ভূমিকা
মানবজীবনের শুরু যেমন একটি নির্দিষ্ট সময়ে, তেমনি তার শেষও এক অনিবার্য সত্য। কিন্তু এই সমাপ্তিই চূড়ান্ত নয়; বরং এটি একটি নতুন জীবনের সূচনা। কবরের জীবন বা বারযাখ (برزخ) হলো সেই নতুন জীবনের প্রথম অধ্যায়। এটি দুনিয়া ও আখিরাতের মাঝে একটি সংযোগস্থল, যেখানে মৃত ব্যক্তির আত্মা তার কর্মের প্রতিফলন অনুযায়ী অবস্থান করে।
ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে, কবরের জীবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, যা মানুষের ঈমান, আমল এবং পরকালের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। এই পর্যায়ে শুরু হয় নেককার ও পাপীদের জন্য পৃথক পৃথক অভিজ্ঞতা—যেখানে নেককার ব্যক্তিরা শান্তি ও আরামের মধ্যে থাকবেন এবং পাপীরা শাস্তি ভোগ করবেন।
এই আলোচনায় আমরা কবরের জীবনের প্রাথমিক বিষয়গুলো, এর তাৎপর্য, এবং কবরের মধ্যে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অবস্থা সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিশদ আলোচনা করবো। এটি আমাদের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করার পাশাপাশি আমাদের দৈনন্দিন আমলে পরিবর্তন আনতে সহায়ক হবে, ইনশাআল্লাহ।
রুহ কবজ করার পর মুমিন ও কাফের ব্যক্তির প্রথম অবস্থা:
এই ব্যাপারে সরাসরি রাসূল সা. এর হাদীস থেকেই উল্লেখ করা হলো। রাসূল সা. বলেন, মুমিন বান্দা যখন দুনিয়াকে ত্যাগ করতে এবং আখেরাতের দিকে অগ্রসর হতে থাকে, তখন তার নিকট আসমান হতে উজ্জ্বল চেহারাবিশিষ্ট একদল ফিরিশতা আসেন; যাদের চেহারা যেন সূর্যস্বরূপ। তাদের সাথে বেহেশ্তের কাফনসমূহের একটি কাফন (কাপড়) থাকে এবং জান্নাতের খোশবুসমূহের এক রকম খোশবু থাকে। তাঁরা তার নিকট হতে দৃষ্টি-সীমার দূরে বসেন। অতঃপর মালাকুল মউত তার নিকটে আসেন এবং তার মাথার নিকটে বসে বলেনঃ ’হে পবিত্র রূহ (আত্মা)! বের হয়ে এস আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তোষের দিকে।
তখন তার রূহ সেই রকম (সহজে) বের হয়ে আসে; যে রকম (সহজে) মশক হতে পানি বের হয়ে আসে। তখন মালাকুল মাওত তা গ্রহণ করেন এবং এক মুহূর্তের জন্যও নিজের হাতে রাখেন না বরং ঐ সকল অপেক্ষমাণ ফিরিশতা এসে তা গ্রহণ করেন এবং ঐ কাফন ও ঐ খোশবুতে রাখেন। তখন তা হতে পৃথিবীতে প্রাপ্ত সমস্ত খোশবু অপেক্ষা উত্তম মিশ্কের খোশবু বের হতে থাকে।
তা নিয়ে ফিরিশতাগণ উপরে উঠতে থাকেন এবং যখনই তাঁরা ফিরিশতাদের মধ্যে কোন ফিরিশতাদলের নিকট পৌঁছেন তাঁরা জিজ্ঞাসা করেন, এই পবিত্র রূহ (আত্মা) কার?’ তখন তাঁরা দুনিয়াতে তাকে লোকেরা যে সকল উপাধি দ্বারা ভূষিত করত, সে সকলের মধ্যে উত্তম উপাধি দ্বারা ভূষিত ক’রে বলেন, ’এটা অমুকের পুত্র অমুকের রূহ।
যতক্ষণ তারা প্রথম আসমান পর্যন্ত পৌঁছেন (এইরূপ প্রশ্নোত্তর চলতে থাকে।) অতঃপর তাঁরা আসমানের দরজা খুলতে চান, আর অমনি তাঁদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হয়। তখন প্রত্যেক আসমানের সম্মানিত ফিরিশতাগণ তাঁদের পশ্চাদ্গামী হন তার উপরের আসমান পর্যন্ত। এভাবে তাঁরা সপ্তম আসমান পর্যন্ত পৌঁছেন। এ সময় আল্লাহ তা’আলা বলেন, ’’আমার বান্দার ঠিকানা ’ইল্লিয়্যীন’-এ লিখ এবং তাকে (তার কবরে) জমিনে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। কেননা, আমি তাদেরকে জমিন হতে সৃষ্টি করেছি এবং জমিনের দিকেই তাদেরকে প্রত্যাবর্তিত করব। অতঃপর জমিন হতে আমি তাদেরকে হাশরের মাঠে পুনরায় বের করব। সুতরাং তার রূহ্ তার শরীরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু কাফের বান্দা, যখন সে দুনিয়া ত্যাগ করতে ও আখেরাতের দিকে অগ্রসর হতে থাকে, তখন তার নিকট আসমান হতে একদল কালো চেহারাবিশিষ্ট ফিরিশতা অবতীর্ণ হন। যাঁদের সাথে শক্ত চট থাকে। তাঁরা তার নিকট হতে দৃষ্টির সীমার দূরে বসেন। অতঃপর মালাকুল-মাওত আসেন এবং তার মাথার নিকটে বসেন। অতঃপর বলেন, হে খবীস রূহ্ (আত্মা)! বের হয়ে আস আল্লাহর গজবের দিকে।
এ সময় রূহ্ ভয়ে তার শরীরে এদিক-সেদিক পালাতে থাকে। তখন মালাকুল মাওত তাকে এমনভাবে টেনে বের করেন, যেমন লোহার গরম শলাকা ভিজে পশম হতে টেনে বের করা হয়। (আর তাতে পশম লেগে থাকে।) তখন তিনি তা গ্রহণ করেন। কিন্তু যখন গ্রহণ করেন মুহূর্তকালের জন্যও নিজের হাতে রাখেন না। বরং তা অপেক্ষমাণ ফিরিশতাগণ তাড়াতাড়ি সেই আত্মাকে দুর্গন্ধময় চটে জড়িয়ে নেন। তখন তা হতে এমন দুর্গন্ধ বের হতে থাকে, যা পৃথিবীতে প্রাপ্ত সমস্ত গলিত শবদেহের দুর্গন্ধ অপেক্ষা বেশী। তা নিয়ে তাঁরা উঠতে থাকেন। কিন্তু যখনই তাঁরা তা নিয়ে ফিরিশতাদের কোন দলের নিকট পৌঁছেন তাঁরা জিজ্ঞাসা করেন, ’এই খবীস রূহ্ কার?’ তখন তাঁরা তাকে দুনিয়াতে যে সকল মন্দ উপাধি দ্বারা ভূষিত করা হত তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা মন্দ নামটি দ্বারা ভূষিত ক’রে বলেন, ’অমুকের পুত্র অমুকের।’
এইভাবে তাকে প্রথম আসমান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। অতপর তার জন্য আসমানের দরজা খুলে দিতে চাওয়া হয়; কিন্তু খুলে দেওয়া হয় না। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ’’তার ঠিকানা ’সিজ্জীন’-এ লিখ; জমিনের সর্বনিম্ন স্তরে। সুতরাং তার রূহকে জমিনে খুব জোরে নিক্ষেপ করা হয়। অতপর তার রূহ্ তার দেহে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। (আহমাদ ৪/২৮৭-২৮৮, আবুদাউদ ৪৭৫৩; উক্ত ঘটনাটি একাধিক হাদীসের খণ্ডিত অংশ)
কবর পরকালীন যাত্রার গুরুত্বপূর্ণ ও প্রথম ধাপ:
এই ধাপে যে মুক্তি পাবে সে সামনের ধাপগুলোতেও সহজে মুক্তি পাবে ইনশাআল্লাহ। এই ধাপে যে বিপদের সম্মুখিন হবে সামনের ধাপগুলোও তার জন্য বিপদসংকুল হবে। হাদীসে এসেছে-
كانَ عُثْمَان اِذَا وَقَفَ عَلي قَبْرٍبَكي حَتّي يَبُلَّ لِحْيَتَهُ فَقِيْلَ لَهُ تَذْكُرُ الْجَنّةَ وَالنَّارَ فَلَاتَبْكِيْ وَتَبْكِىْ مِنْ هذا فَقَالَ اِنّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال اِنّ الْقَبْرَ اَوَّلُ مَنْزِلٍ مِنَ مَنَازِلِ الْاَخِرَةِ فَاِنْ نَجَي مِنْهُ فَمَا بَعْدَهُ اَيْسَرَمِنْهُ وَاِنْ لَمْ يَنْجُ مِنْهُ فَمَا بَعْدَهُ اشَدُّمِنْهُ قَالَ وَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلّمَ مَا رَاَيْتُ مَنْظَرًا قَطُّ اِلَّا وَالْقَبرَ اَفْظَعُ مَنْهُ.
উছমান (রা.) হ’তে বর্ণিত তিনি যখন কোন কবরের পাশে দাঁড়াতেন, তখন এমন কাঁদতেন যে, তার দাড়ি ভিজে যেত। একদিন তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি জাহান্নামের এবং জান্নাতের কথা স্বরণ করেন, অথচ কাঁদেন না, আর কবর দেখলেই কাঁদেন, ব্যাপার কি? তিনি বললেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, পরকালের বিপদজনক স্থান সমূহের মধ্যে কবর হচ্ছে প্রথম। যদি কেউ সেখানে মুক্তি পেয়ে যায়, তা‘হলে তার পরের সব স্থানগুলি সহজ হয়ে যাবে। আর যদি কবরে মুক্তি লাভ করতে না পারে তাহলে পরের সব স্থানগুলি আরও কঠিন ও জটিল হয়ে যাবে। অতঃপর তিনি বললেন, নবী করীম (সা.) এটাও বলেছেন যে, আমি এমন কোন জঘন্য ও ভয়াবহ স্থান দেখিনি যা কবরের চেয়ে জঘন্য ও ভয়াবহ হ‘‘ত পারে। (ইবনে মাজাহ: ৩৪৬১)।
নেককার ও পাপী সবার জন্যই কবর অত্যন্ত ভয়ানক ধাপ:
কবর শুধু পাপীদের জন্যই পরীক্ষার ক্ষেত্র নয় বরং সবার জন্যই অত্যন্ত ভয়ানক ও বিপদসংকুল স্থান। এই ব্যাপারে সবার সর্বদা চিন্তিত থাকা উচিত। হাদীসে এসেছে-
عَنْ اِبْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هذا الّذِيْ تَحَرَّكَ لَهُ الْعَرْشُ وَفُتِحَتْ لَهُ اَبْوَابُ السَّمَاءِ وَشَهِدَهُ سَبْعُوْنَ اَلْفًا مِنَ الْمَلائكةِ لَقدْ ضَمّ ضَمّةً ثُمّ فُرِجَ عَنْهُ.
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, সা‘দ (রা.) মৃত্যুবরণ করলে রাসূল (সা.) বলেন, সা‘দ এমন ব্যক্তি যার মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপেছিল, যার জন্য আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয়েছিল এবং যার জানাযাতে সত্তর হাজার ফেরেশতা উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু এমন ব্যক্তির কবরও সংকীর্ণ করা হয়েছিল। অবশ্য পরে তা প্রশস্ত করা হয়েছিল (নাসাঈ, মিশকাত: ১৩৬)। অত্র হাদীস দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, ভাল মানুষের কবরও সংকীর্ণ হ’তে পারে। অপর হাদীসে এসেছে-
عَنْ اَسْمَاءِ بِنْتِ اَبِيْ بَكْرٍ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ اُوْحِيَ اِلَيَّ اِنَّكُمْ تُفْتَنُوْنَ فِي القْبْرِ قَرِيْبًا مِنْ فِتْنَةِ الدّجَّاِل.
আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, তাঁকে অহীর মাধ্যমে বলা হয়েছে যে, দাজ্জালের ফেতনার মতই তোমাদেরকে কবরের ফিতনার মুখোমুখি করা হবে (মিশকাত: ১৩৭)। দাজ্জালের ফিতনা যেমন বিপদজনক তেমনি বিপদজনক হচ্ছে কবরের ফেতনা।
স্বয়ং অনেক সম্মানিত সাহাবীগণ কবরের পরীক্ষা ও শাস্তির ব্যাপারে অনেক চিন্তিত থাকতেন। একটি হাদীস এসেছে-
عَنِ ابْنِ شَمَاسَةَ الْمَهْرِيِّ، قَالَ حَضَرْنَا عَمْرَو بْنَ الْعَاصِ وَهُوَ فِي سِيَاقَةِ الْمَوْتِ فَبَكَى طَوِيلاً وَحَوَّلَ وَجْهَهُ إِلَى الْجِدَارِ… فَإِذَا أَنَا مُتُّ فَلاَ تَصْحَبْنِي نَائِحَةٌ وَلاَ نَارٌ فَإِذَا دَفَنْتُمُونِي فَشُنُّوا عَلَىَّ التُّرَابَ شَنًّا ثُمَّ أَقِيمُوا حَوْلَ قَبْرِي قَدْرَ مَا تُنْحَرُ جَزُورٌ وَيُقْسَمُ لَحْمُهَا حَتَّى أَسْتَأْنِسَ بِكُمْ وَأَنْظُرَ مَاذَا أُرَاجِعُ بِهِ رُسُلَ رَبِّي .
ইবনু শামাসা আল মাহরী (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমরা আমর ইবনু আস (রাঃ)-এর মুমুর্ষ অবস্থায় তাকে দেখতে উপস্থিত হলাম। তখন তিনি দেয়ালের দিকে মুখ করে অনেকক্ষণ কাঁদছিলেন। (অতপর তাঁর ছেলের সাথে তার জীবনের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করে) তিনি বলেন, সুতরাং আমি যখন মারা যাব, তখন যেন কোন বিলাপকারিনী অথবা আগুন যেন আমার জানাযার সাথে না থাকে। আমাকে যখন দাফন করবে তখন আমার উপর আস্তে আস্তে মাটি ফেলবে এবং দাফন সেরে একটি উট যবাই করে তার মাংস বল্টন করতে যে সময় লাগে, ততক্ষন আমার কবরের পাশে অবস্থান করবে। যেন তোমাদের উপস্থিতির কারণে আমি আতঙ্কমুক্ত অবস্থায় চিন্তা করতে পারি যে, আমার প্রতিপালকের দূতের কি জবাব দেব। (মুসলিম: ২২১)
কবরের সবচেয়ে জটিল ও ভয়ানক পরীক্ষা হলো ফেরেশতা কর্তৃক আরোপিত প্রশ্নের সঠিক জবাব দেওয়া। এই প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই রয়েছে বান্দার সফলতা ও ব্যর্থতা। হাদীসে এসেছে-
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبِ عَنْ رَسُوْلٍ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَأْتِيْهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُوْلَانِ لَهُ مَنْ رَبُّكَ فَيَقُوْلُ رَبِّيْ اللهُ فَيَقُوْلَانِ لَهُ مَادِيْنُكَ فَيَقُوْلُ دِيْنِيْ الْاِسْلَامُ فَيَقُوْلَانِ لَهُ مَاهَذَا الرَّجُلُ الَّذِيْ بُعِثَ فِيْكُمْ فَيَقُوْلُ هُوَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَقُوْلَانِ لَهُ وَمَا يُدْرِيْكَ فَيَقُوْلُ قَرَأْتُ كِتَابَ اللهِ فَأَمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ فَذَلِكَ قَوْلُهُ يُثَبِّتُ اللهُ الَّذِيْنَ آَمَنُوْا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ- الاية قَالَ فَيُنَادِيْ مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ اَنْ صَدَقَ عَبْدِيْ فَافْرِشُوْهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَالْبِسُوْهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَافْتَحُوْا لَهُ بَابًا اِلَي الْجَنَّةِ فَيُفْتَحُ قَالَ فَيَأْتِيْهِ مِنْ رَوْحِهَا وَطِيْبِهَا وَيُفْسَحُ لَهُ فِيْهَا مَدَّبَصَرِهِ وَأَمَّا الْكَافِرُ فَذَكَرَ مَوْتَهُ وَيُعَادُ رُوْحُهُ فِيْ جَسَدِهِ وَيَأْتِيْهِ مَلَكَانِ فَيَجْلِسَانِهِ فَيَقُوْلَانِ مَنْ رَبُّكَ فَيَقُوْلُ هَاهْ هَاهْ لَا اَدْرِيْ فَيَقُوْلَانِ لَهُ مَادِيْنُكَ فَيَقُوْلُ هَاهْ هَاهْ لَا اَدْرِيْ فَيَقُوْلَانِ لَهُ مَاهَذَا الرَّجُلُ الَّذِيْ بُعِثَ فِيْكُمْ فَيَقُوْلُ هَاهْ هَاهْ لَا اَدْرِيْ فَيُنَادِيْ مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ اَنْ كَذَبَ فَافْرِشُوْهُ مِنَ النَّارِ وَالْبِسُوْهُ مِنَ النَّارِ وَافْتَحُوْا لَهُ بَابًا الي النَّارِ قَالَ فَيَأْتِيْهِ مِنْ حَرِّهَا وَسَمُوْمِهَا قَالَ وَيُضَيِّقُ عَلَيْهَ قَبْرُهُ حَتَّي يَخْتَلِفَ فِيْهِ اَضْلَاعُهُ ثُمَّ يُقَيِّضُ لَهُ اَعْمَي اَصَمُّ مَعَهُ مِرْزَبَةٌ مِنْ حَدِيْدٍ لَوْضُرِبَ بِهَا جَبَلٌ لَصَارَ تُرَابًا فَيُضْرَبُهُ بِهَا ضَرْبَةً يَسْمَعُهَا مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ اِلَّا الثَّقَلَيْنِ فَيَصِيْرُتُرَابًا ثُمَّ يُعَادُفِيْهِ الرُّوْحُ.
বারা ইবনে আযেব (রা.) রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূল(সা.) বলেছেন, কবরে মুমিন বান্দার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসেন এবং তাকে উঠিয়ে বসান। অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার প্রতিপালক কে? সে বলে, আমার প্রতিপালক আল্লাহ। তারপর জিজ্ঞেস করেন, তোমার দ্বীন কি? সে বলে আমার দ্বীন ইসলাম। পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, এই যে লোকটি তোমাদের মাঝে প্রেরিত হয়েছিলেন তিনি কে? সে বলে তিনি আল্লাহর রাসূল(সা.) । তখন ফেরেশ্তাগণ তাকে বলেন, তুমি কিভাবে তা জানতে পারলে? সে বলে আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি তা দেখেছি তার প্রতি ঈমান এনেছি ও তাকে সমর্থন করেছি। তখন নবী করীম(সা.) বললেন, এই হ’ল আল্লাহর বাণী,يُثَبِّتُ اللهُ الَّذِيْنَ امَنُوْا بِاالْقَوْلِ الثّابِتِ ‘যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে আল্লাহ্ তাদেরকে কালেমা শাহাদাতের উপর অটল রাখবেন’ (ইবরাহীম ২৭)। তারপর নবী করীম(সা.) বললেন, এসময় আকাশ হ’তে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা সঠিক বলেছে। সুতরাং তার জন্য জান্নাতের একটি বিছানা বিছিয়ে দাও। তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও এবং তার জন্য কবর হ’তে জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। সুতরাং তার জন্য তাই করা হয়। নবী করীম(সা.) বলেন, ফলে তার দিকে জান্নাতের সুগন্ধি আসতে থাকে এবং ঐ দরজা তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হয়। তারপর নবী করীম (সা.) কাফেরের মৃত্যু প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, তার আত্মাকে তার দেহে ফিরিয়ে আনা হয়। তারপর দু’জন ফেরেশতা তাকে উঠিয়ে বসান এবং জিজ্ঞেস করেন। তোমার প্রতিপালক কে? তখন সে বলে হায়! হায়! আমি কিছুই জানি না। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার দ্বীন কি? সে পুনরায় বলে হায়! হায়! আমি কিছুই জানি না। তারপর তারা ইশারা করে বলেন, এই লোকটি কে? যিনি তোমাদের মধ্যে প্রেরিত হয়েছিলেন। সে পুনরায় বলে হায়! হায়! আমি কিছুই জানি না। তারপর আকাশ থেকে একজন আহবানকারী বলেন, সে মিথ্যা বলেছে। তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে জাহান্নামের পোশাক পরিয়ে দাও। তারপর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। তখন তার দিকে জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হয়। নবী করীম(সা.) বলেন, তখন তার দিকে জাহান্নামের লু হাওয়া আসতে থাকে। এছাড়া তার প্রতি তার কবরকে এত সংকীর্ণ করে দেয়া হয় যাতে তার এক দিকের পাঁজর আর এক দিকের পাঁজরের মধ্যে ঢুকে যায়। অতঃপর তার জন্য একজন অন্ধ ও বধির ফেরেশতাকে নিযুক্ত করা হয়, যার সাথে একটি লোহার হাতুড়ি থাকে যদি এই হাতুড়ি দ্বারা কোন পাহাড়কে আঘাত করা হয়, তাহ’লে পাহাড়ও ধূলিকণায় পরিণত হয়ে যাবে। আর সেই ফেরেশতা এ হাতুড়ি দ্বারা তাকে এত জোরে আঘাত করেন, আর সে আঘাতের চোটে এত বিকট চিৎকার করে যে, মানুষ ও জিন ব্যতীত পৃথিবীর সব কিছুই শুনতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে সে মাটির সাথে মিশে যায়। তারপর আবার তার দেহে আত্মা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে তার শাস্তি চলতে থাকে (আবূ দাঊদ ৪৭৫৩)।
কবরে নেককার মুমিন বান্দা ঘুমাবে কিয়ামত পর্যন্ত: হাদীসে এসেছে-
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا أُقْبِرَ الْمَيِّتُ اَتَاهُ مَلَكَانِ اَسْوَادَانِ اَرْزَقَانِ يُقَالُ لِأَحَدِهِمَا الْمُنْكَرُ وَالْآخَرُ النَّكِيْرُ فَيَقُوْلَانِ مَاكُنْتَ تَقُوْلُ فِيْ هذَاالرَّجُلِ فَيَقُوْلُ هُوَعَبْدُاللهِ وَرَسُوْلُهُ أَشْهَدُ أنْ لَّااِلَهَ اِلَّااللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسًوْلُهُ فَيَقُوْلَانِ قَدْكُنَّا نَعْلْمُ إِنَّكَ تَقُوْلُ هَذَا ثُمَّ يُفْسَحُ لَهُ فِيْ قَبْرِهِ سَبْعُوْنَ ذِرَاعًا فِيْ سَبْعِيْنَ وَيُنَوِّرُلَهُ فِيْهِ ثُمَّ يُقَالُ لَهُ نَمَّ فَيَقُوْلُ اَرْجِعُ اِلَي أَهْلِيْ فَأُخْبِرُهُمْ فَيَقُوْلَانِ لَهُ نَمْ كَنَوْمَةِ الْعَرُوْسِ الَّذِيْ لَايُوْقِظُهُ اِلَّا أَحَبُّ اَهْلِهِ اِلَيْهِ حَتَّي يَبْعَثَهُ اللهُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ وَاِنْ كَانَ مُنَافِقًا قَالَ سَمِعْتُ النَّاسَ يَقُوْلُوْنَ قَوْلًا فَقُلْتُ مِثْلُهَ لَا اَدْرِىْ فَيَقُوْلَانِ لَهُ قَدْكُنَّا نَعْلَمُ اَنَّكَ تَقُوْلُ ذَلِكَ فَيُقَالُ لِلْأْرْضِ الْتَئِمِيْ عَلَيْهِ فَتَلْتَنِمُ عَلَيْهِ فَتَخْتَلِفُ اَضْلَاعُهُ فَلَايَزَالُ فِيْهَا مُعَذَّبًاحَتَّي يَبْعَثَهُ اللهُ مِنْ مَضْجَعِهِ ذَلِكَ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা হয়, তখন তার নিকট নীল চক্ষু বিশিষ্ট দু’জন কাল বর্ণের ফেরেশ্তা এসে উপস্থিত হন। তাদের একজনকে বলা হয় মুনকার, অপর জনকে বলা হয় নাকির। তারা রাসূল (সা.) -এর প্রতি ইশারা করে বলেন, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি দুনিয়াতে কি বলতে? মৃত ব্যক্তি মুমিন হ’লে বলেন, তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তখন তারা বলেন, আমরা পূর্বেই জানতাম আপনি এ কথাই বলবেন। অতঃপর তার কবরকে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ৭০ (সত্তর) হাত করে দেয়া হয়। অর্থাৎ অনেক প্রশস্ত করে দেয়া হয় এবং সেখানে আলোর ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। তারপর তাকে বলা হয় ঘুমিয়ে থাক। তখন সে বলে না অমি আমার পরিবারের নিকট ফিরে যেতে চাই। ফেরেশ্তাগণ বলেন, তুমি এখানে বাসর ঘরের দুলার ন্যায় আনন্দে ঘুমাতে থাক যাকে তার পরিবারের সর্বাধিক প্রিয়জন ব্যতীত আর কেউ ঘুম ভাঙাতে পারে না। যতদিন পর্যন্ত আল্লাহ তাকে এ শয্যাস্থান হ’তে না উঠাবেন, ততদিন পর্যন্ত সে ঘুমিয়ে থাকবে। (তিরমিযী: ১০৭১)। এই প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
قَالُوۡا یٰوَیۡلَنَا مَنۡۢ بَعَثَنَا مِنۡ مَّرۡقَدِنَا ٜۘؐ هٰذَا مَا وَعَدَ الرَّحۡمٰنُ وَ صَدَقَ الۡمُرۡسَلُوۡنَ
মুমিন বান্দারা বলবে, ‘হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে আমাদের নিদ্রাস্থল থেকে উঠালো’? (তাদেরকে বলা হবে) ‘এটা তো তা যার ওয়াদা পরম করুনাময় করেছিলেন এবং রাসূলগণ সত্য বলেছিলেন’। (ইয়াসিন: ৫২)
প্রতিদিন সকাল-সন্ধায় পাপী কবরবাসীকে তার চূড়ান্ত স্থান দেখানো হয়:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَلنَّارُ يُعْرَضُوْنَ عَلَيْهَا غُدُوَّا وَّعَشِيًّا.
আর এ কঠোর শাস্তি তাদের সামনে সকাল-সন্ধ্যা পেশ করা হয়’ (মুমিন ৪৫-৪৬)। অত্র আয়াতে সকাল-সন্ধ্যা যে কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে কবরের শাস্তি। হাদীসে এসেছে-
عَنْ عَبْدِاللهِ بْنْ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اَحَدَكُمْ اِذَا مَاتَ عُرِضَ عَلَيْهِ مَقْعَدُهُ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ انْ كَانَ مِنْ اَهْلِ الْجَنَّةِ فَمِنْ اَهْلِ الْجَنَّةِ وَاِنْ كَانَ مِنْ اَهْلِ النَّارِ فَمِنْ اَهْلِ النَّارِ فَيُقَالُ هذَا مَقْعَدُكَ حَتَّي يَبَْعَثَكَ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامةِ.
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি মারা যায়, তখন তার স্থায়ী স্থানটি সকাল সন্ধায় তার সামনে পেশ করা হয়। সে যদি জান্নাতী হয়, তাহ’লে জানণাতের স্থান তার সামনে পেশ করা হয়। আর যদি জাহান্নামী হয়, তাহ’লে জাহানণামের স্থান তার সামনে পেশ করা হয় এবং বলা হয় এ হচ্ছে তোমার আসল স্থান। ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা তোমাকে এখানেই পাঠাবেন’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত: ১২০)। অত্র হাদীসে বলা হয়েছে, প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় কবরবাসীর সামনে জাহান্নাম বা জান্নাত পেশ করা হয় এবং বলা হয় এটাই তোমার আসল স্থান। তাকে জাহান্নাম দেখিয়ে সর্বদা আতঙ্কিত করা হয়। অথবা জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়।
কবরে নেক আ’মল ও বদ আমলের সাক্ষাৎ: হাদীসে এসেছে-
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ….. وَيَأْتِيْهِ رَجُلٌ اَحْسَنُ الْوَجْهِ حَسَنُ الثِّيَابِ طِيْبُ الرِّيْحِ فَيَقُوْلُ أَبْشِرْ بِالَّذِيْ يَسُرُّكَ هَذَا يَوْمُكَ الَّذِيْ كُنْتَ تُوْعَدُ فَيَقُوْلُ لَهُ مَنْ اَنْتَ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَجِئُ بِالْخَيْرِ فَيَقُوْلُ اَنَا عَمَلُكَ الصَّالِحُ. وَيَأْتِيْهِ رَجُلٌ قَبِيْحُ الْوَجْهِ قَبِيْحُ الثِّيَابِ مَنْتَنُ الرِّيْحِ فَيَقُوْلَ أَبْشِرْ بِالَّذِيْ يَسُؤْكَ هَذَا يَوْمُكَ الَّذِيْ كُنْتَ تُوْعَدُ فَيَقُوْلُ لَهُ مَنْ اَنْتَ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَجِئُ بِالشَّرِّ فَيَقُوْلُ اَنَا عَمَلُكَ الْخَبِيْثُ.
বারা ইবনে আযেব (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, (নেককার ব্যক্তির কবরে) তার নিকট এক সুন্দর চেহারা বিশিষ্ট সুবেশী ও সুগন্ধিযুক্ত ব্যক্তি আসেন এবং তাকে বলেন, তোমাকে খুশি করবে এমন জিনিসের সুসংবাদ গ্রহণ কর। আর এ দিনের ওয়াদাই তোমাকে দেওয়া হয়েছিল। তখন সে মৃতব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করবে, তুমি কে? তোমার চেহারা এত সুন্দর যে, কল্যাণের বার্তা বহণ করে। তখন সে বলে অমি তোমার সৎ আমল। (আর জাহান্নামী ব্যক্তির কবরে) তার নিকট অতি কুৎসিত চেহারা বিশিষ্ট নোংরা বেশী দুরগন্ধযুক্ত লোক এসে বলে, তোমাকে দুঃখিত করবে এমন জিনিসের দুঃসংবাদ গ্রহণ কর। এদিন সম্পর্কে তোমাকে পৃথিবীতে ওয়াদা দেওয়া হয়েছিল। তখন সে জিজ্ঞেস করে তুমি কে, কি কুৎসিত তোমার চেহারা, যা মন্দ সংবাদ বহন করে? সে বলবে, আমি তোমার বদ আমল (আহমাদ, মিশকাত: ১৫৪২)।
কবরের শাস্তি মানুষ ও জ্বীন ব্যতিত সকল সৃষ্টিজগৎ শুনে:
হাদীসে রাসূল সা. কবরের শাস্তির ব্যাপারে বলেন,
ثُمَّ يُقَيِّضُ لَهُ اَعْمَي اَصَمُّ مَعَهُ مِرْزَبَةٌ مِنْ حَدِيْدٍ لَوْضُرِبَ بِهَا جَبَلٌ لَصَارَ تُرَابًا فَيُضْرَبُهُ بِهَا ضَرْبَةً يَسْمَعُهَا مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ اِلَّا الثَّقَلَيْنِ
আর সেই ফেরেশতা এ হাতুড়ি দ্বারা তাকে এত জোরে আঘাত করেন, আর সে আঘাতের চোটে এত বিকট চিৎকার করে যে, মানুষ ও জিন ব্যতীত পৃথিবীর সব কিছুই শুনতে পায়। (মিশকাত: ১২৪) আরেকটি হাদীসে আছে-
عَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ قَالَ بَيْنَا رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيْ حَائِطٍ لِبَنِيْ النَّجَّارِ عَلَي بَغْلَةٍ لَهُ وَنَحْنُ مَعَهُ اِذْحَادَتْ فَكَادَتْ تُلْقِيْهِ وَاِذَا اَقْبُرُ سِتَّةٍ اَوْخَمْسَةٍ فَقَالَ مَنْ يَّعْرِفُ أَصْحَابَ هَذِهِ الْقُبُوْرِ قَالَ رَجُلٌ أَنَا قَالَ فَمَتىَ مَاتُوْا قَالَ فِى الشِّرْكِ فَقَالَ إِنَّ هَذِهِ الْاُمَّةَ لتَبُلْيَ فِيْ قُبُوْرِهَا فَلَوْلَا اَنْ لَّاتُدَفِّنُوْا لَدَعَوْتُ اللهَ اَنْ يُّسْمِعَكُمْ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ الَّذِيْ اَسْمَعُ مِنْهُ ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ فَقَالَ تََعَوَّذُوْا بِاللهِ مِنْ عَذَابِ النَّارِ قَالُوْا نَعُوْذُ بِاللهِ مِنْ عَذَابِ النَّارِقَالَ تَعَوَّذُوْا بِاللهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ قَالُوْا نَعُوْذُ بِاللهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ قَالَ تَعَوَّذُوْا بِاللهِ مِنَ الْفِتَنَ مَاظَهَرَمِنْهَا وَمَابَطَنَ قَالُوْا تَعَوَّذُوْا بِاللهِ مِنَ الْفِتَنِ مَاظَهَرَ مِنْهَا وَمَابَطَنَ قَالَ تَعَوَّذُوْا بِاللهِ مِنْ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ قَالُوْا نَعُوْذُ بِاللهِ مِنْ فِتْنَةِالدَّجَّالِ.
যায়েদ ইবনে ছাবিত (রা.) বলেন, নবী করীম(সা.) একদা নাজ্জার গোত্রের একটি বাগানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় খচ্চরটি লাফিয়ে উঠল এবং নবী করীম (সা.) -কে ফেলে দেওয়ার উপক্রম করল। দেখা গেল সেখানে ৫টি কিংবা ৬টি কবর রয়েছে। তখন নবী করীম (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, এই কবরবাসীদের কে চিনে? এক ব্যক্তি বলল, আমি চিনি। নবী করীম (সা.) বললেন, তারা কখন মারা গেছে? সে বলল, মুশরিক অবস্থায় মারা গেছে। তখন নবী করীম (সা.) বললেন, নিশ্চয়ই মানুষকে তার কবরে কঠিন পরীক্ষায় ফেলা হয় এবং কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়। কবরের শাস্তির ভয়ে তোমরা কবর দেয়া ত্যাগ করবে, না হ’লে আমি আল্লাহর নিকট দো‘আ করতাম যেন আল্লাহ তোমাদেরকে কবরের শাস্তি শুনিয়ে দেন, যেমন আমি শুনতে পাচ্ছি। অতঃপর নবী করীম(সা.) আমাদের মুখোমুখি হয়ে বললেন, তোমরা সকলেই জাহান্নামের আযাব হ’তে আল্লাহর নিকট পরিত্রাণ চাও। তারা সকলেই বলে উঠল, আমরা জাহান্নামের আযাব হ’তে আল্লাহর নিকট পরিত্রাণ চাচ্ছি। নবী করীম(সা.) বললেন, তোমরা সকলেই কবরের আযাব হ’তে আল্লাহর নিকট পরিত্রাণ চাও। তারা সকলেই বলল, আমরা কবরের শাস্তি হ’তে আল্লাহর নিকট পরিত্রাণ চাচ্ছি। নবী করীম (সা.) বললেন, তোমরা সমস্ত গোপন ও প্রকাশ্য ফেতনা হ’তে আল্লাহর নিকট পরিত্রাণ চাও। তারা বলল, আমরা গোপন ও প্রকাশ্য ফেতনা হ’তে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। নবী করীম (সা.) বললেন, তোমরা দাজ্জালের ফেতনা হ’তে আল্লাহর নিকট পরিত্রাণ চাও। তারা বলল, আমরা সকলেই আল্লাহর নিকট দাজ্জালের ফেতনা হ’তে পরিত্রাণ চাচ্ছি’। (মুসলিম, মিশকাত)। উক্ত হাদীস থেকেও প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কবরের শাস্তি পশু পাখিরা অনুভব করতে পারে।
কয়েক শ্রেণির মুমিনকে বিশেষভাবে কবরের শাস্তি থেকে রক্ষা করা হবে:
কবরের সময়কাল অত্যন্ত বিপদসংকুল স্থান হলেও সামগ্রীকভাবে মুমিন ও নেককার বান্দাদের ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে নানা ধরণের সুসংবাদ পাওয়া যায়। তবে হাদীসে বিশেষভাবে কিছু বিশেষ বান্দার ব্যাপারে কবরের আজাব থেকে মুক্তির বর্ণনা এসেছে। যেমন:
ক. পেটের অসুখে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি: হাদীসে এসেছে-
قال رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ يَقْتُلْهُ بَطْنُهُ فَلَنْ يُّعَذَّب فِىْ قَبْرِهِ.
রাসূল (সা.) বলেন, যারা পেটের অসুখে মারা যায় তাদের কবরের শাস্তি হবে না (নাসাঈ: ২০৫২)
খ. জুমুআ বারে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি: হাদীসে এসেছে-
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَمُوْتُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ اَوْلَيْلَةَ الْجُمْعَةِ اِلَّا وَقَاهُ اللهُ فِتْنَةَ الْقَبْرِ.
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে কোন মুসলমান জুম’আর রাতে অথবা জুম’আর দিনে যদি মারা যায়, তা’হলে আল্লাহ তাকে কবরের শাস্তি হ’তে রক্ষা করেন (আহমাদ, মিশকা:১৩৬৭)
গ. আল্লাহর রাস্তায় শহীদ ব্যক্তি: হাদীসে এসেছে-
عَنْ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِيْ كَرِبَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لِلشّهِيْدِ عِنْدَ اللهِ سِتُّ خِصَالٍ يُغْفَرُ لَهُ فِىْ اَوَّلِ دَفْعَةٍ وَيُرى مَقْعَدُهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَيَأْمَنُ مِنَ الْفَزْعِ الْاَكْبَرِ وَيُوْضَعُ عَلى رَأْسِهِ تَاجُ الْوَقَارِ الْيَاقُوْتَةِ مِنْهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا وَيُزَوِّجُ ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ زَوْجَةً مِّنَ الْحُوْرِ الْعِيْن وَيُشَفَّعُ فِىْ سَبْعِيْنَ مِنْ اَقْرِبَائِه.
মেক্দাম ইবনে মা’দী কারেব (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, আল্লাহর নিকট শহীদের জন্য ছয়টি বিশেষ পুরস্কার রয়েছে। (১) শরীরের রক্তের প্রথম ফোটা ঝরতেই তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং প্রাণ বের হওয়ার পূর্বেই তার জান্নাতের জায়গাটি তাকে দেখিয়ে দেয়া হয় (২) কবরের শাস্তি হ’তে তাকে রক্ষা করা হয় (৩) কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করা হবে। (৪) তার মাথার উপর সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরানো হবে। তাতে থাকবে একটি ইয়াকুত, যা দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছুর চেয়ে উত্তম। (৫) তাকে বড় বড় চক্ষু বিশিষ্ট ৭২ জন হুর দেয়া হবে এবং (৬) তার সত্তর জন নিকটতম আত্মীয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে। হাদীছে বুঝা যায় কবরের শাস্তি চূড়ান্ত, তবে যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে এবং তাদের জানমাল কোন কিছু নিয়ে ফিরেনি অর্থাৎ শহীদ হয়, তাদেরকে কবরের শাস্তি হ’তে রক্ষা করা হবে (তিরমিজি: ১৬৬৩)।
কবরের জীবনের ব্যাপারে মুমীনদের করণীয়:
ক. কবরের শাস্তি থেকে পানাহ চাওয়া: হাদীসে এসেছে-
عَنْ عَائِشَةَ قَالتْ اَنَّ يَهُوْدِيَّةً دَخَلَتْ عَلَيْهَا فَذَكَرَتْ عَذَابَ الْقَبْرِ فَقَالَتْ لَهَا اَعَاذَك اللهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ فَسألَتْ عَائشةُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَذابِ القبْرِ فَقَالَ نَعَمْ عَذابُ الْقَبْرِ حَقٌّ قَالَتْ عائشةُ فَمَا رَأيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَ صَلَّى صَلَاةً اِلَّا تَعَوَّذَ بِاللهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ.
আয়েশা (রা.) বলেন, একদা এক ইহুদী মহিলা তার নিকট আসল এবং কবরের আযাবের কথা উত্থাপন করে বলল, আয়েশা! আল্লাহ আপনাকে কবরের শাস্তি হ’তে রক্ষা করুন। অতঃপর আয়েশা (রাঃ) রাসূল(সা.) -কে কবরের শাস্তি সর্ম্পকে জিজ্ঞেস করলেন। রাসূল(সা.) বললেন, হ্যাঁ, কবরের শাস্তি সত্য। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তার পর হ’তে আমি রাসূল(সা.) -কে যখনই ছালাত আদায় করতে দেখেছি। তখনই তাকে কবরের আযাব হ’তে পরিত্রাণ চাইতে দেখেছি’ (বুখারী: ১৩৭২)। অত্র হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কবরের শাস্তি চূড়ান্ত সত্য। নবী করীম(সা.) যখনই ছালাত আদায় করতেন, তখনই কবরের আযাব হ’তে পরিত্রাণ চাইতেন। তাই আমাদেরও উচিৎ প্রত্যেক ছালাতের মধ্যে কবরেরশাস্তি হ’তে পরিত্রাণ চাওয়া।
খ. কবরের পরীক্ষার ব্যাপারে সর্বদা চিন্তিত থাকা ও জীবন যাপনে স্মরণ করা: হাদীসে এসেছে-
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ قاَلَ خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِى جَنَازَةِ رَجُلٍ مِّنَ الْانَصارِ فَانْتَهَيْنَا اِلي الْقَبْرِ وَلَمَّا يُلْحَدُ فَجَلَسَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَلَسْنَا حَوْلَهُ كَأنَّ عَلي رُؤُسِنَا الطَّيْرَ وَفِيْ يَدِهِ عُوْدٌ يَنْكُتُ ِبهِ الْاَرْضَ فَرَفَعَ رَاْسَهُ فَقَالَ اِسْتَعِيْذُوْا بِاللهِ مِنْ عَذابِ القبْرِ مَرّتَيْنِ اَوْثَلَثًا.
বারা ইবনে আযিব (রা.) বলেন, আমরা একবার নবী করীম(সা.) -এর সাথে আনছারদের এক লোকের জানাযায় গেছিলাম। আমরা কবরের নিকট গেলাম, কিন্তু তখনও কবর খোড়া হয়নি, তখন নবী করীম(সা.) বসলেন, আমরাও তার আশেপাশে বসলাম। আমরা এমন চুপচাপ বসে ছিলাম, যেন আমাদের মাথায় পাখি বসে আছে। তখন নবী করীম(সা.) -এর হাতে একটি কাঠের টুকরা ছিল, যা দ্বারা তিনি চিন্তিত ব্যক্তির ন্যায় মাটিতে দাগ কাটতেছিলেন। অতঃপর তিনি মাথা উঠালেন এবং বললেন আল্লাহর নিকট কবর আযাব হ’তে পরিত্রাণ চাও। তিনি কথাটি দুই-তিন বার বললেন (আহমাদ, মিশকাত: ১৬৩০; মিশকাত: ১৫৪২)। অন্য হাদীসে এসেছে-
عَنْ اَسْمَاءِ بِنْتِ اَبِيْ بَكْرٍ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطِيْبًا فَذَكَرَ فِتْنَةَ القَبْرِ الّتِيْ يُفْتَنُ فِيْهَا الْمَرْءُ فَلَمّا ذَكَرَ ذلِكَ ضَجّ الْمُسْلِمُوْنَ ضَجَّةً.
আবু বকর (রা.) -এর মেয়ে আসমা (রাঃ) বলেন, নবী করীম(সা.) একদিন আমাদের মাঝে খুৎবা দিলেন। তাতে কবরের আলচনা করলেন। কবরের ফেৎনার কথা শুনে মুসলমানগণ চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন (বুখারী: ১৩৭৩)। মানুষের সামনে কবরের আলোচনা হওয়া উচিত। কবরের শাস্তি ও ফেতনার ভয়ে কান্নাকাটি করা উচিত।
পরিশেষে বলতে চাই, দিনশেষে একজন মানুষের প্রকৃত বন্ধু তার নেক আমল, বাকি সবই মরিচিকার ন্যায় মিথ্যা মায়া। হাদীসে এসেছে-
عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتْبَعُ الْمَيّتَ ثَلَاثَةُ فَيَرْجِعُ اِثْنَانِ وَيَبْقَى مَعَهُ وَاحِدٌ يَتْبَعُهُ اَهْلُهُ وَمَالُهُ وَعَمَلُهُ فَيَرْجِعُ اَهْلُهُ وَمَالُهُ وَيَبْقى عَمَلُهُ.
আনাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, মৃত ব্যক্তি যখন কবর স্থানে যায় তার সাথে তিনটি জিনিস যায়। দু’টি জিনিস ফিরে আসে আর একটি জিনিস তার সাথে থেকে যায়। তার সাথে যায় তার পরিবারের সদস্য, সম্পদ ও তার আমল। তার পরিবারের সদস্য ও তার সম্পদ ফিরে আসে, আর তার আমল তার সাথে থেকে যায়। (বুখারি: ৬৫১৪)
উপরোক্ত বয়ানের আরবী অনুবাদ (সংক্ষিপ্ত ও মূলবক্তব্য)
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ ، أَمَّا بُعْدُ . . . . . . . . . . . . . . .
أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامُ –
مَوْضُوعُنَا اليَوْمِ: الرِّحْلَةُ إِلَى الْآخِرَةِ: اَلْحَلْقَةُ الثَّالِثَةُ؛ حَيَاةُ القَبْرِ:
حَيَاةُ القَبْرِ هِيَ الْخُطُوَةُ الْمُهِمَّةُ وَالْأُولَى فِي رِحْلَةِ الْآخِرَةِ، كَمَا جَاءَ فِي الحَدِيْثِ: كانَ عُثْمَانُ اِذَا وَقَفَ عَلَى قَبْرٍ بَكَى حَتَّى يَبُلَّ لِحْيَتَهُ فَقِيْلَ لَهُ تَذْكُرُ الْجَنّةَ وَالنَّارَ فَلَاتَبْكِيْ وَتَبْكِىْ مِنْ هذا فَقَالَ اِنّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال اِنّ الْقَبْرَ اَوَّلُ مَنْزِلٍ مِنَ مَنَازِلِ الْاَخِرَةِ فَاِنْ نَجَي مِنْهُ فَمَا بَعْدَهُ اَيْسَرَمِنْهُ وَاِنْ لَمْ يَنْجُ مِنْهُ فَمَا بَعْدَهُ اشَدُّمِنْهُ قَالَ وَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلّمَ مَا رَاَيْتُ مَنْظَرًا قَطُّ اِلَّا وَالْقَبرَ اَفْظَعُ مَنْهُ.
اَلْقَبْرُ مَرْحَلَةٌ رَهِيبَةٌ لِكُلٍّ مِنَ الْأَبْرَار وَالْأَشْرَارِ: كَمَا جَاءَ فِي الحَدِيْثِ: عَنْ اِبْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هذا الّذِيْ تَحَرَّكَ لَهُ الْعَرْشُ وَفُتِحَتْ لَهُ اَبْوَابُ السَّمَاءِ وَشَهِدَهُ سَبْعُوْنَ اَلْفًا مِنَ الْمَلائكةِ لَقدْ ضَمّ ضَمّةً ثُمّ فُرِجَ عَنْهُ.
سُؤَالٌ وَجَوَابٌ فِي الْقَبْرِ: عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبِ عَنْ رَسُوْلٍ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَأْتِيْهِ مَلَكَانِ فَيُجْلِسَانِهِ فَيَقُوْلَانِ لَهُ مَنْ رَبُّكَ فَيَقُوْلُ رَبِّيْ اللهُ فَيَقُوْلَانِ لَهُ مَادِيْنُكَ فَيَقُوْلُ دِيْنِيْ الْاِسْلَامُ فَيَقُوْلَانِ لَهُ مَاهَذَا الرَّجُلُ الَّذِيْ بُعِثَ فِيْكُمْ فَيَقُوْلُ هُوَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَقُوْلَانِ لَهُ وَمَا يُدْرِيْكَ فَيَقُوْلُ قَرَأْتُ كِتَابَ اللهِ فَأَمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ فَذَلِكَ قَوْلُهُ يُثَبِّتُ اللهُ الَّذِيْنَ آَمَنُوْا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ- الاية قَالَ فَيُنَادِيْ مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ اَنْ صَدَقَ عَبْدِيْ فَافْرِشُوْهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَالْبِسُوْهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَافْتَحُوْا لَهُ بَابًا اِلَي الْجَنَّةِ فَيُفْتَحُ قَالَ فَيَأْتِيْهِ مِنْ رَوْحِهَا وَطِيْبِهَا وَيُفْسَحُ لَهُ فِيْهَا مَدَّبَصَرِهِ وَأَمَّا الْكَافِرُ فَذَكَرَ مَوْتَهُ وَيُعَادُ رُوْحُهُ فِيْ جَسَدِهِ وَيَأْتِيْهِ مَلَكَانِ فَيَجْلِسَانِهِ فَيَقُوْلَانِ مَنْ رَبُّكَ فَيَقُوْلُ هَاهْ هَاهْ لَا اَدْرِيْ فَيَقُوْلَانِ لَهُ مَادِيْنُكَ فَيَقُوْلُ هَاهْ هَاهْ لَا اَدْرِيْ فَيَقُوْلَانِ لَهُ مَاهَذَا الرَّجُلُ الَّذِيْ بُعِثَ فِيْكُمْ فَيَقُوْلُ هَاهْ هَاهْ لَا اَدْرِيْ فَيُنَادِيْ مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ اَنْ كَذَبَ فَافْرِشُوْهُ مِنَ النَّارِ وَالْبِسُوْهُ مِنَ النَّارِ وَافْتَحُوْا لَهُ بَابًا الي النَّارِ قَالَ فَيَأْتِيْهِ مِنْ حَرِّهَا وَسَمُوْمِهَا قَالَ وَيُضَيِّقُ عَلَيْهَ قَبْرُهُ حَتَّي يَخْتَلِفَ فِيْهِ اَضْلَاعُهُ ثُمَّ يُقَيِّضُ لَهُ اَعْمَي اَصَمُّ مَعَهُ مِرْزَبَةٌ مِنْ حَدِيْدٍ لَوْضُرِبَ بِهَا جَبَلٌ لَصَارَ تُرَابًا فَيُضْرَبُهُ بِهَا ضَرْبَةً يَسْمَعُهَا مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ اِلَّا الثَّقَلَيْنِ فَيَصِيْرُتُرَابًا ثُمَّ يُعَادُفِيْهِ الرُّوْحُ.
إِنَّ الْعَبْدَ الْمُؤْمِنَ الصَّالِحَ يَنَامُ فِي الْقَبْرِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ: كَمَا فِي القُرْآنِ: قَالُوۡا یٰوَیۡلَنَا مَنۡۢ بَعَثَنَا مِنۡ مَّرۡقَدِنَا ٜۘؐ هٰذَا مَا وَعَدَ الرَّحۡمٰنُ وَ صَدَقَ الۡمُرۡسَلُوۡنَ .
فِي كُلِّ صَبَاحٍ وَمَسَاءٍ يُظْهِرُ لِلْخَاطِئِ مَكَانِهِ الْأَخِيرِ: يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: اَلنَّارُ يُعْرَضُوْنَ عَلَيْهَا غُدُوَّا وَّعَشِيًّا.
مَا يَجِبُ عَلَى الْمُؤْمِنِ فِي حَيَاةِ الْقَبْرِ: وَقَدْ وَرَدَ فِي الْحَدِيثِ- عَنْ عَائِشَةَ قَالتْ اَنَّ يَهُوْدِيَّةً دَخَلَتْ عَلَيْهَا فَذَكَرَتْ عَذَابَ الْقَبْرِ فَقَالَتْ لَهَا اَعَاذَك اللهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ فَسألَتْ عَائشةُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَذابِ القبْرِ فَقَالَ نَعَمْ عَذابُ الْقَبْرِ حَقٌّ قَالَتْ عائشةُ فَمَا رَأيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدَ صَلَّى صَلَاةً اِلَّا تَعَوَّذَ بِاللهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ.
وَأَخِيرًا، أَوَدُّ أَنْ أَقُولَ ، اَلصَّدِيقُ الْحَقِيقِيُّ لِلْإِنْسَانِ هُوَ عَمَلُهُ الصَّالِحُ، وَقَدْ وَرَدَ فِي الْحَدِيثِ -عَنْ اَنَسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتْبَعُ الْمَيّتَ ثَلَاثَةُ فَيَرْجِعُ اِثْنَانِ وَيَبْقَى مَعَهُ وَاحِدٌ يَتْبَعُهُ اَهْلُهُ وَمَالُهُ وَعَمَلُهُ فَيَرْجِعُ اَهْلُهُ وَمَالُهُ وَيَبْقى عَمَلُهُ.
بَارَكَ اللَّهُ لِي وَلَكُمْ فِي الْقُرْآنِ الْعَظِيمِ، وَنَفَعَنِي وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيهِ مِنَ الْايَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيمِ. أَقُولُ قَوْلِي هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيمَ الْجَلِيل، لِيْ وَلَكُمْ وَلِسَائِرِ الْمُسْلِمِينَ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ فَاسْتَغْفِرُوه أَنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
সংকলন, সম্পাদনা, পরিমার্জন ও আরবী তরজমা: ইমরান মাহমুদ (পিএইচডি গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাবি)