ভূমিকা:
মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার সঙ্গে সব জাগতিক সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। তবে তার পরিবার ও ওয়ারিশদের জন্য কিছু নৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক দায়িত্ব থেকে যায়। ইসলামিক শরীয়াহ্তে মৃত ব্যক্তির প্রতি ওয়ারিশদের করণীয় বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। এগুলো শুধু মৃতের প্রতি দায়িত্বপালনই নয়, বরং আল্লাহর আদেশ পালনেরও একটি অংশ।
মৃত্যুর পর প্রাথমিকভাবে ওয়ারিশদের করণীয় হলো মৃত ব্যক্তির জানাজা, দাফন, এবং সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন। এছাড়াও, ঋণ পরিশোধ, আমানত ফেরত দেওয়া, এবং মৃত ব্যক্তির আত্মার মাগফিরাত কামনার জন্য দোয়া করা তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এসব করণীয় যথাযথভাবে পালন করলে ওয়ারিশরা মৃত ব্যক্তির প্রতি তাদের অধিকার ও দায়িত্ব পালন করতে পারে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে।
এই আলোচনায় আমরা ওয়ারিশদের করণীয় বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরব, যা ইসলামি শিক্ষা ও শরীয়াহ্র আলোকে নির্ধারিত।
ওয়ারিশদের করণীয়সমূহ:
সধারণত মৃত্যুর পর পাঁচটি কাজ দ্রুত সম্পাদন করতে হয়। যথা গোসল, কাফন, জানাযা, জানাযা বহন ও দাফন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
أَسْرِعُوا بِالْجِنَازَةِ، فَإِنْ تَكُ صَالِحَةً فَخَيْرٌ تُقَدِّمُوْنَهَا إِلَيْهِ، وَإِنْ يَكُ سِوَى ذَلِكَ فَشَرٌّ تَضَعُوْنَهُ عَنْ رِقَابِكُمْ
‘তোমরা জানাযা করে দ্রুত লাশ দাফন কর। কেননা যদি মৃত ব্যক্তি পুণ্যবান হয়, তবে তোমরা ‘ভাল’-কে দ্রুত কবরে সমর্পণ কর। আর যদি অন্যরূপ হয়, তাহ’লে ‘মন্দ’-কে দ্রুত তোমাদের কাঁধ থেকে নামিয়ে দাও’। (মিশকাত: ১৬৪৬)
১. মৃত ব্যক্তির গোসল সম্পন্ন করা:
গোসলের বিধান:
– মাইয়েতের দ্রুত গোসল ও কাফন-দাফনের ব্যবস্থা নেওয়া সুন্নাত। (বুখারি: ১৩১৫)
– গোসলের সময় পর্দার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
– পূর্ণ শালীনতা ও পরহেযগারীর সাথে কুলপাতা দেওয়া পানি বা সুগন্ধি সাবান দিয়ে সুন্দরভাবে গোসল করাবে। হাদীসে এসেছে-
أَنَّ أُمَّ عَطِيَّةَ الأَنْصَارِيَّةَ، قَالَتْ دَخَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حِينَ تُوُفِّيَتِ ابْنَتُهُ فَقَالَ ” اغْسِلْنَهَا ثَلاَثًا أَوْ خَمْسًا أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكِ إِنْ رَأَيْتُنَّ ذَلِكِ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ وَاجْعَلْنَ فِي الآخِرَةِ كَافُورًا أَوْ شَيْئًا مِنْ كَافُورٍ فَإِذَا فَرَغْتُنَّ فَآذِنَّنِي
উম্মে আতিয়া আনাসারিয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা ইন্তিকাল করলে আমাদের কাছে এলেন এবং বললেন, তোমরা তাকে পানি ও কুলপাতা দিয়ে গোসল করিয়ে দাও। তিন বা পাঁচবার কিংবা তোমরা ভাল মনে করলে আরো অধিকবার। আর শেষের বার তোমরা কর্পূর মিশ্রিত করবে। রাবী বলেন, কিংবা তিনি বলেছেন, কিছু কর্পূর মিশাবে। তোমরা গোসল সমাপ্ত করলে আমাকে জানাবে। (নাসাঈ: ১৮৮৪)
– সুন্নাতী তরীকা মোতাবেক গোসল করাতে সক্ষম এমন নিকটাত্মীয় বা অন্য কেউ মাইয়েতকে গোসল করাবেন।
– পুরুষ পুরুষকে ও মহিলা মহিলা মাইয়েতকে গোসল দিবেন। তবে মহিলাগণ শিশুকে গোসল দিতে পারবেন। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৬৮)
– কাফির ও মুশরিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধে নিহত শহীদকে গোসল দিতে হয় না। (তালখীছ, পৃ. ২৮-৩৩)
– পানি না পাওয়া গেলে মাইয়েতকে তায়াম্মুম করাবে’।(ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৬৭)
গোসলের পদ্ধতি:
– বিসমিল্লাহ’ বলে ডান দিক থেকে ওযূর অঙ্গ সমূহ প্রথমে ধৌত করবে।
– ধোয়ানোর সময় হাতে ভিজা ন্যাকড়া রাখবে।
– পূর্ণ পর্দার সাথে মাইয়েতের দেহ থেকে পরনের কাপড় খুলে নেবে।
– গোসলের সময় লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না বা খালি হাতে স্পর্শ করবে না।
– তিনবার বা তিনের অধিক বেজোড় সংখ্যায় সমস্ত দেহে পানি ঢালবে।
– গোসল শেষে কর্পূর বা কোন সুগন্ধি লাগাবে।
– মৃত্যু ব্যক্তি মহিলা হ’লে চুল খুলে দেবে। অতঃপর বেণী করে তিনটি ভাগে পিছন দিকে ছড়িয়ে দেবে। (তালখীছ, পৃ. ২৮-৩০)
২. মৃত ব্যক্তিকে কাফনের কাপড় পরিধান করানো:
বিধান ও পদ্ধতি:
– সাদা, সুতী ও সাধারণ মানের পরিষ্কার কাপড় দিয়ে কাফন দেওয়া।
– মাইয়েতের নিজস্ব সম্পদ থেকে কাফন দেওয়া কর্তব্য।
– তার ব্যবহৃত কাপড় দিয়েও কাফন দেওয়া যাবে।
– পুরুষ ব্যক্তির জন্য তিনটি কাপড় দিয়ে কাফন দিবে। একটি মাথা হ’তে পা ঢাকার মত বড় চাদর ও দু’টি ছোট কাপড়। অর্থাৎ একটি লেফাফা বা বড় চাদর। একটি তহবন্দ বা লুঙ্গী ও একটি ক্বামীছ বা জামা।
– কাপড়ের সংকট হলে তথা বাধ্যগত অবস্থায় একটি কাপড় দিয়ে কিংবা যতটুকু সম্ভব ততটুকু দিয়েই কাফন দিবে।
– কাফনের কাপড়ের অভাব ঘটলে এক কাফনে একাধিক মাইয়েতকে কাফন দেওয়া যাবে।
– মহিলার জন্য পাঁচ কাপড় দিয়ে কাফন দিবে। হাদীসে এসেছে-
أَنَّ لَيْلَى بِنْتَ قَانِفٍ الثَّقَفِيَّةَ، قَالَتْ: كُنْتُ فِيمَنْ غَسَّلَ أُمَّ كُلْثُومٍ بِنْتَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ وَفَاتِهَا، فَكَانَ أَوَّلُ مَا أَعْطَانَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْحِقَاءَ، ثُمَّ الدِّرْعَ، ثُمَّ الْخِمَارَ، ثُمَّ الْمِلْحَفَةَ، ثُمَّ أُدْرِجَتْ بَعْدُ فِي الثَّوْبِ الْآخَرِ، قَالَتْ: وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ عِنْدَ الْبَابِ مَعَهُ كَفَنُهَا يُنَاوِلُنَاهَا ثَوْبًا ثَوْبًا.
ছাকাফিয়া গোত্রের লায়লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা উম্মু কুলসুম (রাঃ) মারা গেলে যে মহিলা তাকে গোসল দেয় তার সাথে ’আমিও ছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে (কাফনের জন্য) প্রথমে তহবন্দ, তারপর কামীস, তারপর ওড়না, তারপর চাদর এবং অন্য একটি কাপড় দিলেন। যা দিয়ে লাশ পেচিয়ে দেয়া হলো। লায়লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফনের কাপড়সহ দরজার পাশেই বসা ছিলেন। তিনি সেখান থেকে একটি একটি করে কাপড়গুলো আমাদেরকে প্রদান করেন। (আবু দাউদ: ৩১৫৭)
– শহীদকে তার পরিহিত পোষাকে এবং মুহরিমকে তার ইহরামের দু’টি কাপড়েই কাফন দিবে।
– কাফনের পরে তিনবার সুগন্ধি ছিটাবে।
– তবে মুহরিমের কাফনে সুগন্ধি ছিটানো যাবে না। (বায়হাক্বী ৪/৭)
– মাইয়েতের নিজস্ব সম্পদ না থাকলে কিংবা তাতে কাফনের ব্যবস্থা না হ’লে কেউ দান করবে অথবা বায়তুল মাল থেকে বা সরকারী তহবিল থেকে তার ব্যবস্থা করতে হবে। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৭০)
৩. মৃত ব্যক্তির জন্য নামাজে যানাজা আদায় করা:
বিধান ও পদ্ধতি:
– রাসূলুল্লাহ (স.) তাঁর মসজিদের বাইরের নির্দিষ্ট স্থানে অধিকাংশ সময় নামাজে জানাযা পড়াতেন। (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৮২)
– তবে প্রয়োজনে মসজিদেও জায়েয আছে। হাদীসে এসেছে-
فَقَالَتْ)عَائِشَة(: وَاللَّهِ لَقَدْ صَلَّى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى ابْنَيْ بَيْضَاءَ فِي الْمَسْجِدِ: سُهَيْلٍ وَأَخِيهِ.
আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ’বায়যা’ নাম্নী মহিলার দু’ছেলে সুহায়ল ও তার ভাইয়ের জানাযার সালাত মসজিদে আদায় করিয়েছেন। (মিশকাত: ১৬৫৬) হযরত আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর জানাযা মসজিদের মধ্যে হয়েছিল। (বায়হাক্বী ৪/৫২)
– গোরস্থানের মধ্যে জানাযা না করা উচিৎ।(মিশকাত: ৭৩৭)
– উল্লেখ্য যে, লাশ পচে গেলে এবং দুর্গন্ধে কাছে দাঁড়ানো সম্ভব না হ’লে দাফন করার পরে কবরের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে জানাযা পড়া যাবে। (ফিক্বহুস সুন্নাহ: ১/২৮১)
বি.দ্র.
১. বর্তমান যুগে অনেকে দাফনের পরপরই পুনরায় হাত তুলে দলবদ্ধভাবে দো‘আ করেন। কেউ একই দিনে বা দু’একদিন পরে আত্মীয়-স্বজন ডেকে এনে মৃতের বাড়ীতে দো‘আর অনুষ্ঠান করেন। এগুলি নিঃসন্দেহে বিদ‘আত। জানা আবশ্যক যে, জানাযার ছালাতই হ’ল মৃতের জন্য একমাত্র দো‘আর অনুষ্ঠান। এটা ব্যতীত মুসলিম মাইয়েতের জন্য পৃথক কোন দো‘আর অনুষ্ঠান ইসলামী শরী‘আতে নেই।
২. জানাযার পরে বা দাফনের পূর্বে বর্তমানে রাষ্ট্রীয় সম্মানের নামে করুণ সুরে বিউগল বাজানো সহ যা কিছু করা হয়, সবটাই বিদ‘আত ও হারাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: «من نِيحَ عَلَيْهِ فَإِنَّهُ يُعَذَّبُ بِمَا نِيحَ عَلَيْهِ يَوْم الْقِيَامَة
‘যে মৃতের উপর বিলাপধ্বনি করা হয়, কবরে ও ক্বিয়ামতের দিন এজন্য তাকে আযাব দেওয়া হবে’। (বুখারি: ১২৯১)
বিধান ও পদ্ধতি:
– জানাযা কাঁধে বহন করা সুন্নাত।
– এ সময় মাথা সম্মুখ দিকে রাখবে।
– মৃতের পরিবারের লোকেরা ও নিকটাত্মীয়গণ এর প্রথম হকদার। এ দায়িত্ব কেবল পুরুষদের, মেয়েদের নয়। – জানাযার পিছে পিছে মেয়েদের যেতে নিষেধ করা হয়েছে। হাদীসে এসেছে-
قَالَتْ أُمُّ عَطِيَّةَ كُنَّا نُنْهَى عَنِ اتِّبَاعِ الْجَنَائِزِ
প্রখ্যাত নারী সাহাবিয়া উম্মু আত্বিয়্যাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে (মহিলাদেরকে) জানাযার অনুসরণ করতে (পিছনে যেতে) নিষেধ করা হত। (মুসলিম: ৯৩৮)
– ধূপ-ধুনা ইত্যাদি অগ্নিযুক্ত সুগন্ধি বহন করা যাবে না।
– সরবে যিকর, তাকবীর ও তেলাওয়াত বা অনর্থক কথাবার্তা বলা যাবে না। বরং মৃত্যুর চিন্তা করতে করতে চুপচাপ ভাবগম্ভীরভাবে মধ্যম গতিতে মাইয়েতের পিছে পিছে কবরের দিকে এগিয়ে যাবে।
– চলা অবস্থায় রাস্তায় (বিনা প্রয়োজনে) বসা যাবে না। আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণত। রাসূল সা. বলেন,
إِذَا رَأَيْتُمُ الْجَنَازَةَ فَقُومُوا فَمَنْ تَبِعَهَا فَلَا يَقْعُدْ حَتَّى تُوضَعَ
তোমরা যখন কোন লাশ দেখবে, দাঁড়িয়ে যাবে। যারা জানাযার সাথে থাকে তারা যেন (জানাযাহ্ লোকদের কাঁধ থেকে মাটিতে অথবা কবরে) রাখার আগে না বসে। (বুখারি: ১৩১০)
– মাইয়েতের পিছনে কাছাকাছি চলাই উত্তম। তবে প্রয়োজনে সম্মুখে ও ডানে-বামে চলা যাবে।
– কেউ গাড়ীতে বা বাহনে গেলে তাকে পিছে পিছেই যেতে হবে। হাদীসে এসেছে-
عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، وَأَحْسَبُ أَنَّ أَهْلَ زِيَادٍ أَخْبَرُونِي أَنَّهُ رَفَعَهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الرَّاكِبُ يَسِيرُ خَلْفَ الْجَنَازَةِ، وَالْمَاشِي يَمْشِي خَلْفَهَا، وَأَمَامَهَا، وَعَنْ يَمِينِهَا، وَعَنْ يَسَارِهَا قَرِيبًا مِنْهَا، وَالسِّقْطُ يُصَلَّى عَلَيْهِ، وَيُدْعَى لِوَالِدَيْهِ بِالْمَغْفِرَةِ وَالرَّحْمَةِ.
মুগিরা ইবনে শু’বা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বাহনে আরোহী ব্যক্তি লাশের পিছনে পিছনে চলবে এবং পায়ে হাটা ব্যক্তি লাশের পিছনে, সামনে, ডানে বামে এবং সাথে সাথেও যেতে পারবে। অপূর্ণাঙ্গভাবে প্রসবিত বাচ্চার জানাযা পড়তে হবে এবং তার পিতা-মাতার জন্য ক্ষমা ও রহমতের দু’আ করতে হবে। (আবু দাঊদ: ৩১৮০)
৫. মৃত ব্যক্তিকে দাফন তথা কবরস্থ করা:
বিধান ও পদ্ধতি:
– মুসলিম মাইয়েতকে মুসলিম কবরস্থানে দাফন করতে হবে, ইহুদী-নাছারা ও কাফের-মুশরিকদের সাথে নয়। যাতে তারা মুসলিম যিয়ারতকারীদের দো‘আ লাভে উপকৃত হন।
– রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে তাঁর শয়ন কক্ষে দাফন করা হয়েছিল। এটা ছিল তাঁর জন্য ‘খাছ’। তাছাড়া তাঁর পাশে তাঁর দুই মহান সাথীকে কবর দেওয়া হয়েছিল, যাতে কেউ পৃথকভাবে তাঁর কবরকে সিজদার স্থানে পরিণত করতে না পারে।
– যুদ্ধক্ষেত্রে মুসলমানগণ যেখানে শহীদ হবেন, সেখানেই কবরস্থ হওয়া সুন্নাত। (ফিক্বহুস সুন্নাহ: ১/৩০১-২)
– মুসলমান যেখানে মৃত্যুবরণ করেন, সেখানকার মুসলিম কবরস্থানে তাকে দাফন করা উচিৎ। তবে সঙ্গত কারণে অন্যত্র নেওয়া যাবে। (ফিক্বহুস সুন্নাহ: ৩০৩)
– কবর উত্তর-দক্ষিণে লম্বা, গভীর, প্রশস্ত, সুন্দর ও মধ্যস্থলে বিঘত খানেক উঁচু করে দু’দিকে ঢালু হওয়া বাঞ্ছনীয়; তবে অধিক উচু নয়।
– ‘লাহদ’ ও ‘শাক্ব’ দু’ধরনের কবর জায়েয আছে। যাকে এদেশে যথাক্রমে ‘পাশখুলি’ ও ‘বাক্স কবর’ বলা হয়। তবে ‘লাহদ’ উত্তম।
– মাইয়েতকে কবরে নামানোর দায়িত্ব পুরুষদের।
– মাইয়েতের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে নিকটবর্তীগণ ও সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তিগণ এই দায়িত্ব পালন করবেন।
– পায়ের দিক দিয়ে মোর্দাকে কবরে নামাবে (অসুবিধা হ’লে যেভাবে সুবিধা সেভাবে নামাবে)।
– কবরে শোয়ানোর সময় بِسْمِ اللهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ ‘বিসমিল্লা-হি ওয়া ‘আলা মিল্লাতে রাসূলিল্লা-হ’ (অর্থ: ‘আল্লাহর নামে ও আল্লাহর রাসূলের দ্বীনের উপরে’) বলবে।
– মোর্দাকে ডান কাতে ক্বিবলামুখী করে শোয়াবে। এই সময় কাফনের কাপড়ের গিরাগুলি খুলে দেবে। ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২৯০)
– কবর বন্ধ করার পরে উপস্থিত সকলে (বিসমিল্লাহ বলে) তিন মুঠি করে মাটি কবরের মাথার দিক থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে দেবে।
– দাফনের পরে মাইয়েতের ‘তাছবীত’ (التثبيت) অর্থাৎ মুনকার ও নাকীর (দু’জন ভয়ংকর ও অপরিচিত ফেরেশতা)-এর সওয়ালের জওয়াব দানের সময় যেন তিনি দৃঢ় থাকতে পারেন, সেজন্য সকলের দো‘আ করা উচিৎ। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
إِسْتَغْفِرُوْا لِأَخِيْكُمْ وَسَلُوا اللهَ لَهُ التَّثْبِيْتَ فَإِنَّهُ اَلْآنَ يُسْأَلُ
‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার দৃঢ় থাকার জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ কর। কেননা সত্বর সে জিজ্ঞাসিত হবে’। (আবূ দাঊদ: ৩২২১)
মৃত ব্যক্তির গোসল ও কাফন-দাফনের সাওয়াব: হাদীসে এসেছে-
أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” مَنْ شَهِدَ الْجَنَازَةَ حَتَّى يُصَلِّيَ عَلَيْهَا فَلَهُ قِيرَاطٌ، وَمَنْ شَهِدَ حَتَّى تُدْفَنَ كَانَ لَهُ قِيرَاطَانِ ”. قِيلَ وَمَا الْقِيرَاطَانِ قَالَ ” مِثْلُ الْجَبَلَيْنِ الْعَظِيمَيْنِ ”.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি মৃতের জন্য সালাত আদায় করা পর্যন্ত জানাযায় উপস্থিত থাকবে, তার জন্য এক কীরাত (সাওয়াব), আর যে ব্যাক্তি মৃতের দাফন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে তার জন্য দু’ কীরাত (সাওয়াব)। জিজ্ঞাসা করা হল দু’ কীরাত কি? তিনি বললেন, দু’ টি বিশাল পর্বত সমতুল্য। (বুখারি: ১২৪৫)
অপর এক হাদীসে এসেছে- রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিম মাইয়েতকে গোসল করালো। অতঃপর তার গোপনীয়তাসমূহ গোপন রাখলো, আল্লাহ তাকে চল্লিশ বার ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতের জন্য কবর খনন করল, অতঃপর দাফন শেষে তা ঢেকে দিল, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত পুরস্কার দিবেন জান্নাতের একটি বাড়ীর সমপরিমাণ, যেখানে আল্লাহ তাকে রাখবেন। যে ব্যক্তি মাইয়েতকে কাফন পরাবে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতের মিহি ও মোটা রেশমের পোষাক পরাবেন’। (বাইহাকি: ৩/৩৯৫)
৬. মৃত ব্যক্তির ওসিয়ত ও ঋণ পরিশোধ করা
মৃত ব্যক্তির যত ঋণ, তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে সেসবও পরিশোধ করে দিতে হবে। যে ওসিয়ত তিনি করে যান, তাও আদায় করতে হবে, তবে তা পুরো সম্পদ দিয়ে নয়, বরং সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে। দেনার তালিকায় মানুষের আদায়যোগ্য ঋণ যেমন থাকতে পারে, থাকতে পারে শরীয়তের কোনো বিধানও। এক সাহাবী হজ্ব আদায় না করেই ইন্তেকাল করেন, অথচ তার ওপর হজ্ব ফরয হয়েছিল। তার ছেলে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জানতে চাইলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার বাবা তো হজ্ব না করেই ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্ব আদায় করব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন-
أَرَأَيْتَ لَوْ كَانَ عَلَى أَبِيكَ دَيْنٌ أَكُنْتَ قَاضِيَهُ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: فَدَيْنُ اللهِ أَحَقّ.
বলো তো, তোমার বাবার যদি কোনো ঋণ থাকত, তবে কি তুমি তা আদায় করতে? সাহাবী বললেন, হাঁ, করতাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে আল্লাহ্র ঋণ আদায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ। (সুনানে নাসাঈ: ২৬৩৯)
একই রকম প্রশ্ন করেছিলেন এক নারী সাহাবী। তার মা হজ্বের মান্নত করার পর তা আদায় না করেই মারা যান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন-
حُجِّي عَنْهَا أَرَأَيْتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ أَكُنْتِ قَاضِيَةً؟ اقْضُوا اللهَ، فَاللهُ أَحَقّ بِالْوَفَاءِ.
তুমি তার পক্ষ থেকে হজ্ব আদায় করো। তোমার মায়ের কোনো ঋণ থাকলে তুমি কি তা আদায় করতে না? আল্লাহ্র ঋণ আদায় করো। আল্লাহ্র প্রাপ্য আদায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ। (সহীহ বুখারী: ১৮৫২)
হজ্ব ফরয হওয়ার পরও যদি আদায় না করেই কেউ মারা যায় তার উত্তরসূরিরা তা আদায়ের ব্যবস্থা করবে। তেমনি যদি কারও কাযা রোযা থেকে থাকে, নামায কাযা হয়ে থাকে, সেগুলোরও ফিদইয়া আদায় করবে। মান্নত থাকলে তা পুরা করবে।
৭. মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ সুষ্ঠু বন্টন করা:
কুরআন ও হাদীসের আলোকে ফারাইজ তথা মুসলিম বন্টননামা বিষয়ে অভিজ্ঞ আলেম কিংবা আইনজ্ঞ ব্যক্তির মাধ্যমে ওয়ারিশদের মাঝে মৃত ব্যক্তির সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির ইয়াতিম ও অবুঝ ওয়ারিশ থাকলে নিটকবর্তী অভিভাবকদের উপর আবশ্যক এই সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করা। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
فَاِنۡ اٰنَسۡتُمۡ مِّنۡهُمۡ رُشۡدًا فَادۡفَعُوۡۤا اِلَیۡهِمۡ اَمۡوَالَهُمۡ ۚ وَ لَا تَاۡكُلُوۡهَاۤ اِسۡرَافًا وَّ بِدَارًا اَنۡ یَّكۡبَرُوۡا ؕ وَ مَنۡ كَانَ غَنِیًّا فَلۡیَسۡتَعۡفِفۡ ۚ وَ مَنۡ كَانَ فَقِیۡرًا فَلۡیَاۡكُلۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ؕ فَاِذَا دَفَعۡتُمۡ اِلَیۡهِمۡ اَمۡوَالَهُمۡ فَاَشۡهِدُوۡا عَلَیۡهِمۡ ؕ وَ كَفٰی بِاللّٰهِ حَسِیۡبًا
অতঃপর যদি তাদের (ইয়াতিমদের) মধ্যে বিবেক-বুদ্ধি পরিদৃষ্ট হয় তাহলে তাদের ধন-সম্পত্তি তাদেরকে সমর্পণ কর; ইয়াতীমের ধন-সম্পদ অপব্যয় করনা অথবা তারা বড় হয়ে যাওয়ার ভয়ে দ্রুত আত্মসাৎ করনা এবং যে অভিভাবক ধনী সে যেন সংযত থাকে, আর যে দরিদ্র সে যেন ন্যায়সঙ্গতভাবে খায়। অতঃপর যখন তোমরা তাদের ধন-সম্পদ তাদের নিকট সোপর্দ করবে তখন তাদের উপর তোমরা সাক্ষী রাখবে। আর হিসাব গ্রহণকারী হিসেবে আল্লাহ যথেষ্ট। (নিসা: ৬)
৮. মৃত ব্যক্তির জন্য সওয়াব পৌঁছানো:
মৃত ব্যক্তির অধিকার আদায়ের জন্যে এ প্রক্রিয়াটি দীর্ঘস্থায়ী। ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে দান-সদকা যেমন করা যেতে পারে, এর পাশাপাশি কুরআন তিলাওয়াত, নফল নামায, রোযা, কুরবানী, হজ্ব ইত্যাদি সবই করা যেতে পারে। রাসূল সা. বলেন,
إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ.
মানুষ যখন মারা যায় তখন তার সব আমলই বন্ধ হয়ে যায়। ব্যতিক্রম কেবল তিনটি-সদকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম আর এমন নেককার সন্তান, যে তার জন্যে দুআ করবে। (মুসলিম: ১৬৩১)
পরিশেষে, মৃত্যু জীবনের একটি অবশ্যম্ভাবী অধ্যায়, যা শুধু ব্যক্তির জন্য নয়, তার পরিবার ও সমাজের জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের সূচনা। ইসলাম ওয়ারিশদের জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছে, যা মৃতের প্রতি শ্রদ্ধা, দায়িত্ববোধ এবং আত্মার মাগফিরাত নিশ্চিত করে। জানাজা ও দাফনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা, ঋণ পরিশোধ, ওয়াসিয়াত বাস্তবায়ন এবং সম্পদের সঠিক বণ্টন ওয়ারিশদের জন্য শুধু একটি কর্তব্য নয়, বরং এটি আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ।
এছাড়াও, মৃতের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করা, পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করা এবং কবর জিয়ারতের মাধ্যমে নিজের মৃত্যুর কথা স্মরণ করা, এসব কাজ ব্যক্তি ও সমাজের নৈতিক উন্নতির প্রমাণ। ইসলামের এই নির্দেশনাগুলো পালনের মাধ্যমে মৃতের প্রতি দায়বদ্ধতা সম্পন্ন হয় এবং জীবিতদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সুতরাং, ওয়ারিশদের উচিত এই করণীয়গুলো যথাযথভাবে পালন করা, যাতে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে এবং মৃতের আত্মা শান্তি পায়।
উপরোক্ত বয়ানের আরবী অনুবাদ (সংক্ষিপ্ত ও মূলবক্তব্য)
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ ، أَمَّا بُعْدُ . . . . . . . . . . . . . . .
أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامُ –
مَوْضُوعُنَا اليَوْمِ: اَلرِّحْلَةُ إِلَى الْآخِرَةِ: اَلْجُزْءَ الثَّانِي- مَا يَجِبُ عَلَى الوَرَثَةِ بَعْدَ الْمَوْتِ.
أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامُ – عِنْدَمَا يَمُوتُ الْإِنْسَانُ تَنْتَهِي كُلُّ الْعَلَاقَاتِ الدُّنْيَوِيَّةِ مَعَهُ. وَلَكِنْ هُنَاكَ مَسْؤُولِيَّاتٌ أَخْلَاقِيَّةٌ وَدِينِيَّةٌ وَاجْتِمَاعِيَّةٌ مُعَيَّنَةٌ تَقَعُ عَلَى أُسْرَتِهِ وَوَرَثَتِهِ. لَقَدْ جَاءَتِ الشَّرِيعَةُ الْإِسْلَامِيَّةُ بِإِرْشَادَاتٍ وَاضِحَةٍ بِشَأْنِ مَا يَجِبُ عَلَى الْوَرَثَةِ تُجَاهَ الْمُتَوَفَّى. فَهِيَ لَيْسَتْ وَاجِبًا تُجَاهَ الْمَوْتَى فَحَسْبَ، بَلْ هِيَ أَيْضًا جُزْءٌ مِنْ طَاعَةِ أَوَامِرِ اللَّهِ. كَمَا جَاءَ فِي الحَدِيْثِ: أَسْرِعُوا بِالْجِنَازَةِ، فَإِنْ تَكُ صَالِحَةً فَخَيْرٌ تُقَدِّمُوْنَهَا إِلَيْهِ، وَإِنْ يَكُ سِوَى ذَلِكَ فَشَرٌّ تَضَعُوْنَهُ عَنْ رِقَابِكُمْ . وَالْآنَ سَأُقَدِّمُ لَكُمْ بَعْضَ الْأُمُورِ الْمُهِمَّةِ لِلْوَرَثَةِ إِنْ شَاءَ اَللَّهُ.
أَوَّلًا. حُكْمُ تَغْسِيلِ الْمَيِّتِ: وَقَدْ وَرَدَ فِي الْحَدِيثِ- أَنَّ أُمَّ عَطِيَّةَ الأَنْصَارِيَّةَ، قَالَتْ دَخَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حِينَ تُوُفِّيَتِ ابْنَتُهُ فَقَالَ ” اغْسِلْنَهَا ثَلاَثًا أَوْ خَمْسًا أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكِ إِنْ رَأَيْتُنَّ ذَلِكِ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ وَاجْعَلْنَ فِي الآخِرَةِ كَافُورًا أَوْ شَيْئًا مِنْ كَافُورٍ فَإِذَا فَرَغْتُنَّ فَآذِنَّنِي.
ثَانِيًا. تَكْفِينُ الْمَيِّتِ: فِي هَذِهِ الْحَالَةِ ثَلَاثُ مَلَابِسَ لِلرِّجَالِ وَ خَمْسَةُ مَلَابِسَ لِلنِّسَاءِ. وَقَدْ وَرَدَ فِي الْحَدِيثِ- أَنَّ لَيْلَى بِنْتَ قَانِفٍ الثَّقَفِيَّةَ، قَالَتْ: كُنْتُ فِيمَنْ غَسَّلَ أُمَّ كُلْثُومٍ بِنْتَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ وَفَاتِهَا، فَكَانَ أَوَّلُ مَا أَعْطَانَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْحِقَاءَ، ثُمَّ الدِّرْعَ، ثُمَّ الْخِمَارَ، ثُمَّ الْمِلْحَفَةَ، ثُمَّ أُدْرِجَتْ بَعْدُ فِي الثَّوْبِ الْآخَرِ، قَالَتْ: وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسٌ عِنْدَ الْبَابِ مَعَهُ كَفَنُهَا يُنَاوِلُنَاهَا ثَوْبًا ثَوْبًا.
ثَالِثًا. أَدَاءُ صَلَاةِ الْجَنَازَةِ عَلَى الْمَيِّتِ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ (ص) يُصَلِّي عَلَى الْجَنَازَةِ فِي أَغْلَبِ الْأَوْقَاتِ فِي أَمَاكِنَ مُعَيَّنَةٍ خَارِجَ المَسْجِدِ. لَكِنْ إِذَا لَزِمَ الْأَمْرُ فَإِنَّهُ يَجُوزُ أَيْضًا فِي الْمَسْجِدِ. وَقَدْ وَرَدَ فِي الْحَدِيثِ- فَقَالَتْ)عَائِشَة(: وَاللَّهِ لَقَدْ صَلَّى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى ابْنَيْ بَيْضَاءَ فِي الْمَسْجِدِ: سُهَيْلٍ وَأَخِيهِ.
رَابِعًا: حَمْلُ الجَنَازَةِ: كَمَا وَرَدَ وَرَدَ فِي الْحَدِيثِ- قَالَتْ أُمُّ عَطِيَّةَ كُنَّا نُنْهَى عَنِ اتِّبَاعِ الْجَنَائِزِ. وَإِذَا رَكِبَ شَخْصُ سَيَّارَةٍ أَوْ مَرْكَبَةٍ، فَعَلَيْهِ أَنْ يَتَحَرَّكَ إِلَى الْخَلَفِ لَا إلَى الأَمَامِ. وَقَدْ وَرَدَ فِي الْحَدِيثِ- عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، وَأَحْسَبُ أَنَّ أَهْلَ زِيَادٍ أَخْبَرُونِي أَنَّهُ رَفَعَهُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الرَّاكِبُ يَسِيرُ خَلْفَ الْجَنَازَةِ، وَالْمَاشِي يَمْشِي خَلْفَهَا، وَأَمَامَهَا، وَعَنْ يَمِينِهَا، وَعَنْ يَسَارِهَا قَرِيبًا مِنْهَا، وَالسِّقْطُ يُصَلَّى عَلَيْهِ، وَيُدْعَى لِوَالِدَيْهِ بِالْمَغْفِرَةِ وَالرَّحْمَةِ.
خَامِسًا: دَفْنُ اَلْمُتَوَفَّى: وَيَنْبَغِي عَلَى الْجَمِيعِ أَنْ يَدَعُوا لَهُ بِالثَّبَاتِ أَثْنَاءَ تَشْبِيهِ الْمَيِّتِ بَعْدَ الدَّفْنِ، أَيْ الْإِجَابَةِ عَلَى أَسْئِلَةِ مُنْكَرٍ وَنَقِيرٍ. لِأَنَّ النَّبِيَّ (ص) قَالَ: إِسْتَغْفِرُوْا لِأَخِيْكُمْ وَسَلُوا اللهَ لَهُ التَّثْبِيْتَ فَإِنَّهُ اَلْآنَ يُسْأَلُ .
سَادِسًا: قَضَاءُ الوَصِيَّةِ وَالدُّيُونِ عَنْ الْمَيِّتِ: كَمَا فِي َلْحَدِيثُ – حُجِّي عَنْهَا أَرَأَيْتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ أَكُنْتِ قَاضِيَةً؟ اقْضُوا اللهَ، فَاللهُ أَحَقّ بِالْوَفَاءِ.
سَابِعًا: تَوْزِيْعُ المِيْرَاثِ بَيْنَ الْوَرَثَةِ الَّتِي تَرَكَهَا الْمُتَوَفَّى، وَأَخِيْرًا- وُصُولُ الْأَجْرِ لِلْمَيِّتِ: كَمَا جَاءَ فِي الْحَدِيثِ: إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ.
بَارَكَ اللَّهُ لِي وَلَكُمْ فِي الْقُرْآنِ الْعَظِيمِ، وَنَفَعَنِي وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيهِ مِنَ الْايَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيمِ. أَقُولُ قَوْلِي هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيمَ الْجَلِيل، لِيْ وَلَكُمْ وَلِسَائِرِ الْمُسْلِمِينَ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ فَاسْتَغْفِرُوه أَنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
সংকলন, সম্পাদনা, পরিমার্জন ও আরবী তরজমা: ইমরান মাহমুদ (পিএইচডি গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাবি)