সাপ্তাহিক জুমুআর বয়ান। বিষয়: পরকালের যাত্রা: পর্ব- ৬: হিসাব-নিকাশ

ভূমিকা:

মানুষের দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু মৃত্যুর পর শুরু হবে এক অনন্ত যাত্রা—যার শেষ নেই। কিয়ামতের দিন সবাইকে হাশরের ময়দানে উপস্থিত করা হবে এবং তখনই শুরু হবে চূড়ান্ত বিচার ও হিসাব-নিকাশ। এ দিন কেউ রক্ষা পাবে, আর কেউ শাস্তির মুখোমুখি হবে। হিসাব-নিকাশের দিনই নির্ধারিত হবে কার জান্নাত আর কার জাহান্নাম। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কুরআনে স্পষ্টভাবে বলেছেন:

فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ – وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ”

(যিলযাল: ৭-৮)

যে ব্যক্তি অণু পরিমাণ সৎকর্ম করবে, সে তা দেখতে পাবে। আর যে ব্যক্তি অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করবে, সেও তা দেখতে পাবে।”

এই পর্বে আমরা আলোচনা করবো, কীভাবে মানুষের আমলনামা প্রকাশ করা হবে, কীভাবে বিচার হবে, কারা সহজ হিসাব পাবে এবং কার জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারিত হবে। সেই মহামহিম দিনের প্রতিটি মুহূর্তই আমাদের জন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা হওয়া উচিত, যেন আমরা দুনিয়ায় সঠিক পথে চলতে পারি।

১. বিচার কার্য শুরু হওয়ার সময় আকাশ ও জমিনের অবস্থা: 

ক. গোটা পৃথিবী থাকবে আল্লাহর মুষ্ঠির মধ্যে। আল্লাহ তা‘আলা এ প্রসঙ্গে বলেন,

وَمَا قَدَرُواْ ٱللَّهَ حَقَّ قَدۡرِهِۦ وَٱلۡأَرۡضُ جَمِيعٗا قَبۡضَتُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَٱلسَّمَٰوَٰتُ مَطۡوِيَّٰتُۢ بِيَمِينِهِۦۚ سُبۡحَٰنَهُۥ وَتَعَٰلَىٰ عَمَّا يُشۡرِكُونَ

“আর তারা আল্লাহ-কে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি। অথচ কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবীই থাকবে তাঁর মুষ্ঠিতে এবং আকাশসমূহ তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা থাকবে। তিনি পবিত্র, তারা যাদেরকে শরীক করে তিনি তাদের ঊর্ধ্বে”। (আয-যুমার: ৬৭)

খ. আকাশসমূহকে দলিল-পত্রের ন্যায় গুটিয়ে নিবেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

يَوۡمَ نَطۡوِي ٱلسَّمَآءَ كَطَيِّ ٱلسِّجِلِّ لِلۡكُتُبِۚ كَمَا بَدَأۡنَآ أَوَّلَ خَلۡقٖ نُّعِيدُهُۥۚ وَعۡدًا عَلَيۡنَآۚ إِنَّا كُنَّا فَٰعِلِينَ

“সে দিন আমরা আসমানসমূহকে গুটিয়ে নেব, যেভাবে গুটিয়ে রাখা হয় লিখিত দলীল-পত্রাদি। যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবেই পুনরায় সৃষ্টি করব। ওয়াদা পালন করা আমার কর্তব্য। নিশ্চয় আমি তা পালন করব”। (আম্বিয়া: ১০৪)

এই প্রসঙ্গে হাদীসে এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

يَقْبِضُ اللَّهُ الأَرْضَ، وَيَطْوِي السَّمَوَاتِ بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يَقُولُ: أَنَا المَلِكُ، أَيْنَ مُلُوكُ الأَرْضِ

“আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবী মুষ্ঠিবদ্ধ করবেন আর আকাশকে নিজ ডান হাতে ভাজ করে ধরবেন অতঃপর বলবেন, আমিই বাদশাহ। কোথায় আজ পৃথিবীর রাজা-বাদশাগণ?” (বুখারী: ৪৮৪২)

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«يَطْوِي اللهُ عَزَّ وَجَلَّ السَّمَاوَاتِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، ثُمَّ يَأْخُذُهُنَّ بِيَدِهِ الْيُمْنَى، ثُمَّ يَقُولُ: أَنَا الْمَلِكُ، أَيْنَ الْجَبَّارُونَ؟ أَيْنَ الْمُتَكَبِّرُونَ. ثُمَّ يَطْوِي الْأَرَضِينَ بِشِمَالِهِ، ثُمَّ يَقُولُ: أَنَا الْمَلِكُ أَيْنَ الْجَبَّارُونَ؟ أَيْنَ الْمُتَكَبِّرُونَ؟ »

“কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা আকাশসমূহকে ভাঁজ করে ফেলবেন। অতঃপর তা ডান হাতে ধারণ করবেন আর বলবেন, আমি বাদশা। কোথায় আজ স্বৈরাচরীরা? কোথায় আজ অহংকারীরা? এরপর পৃথিবীগুলোকে বাম হাতে ভাঁজ করে ধরবেন। অতঃপর বলবেন, কোথায় আজ স্বৈরাচরীরা? কোথায় আজ অহংকারীরা?” (মুসলিম: ২৭৮৮)

২. বিচার শুরু হওয়ার সাথে সাথে মানবজাতির পারস্পরিক সম্পর্কের অবস্থা

ক. নেতারা অনুসারীদের প্রত্যাখ্যান করবে:

দুনিয়াতে যে সকল মানুষ আল্লাহকে বাদ অন্যের ইবাদত বন্দেগী করেছে কিয়ামতের দিন তারা তাদের অনুসারীদের প্রত্যাখ্যান করবে। এমনিভাবে আল্লাহর বিধি-বিধান না মেনে যে সকল নেতাদের নির্দেশ পালন করা হয়েছে তারাও সেদিন তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَٱتَّخَذُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ ءَالِهَةٗ لِّيَكُونُواْ لَهُمۡ عِزّٗا – كَلَّاۚ سَيَكۡفُرُونَ بِعِبَادَتِهِمۡ وَيَكُونُونَ عَلَيۡهِمۡ ضِدًّا

“আর তারা আল্লাহ ছাড়া বহু ইলাহ গ্রহণ করেছে, যাতে ওরা তাদের সাহায্যকারী হতে পারে। কখনো নয়, এরা তাদের ইবাদাতের কথা অস্বীকার করবে এবং তাদের বিপক্ষ হয়ে যাবে”। [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ৮১-৮২]

وَيَوۡمَ نَحۡشُرُهُمۡ جَمِيعٗا ثُمَّ نَقُولُ لِلَّذِينَ أَشۡرَكُواْ مَكَانَكُمۡ أَنتُمۡ وَشُرَكَآؤُكُمۡۚ فَزَيَّلۡنَا بَيۡنَهُمۡۖ وَقَالَ شُرَكَآؤُهُم مَّا كُنتُمۡ إِيَّانَا تَعۡبُدُونَ

“আর যেদিন আমরা তাদের সকলকে একত্র করব, অতঃপর যারা শির্‌ক করেছে, তাদেরকে বলব, থাম, তোমরা ও তোমাদের শরীকরা। অতঃপর আমি তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাব। আর তাদের শরীকরা বলবে, তোমরা তো আমাদের ইবাদাত করতে না”। (ইউনূস: ২৮)

إِذۡ تَبَرَّأَ ٱلَّذِينَ ٱتُّبِعُواْ مِنَ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُواْ وَرَأَوُاْ ٱلۡعَذَابَ وَتَقَطَّعَتۡ بِهِمُ ٱلۡأَسۡبَابُ – وَقَالَ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُواْ لَوۡ أَنَّ لَنَا كَرَّةٗ فَنَتَبَرَّأَ مِنۡهُمۡ كَمَا تَبَرَّءُواْ مِنَّاۗ كَذَٰلِكَ يُرِيهِمُ ٱللَّهُ أَعۡمَٰلَهُمۡ حَسَرَٰتٍ عَلَيۡهِمۡۖ وَمَا هُم بِخَٰرِجِينَ مِنَ ٱلنَّارِ .

“যখন অনুসরনীয় ব্যক্তিরা অনুসারীদের থেকে আলাদা হয়ে যাবে এবং তারা আযাব দেখতে পাবে। আর তাদের সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। আর যারা অনুসরণ করেছে, তারা বলবে, যদি আমাদের ফিরে যাওয়ার সুযোগ হত, তাহলে আমরা তাদের থেকে আলাদা হয়ে যেতাম, যেভাবে তারা আলাদা হয়ে গিয়েছে। এভাবে আল্লাহ তাদেরকে তাদের আমলসমূহ দেখাবেন তাদের আক্ষেপের জন্য, আর তারা আগুন থেকে বের হতে পারবে না”।  (আল-বাকারা: ১৬৬-১৬৭)

وَلَوۡ تَرَىٰٓ إِذِ ٱلظَّٰلِمُونَ مَوۡقُوفُونَ عِندَ رَبِّهِمۡ يَرۡجِعُ بَعۡضُهُمۡ إِلَىٰ بَعۡضٍ ٱلۡقَوۡلَ يَقُولُ ٱلَّذِينَ ٱسۡتُضۡعِفُواْ لِلَّذِينَ ٱسۡتَكۡبَرُواْ لَوۡلَآ أَنتُمۡ لَكُنَّا مُؤۡمِنِينَ ٣١ قَالَ ٱلَّذِينَ ٱسۡتَكۡبَرُواْ لِلَّذِينَ ٱسۡتُضۡعِفُوٓاْ أَنَحۡنُ صَدَدۡنَٰكُمۡ عَنِ ٱلۡهُدَىٰ بَعۡدَ إِذۡ جَآءَكُمۖ بَلۡ كُنتُم مُّجۡرِمِينَ ٣٢ وَقَالَ ٱلَّذِينَ ٱسۡتُضۡعِفُواْ لِلَّذِينَ ٱسۡتَكۡبَرُواْ بَلۡ مَكۡرُ ٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ إِذۡ تَأۡمُرُونَنَآ أَن نَّكۡفُرَ بِٱللَّهِ وَنَجۡعَلَ لَهُۥٓ أَندَادٗاۚ وَأَسَرُّواْ ٱلنَّدَامَةَ لَمَّا رَأَوُاْ ٱلۡعَذَابَۚ وَجَعَلۡنَا ٱلۡأَغۡلَٰلَ فِيٓ أَعۡنَاقِ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْۖ هَلۡ يُجۡزَوۡنَ إِلَّا مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ.

“আর তুমি যদি দেখতে যালিমদেরকে, যখন তাদের রবের কাছে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হবে তখন তারা পরস্পর বাদানুবাদ করতে থাকবে। যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল তারা অহঙ্কারীদেরকে বলবে, তোমরা না থাকলে অবশ্যই আমরা মুমিন হতাম। যারা অহঙ্কারী ছিল তারা, তাদেরকে বলবে, যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল, তোমাদের কাছে হিদায়াত আসার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা থেকে বাধা দিয়েছিলাম? বরং তোমরাই ছিলে অপরাধী। আর যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল তারা, যারা অহঙ্কারী ছিল তাদেরকে বলবে, বরং এ ছিল তোমাদের দিন-রাতের চক্রান্ত, যখন তোমরা আমাদেরকে আদেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহকে অস্বীকার করি এবং তাঁর সমকক্ষ স্থির করি। আর তারা যখন আযাব দেখবে তখন তারা অনুতাপ গোপন করবে। আর আমি কাফিরদের গলায় শৃঙ্খল পরিয়ে দিব। তারা যা করত কেবল তারই প্রতিফল তাদেরকে দেওয়া হবে”। (সাবা: ৩১-৩৩)

এসব আয়াতে আমরা দেখলাম কীভাবে অনুগত অনুসারীরা কিয়ামতের সময় পরস্পরকে প্রত্যাখ্যান করবে। যারা আল্লাহ তা‘আলার দীনকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন পীর, দরবেশ, নেতা-নেত্রী, দেব-দেবীর অননুসরণ করেছে তাদের ও যারা অনুসৃত হয়েছে তাদের অবস্থা এমনই হবে কিয়ামতের ময়দানে। তারা সেদিন রাজাধিরাজ আল্লাহ তা‘আলার সম্মুখে পরস্পরকে প্রত্যাখ্যান করবে। একে অন্যকে দোষারোপ করে ঝগড়ায় লিপ্ত হবে।

খ. ফিরিশতাগণ মুশরিকদের থেকে দায়মুক্তির ঘোষণা দিবে:

আরবের মুশরিকরা ফিরিশতাদের-কে আল্লাহ তা‘আলার কন্যা বলে জ্ঞান করতো। তাই তারা ফিরিশতাদের পূজা করতো। কিয়ামতের দিনে এ পূজ্য ফিরিশতাগণ মুশরিকদের পুজার সাথে তাদের কোনো রকম সম্পর্ক ছিলো না বলে ঘোষণা দিবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَيَوۡمَ يَحۡشُرُهُمۡ جَمِيعٗا ثُمَّ يَقُولُ لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ أَهَٰٓؤُلَآءِ إِيَّاكُمۡ كَانُواْ يَعۡبُدُونَ ٤٠ قَالُواْ سُبۡحَٰنَكَ أَنتَ وَلِيُّنَا مِن دُونِهِمۖ بَلۡ كَانُواْ يَعۡبُدُونَ ٱلۡجِنَّۖ أَكۡثَرُهُم بِهِم مُّؤۡمِنُونَ

“আর স্মরণ কর, যেদিন তিনি তাদের সকলকে সমবেত করবেন তারপর ফিরিশতাদেরকে বলবেন, এরা কি তোমাদেরই পূজা করত? তারা (ফেরেশতারা) বলবে, আপনি পবিত্র মহান, আপনিই আমাদের অভিভাবক, তারা নয়। বরং তারা জিনদের পূজা করত। এদের অধিকাংশই তাদের প্রতি ঈমান রাখত”। (সাবা: ৪০-৪১)

فَٱلۡيَوۡمَ لَا يَمۡلِكُ بَعۡضُكُمۡ لِبَعۡضٖ نَّفۡعٗا وَلَا ضَرّٗا وَنَقُولُ لِلَّذِينَ ظَلَمُواْ ذُوقُواْ عَذَابَ ٱلنَّارِ ٱلَّتِي كُنتُم بِهَا تُكَذِّبُونَ

“ফলে আজ তোমাদের একে অপরের কোনো উপকার কিংবা অপকার করার ক্ষমতা কেউ রাখবে না। আর আমি যালিমদের উদ্দেশ্যে বলব, তোমরা আগুনের আযাব আস্বাদন কর যা তোমরা অস্বীকার করতে”। (সাবা: ৪২)

ফিরিশতাগণ বলবেন, সুবহানাল্লাহ! আমরা তো আপনারই বান্দা। আমরা আপনারই ইবাদত করি। এরা কীভাবে পূজা করলো? আসলে তারা শয়তানের পূজা করেছে। এর সাথে হে আল্লাহ আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। মুল কথা হলো: আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদত-বন্দেগী, পূজা-অর্চনা করা হয় তারা সেদিন কোনো উপকারে আসবে না। না পূজাকারী কোনো উপকার পাবে আর না পূজিত কোনো কাজে আসবে। সবাই সেদিন অসহায় হয়ে থাকবে।

ঘ. মূর্তিগুলো অক্ষমতা প্রকাশ করবে:

দুনিয়াতে যারা মূর্তি পুজা করেছিল কিয়ামতে সেসকল মূর্তিগুলো তাদের পূজারীদের কোনো রকম সাহায্য করতে অক্ষমতা প্রকাশ করবে। এ প্রসঙ্গে আল্লহ তা‘আলা বলেন,

وَيَوۡمَ يَقُولُ نَادُواْ شُرَكَآءِيَ ٱلَّذِينَ زَعَمۡتُمۡ فَدَعَوۡهُمۡ فَلَمۡ يَسۡتَجِيبُواْ لَهُمۡ وَجَعَلۡنَا بَيۡنَهُم مَّوۡبِقٗا

“আর যেদিন তিনি বলবেন, তোমরা ডাক আমার শরীকদের, যাদেরকে তোমরা (শরীক) মনে করতে। অতঃপর তারা তাদেরকে ডাকবে, কিন্তু তারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে না। আর আমি তাদের মধ্যে রেখে দেব ধ্বংসস্থল”। (আল-কাহাফ, আয়াত: ৫২) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَقِيلَ ٱدۡعُواْ شُرَكَآءَكُمۡ فَدَعَوۡهُمۡ فَلَمۡ يَسۡتَجِيبُواْ لَهُمۡ وَرَأَوُاْ ٱلۡعَذَابَۚ لَوۡ أَنَّهُمۡ كَانُواْ يَهۡتَدُونَ

“আর বলা হবে, তোমাদের দেবতাগুলোকে ডাক, অতঃপর তারা তাদেরকে ডাকবে, তখন তারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে না। আর তারা আযাব দেখতে পাবে। হায়, এরা যদি সৎপথ প্রাপ্ত হত!” (আল-ক্বাসাস: ৬৪)

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَلَقَدۡ جِئۡتُمُونَا فُرَٰدَىٰ كَمَا خَلَقۡنَٰكُمۡ أَوَّلَ مَرَّةٖ وَتَرَكۡتُم مَّا خَوَّلۡنَٰكُمۡ وَرَآءَ ظُهُورِكُمۡۖ وَمَا نَرَىٰ مَعَكُمۡ شُفَعَآءَكُمُ ٱلَّذِينَ زَعَمۡتُمۡ أَنَّهُمۡ فِيكُمۡ شُرَكَٰٓؤُاْۚ لَقَد تَّقَطَّعَ بَيۡنَكُمۡ وَضَلَّ عَنكُم مَّا كُنتُمۡ تَزۡعُمُونَ

“আর নিশ্চয় তোমরা এসেছ আমার কাছে একা একা, যেরূপ সৃষ্টি করেছি আমরা তোমাদেরকে প্রথমবার এবং আমরা তোমাদেরকে যা দান করেছি, তা তোমরা ছেড়ে রেখেছ তোমাদের পিঠের পেছনে। আর আমি তোমাদের সাথে তোমাদের সুপারিশকারীদের দেখছি না, যাদের তোমরা মনে করেছ যে, নিশ্চয় তারা তোমাদের মধ্যে (আল্লাহর) অংশীদার। অবশ্যই ছিন্ন হয়ে গেছে তোমাদের পরস্পরের সম্পর্ক। আর তোমরা যা ধারণা করতে, তা তোমাদের থেকে হারিয়ে গিয়েছে”। (আনআম: ৯৪)

কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা শির্ককারীদের বলবেন, দুনিয়াতে তোমরা যে সকল দেব-দেবী, মূর্তি, মানুষ, জন্তু-জানোয়ারকে আমার সাথে শরীক করতে তাদের থেকে আজকে সাহায্য চাও। তাদের-কে বলো তোমাদের উদ্ধার করতে। তখন শির্ককারীরা তাদের ডাকবে, কিন্তু তারা কোনো উত্তর দিবে না।

যারা ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর পুত্র বলে গ্রহণ করেছে তিনি তাদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিবেন-

وَإِذۡ قَالَ ٱللَّهُ يَٰعِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ ءَأَنتَ قُلۡتَ لِلنَّاسِ ٱتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَٰهَيۡنِ مِن دُونِ ٱللَّهِۖ قَالَ سُبۡحَٰنَكَ مَا يَكُونُ لِيٓ أَنۡ أَقُولَ مَا لَيۡسَ لِي بِحَقٍّۚ إِن كُنتُ قُلۡتُهُۥ فَقَدۡ عَلِمۡتَهُۥۚ تَعۡلَمُ مَا فِي نَفۡسِي وَلَآ أَعۡلَمُ مَا فِي نَفۡسِكَۚ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّٰمُ ٱلۡغُيُوبِ ١١٦ مَا قُلۡتُ لَهُمۡ إِلَّا مَآ أَمَرۡتَنِي بِهِۦٓ أَنِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمۡۚ وَكُنتُ عَلَيۡهِمۡ شَهِيدٗا مَّا دُمۡتُ فِيهِمۡۖ فَلَمَّا تَوَفَّيۡتَنِي كُنتَ أَنتَ ٱلرَّقِيبَ عَلَيۡهِمۡۚ وَأَنتَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ شَهِيدٌ

“আর আল্লাহ যখন বলবেন, হে মারইয়ামের পুত্র ঈসা, তুমি কি মানুষদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আমাকে ও আমার মাতাকে ইলাহরূপে গ্রহণ কর? সে বলবে, আপনি পবিত্র মহান, যার অধিকার আমার নেই তা বলা আমার জন্য সম্ভব নয়। যদি আমি তা বলতাম তাহলে অবশ্যই আপনি তা জানতেন। আমার অন্তরে যা আছে তা আপনি জানেন, আর আপনার অন্তরে যা আছে তা আমি জানি না; নিশ্চয় আপনি গায়েবী বিষয়সমূহে সর্বজ্ঞাত। আমি তাদেরকে কেবল তাই বলেছি, যা আপনি আমাকে আদেশ করেছেন যে, তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদাত কর। আর যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি তাদের ওপর সাক্ষী ছিলাম। অতঃপর যখন আপনি আমাকে উঠিয়ে নিলেন তখন আপনি ছিলেন তাদের পর্যবেক্ষণকারী। আর আপনি সব কিছুর উপর সাক্ষী”। (মায়েদা: ১১৬-১১৭)

ঙ. নিকটাত্মীয়গণ পরস্পর পরস্পরকে ভুলে যাবে: আল্লাহ তা’আলা বলেন,

یَوۡمَ یَفِرُّ الۡمَرۡءُ مِنۡ اَخِیۡهِ –      وَ اُمِّهٖ وَ اَبِیۡهِ –        وَ صَاحِبَتِهٖ وَ بَنِیۡهِ –      لِكُلِّ امۡرِئٍ مِّنۡهُمۡ یَوۡمَئِذٍ شَاۡنٌ یُّغۡنِیۡهِ

সেদিন ব্যক্তি তার ভাই থেকে পালিয়ে যাবে। পালিয়ে যাবে  তার মা ও তার বাবা থেকে। শুধু তাই নয় তার স্ত্রী ও তার সন্তান-সন্ততি থেকেও। সেদিন তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকবে। (আবাসা: ৩৪-৩৭)

৩. নেককারগণ ডান হাতে আমলনামা পাবে আর পাপীগণ পাবে বাম হাতে পীঠের পেছন দিকে: পবিত্র ‍কুরআনে এই প্রসঙ্গে এসেছে-

اَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ كِتٰبَهٗ بِیَمِیۡنِهٖ ۙ- فَسَوۡفَ یُحَاسَبُ حِسَابًا یَّسِیۡرًا- وَّ یَنۡقَلِبُ اِلٰۤی اَهۡلِهٖ مَسۡرُوۡرًا – وَ اَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ كِتٰبَهٗ وَرَآءَ ظَهۡرِهٖ- فَسَوۡفَ یَدۡعُوۡا ثُبُوۡرًا- وَّ یَصۡلٰی سَعِیۡرًا

অতঃপর যাকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে। অত্যন্ত সহজভাবেই তার হিসাব-নিকাশ করা হবে। আর সে তার পরিবার-পরিজনের কাছে আনন্দিত হয়ে ফিরে যাবে। আর যাকে তার ‘আমালনামা তার পিঠের পিছন দিক থেকে দেয়া হবে। সে মৃত্যুকে ডাকবে। এবং জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে। (ইনশিকাক: ৭-১২)

শুধু তাই নয় নেককারগণ ডান হাতে পেয়ে খুশিতে আশপাশের অন্যদেরকেও তার আমল নামা দেখাবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

فَاَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ كِتٰبَهٗ بِیَمِیۡنِهٖ ۙ فَیَقُوۡلُ هَآؤُمُ اقۡرَءُوۡا كِتٰبِیَهۡ 

তখন যাকে তার ‘আমালনামা তার ডান হাতে দেয়া হবে সে বলবে, ‘এই যে আমার ‘আমালানামা পড়ে দেখ। (আলহাক্কাহ: ১৯) বিপরীতে যাদের আমলনামা বাম হাতে দেওয়া হবে তারা লজ্জায় নিজেকে লোকানোর চেষ্টা করবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَ اَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ كِتٰبَهٗ بِشِمَالِهٖ ۬ۙ فَیَقُوۡلُ یٰلَیۡتَنِیۡ لَمۡ اُوۡتَ كِتٰبِیَهۡ

কিন্তু যার আমলনামা তার বাম হাতে দেয়া হবে সে বলবে, ‘হায়, আমাকে যদি আমার আমলনামা দেয়া না হত’!  (আল-হাক্কাহ: ২৫)

৪. ব্যক্তি দেখবে- তার আমলনামায় কোন কিছুই বাদ যাবে এবং কারোর প্রতি জুলমু ও করা হবেনা: আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَ كُلُّ شَیۡءٍ فَعَلُوۡهُ فِی الزُّبُرِ- وَ كُلُّ صَغِیۡرٍ وَّ كَبِیۡرٍ مُّسۡتَطَرٌ

আর তারা যা করেছে, সব কিছুই ‘আমলনামায়’ রয়েছে। ছোট আর বড় সবই লিপিবদ্ধ আছে। (কামার: ৫২-৫৩) অন্যত্র আছে-

وَ وُضِعَ الۡكِتٰبُ فَتَرَی الۡمُجۡرِمِیۡنَ مُشۡفِقِیۡنَ مِمَّا فِیۡهِ وَ یَقُوۡلُوۡنَ یٰوَیۡلَتَنَا مَالِ هٰذَا الۡكِتٰبِ لَا یُغَادِرُ صَغِیۡرَۃً وَّ لَا كَبِیۡرَۃً اِلَّاۤ اَحۡصٰهَا ۚ وَ وَجَدُوۡا مَا عَمِلُوۡا حَاضِرًا ؕ وَ لَا یَظۡلِمُ رَبُّكَ اَحَدًا .

আর আমলনামা রাখা হবে। তখন তুমি অপরাধীদেরকে দেখতে পাবে ভীত, তাতে যা রয়েছে তার কারণে। আর তারা বলবে, ‘হায় ধ্বংস আমাদের! কী হল এ কিতাবের! তা ছোট-বড় কিছুই ছাড়ে না, শুধু সংরক্ষণ করে’ এবং তারা যা করেছে, তা হাযির পাবে। আর তোমার রব কারো প্রতি যুলম করেন না।  (কাহাফ: ৪৯)

৫. উম্মতে মুহাম্মাদীর হিসাব হবে সর্বপ্রথম:

কিয়ামতের এ দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী মুসলিমদের বিশেষভাবে সম্মানিত করবেন। পূর্ববর্তী সকল উম্মতকে দাঁড় করিয়ে সর্ব প্রথম মুসলিম জাতির হিসাব-নিকাশ বিচার ফয়সালা করে দিবেন। যদিও মুসলিম জাতি দুনিয়াতে আভির্ভাবের দিক দিয়ে অন্যান্য জাতিগুলোর পরে এসেছে কিন্তু কিয়ামতের দিন তাদের নিষ্পত্তি আগে করা হবে। এটি উম্মতে এক বিশাল সম্মান ও পুরস্কার।

হাদীসে এসেছে: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

نَحْنُ الآخِرُونَ السَّابِقُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، بَيْدَ أَنَّهُمْ أُوتُوا الكِتَابَ مِنْ قَبْلِنَا، ثُمَّ هَذَا يَوْمُهُمُ الَّذِي فُرِضَ عَلَيْهِمْ، فَاخْتَلَفُوا فِيهِ، فَهَدَانَا اللَّهُ، فَالنَّاسُ لَنَا فِيهِ تَبَعٌ اليَهُودُ غَدًا، وَالنَّصَارَى بَعْدَ غَدٍ

“আমরা শেষে এসেছি কিন্তু কিয়ামতের দিন সকলের আগে থাকবো। যদিও অন্য সকল জাতি (ইয়াহূদী ও খৃষ্টান)কে গ্রন্থ দেওয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে, আমাদের গ্রন্থ দেওয়া হয়েছে তাদের পরে। অতঃপর জেনে রাখো এই (জুমু‘আর) দিনটি আল্লাহ আমাদের দান করেছেন। তিনি এ ব্যাপারে আমাদের সঠিক পথে দিশা দিয়েছেন। আর অন্য লোকেরা এ ব্যাপারে আমাদের পিছনে আছে। ইয়াহূদীরা জুমার পরের দিন (শনিবার) উদযাপন করে আর খৃষ্টানেরা তার পরের দিন (রবিবার) উদযাপন করে”। (বুখারী: ৮৭৬) অন্য হাদীসে এসেছে- আবু হুরায়রা ও হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরেকটি বর্ণনায় এসেছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

نَحْنُ الْآخِرُونَ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا، وَالْأَوَّلُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، الْمَقْضِيُّ لَهُمْ قَبْلَ الْخَلَائِقِ

“পৃথিবীতে বসবাসকারী জাতিগুলোর মধ্যে আমাদের আগমন সর্বশেষে আর কিয়ামতের দিনে আমাদের ফয়সালা করা হবে সকল সৃষ্টি জীবের পূর্বে”। (মুসলিম: ৮৫৬) হাদীসে আরো এসেছে: ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

نَحْنُ آخِرُ الْأُمَمِ، وَأَوَّلُ مَنْ يُحَاسَبُ، يُقَالُ: أَيْنَ الْأُمَّةُ الْأُمِّيَّةُ، وَنَبِيُّهَا؟ فَنَحْنُ الْآخِرُونَ الْأَوَّلُونَ

“আমরা হলাম জাতিসমূহের সর্বশেষ। কিন্তু কেয়ামতে আমাদের হিসাব সর্ব প্রথম করা হবে। তখন বলা হবে: উম্মী (আসল) জাতি ও তাদের নবী কোথায়? তাই আমরা সর্বশেষ অথচ (মর্যাদায়) প্রথম”। (ইবন মাজাহ: ৪২৯০)

৬. প্রথম যে বিষয়ে ফায়সালা হবে:

ক.আল্লাহর হকের ব্যাপারে: আল্লাহর হকের ব্যাপারে প্রথম হিসেব নেওয়া হবে সালাতের।  হাদীসে এসেছে: আনাস ইবন হাকীম আদ-দবী যিনি যিয়াদ অথবা ইবন যিয়াদের ভয়ে মদীনাতে এসেছিলেন ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর সাথে সাক্ষাত করলেন, তিনি বলেন, হে যুবক! আমি কি তোমাকে একটি হাদীস শুনাবো? আমি বললাম, অবশ্যই শুনাবেন। আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন! তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ أَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ النَّاسُ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ أَعْمَالِهِمُ الصَّلَاةُ»، قَالَ: ” يَقُولُ رَبُّنَا جَلَّ وَعَزَّ لِمَلَائِكَتِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ: انْظُرُوا فِي صَلَاةِ عَبْدِي أَتَمَّهَا أَمْ نَقَصَهَا؟ فَإِنْ كَانَتْ تَامَّةً كُتِبَتْ لَهُ تَامَّةً، وَإِنْ كَانَ انْتَقَصَ مِنْهَا شَيْئًا، قَالَ: انْظُرُوا هَلْ لِعَبْدِي مِنْ تَطَوُّعٍ؟ فَإِنْ كَانَ لَهُ تَطَوُّعٌ، قَالَ: أَتِمُّوا لِعَبْدِي فَرِيضَتَهُ مِنْ تَطَوُّعِهِ، ثُمَّ تُؤْخَذُ الْأَعْمَالُ عَلَى ذَاكُمْ.

“মানুষের আমলের মধ্যে প্রথম যে বিষয়টির হিসাব নেওয়া হবে তাহল, সালাত। আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা নিজে ভালোমত জানা সত্বেও তার ফিরিশতাদের বলবেন: আমার এ বান্দার সালাতের প্রতি তাকাও। সে সালাত পূর্ণ করেছে তা ত্রুটি করেছে? যদি সে তা পূর্ণ করে থাকে তার ব্যাপারে পূর্ণতা লেখে দাও। আর যদি সে ত্রুটি করে থাকে তাহলে তার নফল সালাতের প্রতি খেয়াল করো। তার নফল থেকে ফরজের অপূর্ণতা পূর্ণ করে দাও। এরপর তার সকল আমলই এভাবে মুল্যায়ন করা হবে”। (আবু দাউদ: ৮৬৪)

খ.বান্দার হকের ব্যাপারে:  হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

أَوَّلُ مَا يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي الدِّمَاءِ

“কিয়ামতের দিন প্রথম যে বিষয়ে মানুষের মধ্যে ফয়সালা করা হবে তা হবে রক্তপাতের বিচার”। (মুসলিম: ১৬৭৮)

বিশেষ জ্ঞাতব্য: একটি হাদীসে বলা হলো, প্রথম ফয়সালা হবে সালাত সম্পর্কে। এ হাদীসে বলা হলো, প্রথম ফয়সালা হবে রক্তপাত ও হত্যার।

এ দু’হাদীসের মধ্যে কোনো বৈপরিত্য নেই। প্রথম হাদীসে আল্লাহ তা‘আলার হক বা অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার হক বা অধিকার বিষয়ে প্রথম হিসাব হবে সালাতের। আর মানুষের অধিকার ক্ষুন্নের বিষয়ে প্রথম বিচার হবে রক্তপাত ঘটানো ও হত্যাকান্ডের।

৭. উম্মতে মুহাম্মদী কিয়ামতের দিন অন্য সকল জাতির শিরক ও কুফুরি মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে:

এটা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশেষ মর্যাদা। কিয়ামত দিবসে তারা সকল জাতির মিথ্যাচারের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে। কিয়ামতের দিন যখন সকল নবী রাসূল ও তাদের সম্প্রদায়কে একত্র করা হবে তখন ঐ সকল জাতিরা নবী রাসূলদের আহবানের বিষয়টি অস্বীকার করবে। তারা বলবে আমাদের কাছে নূহ আলাইহিস সালাম দাওয়াত পৌঁছে দেয়নি। আবার কেউ বলবে আপনি আমাদের কাছে হুদ, সালেহ, শুআইব কে পাঠিয়েছিলেন হয়ত কিন্তু তারা আমাদের কাছে আপনার বাণী পৌঁছে দেয়নি। এভাবে তারা তাদের নবী রাসূলদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে নিজেদের বাঁচার তাগিদে। তখন উম্মতে মুহাম্মাদী সকল নবীদের পক্ষে আর তাদের মিথ্যাবাদী উম্মতদের বিপক্ষে স্বাক্ষী দিবে।

হাদীসে এসেছে: আবু সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

يُجَاءُ بِنُوحٍ يَوْمَ القِيَامَةِ، فَيُقَالُ لَهُ: هَلْ بَلَّغْتَ؟ فَيَقُولُ: نَعَمْ، يَا رَبِّ، فَتُسْأَلُ أُمَّتُهُ: هَلْ بَلَّغَكُمْ؟ فَيَقُولُونَ: مَا جَاءَنَا مِنْ نَذِيرٍ، فَيَقُولُ: مَنْ شُهُودُكَ؟ فَيَقُولُ: مُحَمَّدٌ وَأُمَّتُهُ، فَيُجَاءُ بِكُمْ، فَتَشْهَدُونَ “، ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ {وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا} [البقرة: 143]- قَالَ: عَدْلًا – {لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ، وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا

“কিয়ামতের দিন নূহ কে ডাকা হবে। তাকে প্রশ্ন করা হবে, তুমি কি তোমার দায়িত্ব পালন করেছো? সে বলবে, হ্যাঁ, হে প্রভূ। এরপর তার জাতিকে প্রশ্ন করা হবে, সে কি তোমাদের কাছে আমার বাণী পৌঁছে দিয়েছে? তখন তারা বলবেম না, আমাদের কাছে কোন সতর্ককারী আসেনি। তখন আল্লাহ নূহকে বলবেন, তোমার স্বাক্ষী কারা? সে উত্তর দিবে, মুহাম্মাদ ও তার উম্মত। তখন তোমাদের ডাকা হবে আর তোমরা তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। এ কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতটি পাঠ করলেন: আর এমনি ভাবে তোমাদের আমি মধ্যবর্তী (ন্যায় পরায়ণ) জাতি হিসাবে সৃষ্টি করেছি। যাতে তোমরা মানুষের উপর স্বাক্ষী হতে পারো আর রাসূল তোমাদের উপর স্বাক্ষী হবেন”। (বুখারী: ৭৩৪৯)

আর আবু সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«يَجِيءُ النَّبِيُّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَمَعَهُ الرَّجُلُ، وَالنَّبِيُّ وَمَعَهُ الرَّجُلَانِ، وَأَكْثَرُ مِنْ ذَلِكَ، فَيُدْعَى قَوْمُهُ، فَيُقَالُ لَهُمْ: هَلْ بَلَّغَكُمْ هَذَا؟ فَيَقُولُونَ: لَا. فَيُقَالُ لَهُ: هَلْ بَلَّغْتَ قَوْمَكَ؟ فَيَقُولُ: نَعَمْ. فَيُقَالُ لَهُ: مَنْ يَشْهَدُ لَكَ؟ فَيَقُولُ: مُحَمَّدٌ وَأُمَّتُهُ. فَيُدْعَى مُحَمَّدٌ وَأُمَّتُهُ، فَيُقَالُ لَهُمْ: هَلْ بَلَّغَ هَذَا قَوْمَهُ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ. فَيُقَالُ: وَمَا عِلْمُكُمْ؟ فَيَقُولُونَ: جَاءَنَا نَبِيُّنَا، فَأَخْبَرَنَا: أَنَّ الرُّسُلَ قَدْ بَلَّغُوا، فَذَلِكَ قَوْلُهُ “: {وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا} [البقرة: 143] قَالَ: ” يَقُولُ: عَدْلًا “، {لِتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ، وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا

“কিয়ামতের দিন নবীদের ডাকা হবে। কারো সাথে একজন অনুসারী থাকবে কারো সাথে থাকবে দুজন আবার কারো সাথে থাকবে তিন জন বা এর বেশি। তাদের জাতিকে ডাকা হবে। তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, এ ব্যক্তি কি তোমাদের কাছে আমার বাণী পৌঁছে দিয়েছিল? তারা উত্তর দিবে, না, আমাদের কাছে আপনার বাণী পৌঁছে দেয়নি। তখন নবীকে প্রশ্ন করা হবে তুমি কি আমার বাণী পৌঁছে দিয়েছো? সে বলবে, হ্যা, দিয়েছি। তখন তাকে বলা হবে তোমার পক্ষে কে আছে স্বাক্ষী? তখন নবী বলবেন, আমার পক্ষে স্বাক্ষী আছে মুহাম্মাদ ও তাঁর উম্মত। তখন মুহাম্মাদ ও তার অনুসারীদের ডাকা হবে। তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এ ব্যক্তি কি তার জাতির কাছে আমার বাণী পৌঁছে দিয়েছে? তখন তারা বলবে, হ্যাঁ, সে তার জাতির কাছে আপনার বাণী পৌঁছে দিয়েছে। তখন তাদের প্রশ্ন করা হবে তোমরা এটা কীভাবে জানলে? তারা উত্তর দিবে, আমাদের কাছে আমাদের নবী এসেছিলেন, তিনি আমাদের বলেছেন, এ নবী তার জাতির কাছে আপনার বাণী পৌঁছে দিয়েছে। এটা হলো আল্লাহ তা‘আলার সেই বাণীর প্রতিফলন: আর এমনি ভাবে তোমাদের আমি মধ্যবর্তী (ন্যায়পরায়ণ) জাতি হিসাবে সৃষ্টি করেছি। যাতে তোমরা মানুষের ওপর স্বাক্ষী হতে পারো আর রাসূল তোমাদের ওপর স্বাক্ষী হবেন”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৪৩] (মুসনাদে আহমাদ: ১১৫৫৮)

৮. পাঁচটি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর গোটা মানবজাতিকে দিতে হবে:

আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لاَ تَزُولُ قَدَمُ ابْنِ آدَمَ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ، عَنْ عُمُرِهِ فِيمَ أَفْنَاهُ، وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَ أَبْلاَهُ، وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ، وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ.

“পাঁচটি প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার আগে কোনো মানব সন্তান কিয়ামতের দিন পা নাড়াতে পারবে না। তাকে প্রশ্ন করা হবে জীবন সম্পর্কে; সে কি কাজে আয়ু শেষ করেছে? প্রশ্ন করা হবে তার যৌবন সম্পর্কে ; কি কাজে সে তাকে বার্ধক্যে পৌঁছে দিয়েছে? প্রশ্ন করা হবে তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে; কীভাবে সে তা আয় করেছে আর কি কাজে তা ব্যয় করেছে? আর প্রশ্ন করা হবে সে যা জ্ঞান অর্জন করেছে সে মোতাবেক কাজ করেছে কি না?”(তিরিমিজী: ২৪১৬)

৯. যার হিসাব পর্যালোচনা করা হবে তাকে আযাব দেওয়া হবে:

হাদীসে এসেছে: উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لَيْسَ أَحَدٌ يُحَاسَبُ يَوْمَ القِيَامَةِ إِلَّا هَلَكَ» فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَلَيْسَ قَدْ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: {فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَابًا يَسِيرًا} [الانشقاق: 8] فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّمَا ذَلِكِ العَرْضُ، وَلَيْسَ أَحَدٌ يُنَاقَشُ الحِسَابَ يَوْمَ القِيَامَةِ إِلَّا عُذِّبَ»

“কিয়ামতের দিন যার হিসাব তলব করা হবে সেই ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি (আয়েশা) তখন বললাম, আল্লাহ তা‘আলা কি বলেননি: আর যার ডান হাতে আমল নামা দেওয়া হবে তার হিসাব নেওয়া হবে সহজ ভাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন: এখানে আমলের হিসাব প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। যার হিসাবেই জওয়াব তলব করা হবে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে”। (সহীহ বুখারী: ৬৫৩৭)

১০. অপরাধীদের হাত পা ও গায়ে চামড়া তাদের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিবে:

হিসাব নিকাশ শুরু করার পর যারা অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হবে তারা তাদের পাপকে অস্বীকার করতে শুরু করবে। তখন তাদের নিজেদের অঙ্গ প্রতঙ্গ তাদের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য প্রদান করবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

 اَلۡیَوۡمَ نَخۡتِمُ عَلٰۤی اَفۡوَاهِهِمۡ وَ تُكَلِّمُنَاۤ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ تَشۡهَدُ اَرۡجُلُهُمۡ بِمَا كَانُوۡا یَكۡسِبُوۡنَ

সেদিন আমি তাদের মুখে সীল মোহর লাগিয়ে দেব, তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে, আর তারা যা করত সে সম্পর্কে তাদের পাগুলো সাক্ষ্য দেবে। (ইয়াসিন: ৬৫)

শুধু তাই নয়, তাদের শরীরের চামড়াও তাদের বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিবে। এই প্রসঙ্গে  আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَ قَالُوۡا لِجُلُوۡدِهِمۡ لِمَ شَهِدۡتُّمۡ عَلَیۡنَا ؕ قَالُوۡۤا اَنۡطَقَنَا اللّٰهُ الَّذِیۡۤ اَنۡطَقَ كُلَّ شَیۡءٍ

তারা তাদের চামড়াকে বলবে- আমাদের বিরুদ্ধে কেন সাক্ষ্য দিচ্ছ? তারা উত্তর দিবে- আল্লাহ আমাদেরকে কথা বলার শক্তি দিয়েছেন, যিনি সব কিছুকেই (আজ) কথা বলার শক্তি দিয়েছেন। (হামিম সিজদা: ২১)

১১. সেদিন আল্লাহর আদালতে আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে কোনো দোভাষী কিংবা উকিল থাকবে না:

সেদিন আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দার সাথে সরাসরি কথা বলবেন। কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হবে না।হাদীসে এসেছে: আদী ইবন হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَا مِنْكُمْ أَحَدٌ إِلَّا سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تُرْجُمَانٌ، فَيَنْظُرُ أَيْمَنَ مِنْهُ فَلاَ يَرَى إِلَّا مَا قَدَّمَ مِنْ عَمَلِهِ، وَيَنْظُرُ أَشْأَمَ مِنْهُ فَلاَ يَرَى إِلَّا مَا قَدَّمَ، وَيَنْظُرُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَلاَ يَرَى إِلَّا النَّارَ تِلْقَاءَ وَجْهِهِ، فَاتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ

“তোমাদের মধ্যে প্রতিটি ব্যক্তি সেদিন আল্লাহ তা‘আলার সাথে সরাসরি কথা বলবে। কোনো দোভাষী বা মধ্যস্থ থাকবে না। মানুষ তখন তার ডান দিকে তাকাবে দেখতে পাবে শুধু তাদের কর্ম। আর বাম দিকে তাকাবে দেখবে শুধু নিজ কর্ম। সামনের দিকে তাকাবে দেখবে শুধু জাহান্নামের আগুন। কাজেই তোমরা আগুন থেকে সাবধান হও নিজেদের বাঁচাও যদি একটি খেজুরের টুকরা দান করার বিনিময়েও হয়”।(বুখারী: ৭৫১২)

১২. ঈমানদার অনেক পাপীকে আল্লাহ নিজ ক্ষমতাবলে ক্ষমা করে দিবেন:

অনেক ঈমানদার মানুষ যারা পাপাচারে লিপ্ত হয়েছিল আল্লাহ তাদের পাপগুলো স্মরণ করিয়ে দিবেন ও ক্ষমা করে জান্নাত দান করবেন। হাদীসে এসেছে: আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,

إِنَّ اللَّهَ يُدْنِي المُؤْمِنَ، فَيَضَعُ عَلَيْهِ كَنَفَهُ وَيَسْتُرُهُ، فَيَقُولُ: أَتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا، أَتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا؟ فَيَقُولُ: نَعَمْ أَيْ رَبِّ، حَتَّى إِذَا قَرَّرَهُ بِذُنُوبِهِ، وَرَأَى فِي نَفْسِهِ أَنَّهُ هَلَكَ، قَالَ: سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ فِي الدُّنْيَا، وَأَنَا أَغْفِرُهَا لَكَ اليَوْمَ، فَيُعْطَى كِتَابَ حَسَنَاتِهِ، وَأَمَّا الكَافِرُ وَالمُنَافِقُونَ، فَيَقُولُ الأَشْهَادُ: {هَؤُلاَءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى رَبِّهِمْ أَلاَ لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ.

“আল্লাহ ঈমানদারদের কাছাকাছি হবেন। নিজের উপর একটা পর্দা রেখে দিবেন। আর তাকে বলবেন, তুমি কি সেই পাপটি সম্পর্কে জানো? সেই পাপটির কথা কি তোমার মনে আছে? সে উত্তরে বলবে, হ্যা, প্রভূ। এভাবে সে সকল পাপের কথা স্বীকার করবে। আর ধারনা করবে আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। আল্লাহ তা‘আলা তখন তাকে বলবেন, আমি দুনিয়াতে তোমার পাপগুলো গোপন রেখেছি আর আজ তা ক্ষমা করে দিলাম। এ কথা বলে তার নেক আমলের দফতর তাকে দেওয়া হবে। আর যারা কাফির বা মুনাফিক সকলের সামনে তাদের ডাকা হবে। ফিরিশতারা বলবে, এরাইতো তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে। জালিমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত”। (বুখারী: ২৪৪১)

উপসংহার

হিসাব-নিকাশের ময়দান হবে ন্যায়বিচারের সর্বোচ্চ উদাহরণ, যেখানে সামান্যতম অন্যায়ও লুকিয়ে রাখা যাবে না। এই বিচার হবে এমন এক মহান কর্তৃপক্ষের সামনে, যিনি সবকিছু জানেন, দেখেন এবং সর্বশক্তিমান।

যারা ঈমান ও সৎকর্ম নিয়ে জীবনের পথ চলেছে, তাদের জন্য থাকবে সুসংবাদ—তাদের আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে, তারা সহজ হিসাব পাবে এবং জান্নাতের দিকে আহ্বান করা হবে। পক্ষান্তরে, যারা অহংকার, অবাধ্যতা ও গুনাহর পথে ছিল, তারা কঠিন বিচারের মুখোমুখি হবে, এবং তাদের জন্য থাকবে ভয়ংকর শাস্তি।

এই আলোচনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, এখনই আমাদের হিসাব-নিকাশের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। আমাদের প্রতিটি কাজের জন্য একদিন আমরা জবাবদিহি করবো। তাই আল্লাহর ভয় অন্তরে রেখে, সৎ আমলের মাধ্যমে আমরা সেই দিনের জন্য প্রস্তুত হই। আল্লাহ আমাদের সহজ হিসাবের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং জান্নাতের অধিকারী বানান। আমীন!

উপরোক্ত বয়ানের আরবী অনুবাদ (সংক্ষিপ্ত ও মূলবক্তব্য)

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ ، أَمَّا بُعْدُ . . . . . . . . . . . . . . .

أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامُ

مَوْضُوعُنَا اليَوْمِ: اَلرِّحْلَةُ إِلَى الْآخِرَةِ: اَلْحَلْقَةُ السَّادِسَةُ: حِسَابُ الأَعْمَالِ والنِّقَاشُ:

يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى فِي الْقُرْآنِ الْكَرِيمِ بِوُضُوحٍ: فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ – وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ”

أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامُ- ألآنَ أُلْقِي أَمَامَكُمْ خُطْبَةً وَجِيْزَةً عَنْ أَحْوَالِ حِسَابُ أَعْمَالِنَا فِي يَوْمِ الْحَشْرِ.

أَوَّلًا. اَلْقَادَةُ يَرْفُضُونَ الْأَتْبَاعَ: كَمَا قَالَ اللهُ تَعَالَى فِي القُرْآنِ: إِذۡ تَبَرَّأَ ٱلَّذِينَ ٱتُّبِعُواْ مِنَ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُواْ وَرَأَوُاْ ٱلۡعَذَابَ وَتَقَطَّعَتۡ بِهِمُ ٱلۡأَسۡبَابُ – وَقَالَ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُواْ لَوۡ أَنَّ لَنَا كَرَّةٗ فَنَتَبَرَّأَ مِنۡهُمۡ كَمَا تَبَرَّءُواْ مِنَّاۗ كَذَٰلِكَ يُرِيهِمُ ٱللَّهُ أَعۡمَٰلَهُمۡ حَسَرَٰتٍ عَلَيۡهِمۡۖ وَمَا هُم بِخَٰرِجِينَ مِنَ ٱلنَّارِ .

 ثَانِيًا. وَيُنَادِي الْمَلَائِكَةُ بِالْخَلَاصِ مِنَ الْمُشْرِكِينَ: وَيَوۡمَ يَحۡشُرُهُمۡ جَمِيعٗا ثُمَّ يَقُولُ لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ أَهَٰٓؤُلَآءِ إِيَّاكُمۡ كَانُواْ يَعۡبُدُونَ ٤٠ قَالُواْ سُبۡحَٰنَكَ أَنتَ وَلِيُّنَا مِن دُونِهِمۖ بَلۡ كَانُواْ يَعۡبُدُونَ ٱلۡجِنَّۖ أَكۡثَرُهُم بِهِم مُّؤۡمِنُونَ .

ثَالِثًا. اَلتَّمَاثِيلُ سَتُعَبِّرُ عَنِ الْإِعَاقَةِ: كَمَا قَالَ اللهُ تَعَالَى فِي القُرْآنِ: وَقِيلَ ٱدۡعُواْ شُرَكَآءَكُمۡ فَدَعَوۡهُمۡ فَلَمۡ يَسۡتَجِيبُواْ لَهُمۡ وَرَأَوُاْ ٱلۡعَذَابَۚ لَوۡ أَنَّهُمۡ كَانُواْ يَهۡتَدُونَ .

رَابِعًا:  وَالْأَقَارِبُ يَنْسَوْنَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا: كَمَا قَالَ اللهُ تَعَالَى فِي القُرْآنِ:  یَوۡمَ یَفِرُّ الۡمَرۡءُ مِنۡ اَخِیۡهِ –      وَ اُمِّهٖ وَ اَبِیۡهِ –        وَ صَاحِبَتِهٖ وَ بَنِیۡهِ –      لِكُلِّ امۡرِئٍ مِّنۡهُمۡ یَوۡمَئِذٍ شَاۡنٌ یُّغۡنِیۡهِ .

  خَامِسًا: فَالْأَبْرَارُ يَأْخُذُونَ أَعْمَالَهُمْ بِأَيْدِيهِمْ الْيُمْنَى، وَالْخَاطِئُونَ يَأْخُذُونَ أَعْمَالَهُمْ بِأَيْدِيهِمْ الْيُسْرَى مِنْ وَرَاءِ ظُهُورِهِمْ: كَمَا قَالَ اللهُ تَعَالَى فِي القُرْآنِ:  اَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ كِتٰبَهٗ بِیَمِیۡنِهٖ ۙ- فَسَوۡفَ یُحَاسَبُ حِسَابًا یَّسِیۡرًا- وَّ یَنۡقَلِبُ اِلٰۤی اَهۡلِهٖ مَسۡرُوۡرًا – وَ اَمَّا مَنۡ اُوۡتِیَ كِتٰبَهٗ وَرَآءَ ظَهۡرِهٖ- فَسَوۡفَ یَدۡعُوۡا ثُبُوۡرًا- وَّ یَصۡلٰی سَعِیۡرًا.

سَادِسًا: فَيَرَى الْإِنْسَانُ أَنَّهُ لَنْ يُتْرَكَ شَيْءٌ مِنْ أَعْمَالِهِ وَلَنْ يُظْلَمَ عَلَى أَحَدٍ أَيْضًا.  كَمَا قَالَ اللهُ تَعَالَى فِي القُرْآنِ:  وَ وُضِعَ الۡكِتٰبُ فَتَرَی الۡمُجۡرِمِیۡنَ مُشۡفِقِیۡنَ مِمَّا فِیۡهِ وَ یَقُوۡلُوۡنَ یٰوَیۡلَتَنَا مَالِ هٰذَا الۡكِتٰبِ لَا یُغَادِرُ صَغِیۡرَۃً وَّ لَا كَبِیۡرَۃً اِلَّاۤ اَحۡصٰهَا ۚ وَ وَجَدُوۡا مَا عَمِلُوۡا حَاضِرًا ؕ وَ لَا یَظۡلِمُ رَبُّكَ اَحَدًا .

سَابِعًا. يَجِبَ عَلَى الْبَشَرِيَّةِ جَمْعَاءَ أَنْ تُجِيْبَ عَلَى خَمْسَةِ أَسْئِلَةٍ أَسَاسِيَّةٍ: كَمَا جَاءَ فِي الحَدِيْثِ: لاَ تَزُولُ قَدَمُ ابْنِ آدَمَ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ، عَنْ عُمُرِهِ فِيمَ أَفْنَاهُ، وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَ أَبْلاَهُ، وَمَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ، وَمَاذَا عَمِلَ فِيمَا عَلِمَ.

وَأَخِيْرًا سَتَشْهَدُ عَلَى الْمُجْرِمِينَ أَيْدِيْهُمْ وَأَرْجُلُهُمْ وَجُلُودُهُمْ: كَمَا قَالَ اللهُ تَعَالَى فِي القُرْآنِ: اَلۡیَوۡمَ نَخۡتِمُ عَلٰۤی اَفۡوَاهِهِمۡ وَ تُكَلِّمُنَاۤ اَیۡدِیۡهِمۡ وَ تَشۡهَدُ اَرۡجُلُهُمۡ بِمَا كَانُوۡا یَكۡسِبُوۡنَ.

بَارَكَ اللَّهُ لِي وَلَكُمْ فِي الْقُرْآنِ الْعَظِيمِ، وَنَفَعَنِي وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيهِ مِنَ الْايَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيمِ. أَقُولُ قَوْلِي هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيمَ الْجَلِيل، لِيْ وَلَكُمْ وَلِسَائِرِ الْمُسْلِمِينَ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ فَاسْتَغْفِرُوه أَنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.

সংকলন, সম্পাদনা, পরিমার্জন ও আরবী তরজমা: ইমরান মাহমুদ (পিএইচডি গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাবি)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore

Scroll to Top