সার্বজনীন পেনশন স্কিমের সুবিধা ও অসুবিধা: বাংলাদেশ প্রসঙ্গ

Title: Advantages and Disadvantages of Universal Pension Scheme: Bangladesh Context

Writer: Sabbir Hossain Sifat, LL.B. (Dhaka University), LL.M. (Dhaka University); Senior Executive, Human Resources (Legal & Compliance), Service Engines Limited; Mobile: +880 1515-638024

Abstract:

This paper examines the implementation of a Universal Pension Scheme (UPS) in Bangladesh. It outlines the initial pledge by the Awami League in 2008, followed by the development of a National Social Security Strategy in 2015 that envisioned a broad-based pension system. The paper then details the iterative process of concept paper creation by the Finance Department in 2016 and 2022. Finally, it highlights the culmination of these efforts with the official launch of the UPS in August 2023. The passage goes on to mention the legislative framework established for the UPS, including the enactment of the Universal Pension System Management Act and the formation of the National Pension Authority, both in early 2023. It concludes by outlining the intent to critically review the UPS based on relevant laws, regulations, and media reports.

ভূমিকা: ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামোর আওতায় বৃদ্ধকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জাতীয়ভাবে একটি সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তনের অঙ্গীকার করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে সরকার জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র প্রণয়ন করে। এতে দেশে একটি ব্যাপকভিত্তিক সমন্বিত অংশগ্রহণমূলক পেনশন–ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়। ২০১৬ সালে ভারত ঘুরে এসে অর্থ বিভাগের একটি দল একটি ধারণাপত্র তৈরি করে। নতুন করে এ আলোচনা গতি পায় ২০২২ সালে এবং এ বছর আরেকটি ধারণাপত্র তৈরি করে অর্থ বিভাগ।

অবশেষে ১৭ আগস্ট, ২০২৩-এ আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩-এ ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩’ পাশ এবং আইনের আওতায় ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩-এ ‘জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হয়। পরে ১৩ আগস্ট, ২০২৩-এ ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা, ২০২৩’ জারি করা হয়, যেটি সুদনির্ভর। উল্লিখিত আইন ও বিধিমালা, পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট এবং সংবাদমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রকল্প সম্পর্কিত চুম্বক পর্যালোচনা নিচে উপস্থাপন করা হল।

পেনশন স্কিম সংক্রান্ত

পরিকল্পিত স্কিম কয়টি?

— ছয়টি। [সংবাদমাধ্যম]

প্রাথমিকভাবে চালুকৃত স্কিম কয়টি ও কী কী?

—৪টিঃ- প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা। [বিধি ৩]

প্রবাস স্কিমের বিশেষত্ব কী কী?

—প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য;

—চাঁদা বৈদেশিক মুদ্রায় প্রদেয় তবে দেশে ফেরত আসলে দেশীয় মুদ্রায় প্রদানযোগ্য; এবং

—পেনশন দেশীয় মুদ্রায় দেয়া হবে। [বিধি ৩(১)(ক)]

কোন প্রবাসী দেশে ফেরত আসলে ‘প্রবাস স্কিম’-এর পরিণতি কী?

—চাঁদা দেশীয় মুদ্রায় প্রদানযোগ্য; এবং

—প্রয়োজনে স্কিম পরিবর্তন করা যাবে। [বিধি ৩(১)(ক)]

প্রগতি স্কিমের বিশেষত্ব কী কী?

—বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য; এবং

—চাঁদা প্রদানে মালিকের বাধ্যবাধকতা নেই তবে চাইলে ৫০% চাঁদা দিতে পারবে। [বিধি ৩(১)(খ)]

সুরক্ষা স্কিমের বিশেষত্ব কী কী?

—অনানুষ্ঠানিক বা স্ব-কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি (যেমন- কৃষক, রিক্সাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, ইত্যাদি)-দের জন্য। [বিধি ৩(১)(গ)]

সমতা স্কিমের বিশেষত্ব কী কী?

—দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী ব্যক্তিদের জন্য;

— দারিদ্র্যসীমা নির্ধারিত হবে পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক প্রকাশিত আয় সীমার ভিত্তিতে, বর্তমানে এর পরিমাণ বার্ষিক ৬০ হাজার টাকা;

—মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১০০০ টাকা, যার মধ্যে চাঁদাদাতা ৫০০ টাকা দেবে আর বাকি ৫০০ টাকা সরকার দেবে। [বিধি ৩(১)(ঘ), বিধি ৯, তফসিল]

পেনশন স্কিমের জন্য রেজিস্ট্রেশন করা যাবে কীভাবে?

https://www.upension.gov.bd/Public/Registration -এ অনলাইনে আবেদন করে

https://www.upension.gov.bd/Public/Forms -থেকে পেনশনার আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করে সরাসরি জমা দিয়ে।

পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের সর্বনিম্ন বয়সসীমা কত?

—১৮ বছর। [ধারা ১৪(১)(ক), বিধি ৪(১)]

পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা কত?

—৫০ বছর। [ধারা ১৪(১)(ক), বিধি ৪(১)]

সাধারণত কখন পেনশন পাওয়া যাবে?

—৬০ বছর বয়স থেকে আজীবন। [ধারা ১৪(১)(খ)]

৫০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকগণ সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবে কি?

—হ্যাঁ, বিশেষ বিবেচনায় পারবে। তবে নিরবচ্ছিন্ন ১০ (দশ) বছর চাঁদা প্রদান শেষে পেনশন পাবেন। [ধারা ১৪(১)(ক), বিধি ৪(১)]

প্রবাসীরা কি পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবে?

—হ্যাঁ। [ধারা ১৪(১)(গ), বিধি ৩(ক)]

পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ কী বাধ্যতামূলক?

—না। তবে সরকার চাইলে বাধ্যতামূলক করতে পারবে। [ধারা ১৪(১)(ঘ)]

চাকরি পরিবর্তন করলে কি নতুন পেনশন স্কিম খুলতে হবে?

—না। পূর্ববর্তী হিসাব নতুন কর্মস্থলের বিপরীতে স্থানান্তরিত হবে। [ধারা ১৪(১)(চ)]

স্কিমে নিবন্ধনের জন্য পরিচয়পত্র কি বাধ্যতামূলক?

—হ্যাঁ। [বিধি ৪(১)]

জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে স্কিমে নিবন্ধন করা যাবে কি?

—শুধু প্রবাসীরা পাসপোর্টের ভিত্তিতে নিবন্ধন করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করে অনুলিপি জমা দিতে হবে। [বিধি ৪(২)]

স্কিম তথা চাঁদার হার পরিবর্তন করা যাবে কি? কীভাবে?

—হ্যাঁ। যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করতে হবে। [বিধি ১৩(১)]

স্কিম পরিবর্তন করলে চাঁদা এবং মাসিক পেনশনের পরিমাণ কী পুনঃনির্ধারিত হবে?

-হ্যাঁ। [বিধি ১৩(২,৩)]

স্কিমের স্বত্ব অন্য কারো নিকট হস্তান্তর করা যাবে?

—না। তবে মৃত্যুর পর নমিনি অথবা উত্তরাধিকারী বরাবর হস্তান্তর করা যাবে। [বিধি ১৪(১,২)]

প্রবাস স্কিমের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

মাসিক চাঁদার হার৫,০০০ টাকা৭,০০০ টাকা১০,০০০ টাকা
চাঁদা প্রদানের মোট সময় (বছর)মাসিক পেনশন (টাকা)মাসিক পেনশন (টাকা)মাসিক পেনশন (টাকা)
৪২১,৭২,৩২৭২,৫৮,৪৯১৩,৪৪,৬৫৫
৪০১,৪৬,০০১২,১৯,০০১২,৯২,০০২
৩৫৯৫,৯৩৫১,৪৩,৯০২১,৯১,৮৭০
৩০৬২,৩৩০৯৩,৪৯৫১,২৪,৬৬০
২৫৩৯,৭৭৪৫৯,৬৬১৭৯,৫৪৮
২০২৪,৬৩৪৩৬,৯৫১৪৯,২৬৮
১৫১৪,৪৭২২১,৭০৮২৮,৯৪৪
১০৭,৬৫১১১,৪৭৭১৫,৩০২

প্রগতি স্কিমের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

মাসিক চাঁদার হার২,০০০ টাকা৩,০০০ টাকা৫,০০০ টাকা
চাঁদা প্রদানের মোট সময় (বছর)মাসিক পেনশন (টাকা)মাসিক পেনশন (টাকা)মাসিক পেনশন (টাকা)
৪২৬৮,৯৩১১,০৩,৩৯৬১,৭২,৩২৭
৪০৫৮,৪০০৮৭,৬০১১,৪৬,০০১
৩৫৩৮,৩৭৪৫৭,৫৬১৯৫,৯৩৫
৩০২৪,৯৩২৩৭,৩৯৮৬২,৩৩০
২৫১৫,৯১০২৩,৮৬৪৩৯,৭৭৪
২০৯,৮৫৪১৪,৭৮০২৪,৬৩৪
১৫৫,৭৮৯৮,৬৮৩১৪,৪৭২
১০৩,০৬০৪,৫৯১৭,৬৫১

সুরক্ষা স্কিমের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

মাসিক চাঁদার হার১,০০০ টাকা২,০০০ টাকা৩,০০০ টাকা৫,০০০ টাকা
চাঁদা প্রদানের মোট সময় (বছর)মাসিক পেনশন (টাকা)মাসিক পেনশন (টাকা)মাসিক পেনশন (টাকা)মাসিক পেনশন (টাকা)
৪২৩৪,৪৬৫৬৮,৯৩১১,০৩,৩৯৬১,৭২,৩২৭
৪০২৯,২০০৫৮,৪০০৮৭,৬০১১,৪৬,০০১
৩৫১৯,১৮৭৩৮,৩৭৪৫৭,৫৬১৯৫,৯৩৫
৩০১২,৪৬৬২৪,৯৩২৩৭,৩৯৮৬২,৩৩০
২৫৭,৯৫৫১৫,৯১০২৩,৮৬৪৩৯,৭৭৪
২০৪,৯২৭৯,৮৫৪১৪,৭৮০২৪,৬৩৪
১৫২,৮৯৪৫,৭৮৯৮,৬৮৩১৪,৪৭২
১০১,৫৩০৩,০৬০৪,৫৯১৭,৬৫১

সমতা স্কিমের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

মাসিক চাঁদার হার১,০০০ টাকা
(চাঁদাদাতা ৫০০ টাকা + সরকারি অংশ ৫০০ টাকা)
চাঁদা প্রদানের মোট সময় (বছর)মাসিক পেনশন (টাকা)
৪২৩৪,৪৬৫
৪০২৯,২০০
৩৫১৯,১৮৭
৩০১২,৪৬৬
২৫৭,৯৫৫
২০৪,৯২৭
১৫২,৮৯৪
১০১,৫৩০

চাঁদা জমা সংক্রান্ত

চাঁদা কীভাবে জমা দিতে হবে?

—মোবাইল নং/ইমেইলের মাধ্যমে চাঁদার হার এবং পরিশোধের তারিখ অবহিত করা হবে; [বিধি ৪(৫)]

— মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান(যেমন-বিকাশ, নগদ, ইত্যাদি), অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড  অথবা তফসিলি ব্যাংকের যেকোন শাখার মাধ্যমে জমা দেয়া যাবে; [বিধি ৫(২)] এবং

—প্রবাসীরা শুধু ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড-এর মাধ্যমে চাঁদা জমা দিতে পারবে। [বিধি ৫(৩)]

নির্ধারিত সময়ে চাঁদা জমা না করলে পরিণতি কী?

—পরবর্তী ১ মাসের মধ্যে জরিমানা ছাড়া প্রদান করা যাবে;

—১ মাস পর প্রতিদিন চাঁদার সাথে ১% হারে বিলম্ব ফি প্রদান করতে হবে; এবং

—টানা ৩ মাস চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে হিসাব স্থগিত হবে। চাঁদার বকেয়া কিস্তির সাথে প্রতিদিনের জন্য ১% হারে বিলম্ব ফি প্রদান করে হিসাব আবার সচল করা যাবে। [বিধি ৫(৪,৫)]

চাঁদা/বিলম্ব ফিসহ চাঁদা প্রদানের সময় নিজে তদারকি করতে হবে?

—না, চাঁদাদাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে মেসেজ প্রদান করা হবে। [বিধি ৪(৫), ৫(৯)]

টানা ৩ মাস চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে পরিণতি কী?

— হিসাব স্থগিত করা হবে। [বিধি ৫(৫)]

স্থগিতকৃত হিসাব পুনরায় সচল করা যাবে?

—হ্যাঁ, চাঁদার বকেয়া কিস্তির সাথে প্রতিদিনের জন্য ১% হারে বিলম্ব ফি প্রদান করে হিসাব আবার সচল করা যাবে। [বিধি ৫(৪,৫)]

চাঁদা কখন পরিশোধ করা যাবে?

—মাসিক/ত্রৈমাসিক/বার্ষিক ভিত্তিতে। [বিধি ৫(৮)]

অগ্রিম চাঁদা দেয়া যাবে?

—হ্যাঁ, মাসের নাম উল্লেখ করে যে কোন পরিমাণ চাঁদা অগ্রিম দেয়া যাবে। [বিধি ৫(৬)]

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্কিমে অংশগ্রহণ করলে চাঁদা কার মাধ্যমে জমা হবে?

—সবার চাঁদা একত্র করে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জমা দিতে হবে। [বিধি ৫(৭)]

চাঁদার বাইরে অতিরিক্ত ফি ও চার্জ গ্রহণ করা যাবে কি?

হ্যাঁ। [ধারা ৭(ঝ)]

জমাকৃত অর্থ থেকে চাঁদাদাতা কর্তৃক ঋণ গ্রহণ সংক্রান্ত

পেনশন তহবিলে জমাকৃত অর্থ উত্তোলন করা যাবে কি?

—চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জমাকৃত অর্থের সর্ব্বোচ্চ ৫০ (পঞ্চাশ) শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করা যাবে, যা ধার্যকৃত অতিরিক্ত ফি/সুদসহ আবার পরিশোধ করতে হবে। [ধারা ১৪(১)(ড), বিধি ১৫(১)]

কোন কোন উদ্দেশ্যে ঋণ হিসেবে উত্তোলন করা যাবে?

—নিজের অথবা পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা;

—গৃহ নির্মাণ অথবা মেরামত; এবং

—সন্তানের বিয়ের ব্যয় নির্বাহ। [বিধি ১৫(১)]

ঋণ কয় কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে?

—সর্বোচ্চ ২৪ কিস্তি। [বিধি ১৫(১)]

ঋণ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত আবার ঋণ নেয়া যাবে?

—না। [বিধি ১৫(২)]

পেনশন স্কিমে প্রদত্ত চাঁদা কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে কি?

—না। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে। [ধারা ১৪(১)(ঢ)]

মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থের উপর আয়কর দিতে হবে কি?

—না। মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে। [ধারা ১৪(১)(ঢ)]

সরকারি ও আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মরত কর্মচারীগণ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতাভুক্ত কিনা?

—না। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীরা আপাতত সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার বাইরে থাকবেন। ভবিষ্যতে তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। [ধারা ১৪(২)]

অস্বচ্ছল চাঁদাদাতা সংক্রান্ত

 ‘অস্বচ্ছল চাঁদাদাতা’ অর্থ কী?

—পেনশন স্কিমে চাঁদা প্রদানকারী কোনো চাঁদাদাতা, যিনি শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে পরবর্তীতে স্থায়ী অথবা সাময়িকভাবে চাঁদা প্রদানের সক্ষমতা হারিয়েছেন। [ধারা ২(১, বিধি ৬(১)]।

অস্বচ্ছল চাঁদাদাতার স্কিমের পরিণতি কী হবে?

—মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসাবে প্রদান করতে পারবে। [ধারা ১৪(১)(ণ)]

কিন্তু অনুদান আসলেই দেবে কিনা অথবা কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে- সে বিষয়ে কোন আলোচনা নেই।

—টানা ১২ মাস পর্যন্ত চাঁদা না দিলেও হিসাব স্থগিত হবে না। [বিধি ৬(৬)]

চাঁদাদাতার অস্বচ্ছলতা কে নির্ণয় করবে?

—কর্তৃপক্ষ, মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ সাপেক্ষে। [বিধি ৬(২), (৩)]

মেডিকেল বোর্ড কোথায় গঠিত হবে?

—বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে। [বিধি ৬(২)]

চাঁদাদাতার অস্বচ্ছলতা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে?

—হ্যাঁ। সচিব, অর্থ বিভাগ বরাবর। [বিধি ৬(৪)]

আপিল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত কি চূড়ান্ত?

—হ্যাঁ। [বিধি ৬(৫)]

মানসিক অসামর্থ্যের কারণে অস্বচ্ছল ঘোষিত চাঁদাদাতার চাঁদা কে দিবে?

—নমিনি অথবা উত্তরাধিকারী। [বিধি ৭(১)]

মানসিক অসামর্থ্যের কারণে অস্বচ্ছল ঘোষিত চাঁদাদাতার পেনশনের অর্থ কে উত্তোলন করতে পারবে?

—নমিনি অথবা উত্তরাধিকারী। [বিধি ৭(২)]

নিখোঁজ চাঁদাদাতা সংক্রান্ত

চাঁদাদাতা নিখোঁজ হলে চাঁদা কে দিবে এবং পেনশন কে পাবে?

নমিনি অথবা উত্তরাধিকারী। [বিধি ৮(১,৩)]

নিখোঁজ হওয়ার কত দিন পর পেনশন পাওয়া যাবে?

—৭ (সাত) বছর। [বিধি ৮(২,৩)]

চাঁদাদাতা নিখোঁজ হলে কত দিন পেনশন পাওয়া যাবে?

—তার ৭৫তম জন্মবার্ষিকী পর্যন্ত। [বিধি ৮(২,৩)]

নমিনি মনোনয়ন সংক্রান্ত

নমিনি কীভাবে মনোনয়ন করা যাবে?

—অনলাইনে ফরম পূরণ করে। [বিধি ১০(১)]

নমিনি কয়জন মনোনয়ন করা যাবে?

—এক বা একাধিক। [বিধি ১০(১)]

নমিনি বাতিল করা যাবে?

—হ্যাঁ। [বিধি ১০(১)]

নতুন নমিনি মনোনয়ন করা যাবে?

—নমিনি বাতিল করে এক বা একাধিক নতুন নমিনি মনোনয়ন করা যাবে। [বিধি ১০(১)]

কখন নতুন নমিনি মনোনয়ন বাধ্যতামূলক?

—সকল নমিনি মারা গেলে। [বিধি ১০(২)]

মৃত চাঁদাদাতা/পেনশনারের জমাকৃত অর্থ / পেনশন বিতরণ সংক্রান্ত

চাঁদাদাতা / পেনশনার মারা গেলে কী হবে?

—পেনশনে থাকাকালীন মারা গেলে পেনশনারের ৭৫তম জন্মবার্ষিকী পর্যন্ত নমিনি / উত্তরাধিকারী মাসিক পেনশন পাবে। [ধারা ১৪(১)(ট)]

—কমপক্ষে ১০ (দশ) বৎসর চাঁদা প্রদানের পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে। [ধারা ১৪(১)(ঠ)]

মৃত চাঁদাদাতার পেনশনারের জমাকৃত অর্থ / পেনশন কে পাবে?

নমিনি। [ধারা ১৪(১)(ট,ঠ),বিধি ১৬(১)]

কোন নমিনি মারা গেলে স্কিমের অর্থ কে পাবে?

—অন্য নমিনি। [বিধি ১৬(৩)] 

কোন নমিনি না থাকলে স্কিমের অর্থ কে পাবে?

—উত্তরাধিকারী। [বিধি ১৬(৪,৫)] 

নমিনি না থাকলে উত্তরাধিকারী কীভাবে নির্ধারিত হবে?

—স্থানীয় সরকার প্রদত্ত উত্তরাধিকার সনদ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ নির্ধারন করবে। [বিধি ১৭(১)]

উত্তরাধিকার সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে?

—হ্যাঁ। সচিব, অর্থ বিভাগ বরাবর। [বিধি ১৭(২)]

আপিল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত কি চূড়ান্ত?

—হ্যাঁ। [বিধি ১৭(৩)]

নাবালক নমিনির পক্ষে অর্থ কে গ্রহণ করবে?

—চাঁদাদাতা কর্তৃক মনোনীত যেকোন ব্যক্তি। [বিধি ১০(৩), ১৬(২)] 

নাবালক নমিনির পক্ষে কাউকে মনোনীত করা না হলে অর্থ কে গ্রহণ করবে?

—আইনসম্মত অভিভাবক। [বিধি ১৬(২)] 

পেনশন কর্তৃপক্ষ এবং পরিচালনা পর্ষদ সংক্রান্ত

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষর সদস্য কতজন?

—৪ জন। নির্বাহী চেয়ারম্যান (১ জন) এবং সদস্য (৪ জন)। [ধারা ৬(১)]

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কে?

—নির্বাহী চেয়ারম্যান। [ধারা ৬(৪)]

পেনশন ব্যবস্থাপনা/বাস্তবায়নের কাজ অন্য কোন ব্যক্তি অথবা সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে অর্পণ করা যাবে কি?

হ্যাঁ,পেনশন কর্তৃপক্ষ চাইলে পারবে। [ধারা ৭(চ)]

সর্বজনীন পেনশন বা সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে কোনো অভিযোগ বা বিরোধ নিষ্পত্তি বা অনিয়ম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব কার?

—জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের। তবে এ বিষয়ে পদ্ধতিগত নির্দেশনা অনুপস্থিত। [ধারা ৭(ট)]

পেনশন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কে?

—অর্থমন্ত্রী [ধারা ১০(১)(ক)]

পেনশন পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব কে?

— জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান [ধারা ১০(১)(ত)]

পেনশন পরিচালনা পর্ষদের বাকি সদস্যরা কে কে?

—গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক;

—সচিব, অর্থ বিভাগ;

—সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ;

—চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড;

—সচিব, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়;

—সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়;

—সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়;

—সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়;

—সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ;

—সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়;

—চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন;

—সভাপতি, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই);

—সভাপতি, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন; এবং

—সভাপতি, বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিডব্লিউসিসিআই)। [ধারা ১০(১)(খ-ণ)]

পেনশন পরিচালনা পর্ষদের সভায় অন্য কেউ অংশগ্রহণ করতে পারবে কি?

—হ্যাঁ, পরিচালনা পর্ষদ প্রয়োজনবোধে যেকোনো ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানাতে পারবে। [ধারা ১০(২)]

পেনশন পরিচালনা পর্ষদের কোরাম কীভাবে গঠিত হবে?

—সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য (৯ জন)- এর উপস্থিতিতে। [ধারা ১০(৫)]

পেনশন পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত কীভাবে গৃহীত হবে?

—সভায় উপস্থিত সদস্যগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে। [ধারা ১০(৫)]

পেনশন পরিচালনা পর্ষদের কাজ কী কী?

—সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে এই আইনের অধীন প্রবিধান প্রণয়নসহ কর্তৃপক্ষের যে কোনো নীতি বা কৌশল অথবা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উত্থাপিত কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অথবা কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ প্রদান;

—পেনশন তহবিলের অর্থ সরকারি সিকিউরিটি, কম ঝুঁকিপূর্ণ অন্যান্য সিকিউরিটিজ, লাভজনক অবকাঠামো ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগের জন্য নির্ধারিত গাইডলাইন অনুমোদন এবং, সময় সময়, প্রয়োজনীয় পরামর্শ বা দিক্‌নির্দেশনা প্রদান; এবং

—সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ। [ধারা ১১]

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান, সদস্য এবং কমর্কর্তা-কর্মচারীগণের বেতন-ভাতা, পারিশ্রমিক, সম্মানি ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য ব্যয় কোথা থেকে নির্বাহ করা হবে?

— জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ তহবিল থেকে। [ধারা ১২(৩)]

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ তহবিলের অর্থের উৎস কী কী?

—সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান;

—আদায়যোগ্য ফি ও চার্জ;

—সেবা বাবদ প্রাপ্ত অর্থ;

—সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে গৃহীত ঋণ; এবং

—অন্য কোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ। [ধারা ১২(২)(ক-ঙ)]

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ কোথায় অবস্থিত?

—ভবন নং–১১, বাংলাদেশ সচিবালয়, আব্দুল গনি রোড, ঢাকা- ১০০০

সাধারণ জিজ্ঞাসার জন্য কোন নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে?

—+৮৮০১৭১২ ৯৮৫০৬৪

—+৮৮০১৭১৬ ৭২৪৬৮১

—+৮৮০১৮১৭ ০৮৯২১৫

রেজিস্ট্রেশন বা অন্য যেকোন টেকনিক্যাল/কারিগরি সহায়তার জন্য কোন নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে?

—৩৩৩

—+৮৮০৯৬৬৬ ৭৮৯ ৩৩৩ (বিদেশ হতে)

—+৮৮০১৫৫০ ০৭৯৯২৯

—+৮৮০১৫৫০ ০৭৯৯৪৫

১০ বছর বা ততোধিক সময় চাঁদা প্রদানের পর ৬০ বছর বয়স অতিক্রান্তের পূর্বে মারা গেলে কী হবে?

—এ বিষয়ে কোন আলোচনা নেই।

পেনশন কর্তৃপক্ষ তহবিলের টাকা কী করবে?

—নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী বিনিয়োগ করবে। [ধারা ৭(গ), ১১ (২)]

কিন্তু কোন নীতিমালা এখনো তৈরি হয় নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore

Scroll to Top