ. ইয়াজুজ মা’জুজের আগমন: এই বিধ্বংসী বাহিনীর আগমন কিয়ামতের আরেকটি অতি নিকটবর্তী আলামত। পবিত্র কুরআনে এই গোষ্ঠীর বিবরণ এসেছে-

حَتَّى إِذَا فُتِحَتْ يَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ وَهُمْ مِنْ كُلِّ حَدَبٍ يَنسِلُونَ – وَاقْتَرَبَ الْوَعْدُ الْحَقُّ فَإِذَا هِيَ شَاخِصَةٌ أَبْصَارُ الَّذِينَ كَفَرُوا يَاوَيْلَنَا قَدْ كُنَّا فِي غَفْلَةٍ مِنْ هَذَا بَلْ كُنَّا ظَالِمِين.

‘‘এমনকি যখন ইয়াজুজ ও মা’জুজকে মুক্ত করা হবে তখন তারা প্রত্যেক উঁচু ভূমি থেকে দলে দলে ছুটে আসবে। যখন সত্য প্রতিশ্রম্নতি নিকটবর্তী হবে তখন কাফেরদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। তারা বলবে, হায় দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো ছিলাম এ বিষয়ে উদাসীন; বরং আমরা ছিলাম যালেম’’। (সূরা আম্বীয়া: ৯৬-৯৭) 

যায়নাব বিনতে জাহ্শ (রা.) হতে বর্ণিত আছে,

«أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نام عندهَا ثم استيقظ محمرا وجهه وهو يَقُولُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَيْلٌ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ قَدِ اقْتَرَبَ فُتِحَ الْيَوْمَ مِنْ رَدْمِ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مِثْلُ هَذِهِ وَحَلَّقَ بِين إِصْبَعِهِ الْإِبْهَامِ وَالَّتِي تَلِيهَا قَالَتْ زَيْنَبُ بِنْتُ جَحْشٍ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَهْلِكُ وَفِينَا الصَّالِحُونَ قَالَ نَعَمْ إِذَا كَثُرَ الْخَبَثُ»

‘‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিকট নিদ্রা গেলেন। অতঃপর তিনি জাগ্রত হলেন। তখন তার চেহারা লাল বর্ণ ধারণ করেছিল। তিনি তখন বলছিলেন, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আরবদের জন্য ধ্বংস! একটি অকল্যাণ তাদের অতি নিকটবর্তী হয়ে গেছে। ইয়াজুজ-মা’জুজের প্রাচীর আজ এ পরিমাণ খুলে দেয়া হয়েছে। এ কথা বলে তিনি হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল ও তার পার্শ্বের আঙ্গুল দিয়ে বৃত্ত তৈরী করে দেখালেন। যায়নাব বিনতে জাহ্শ (রাঃ) বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মাঝে সৎ লোক থাকতেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো? নবী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, যখন পাপাচার বেড়ে যাবে’’। (বুখারি: ৩৩৪৬)

ঙ. দাব্বাতুল আরদ:

কিয়ামতের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে দাববাতুল আরদ তথা ভূগর্ভ থেকে এক অদ্ভুত প্রাণী হয়ে মানুষের সাথে কথা বলা শুরু করবে।  এ সম্পর্কে সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَإِذَا وَقَعَ الْقَوْلُ عَلَيْهِمْ أَخْرَجْنَا لَهُمْ دَابَّةً مِنْ الْأَرْضِ تُكَلِّمُهُمْ أَنَّ النَّاسَ كَانُوا بِآيَاتِنَا لَا يُوقِنُونَ

‘‘যখন প্রতিশ্রম্নতি (কিয়ামত) নিকটবর্তী হবে তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি প্রাণী নির্গত করবো। সে মানুষের সাথে কথা বলবে, এ বিষয়ে যে, মানুষ আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করতোনা’’। (সূরা আন নামল: ৮২)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাছীর ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করে বলেন যে, এখানে কথা বলা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো تجرحهم অর্থাৎ দাগ লাগাবে। সে কাফেরের কপালে ‘কাফের’ লিখে দিবে এবং মুমিনের কপালে ‘মুমিন’ লিখে দিবে। ইবনে আব্বাস থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, কথা বলবে এবং দাগ লাগাবে।

চ. ভয়াবহ একটি আগুন মানুষকে সিরিয়ায় একত্রিত করবে:

কিয়ামত যখন অতি সন্নিকটে, তখন এই ঘটনাটি ঘটবে। আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

يُحْشَرُ النَّاسُ عَلَى ثَلَاثِ طَرَائِقَ رَاغِبِينَ رَاهِبِينَ وَاثْنَانِ عَلَى بَعِيرٍ وَثَلَاثَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَأَرْبَعَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَعَشَرَةٌ عَلَى بَعِيرٍ وَيَحْشُرُ بَقِيَّتَهُمُ النَّارُ تَقِيلُ مَعَهُمْ حَيْثُ قَالُوا وَتَبِيتُ مَعَهُمْ حَيْثُ بَاتُوا وَتُصْبِحُ مَعَهُمْ حَيْثُ أَصْبَحُوا وَتُمْسِي مَعَهُمْ حَيْثُ أَمْسَوْا

‘‘মানুষকে তিনভাবে একত্রিত করা হবে। (১) একদল লোককে আশা ও ভয় মিশ্রিত অবস্থায় হাঁকিয়ে নেয়া হবে। (২) দু’জনকে একটি উটের উপর, তিনজনকে একটি উটের উপর, চারজনকে একটি উটের উপর এবং দশজনকে একটি উটের উপর আরোহিত অবস্থায় হাশরের দিকে হাঁকিয়ে নেয়া হবে। (৩) বাকি সব মানুষকে আগুন হাঁকিয়ে নিবে। মানুষ যেখানে দুপুরের বিশ্রাম নেয়ার জন্যে অবস্থান করবে আগুনও সেখানে থেমে যাবে। মানুষ যে স্থানে রাত অতিবাহিত করার  জন্য অবস্থান করবে আগুনও সেখানে থেমে যাবে। এরপর আবার তাদেরকে নিয়ে চলবে। তারা যেখানে সকাল করবে আগুনও সেখানে থেমে যাবে। তারা যেস্থানে বিকালে অবস্থান করবে আগুনও সেস্থানে অবস্থান করবে। এরপর আবার তাদেরকে হাঁকিয়ে নিবে (বুখারী: ৬৫২২)। অন্যত্র আছে- আনাস ও আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন,

نَارٌ تَحْشُرُ النَّاسَ مِنْ الْمَشْرِقِ إِلَى الْمَغْرِبِ

‘‘একটি আগুন সমস্ত মানুষকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে তাড়িয়ে নিবে’’ (বুখারী: ৭১১৮)

. পশ্চিম দিক থেকে সূর্যদয়:

পশ্চিম দিক থেকে সূরযোদয় কিমাতের অতি নিকবর্তী একটি আলামত। এটি এমন অবস্থায় হবে যখন পৃথিবীতে কোন মুমিন জীবীত থাকবেনা। এই অবস্থায় কোন কাফিরের নতুন করে মুমিন হওয়ারও সুযোগ থাকবেনা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

لَا تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا فَإِذَا طَلَعَتْ وَرَآهَا النَّاسُ آمَنُوا أَجْمَعُونَ فَذَلِكَ حِينَ لَا يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا

‘‘যতদিন পশ্চিম  আকাশে সূর্য উদিত হবে না ততোদিন কিয়ামত হবে না। যখন পশ্চিম আকাশে সূর্য উদিত হবে এবং মানুষ তা দেখবে তখন সবাই ঈমান আনবে। তখন এমন ব্যক্তির ঈমান কোনো উপকারে আসবে না যে ইতিপূর্বে বিশ্বাস স্থাপন করে স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী সৎকাজ করেনি’’ (বুখারি: ৬৫০৬)

অপর একটি হাদীসে আছে- হুযায়ফা ইবনে উসাইদ আল-গিফারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন,

«اطَّلَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْنَا وَنَحْنُ نَتَذَاكَرُ فَقَالَ مَا تَذَاكَرُونَ قَالُوا نَذْكُرُ السَّاعَةَ قَالَ إِنَّهَا لَنْ تَقُومَ حَتَّى تَرَوْنَ قَبْلَهَا عَشْرَ آيَاتٍ فَذَكَرَ الدُّخَانَ وَالدَّجَّالَ وَالدَّابَّةَ وَطُلُوعَ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَنُزُولَ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَأَجُوجَ وَمَأْجُوجَ وَثَلَاثَةَ خُسُوفٍ خَسْفٌ بِالْمَشْرِقِ وَخَسْفٌ بِالْمَغْرِبِ وَخَسْفٌ بِجَزِيرَةِ الْعَرَبِ وَآخِرُ ذَلِكَ نَارٌ تَخْرُجُ مِنَ الْيَمَنِ تَطْرُدُ النَّاسَ إِلَى مَحْشَرِهِمْ»

‘‘একদা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিকট আগমন করলেন। আমরা তখন কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, যতদিন তোমরা দশটি আলামত না দেখবে ততোদিন কিয়ামত হবে না। (১) ধোঁয়া (২) দাজ্জালের আগমন (৩) দাববাতুল আরদ্ (৪) পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয় (৫) ঈসা ইবনে মারইয়ামের অবতরণ (৬) ইয়াজুয-মা’জুজ (৭) তিনটি ভূমিধস। একটি পশ্চিমে, আরেকটি পূর্বে এবং তৃতীয়টি হবে আরব উপদীপে (৮) সর্বশেষে ইয়ামান থেকে একটি আগুন বের হয়ে মানুষকে সিরিয়ার দিকে হাঁকিয়ে নিবে’’। (মুসলিম: ২৯০১)

কিয়ামত যেভাবে সংঘটিত হবে

ক. কিয়ামত হঠাৎ সংঘটিত হবে:  আল্লাহ তা’আলা বলেন,

هَلْ يَنْظُرُونَ إِلَّا السَّاعَةَ أَنْ تَأْتِيَهُمْ بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ

‘‘তারা তো তাদের অজ্ঞাতসারে হঠাৎ কিয়ামত আসার অপেক্ষা করছে’’। (সূরা যুখরুফ: ৬৬) মানুষ তাদের স্বাভাবিক কাজ কর্মে ব্যস্ত থাকবে। হাদীসে এসেছে-

قَالَ – وَأَوَّلُ مَنْ يَسْمَعُهُ رَجُلٌ يَلُوطُ حَوْضَ إِبِلِهِ – قَالَ – فَيَصْعَقُ وَيَصْعَقُ النَّاسُ

এ আওয়াজ সর্বপ্রথম ঐ লোকই শুনতে পাবে, যে তার উটের জন্য হাওয সংস্করণের কাজে নিযুক্ত থাকবে।

আওয়াজ শুনামাত্রই সে অজ্ঞান হয়ে লুটে পড়বে। (মুসলিম: ২৯৪০)

খ. কিয়ামত সংঘটিত হবে শুধু পাপিষ্ঠ কাফেরদের উপর:

কিয়ামত যখন কায়েম হবে তখন পৃথিবীতে শুধু খারাপ মানুষের বসবাস থাকবে। হাদীসে এসেছে- আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«يَخْرُجُ الدَّجَّالُ فِي أُمَّتِي فَيَمْكُثُ أَرْبَعِينَ – لَا أَدْرِي: أَرْبَعِينَ يَوْمًا، أَوْ أَرْبَعِينَ شَهْرًا، أَوْ أَرْبَعِينَ عَامًا فَيَبْعَثُ اللهُ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ كَأَنَّهُ عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ، فَيَطْلُبُهُ فَيُهْلِكُهُ، ثُمَّ يَمْكُثُ النَّاسُ سَبْعَ سِنِينَ، لَيْسَ بَيْنَ اثْنَيْنِ عَدَاوَةٌ، ثُمَّ يُرْسِلُ اللهُ رِيحًا بَارِدَةً مِنْ قِبَلِ الشَّأْمِ، فَلَا يَبْقَى عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ أَحَدٌ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ أَوْ إِيمَانٍ إِلَّا قَبَضَتْهُ، حَتَّى لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ دَخَلَ فِي كَبِدِ جَبَلٍ لَدَخَلَتْهُ عَلَيْهِ، حَتَّى تَقْبِضَهُ ” قَالَ: سَمِعْتُهَا مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ” فَيَبْقَى شِرَارُ النَّاسِ فِي خِفَّةِ الطَّيْرِ وَأَحْلَامِ السِّبَاعِ، لَا يَعْرِفُونَ مَعْرُوفًا وَلَا يُنْكِرُونَ مُنْكَرًا، فَيَتَمَثَّلُ لَهُمُ الشَّيْطَانُ، فَيَقُولُ: أَلَا تَسْتَجِيبُونَ؟ فَيَقُولُونَ: فَمَا تَأْمُرُنَا؟ فَيَأْمُرُهُمْ بِعِبَادَةِ الْأَوْثَانِ، وَهُمْ فِي ذَلِكَ دَارٌّ رِزْقُهُمْ، حَسَنٌ عَيْشُهُمْ، ثُمَّ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ…

আমার উম্মাতের মধ্যেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং সে চল্লিশ পর্যন্ত অবস্থান করবে। আমি জানি না চল্লিশ দিন, না চল্লিশ মাস, না চল্লিশ বছর। এ সময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মারইয়াম তনয় ঈসা (আঃ) কে প্রেরণ করবেন। তাঁর আকৃতি উরওয়াহ ইবনু মাসউদ এর অবিকল হবে। তিনি দাজ্জালকে সন্ধান করে তাকে ধ্বংস করে দিবেন। তারপর সাতটি বছর লোকেরা এমনভাবে অতিবাহিত করবে যে, দু’ ব্যক্তির মধ্যে কোন শত্রুতা থাকবে না। তখন আল্লাহ তা’আলা সিরিয়ার দিক হতে শীতল বাতাস প্রবাহিত করবেন। ফলে যার হৃদয়ে কল্যাণ বা ঈমান থাকবে, এ ধরনের কোন লোকই এ দুনিয়াতে আর বেঁচে থাকবে না। বরং এ ধরনের প্রত্যেকের জান আল্লাহ তা’আলা কবয করে নিবেন। এমনকি তোমাদের কোন লোক যদি পর্বতের গভীরে গিয়ে আত্মগোপন করে তবে সেখানেও বাতাস তার কাছে পৌছে তার জান কবয করে নিবে।

আবদুল্লাহ (রাযিঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, তখন খারাপ লোকগুলো পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকবে। দ্রুতগামী পাখী এবং জ্ঞানশূন্য হিংস্রপ্রাণীর ন্যায় তাদের স্বভাব হবে। তারা কল্যাণকে অকল্যাণ বলে জানবে না এবং অকল্যাণকে অকল্যাণ বলে মনে করবে না। এ সময় শাইতান (শয়তান) এক আকৃতিতে তাদের কাছে এসে বলবে, তোমরা কি আহবানে সাড়া দিবে না? তারা বলবে, আপনি আমাদেরকে কোন বিষয়ের আদেশ করছেন? তখন সে তাদেরকে মূর্তি পূজার নির্দেশ দিবে। এমতাবস্থায়ও তাদের জীবনোপকরণে প্রশস্ততা থাকবে এবং তারা স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন-যাপন করবে। ঠিক তখনই (কিয়ামতের) শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে।  (মুসলিম: ২৯৪০)

গ. শিংগায় প্রথম ফুৎকার:

যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্ধারিত সময় চলে আসবে তখন কিয়ামত সংঘটিত হবে। তিনি কিয়ামত সংঘটনের দায়িত্বশীল ফিরিশতাকে শিংগায় ফুৎকার দিতে নির্দেশ দিবেন। সে একটি ফুৎকার দিবে। ফলে যমীন ও পর্বতমালা সরিয়ে নেওয়া হবে। এক আঘাতে সব চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। আর আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে। গ্রহ-নক্ষত্র খসে পড়বে। আলো চলে যাবে। সমুদ্রগুলো অগ্নিউত্তাল হয়ে যাবে। দুষ্ট মানুষগুলো তখন মরে যাবে।

فَإِذَا نُفِخَ فِي ٱلصُّورِ نَفۡخَةٞ وَٰحِدَةٞ – وَحُمِلَتِ ٱلۡأَرۡضُ وَٱلۡجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةٗ وَٰحِدَةٗ – فَيَوۡمَئِذٖ وَقَعَتِ ٱلۡوَاقِعَةُ

“অতঃপর যখন শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে- একটি মাত্র ফুঁক। আর যমীন ও পর্বতমালাকে সরিয়ে নেওয়া হবে এবং মাত্র একটি আঘাতে এগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। ফলে সে দিন মহাঘটনা সংঘটিত হবে। [আল-হাক্কাহ: ১৩-১৫]

ঘ. ভয়াবহ কম্পনের ফলে মানুষ অচেতন হয়ে যাবে: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمۡۚ إِنَّ زَلۡزَلَةَ ٱلسَّاعَةِ شَيۡءٌ عَظِيمٞ ١ يَوۡمَ تَرَوۡنَهَا تَذۡهَلُ كُلُّ مُرۡضِعَةٍ عَمَّآ أَرۡضَعَتۡ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمۡلٍ حَمۡلَهَا وَتَرَى ٱلنَّاسَ سُكَٰرَىٰ وَمَا هُم بِسُكَٰرَىٰ وَلَٰكِنَّ عَذَابَ ٱللَّهِ شَدِيدٞ ٢﴾

“হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর। নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা দেখবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্য দানকারিনী আপন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভধারিণী তার গর্ভপাত করে ফেলবে, তুমি দেখবে মানুষকে মাতাল সদৃশ, অথচ তারা মাতাল নয়। তবে আল্লাহর আযাবই কঠিন”। (আল-হাজ: ১-২)

ঙ. আকাশ ফেটে যাবে, সমুদ্রে আগুন লেগে যাবে : কুরআনে এসেছে-

 إِنَّمَا تُوعَدُونَ لَوَٰقِعٞ ٧ فَإِذَا ٱلنُّجُومُ طُمِسَتۡ ٨ وَإِذَا ٱلسَّمَآءُ فُرِجَتۡ ٩ وَإِذَا ٱلۡجِبَالُ نُسِفَتۡ ١٠ وَإِذَا ٱلرُّسُلُ أُقِّتَتۡ ١١ لِأَيِّ يَوۡمٍ أُجِّلَتۡ ١٢ لِيَوۡمِ ٱلۡفَصۡلِ ١٣ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا يَوۡمُ ٱلۡفَصۡلِ ١٤ وَيۡلٞ يَوۡمَئِذٖ لِّلۡمُكَذِّبِينَ ١٥

“তোমাদেরকে যা কিছুর ওয়াদা দেওয়া হয়েছে তা অবশ্যই ঘটবে। যখন তারকারাজি আলোহীন হবে, আর আকাশ বিদীর্ণ হবে, আর যখন পাহাড়গুলি চূর্ণবিচূর্ণ হবে, আর যখন রাসূলদেরকে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত করা হবে; কান দিনের জন্য এসব স্থগিত করা হয়েছিল? বিচার দিনের জন্য। আর কিসে তোমাকে জানাবে বিচার দিবস কি? মিথ্যারোপকারীদের জন্য সেদিনের দুর্ভোগ!” (আল-মুরসালাত: ৭-১৫)

চ. পাহাড়গুলো ধুলার ন্যায় উড়তে থাকবে:

পাহাড়কে সৃষ্টি করা হয়েছে পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষ করার জন্য। কিয়ামতের পূর্বে পাহাড়গুলো তুলার ন্যায় উড়তে থাকবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَيَسۡ‍َٔلُونَكَ عَنِ ٱلۡجِبَالِ فَقُلۡ يَنسِفُهَا رَبِّي نَسۡفٗا ١٠٥ فَيَذَرُهَا قَاعٗا صَفۡصَفٗا ١٠٦ لَّا تَرَىٰ فِيهَا عِوَجٗا وَلَآ أَمۡتٗا ١٠٧ يَوۡمَئِذٖ يَتَّبِعُونَ ٱلدَّاعِيَ لَا عِوَجَ لَهُۥۖ وَخَشَعَتِ ٱلۡأَصۡوَاتُ لِلرَّحۡمَٰنِ فَلَا تَسۡمَعُ إِلَّا هَمۡسٗا ١٠٨

“আর তারা তোমাকে পাহাড় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, আমার রব এগুলোকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন, তারপর তিনি তাকে মসৃণ সমতলভূমি করে দিবেন তাতে তুমি কোনো বক্রতা ও উচ্চতা দেখবে না। সদিন তারা আহ্বানকারীর (ফেরেশতার) অনুসরণ করবে। এর কোনো এদিক সেদিক হবে না এবং পরম করুণাময়ের সামনে সকল আওয়াজ নিচু হয়ে যাবে। তাই মৃদু আওয়াজ ছাড়া তুমি কিছুই শুনতে পাবে না”। (ত্বাহা: ১০৫-১০৮) অন্যত্র আছে-

يَوۡمَ تَرۡجُفُ ٱلۡأَرۡضُ وَٱلۡجِبَالُ وَكَانَتِ ٱلۡجِبَالُ كَثِيبٗا مَّهِيلًا “

দিন যমীন ও পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পাহাড়গুলো চলমান বালুকারাশিতে পরিণত হবে”। [সূরা আল-মুযযাম্মমিল, আয়াত: ১৪]

ছ. শিংগায় দ্বিতীয় ফুৎকার:

প্রথমবার শিংগায় ফুৎকার দেওয়ার পর যখন পুরো পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। অতপর ৪০ দিন বা মাস বা বছর পর আবার শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

 وَنُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا مَن شَآءَ ٱللَّهُۖ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخۡرَىٰ فَإِذَا هُمۡ قِيَامٞ يَنظُرُونَ ٦٨ وَأَشۡرَقَتِ ٱلۡأَرۡضُ بِنُورِ رَبِّهَا وَوُضِعَ ٱلۡكِتَٰبُ وَجِاْيٓءَ بِٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَقُضِيَ بَيۡنَهُم بِٱلۡحَقِّ وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُونَ ٦٩

“আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। ফলে আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন তারা ছাড়া আসমানসমূহে যারা আছে এবং পৃথিবীতে যারা আছে সকলেই বেহুঁশ হয়ে পড়বে (এবং ধ্বংস হয়ে যাবে)। তারপর আবার শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তখন তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। আর যমীন তার রবের নূরে আলোকিত হবে, আমলনামা উপস্থিত করা হবে এবং নবী ও সাক্ষীগণকে আনা হবে, তাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করা হবে। এমতাবস্থায় যে, তাদের প্রতি যুলম করা হবে না”। (আয-যুমার: ৬৮-৬৯) আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ প্রসঙ্গে আরো বলেন,

وَنُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَإِذَا هُم مِّنَ ٱلۡأَجۡدَاثِ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ يَنسِلُونَ

“আর শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা কবর থেকে তাদের রবের দিকে ছুটে আসবে”।  (ইয়াসীন: ৫১)

হাদীসে এসেছে- আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

ثُمَّ يُرْسِلُ اللَّهُ – أَوْ قَالَ يُنْزِلُ اللَّهُ – مَطَرًا كَأَنَّهُ الطَّلُّ أَوِ الظِّلُّ – نُعْمَانُ الشَّاكُّ – فَتَنْبُتُ مِنْهُ أَجْسَادُ النَّاسِ ثُمَّ يُنْفَخُ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ ثُمَّ يُقَالُ يَا أَيُّهَا النَّاسُ هَلُمَّ إِلَى رَبِّكُمْ

(প্রথমবার শিংগায় ফুৎকারের পর) অতপর মহান আল্লাহ শুক্র ফোটার অথবা ছায়ার ন্যায় বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। এতে মানুষের শরীর পরিবর্ধিত হবে। আবার শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে। অকস্মাৎ তারা দাঁড়িয়ে তাকাতে থাকবে। অতঃপর আহবান করা হবে যে, হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট আসো। (মুসলিম: ২৯৪০)

অপর হাদীসে এসেছে- আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَا بَيْنَ النَّفْخَتَيْنِ أَرْبَعُونَ» قَالَ: أَرْبَعُونَ يَوْمًا؟ قَالَ: أَبَيْتُ، قَالَ: أَرْبَعُونَ شَهْرًا؟ قَالَ: أَبَيْتُ، قَالَ: أَرْبَعُونَ سَنَةً؟ قَالَ: أَبَيْتُ، قَالَ: «ثُمَّ يُنْزِلُ اللَّهُ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَيَنْبُتُونَ كَمَا يَنْبُتُ البَقْلُ، لَيْسَ مِنَ الإِنْسَانِ شَيْءٌ إِلَّا يَبْلَى، إِلَّا عَظْمًا وَاحِدًا وَهُوَ عَجْبُ الذَّنَبِ، وَمِنْهُ يُرَكَّبُ الخَلْقُ يَوْمَ القِيَامَةِ»

“দুই শিঙ্গায় ফুৎকারের মধ্যে সময় হলো চল্লিশ। লোকেরা প্রশ্ন করল, হে আবু হুরায়রা উহা কি চল্লিশ দিন? আমি (আবু হুরায়রা) না বললাম। তারা জিজ্ঞেস করল, তাহলে কি চল্লিশ মাস? আমি বললাম, না। তারা জিজ্ঞেস করল তাহলে কি চল্লিশ বছর? আমি বললাম, না। রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এরপর আল্লাহ তা‘আলা আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করবেন। তখন মানুষেরা জেগে উঠবে যেমন উদ্ভিদ উদগত হয়। মানুষের দেহের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। থাকবে শুধু মেরুদন্ডের একটি হাড্ডি। আর এটি দিয়েই কিয়ামতের দিন সৃষ্টিজীবকে আবার তৈরি করা হবে”। (বুখারি: ৪৯৩৫)

জ. কবর থেকে দলে দলে মানুষ উঠবে:

إِذَا ٱلسَّمَآءُ ٱنفَطَرَتۡ ١ وَإِذَا ٱلۡكَوَاكِبُ ٱنتَثَرَتۡ ٢ وَإِذَا ٱلۡبِحَارُ فُجِّرَتۡ ٣ وَإِذَا ٱلۡقُبُورُ بُعۡثِرَتۡ ٤ عَلِمَتۡ نَفۡسٞ مَّا قَدَّمَتۡ وَأَخَّرَتۡ ٥

“যখন আসমান বিদীর্ণ হবে। আর যখন নক্ষত্রগুলো ঝরে পড়বে। আর যখন সমুদ্রগুলোকে একাকার করা হবে। আর যখন কবরগুলো উন্মোচিত হবে। তখন প্রত্যেকে জানতে পারবে, সে যা আগে পাঠিয়েছে এবং যা পিছনে রেখে গেছে”। (ইনফিতার: ১-৫)

উপসংহার:

কিয়ামতের আলামত ও এর সংঘটনের ধাপগুলো আমাদের জন্য একটি বড় শিক্ষা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মানবজাতিকে এ আলামতগুলোর মাধ্যমে সতর্ক করেছেন, যেন আমরা নিজেদের জীবনের লক্ষ্য ঠিক করি এবং দুনিয়ার মোহমায়া থেকে মুক্ত হয়ে আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নেই।

কিয়ামতের ছোট ও বড় আলামতগুলো এটাই প্রমাণ করে যে, পৃথিবী চিরস্থায়ী নয়। ইয়াজুজ-মাজুজ, দাজ্জাল, সূর্যের পশ্চিম থেকে উদয় এবং ঈসা (আ.)-এর আগমনসহ বিভিন্ন ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং প্রতিটি মানুষের জীবন একদিন হিসাবের মুখোমুখি হবে।

অতএব, কিয়ামতের আলামতগুলো শুধুমাত্র একটি ভয়াবহ ভবিষ্যতের খবর নয়, বরং এটি আমাদের জন্য একটি আমলের সুযোগ। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে ঈমানের সাথে জীবন অতিবাহিত করার তাওফিক দান করেন এবং কিয়ামতের কঠিন দিনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার ক্ষমতা দেন। আমিন।

উপরোক্ত বয়ানের আরবী অনুবাদ (সংক্ষিপ্ত ও মূলবক্তব্য)

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ ، أَمَّا بُعْدُ . . . . . . . . . . . . . . .

أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامُ

مَوْضُوعُنَا اليَوْمِ: الرِحْلَةُ إِلَى الْآخِرَةِ: اَلْجُزْءُ الرَّابِعُ؛

اَلْقِيَامَةُ هِيَ إِحْدَى عَقَائِدِ الْإِسْلَامِ الْأَسَاسِيَّةِ، وَهِيَ أَسَاسُ إِيمَانِنَا وَدَلِيلُ حَيَاتِنَا. وَهَذَا يَوْمٌ يُهْلِكُ فِيهِ كُلُّ شَيْءٍ عَلَى الْأَرْضِ، وَيَبْعَثُ اللَّهُ أَجْمَعِينَ وَيُحَاسِبُهُمْ حَسَبَ أَعْمَالِهِمْ. إِنَّ هَذَا الْحَدَثَ الْعَظِيمَ  فِي الْيَوْمِ الْأَخِيرِ لَيْسَ اِعْتِقَادًا دِينِيًّا فَقَطْ، بَلْ هُوَ مَرْكَزُ الْمَسْؤُولِيَّةِ وَالْمُحَاسَبَةِ الْإِنْسَانِيَّةِ.

أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامُ  مَوْعِدُ يَوْمِ الْقِيَامَةِ: يَقُولُ اللهُ فِي الْقُرْآنِ الْكَرِيمِ: إِنَّهُمْ يَرَوْنَهُ بَعِيدًا وَنَرَاهُ قَرِيبًا.

عَلَامَاتُ السَّاعَةِ: يَقُولُ اللهُ فِي الْقُرْآنِ الْكَرِيمِ: فَهَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا السَّاعَةَ أَن تَأْتِيَهُم بَغْتَةً ۖ فَقَدْ جَاءَ أَشْرَاطُهَا ۚ فَأَنَّىٰ لَهُمْ إِذَا جَاءَتْهُمْ ذِكْرَاهُمْ.

 إِنَّ اَلسَّاعَةَ تَأْتِي بَغْتَةً: يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: هَلْ يَنْظُرُونَ إِلَّا السَّاعَةَ أَنْ تَأْتِيَهُمْ بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ.

 إِنَّ السَّاعَةَ لَا تَقُومُ إِلَّا عَلَى الْكَافِرِينَ الْفَاسِقِينَ: كَمَا جَاء فِي الحَدِيْثِ: فَلَا يَبْقَى عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ أَحَدٌ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ أَوْ إِيمَانٍ إِلَّا قَبَضَتْهُ، حَتَّى لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ دَخَلَ فِي كَبِدِ جَبَلٍ لَدَخَلَتْهُ عَلَيْهِ، حَتَّى تَقْبِضَهُ.

النَّفْخَةُ الأُوْلَى فِي الصُّوْرِ: يَقُولُ اللهُ فِي الْقُرْآنِ الْكَرِيمِ:  فَإِذَا نُفِخَ فِي ٱلصُّورِ نَفۡخَةٞ وَٰحِدَةٞ – وَحُمِلَتِ ٱلۡأَرۡضُ وَٱلۡجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةٗ وَٰحِدَةٗ – فَيَوۡمَئِذٖ وَقَعَتِ ٱلۡوَاقِعَةُ .

 وَيَصْعَقُ النَّاسُ مِنْ شِدَّةِ الْهَزَّاتِ: يَقُولُ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمَيْنِ: يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمۡۚ إِنَّ زَلۡزَلَةَ ٱلسَّاعَةِ شَيۡءٌ عَظِيمٞ ١ يَوۡمَ تَرَوۡنَهَا تَذۡهَلُ كُلُّ مُرۡضِعَةٍ عَمَّآ أَرۡضَعَتۡ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمۡلٍ حَمۡلَهَا وَتَرَى ٱلنَّاسَ سُكَٰرَىٰ وَمَا هُم بِسُكَٰرَىٰ وَلَٰكِنَّ عَذَابَ ٱللَّهِ شَدِيد.

 اَلسَّمَاءُ سَوْفَ تَنْفَجِرُ وَالْبَحْرُ سَوْفَ يَشْتَعِلُ: كَمَا وَرَدَ فِي الْقُرْآنِ اَلْكَرِيمِ- إِنَّمَا تُوعَدُونَ لَوَٰقِعٞ ٧ فَإِذَا ٱلنُّجُومُ طُمِسَتۡ ٨ وَإِذَا ٱلسَّمَآءُ فُرِجَتۡ ٩ وَإِذَا ٱلۡجِبَالُ نُسِفَتۡ ١٠ وَإِذَا ٱلرُّسُلُ أُقِّتَتۡ ١١ لِأَيِّ يَوۡمٍ أُجِّلَتۡ ١٢ لِيَوۡمِ ٱلۡفَصۡلِ ١٣ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا يَوۡمُ ٱلۡفَصۡلِ ١٤ وَيۡلٞ يَوۡمَئِذٖ لِّلۡمُكَذِّبِينَ ١٥

اَلْجِبَالُ سَوْفَ تَطِيرُ مِثْل الْغُبَارِ: كَمَا وَرَدَ فِي الْقُرْآنِ اَلْكَرِيمِ-  وَيَسۡ‍َٔلُونَكَ عَنِ ٱلۡجِبَالِ فَقُلۡ يَنسِفُهَا رَبِّي نَسۡفٗا ١٠٥ فَيَذَرُهَا قَاعٗا صَفۡصَفٗا ١٠٦ لَّا تَرَىٰ فِيهَا عِوَجٗا وَلَآ أَمۡتٗا ١٠٧ يَوۡمَئِذٖ يَتَّبِعُونَ ٱلدَّاعِيَ لَا عِوَجَ لَهُۥۖ وَخَشَعَتِ ٱلۡأَصۡوَاتُ لِلرَّحۡمَٰنِ فَلَا تَسۡمَعُ إِلَّا هَمۡسٗا ١٠٨

 اَلنَّفْخَةُ الثَّانِيَةُ فِي الصُّوْرِ: كَمَا وَرَدَ فِي الْقُرْآنِ اَلْكَرِيمِ-  وَنُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَصَعِقَ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا مَن شَآءَ ٱللَّهُۖ ثُمَّ نُفِخَ فِيهِ أُخۡرَىٰ فَإِذَا هُمۡ قِيَامٞ يَنظُرُونَ ٦٨ وَأَشۡرَقَتِ ٱلۡأَرۡضُ بِنُورِ رَبِّهَا وَوُضِعَ ٱلۡكِتَٰبُ وَجِاْيٓءَ بِٱلنَّبِيِّ‍ۧنَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَقُضِيَ بَيۡنَهُم بِٱلۡحَقِّ وَهُمۡ لَا يُظۡلَمُونَ ٦٩.

 سَيَقُومُ النَّاسُ مِنَ الْقُبُورِ أَفْوَاجًا لِلْحِسَابِ أَمَامَ المَلِكِ القَهَّارِ كَمَا جَاءَ فِي القُرْآنِ- إِذَا ٱلسَّمَآءُ ٱنفَطَرَتۡ ١ وَإِذَا ٱلۡكَوَاكِبُ ٱنتَثَرَتۡ ٢ وَإِذَا ٱلۡبِحَارُ فُجِّرَتۡ ٣ وَإِذَا ٱلۡقُبُورُ بُعۡثِرَتۡ ٤ عَلِمَتۡ نَفۡسٞ مَّا قَدَّمَتۡ وَأَخَّرَتۡ ٥.

بَارَكَ اللَّهُ لِي وَلَكُمْ فِي الْقُرْآنِ الْعَظِيمِ، وَنَفَعَنِي وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيهِ مِنَ الْايَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيمِ. أَقُولُ قَوْلِي هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيمَ الْجَلِيل، لِيْ وَلَكُمْ وَلِسَائِرِ الْمُسْلِمِينَ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ فَاسْتَغْفِرُوه أَنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.

সংকলন, সম্পাদনা, পরিমার্জন ও আরবী তরজমা: ইমরান মাহমুদ (পিএইচডি গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাবি)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore

Scroll to Top