সাপ্তাহিক জুমুআর বয়ান। বিষয়: পরকালের যাত্রা: পর্ব- ১ মৃত্যু

ভূমিকা: আল্লামা ইকবাল বলেন, “মৃত্যু অবিনশ্বর জীবনপথের ফজরবেলা”। শেষ বিচারের পর জান্নাত ও জাহান্নামই হচ্ছে শেষ পরিণতি, চূড়ান্ত জীবন ও স্থায়ী ঠিকানা! এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, এই পার্থিব জীবন ছলনাময়, প্রতারণার সামগ্রীমাত্র। পরকালের জীবনই আসল জীবন, প্রকৃত-চিরস্থায়ী জীবন, যদি তারা জানত!- (আনকাবুত : ৬৪)

মৃত্যু এক অনিবার্য সত্য ও মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একটি সংক্ষিপ্ত যাত্রার সমাপ্তি এবং চিরস্থায়ী যাত্রার শুরু। মৃত্যুর পরিচয়, দর্শন, বাস্তবতা ইত্যাদি বিষয়ে নানামুখি আলোচনা ও পর্যালোচনা করা যায়; যা ব্যাপ্তি অসীম। কিন্তু এখানে আমরা মৃত্যুর বাস্তবতা, মৃত্যু যন্ত্রণা ও একজন মুমীনের কী করণীয় তা নিয়ে আলোকপাত করব ইনশাআল্লাহ।

মৃত্যুর পরিচয় ও প্রকৃতি

মৃত্যু জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ:

মৃত্যু জীবনের স্বাভাবিক ও অনিবার্য সমাপ্তি। এটি মানব জীবনের এমন একটি অবস্থা, যা একদিকে জীবনের যাত্রার সমাপ্তি ঘটায় এবং অন্যদিকে জীবনের গভীর অর্থ ও উদ্দেশ্যকে উপলব্ধি করার সুযোগ দেয়।

শরীর থেকে আত্মার বিচ্ছিন্নতা:

ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম, এবং হিন্দুধর্মসহ অনেক ধর্মে বিশ্বাস করা হয়, মৃত্যু হলো পৃথিবী থেকে আত্মার মুক্তি।

বিশেষত ইসলামের বিশ্বাস হলো, মৃত্যুতে আত্মা “বারযাখ” অবস্থায় প্রবেশ করে, যা কেয়ামতের আগ পর্যন্ত একটি মধ্যবর্তী অবস্থা।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি:

মৃত্যু হল শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রমের স্থায়ী সমাপ্তি। চিকিৎসা বিজ্ঞানে মৃত্যুকে দুইভাবে সঙ্গায়ন করা হয়-

  • ক্লিনিক্যাল ডেথ: যখন হৃদস্পন্দন ও শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
  • বায়োলজিক্যাল ডেথ: যখন মস্তিষ্কের সমস্ত কার্যক্রম চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।

মৃত্যুর বাস্তবতা

পবিত্র কুরআন ও হাদীসের আলোকে মৃত্যুর বাস্তবতা তুলে ধরা হলো।

প্রাণ আছে মানেই মৃত্যু আছে: সৃষ্টিজগতের কোন প্রাণী মৃত্যু থেকে রেহাই পাবেনা। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,

كُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ

প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে (আলে ইমরান: ১৮৫) অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

اَیۡنَ مَا تَكُوۡنُوۡا یُدۡرِكۡكُّمُ الۡمَوۡتُ وَ لَوۡ كُنۡتُمۡ فِیۡ بُرُوۡجٍ مُّشَیَّدَۃٍ ؕ

তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদেরকে গ্রাস করবেই, যদিও তোমরা সুউচ্চ সুদৃঢ় দূর্গ মধ্যে অবস্থান কর। (নিসা: ৭৮)

মৃত্যুর সময় প্রাণীর অজানা ও আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত: যার মৃত্যু যেই মুহূর্তে লেখা আছে ঠিক সেই মুহূর্তেই মৃত্যুকে গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা বলেন,

اِذَا جَآءَ اَجَلُهُمۡ فَلَا یَسۡتَاۡخِرُوۡنَ سَاعَۃً وَّ لَا یَسۡتَقۡدِمُوۡنَ 

সেই নির্ধারিত সময় যখন এসে যায় তাদের সময়, তখন এক মুহূর্ত পিছাতে পারে না এবং এগোতেও পারে না। (ইউনুস: ৪৯) এই আয়াতে সমর্থনে অন্যত্র আল্লাহ তা’আলা বলেন,

هُوَ الَّذِیۡ خَلَقَكُمۡ مِّنۡ طِیۡنٍ ثُمَّ قَضٰۤی اَجَلًا ؕ وَ اَجَلٌ مُّسَمًّی عِنۡدَهٗ ثُمَّ اَنۡتُمۡ تَمۡتَرُوۡنَ 

তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন কাদা মাটি থেকে তারপর নির্ধারণ করেছেন একটি সময়, আর একমাত্র তাঁরই (আল্লাহর) জানা আছে এই নির্দিষ্ট সময়কাল। কিন্তু (এই অনিবার্য বিষয়টি নিয়েও) তোমরা সন্দেহ কর। (আন’আম: ২) অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَ لَنۡ یُّؤَخِّرَ اللّٰهُ نَفۡسًا اِذَا جَآءَ اَجَلُهَا ؕ وَ اللّٰهُ خَبِیۡرٌۢ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ

আল্লাহ কাউকে কক্ষনো অবকাশ দেন না যখন তার (মৃত্যুর) নির্ধারিত সময় এসে যায়। তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ পুরোপুরি খবর রাখেন। (মুনাফিকুন: ১১) অন্যত্র আছে-

وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ كِتَابًا مُّؤَجَّلًا

‘‘কোনো প্রাণীই আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মরতে পারে না। মৃত্যুর সময় তো লেখা আছে’’। (সূরা আলে-ইমরান: ১৪৫) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূল সা. বলেন,

‏ إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا ثُمَّ يَكُونُ فِي ذَلِكَ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يَكُونُ فِي ذَلِكَ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يُرْسَلُ الْمَلَكُ فَيَنْفُخُ فِيهِ الرُّوحَ وَيُؤْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ بِكَتْبِ رِزْقِهِ وَأَجَلِهِ وَعَمَلِهِ وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيدٌ

তোমাদের প্রত্যেকের শুক্ৰকীট তার মায়ের গর্ভে চল্লিশ দিন একত্রিত করা হয়। তারপর হুবহু চল্লিশ দিন জমাট রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়। তারপর হুবহু চল্লিশ দিনে তা একটি মাংস টুকরায় পরিণত হয়। তারপর আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতাকে প্রেরণ করা হয়। সে তাতে রূহ ফুকে দেয়। আর তাকে চারটি বিষয় লিপিবদ্ধ করার আদেশ করা হয়। রিযক, মৃত্যুক্ষণ, কর্ম, দুর্ভাগা কিংবা সৌভাগ্যবান। (মুসলিম: ২৬৪৩) অন্যহাদীসে এসেছে-নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী উম্মে হাবীবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা একবার বললেন,

«اللَّهُمَّ أَمْتِعْنِي بِزَوْجِي رَسُولِ اللَّهِ، وَبِأَبِي أَبِي سُفْيَانَ، وَبِأَخِي مُعَاوِيَةَ، قَالَ: فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَدْ سَأَلَتِ اللَّهَ لِآجَالٍ مَضْرُوبَةٍ، وَأَيَّامٍ مَعْدُودَةٍ، وَأَرْزَاقٍ مَقْسُومَةٍ، لَنْ يُعَجِّلَ شَيْئًا قَبْلَ أَجَلِهِ، وَلَنْ يُؤَخِّرَ شَيْئًا عَنْ أَجَلِهِ، وَلَوْ كُنْتِ سَأَلْتِ اللَّهَ أَنْ يُعِيذَكِ مِنْ عَذَابٍ فِي النَّارِ وَعَذَابٍ فِي الْقَبْرَِكانَ خَيْرًا وَأَفْضَلَ

হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আমার স্বামী আল্লাহর রসূল, আমার পিতা আবু সুফিয়ান এবং আমার ভাই মুআবীয়ার সাথে দীর্ঘায়ু দান করো। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কেবল আল্লাহর কাছে নির্ধারিত সময়সীমাগুলো, নির্দিষ্ট দিনসমূহ এবং বণ্টিত রিযিকসমূহই প্রার্থনা করেছো। আল্লাহ তা‘আলা নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে কোনো সৃষ্টিরই মৃত্যু দান করবেন না এবং তার জন্য নির্ধারিত সময়ের পরেও মৃত্যু দিবেন না। এর পরিবর্তে তুমি যদি আল্লাহর কাছে এ প্রার্থনা করতে যে, তিনি যেন তোমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচান এবং কবরের আযাব হতে মুক্তি দেন, তাহলে এটাই তোমার জন্য ভালো ও উত্তম হতো’’। (মুসলিম: ২৬৬৩)

মৃত্যুর স্থান প্রাণীর অজানা ও আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত: যার মৃত্যু যে স্থানে নির্ধারিত তাকে সে স্থানেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হবে। কুরআনে এসেছে-

وَ مَا تَدۡرِیۡ نَفۡسٌۢ بِاَیِّ اَرۡضٍ تَمُوۡتُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ 

কোন আত্মা জানে না কোন্ স্থানে সে মারা যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত। (লোকমান: ৩৪) হাদীসে এসেছে-

عن أبي عزة الهذلي رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله وسلم: «إِذَا أَرَادَ اللهُ قَبْضَ عَبْدِ بِأَرْضٍ جَعَلَ لَهُ بِهَا حَاجَةً».

আবূ ‘ইয্যা আল-হুযালী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে কোথাও মৃত্যু দান করতে চান তখন সেখানে তার জন্য কোন প্রয়োজন সৃষ্টি করেন।”(তিরমিজি:২১৪৭)

পরকালীন যাত্রার অত্যন্ত কঠিন ও প্রথম পরীক্ষা- মৃত্যু

মৃত্যুর যন্ত্রণা অত্যন্ত কঠিন যা নেককার কিংবা পাপীষ্ঠ সবার জন্যই কঠিন:

মুমিন ও কাফির, নেককার কিংবা গুনাহগার উভয় শ্রেণির মানুষের মৃত্যুতেই কষ্ট হতে পারে। স্বয়ং রাসূল সা. এর ইন্তেকালের পূর্বে রাসূলের অবস্থা হাদীস থেকে যা পাওয়া যায়; তাতে স্পষ্টত প্রতিয়মান হয়, মৃত্যু অন্তন্য কঠিন পরীক্ষা। হাদীসে এসেছে-

أَنَّ عَائِشَةَ كَانَتْ تَقُولُ إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ بَيْنَ يَدَيْهِ رَكْوَةٌ أَوْ عُلْبَةٌ فِيهَا مَاءٌ يَشُكُّ عُمَرُ فَجَعَلَ يُدْخِلُ يَدَيْهِ فِي الْمَاءِ فَيَمْسَحُ بِهِمَا وَجْهَهُ وَيَقُولُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ إِنَّ لِلْمَوْتِ سَكَرَاتٍ ثُمَّ نَصَبَ يَدَهُ فَجَعَلَ يَقُولُ فِي الرَّفِيقِ الأَعْلَى حَتَّى قُبِضَ وَمَالَتْ يَدُهُ .

’আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পূর্বে তাঁর সামনে চামড়ার অথবা কাঠের একপাত্রে কিছু পানি রাখা ছিল। তিনি তাঁর হাত ঐ পানির মধ্যে ঢুকিয়ে দিতেন। এরপর নিজ চেহারা দু’ হাত দ্বারা মাসহ(মাসেহ) করছিলেন আর বলতেন ’লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ঃ নিশ্চয়ই মৃত্যুর অনেক যন্ত্রণা। এরপর দু’হাত তুলে বলতে লাগলেনঃ হে আল্লাহ আমাকে মহান বন্ধুর সঙ্গে মিলিত করুন। এ অবস্থাতেই তার (জান) কবয করা হলো। আর তাঁর হাত দু’টো এলিয়ে পড়ল। (বুখারি: ৬৫১০)

পবিত্র কুরআনেও মৃত্যুর যন্ত্রণার ব্যাপারে একাধিক বক্তব্য রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَ جَآءَتۡ سَكۡرَۃُ الۡمَوۡتِ بِالۡحَقِّ ؕ ذٰلِكَ مَا كُنۡتَ مِنۡهُ تَحِیۡدُ

মৃত্যুযন্ত্রণা অবশ্যই আসবে। এটা হতেই তোমরা অব্যাহিত চেয়ে আসছ। (ক্বফ: ১৯) অন্যত্র আছে-

فَلَوۡ لَاۤ اِذَا بَلَغَتِ الۡحُلۡقُوۡمَ-  – وَ اَنۡتُمۡ حِیۡنَئِذٍ تَنۡظُرُوۡنَ

যখন প্রাণ এসে যায় কণ্ঠনালীতে। তখন তোমরা (অসহায়ের ন্যায়) কেবল চেয়ে থাক। (ওয়াকিয়াহ: ৮৩- ৮৪) অন্যত্র আছে-

 كَلَّاۤ اِذَا بَلَغَتِ التَّرَاقِیَ – وَ قِیۡلَ مَنۡ ٜ رَاقٍ – وَّ ظَنَّ اَنَّهُ الۡفِرَاقُ –  وَ الۡتَفَّتِ السَّاقُ بِالسَّاقِ

কখনই না, যখন প্রাণ কণ্ঠাগত হবে। আর বলা হবে, ‘কে তাকে বাঁচাবে’? সে (অর্থাৎ মুমূর্ষু ব্যক্তি) মনে করবে যে, (দুনিয়া হতে) বিদায়ের ক্ষণ এসে গেছে। আর জড়িয়ে যাবে এক পায়ের নলা আরেক পায়ের নলার সাথে। (কিয়ামাহ: ২৬- ৩০) সালাফদের বর্ণনায় মৃত্যুযন্ত্রণার ব্যাপারে আরো ভয়ানক বক্তব্য রয়েছে-

হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, মালাকুল মাউতের থাবা এক হাজার তরবারির আঘাতের চেয়েও কঠিন কষ্টদায়ক।’ (শরহুস সুদুর : ২০)। হজরত শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, ‘করাত দিয়ে চিড়লে বা কাঁচি দিয়ে চামড়া ছিললে কিংবা কাউকে তপ্ত পানির পাতিলায় নিক্ষেপ করলেও সে পরিমাণ কষ্ট বোধ হবে না যে পরিমাণ কষ্ট মৃত্যুর সময় বোধ হবে।’ (ইয়াইইয়াউ উলুমিদ্দিন : ৪/৩৯৪)। হযরত ওমর (রা.) হযরত কাবকে (রা.) বলেছিলেন, আমাকে মৃত্যুর অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলুন। তখন হযরত কাব (রা.) বলেছিলেন, ‘মৃত্যু হলো কাঁটাদার গাছের মতো। কাঁটাযুক্ত সে গাছটি যখন মানুষের পেটে ঢোকানোর পর তার প্রতিটি কাঁটা শিরায় শিরায় লেগে যায়। তখন একজন শক্তিশালী মানুষ যদি গাছটি ধরে জোরে টেনে বের করার চেষ্টা করে ওই মুহূর্তে শিরায় শিরায় বিদ্ধ হওয়া কাঁটার আঘাতের কষ্ট মানুষটি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করে। অনুরূপভাবে মানুষের মৃত্যুকালে মৃত্যুপথযাত্রীর কাছেও মনে হয় যেন, তার শরীরের গোশতগুলো যেন একটি কাঁটার সঙ্গে বেরিয়ে আসছে। সে মৃত্যুযন্ত্রণা মানুষ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করে থাকে।’ (শারহুস সুন্নাহ)

উপরোক্ত কুরআন ও হাদীসের বক্তব্যগুলো মুমিন ও কাফির উভয় শ্রেণির মৃত্যুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হতে পারে। মৃত্যু প্রত্যেক মানুষের জন্যই বড় পরীক্ষা।

কাফির ও আল্লাহর দুশমনের কষ্টকর মৃত্যুর ব্যাপারে বিশেষ বক্তব্য: সাধারণভাবে মৃত্যু সবার জন্যই কঠিন পরীক্ষা হলেও কাফির ও জালিমদের মৃত্যু যন্ত্রণার বিবরণ কুরআনে বিশেষভাবে এসেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَ لَوۡ تَرٰۤی اِذِ الظّٰلِمُوۡنَ فِیۡ غَمَرٰتِ الۡمَوۡتِ وَ الۡمَلٰٓئِكَۃُ بَاسِطُوۡۤا اَیۡدِیۡهِمۡ ۚ اَخۡرِجُوۡۤا اَنۡفُسَكُمۡ ؕ اَلۡیَوۡمَ تُجۡزَوۡنَ عَذَابَ الۡهُوۡنِ بِمَا كُنۡتُمۡ تَقُوۡلُوۡنَ عَلَی اللّٰهِ غَیۡرَ الۡحَقِّ وَ كُنۡتُمۡ عَنۡ اٰیٰتِهٖ تَسۡتَكۡبِرُوۡنَ

হায়! যদি তুমি ঐ যালিমদেরকে দেখতে পেতে যখন তারা মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকবে, আর ফেরেশতারা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলবে, তোমাদের জানগুলোকে বের করে দাও, আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর আযাব দেয়া হবে যেহেতু তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে এমন কথা বলতে যা প্রকৃত সত্য নয় আর তাঁর নিদর্শনগুলোর ব্যাপারে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করতে। (আন’আম: ৯৩)

মৃত্যু সবার জন্য কঠিন হলেও মুমিনের মৃত্যু যন্ত্রণা মুমিনের গুনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ:  উপরোক্ত কুরআন ও হাদীসের বর্ণনা থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি মৃত্যু যন্ত্রণা সবার জন্যই হতে পারে তবে হাদীসে মুমিনের মৃত্যু যন্ত্রণাকে মুমিনের গুনাহ মাফ ও মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদীসে এসেছে-

أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَلَيْهَا وَعِنْدَهَا حَمِيمٌ لَهَا يَخْنُقُهُ الْمَوْتُ فَلَمَّا رَأَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مَا بِهَا قَالَ لَهَا لَا تَبْتَئِسِي عَلَى حَمِيمِكِ فَإِنَّ ذَلِكَ مِنْ حَسَنَاتِهِ

রাসুলুল্লাহ (সা.) আয়েশা (রা.)-এর কাছে উপস্থিত হন। তখন তাঁর এক নিকটতম প্রতিবেশী মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছিল। নবী (সা.) তাকে চিন্তিত দেখে বলেন, ‘তোমার প্রতিবেশীর কারণে তুমি চিন্তিত হয়ো না। কেননা এটা সৎকর্মগুলোর অন্তর্ভুক্ত।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৪৫১)

এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, মুমিনের মৃত্যুযন্ত্রণা তার মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ যখন কোনো মুমিনের জন্য কোনো মর্যাদার স্তর নির্ধারণ করেন এবং নিজ আমল দ্বারা যদি তা অর্জন করতে না পারে, তখন আল্লাহ তাঁর শরীর বা তাঁর সম্পদ অথবা তাঁর সন্তানদের বিপদগ্রস্ত করেন। অতঃপর মুমিন ধৈর্যধারণ করার ফলে সে পূর্বনির্ধারিত মর্যাদার স্তরে পৌঁছে যায়।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩০৯০)

বিপরীতে কাফের মৃত্যুযন্ত্রণার সাথে সাথে আরো ভয়ংকর কঠিন শাস্তির দুঃসংবাদ শুনতে থাকে। কুরআনে এসেছে-

وَ لَوۡ تَرٰۤی اِذۡ یَتَوَفَّی الَّذِیۡنَ كَفَرُوا ۙ الۡمَلٰٓئِكَۃُ یَضۡرِبُوۡنَ وُجُوۡهَهُمۡ وَ اَدۡبَارَهُمۡ ۚ وَ ذُوۡقُوۡا عَذَابَ الۡحَرِیۡقِ

আর যদি তুমি দেখতে, যখন ফেরেশতা কাফিরদের প্রাণ হরণ করছিল, তাদের চেহারায় ও পশ্চাতে আঘাত করে, আর (বলছিল) ‘তোমরা জ্বলন্ত আগুনের আযাব আস্বাদন কর’। (আনফাল: ৫০)

শহীদের মৃত্যুতে সবচেয়ে কম কষ্ট হয়: শহীদেরা শ্রেষ্ঠ মানব। শহীদের মর্যাদা পর্বে আমরা হাদীসের মাধ্যমে জেনেছি, স্বয়ং আল্লাহ রাসূল নিজে বারবার শহীদ হতে চেয়েছেন। মৃত্যুর ব্যাপারেও তাদের বিশেষ সম্মান রয়েছে। তাদের মৃত্যু সবচেয়ে আরামদায়কভাবে সম্পন্ন হয়। হাদীসে এসেছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ مَا يَجِدُ الشَّهِيدُ مَسَّ الْقَتْلِ إِلاَّ كَمَا يَجِدُ أَحَدُكُمْ مَسَّ الْقَرْصَةِ

আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শহীদ ব্যক্তি নিহত হওয়ার সময় কোন কষ্টই অনুভব করে না, শুধু এতটুকু যে, তোমাদের কাউকে পিঁপড়ায় দংশন করলে সে যতটকু ব্যথা অনুভব করে। (ইবনে মাজাহ: ২৮০২)

উত্তম মৃত্যুর কিছু নমুনা: মৃত্যুর পরীক্ষা সবার জন্যই অত্যন্ত কঠিন ও জটিল। আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন কোন ব্যক্তির মৃত্যু কেমন হয়েছে। মৃত্যু পরবর্তী জীবনে কে সফল আর কে ব্যর্থ তা একমাত্র জানেন আল্লাহ তা’আলা। তারপরেও কুরআন ও হাদীসের আলোকে কিছু উত্তম মৃত্যুর ধরণ উল্লেখ করা হলো। যেমন:

ক. মৃত্যুর সময় কপাল মৃদু ঘর্মাক্ত হওয়া : মুমিনের উত্তম মৃত্যুর আরেকটি নিদর্শন হ’ল, মৃত্যুর সময় যন্ত্রণার প্রচন্ডতায় মুমিনের কপাল মৃদুভাবে ঘর্মাক্ত হ’তে পারে। রাসূল (সা.) বলেন,

 المُؤْمِنُ يَمُوتُ بِعَرَقِ الجَبِينِ

‘মুমিন মৃত্যুবরণ করে কপালে মৃদু ঘাম নিয়ে’। (তিরমিযী: ৯৮২) 

খ.  জুম‘আর রাত্রি বা দিবসেমৃত্যুবরণ করা : মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন হ’ল জুম‘আর দিন। এ দিনের যেকোন সময় মৃত্যুরবণ করা উত্তম মৃত্যুর অন্যতম নিদর্শন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَمُوتُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَوْ لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ إِلاَّ وَقَاهُ اللهُ فِتْنَةَ الْقَبْرِ

‘কোন মুসলমান যদি জুম‘আর দিবসে অথবা রাত্রিতে মারা যায়, তাহ’লে আল্লাহ তাকে কবরের ফিৎনা হ’তে রক্ষা করেন’। (তিরমিযী: ১০৭৪)

গ. হজ্জের সফরে মৃত্যুবরণ করা : আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি আরাফার ময়দানে উকূফ করা অবস্থায় হঠাৎ তার বাহন উটনী হ’তে আছড়ে পড়ল। এতে তাঁর ঘাড় মটকে গেল এবং সে মারা গেল। তখন রাসূল (সা.) বললেন

اَغْسِلُوهُ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ وَكَفِّنُوهُ فِى ثَوْبَيْنِ وَلاَ تُحَنِّطُوهُ وَلاَ تُخَمِّرُوا رَأْسَهُ، فَإِنَّهُ يُبْعَثُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُلَبِّيًا- ‘

পানিতে বরই পাতা মিশিয়ে তাকে গোসল দাও এবং দু’টি কাপড়ে তার কাফন পরিধান করাও। তবে তাকে সুগন্ধি লাগবে না এবং তার মস্তক আবৃত করবে না। কেননা সে ক্বিয়ামতের দিন তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবে। (বুখারী: ১৮৫১)

ঘ. মৃত্যুর সময় কালেমা শাহাদতের স্বীকৃতি : রাসূল (সা.) বলেন,

مَنْ كَانَ آخِرُ كَلاَمِهِ لَآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ-

‘যার শেষ বাক্য হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। (আবুদাঊদ: ৩১১৬)

মৃত্যুর স্মরণ ও মৃত্যু পরবর্তী প্রস্তুতির গুরুত্ব

মৃত্যুর ব্যাপারে বেশি বেশি স্মরণ ও মৃত্যু পরবর্তী প্রস্তুতির গুরুত্বের ব্যাপারে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের অসংখ্য স্থানে উৎসাহ ও সতর্ক করা হয়েছে। যেন মানুষ মৃত্যু পরবর্তী চিরস্থায়ী জীবনের ব্যাপারে গাফেল না হয়।

জীবিত অবস্থায় মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করা: হাদীসে এসেছে –

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ ‏

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেন, দুনিয়ার স্বাদকে বিলুপ্তকারী মৃত্যুকে তোমরা বেশি বেশি স্মরণ করো (তিরমিজি: ২৩০৭)।

মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া:  আল্লাহ তা’আলা বলেন,

 وَ اَنۡفِقُوۡا مِنۡ مَّا رَزَقۡنٰكُمۡ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّاۡتِیَ اَحَدَكُمُ الۡمَوۡتُ فَیَقُوۡلَ رَبِّ لَوۡ لَاۤ اَخَّرۡتَنِیۡۤ اِلٰۤی اَجَلٍ قَرِیۡبٍ ۙ فَاَصَّدَّقَ وَ اَكُنۡ مِّنَ الصّٰلِحِیۡنَ

যে রিযক আমি তোমাদেরকে দিয়েছি তাত্থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় কর তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে। নচেৎ (মৃত্যু এসে গেলে) সে বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে আরো কিছুকালের অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদাক্বাহ করতাম আর সৎকর্মশীলদের মধ্যে শামিল হয়ে যেতাম।’ (মুনাফিকুন: ১০)

মৃত্যুর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে কালিমার তালকিন দেওয়া: হাদীসে এসেছে-

لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، فَإِنَّ نَفْسَ الْمُؤْمِنِ تَخْرُجُ رَشْحًا، وَنَفْسَ الْكَافِرِ تَخْرُجُ مِنْ شِدْقِهِ كَمَا تَخْرُجُ نَفْسُ الْحِمَارِ

‘তোমরা তোমাদের মুমূর্ষ ব্যক্তিদেরকে লা ইলাহা ইলাল্লাহ শিক্ষা দাও। কেননা মুমিনের আত্মা বের হয় ঘাম বের হওয়ার ন্যায় (সহজভাবে)। আর কাফেরের আত্মা বের হয় মুখ দিয়ে যেমন গাধার আত্মা বের হয় (কঠিনভাবে)’। (ছহীহুল জামে‘:৫১৪৯)

সূরা ইয়াসিন পাঠ করা: হাদীসে এসেছে-

اقْرَءُوا (يس) عَلَى مَوْتَاكُمْ.

মৃত্যুপথযাত্রী যারা তাদের পাশে থেকে তোমরা সূরা ইয়াসীন পাঠ করো।   (আবু দাউদ: ৩১২৩)

উপরোক্ত বয়ানের আরবী অনুবাদ (সংক্ষিপ্ত ও মূলবক্তব্য)

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ ، أَمَّا بُعْدُ . . . . . . . . . . . . . . .

أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامُ

مَوْضُوعُنَا اليَوْمِ: الرِّحْلَةُ إِلَى الْآخِرَةِ: الْحَلْقَةُ الأُولَى – اَلْمَوْتُ

 اَلْمَوْتَ جُزْءٌ لَا يَتَجَزَّأُ مِنَ الْحَيَاةِ: اَلْمَوْتُ هُوَ النِّهَايَةُ الطَّبِيعِيَّةُ وَالْحَتْمِيَّةُ لِلْحَيَاةِ. إِنَّهَا حَالَةٌ مِنْ حَيَاةِ الْإِنْسَانِ، تُنْهِي مِنْ نَاحِيَةِ رِحْلَةِ الْحَيَاةِ، وَمِنْ نَاحِيَةٍ أُخْرَى تُعْطِي الْفُرْصَةُ لِإِدْرَاكِ الْمَعْنَى الْأَعْمَقِ وَالْهَدَفِ مِنَ الْحَيَاةِ. حَقِيْقَةُ الْمَوْتِ

أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامُ الآنَ أُلْقِي أَمَامَكُمْ  حَقِيقَةَ الْمَوْتِ فِي ضَوْءِ الْقُرْآنِ الْكَرِيمِ وَالْحَدِيثِ الشَّرِيفِ. وَكَمَا أَنَّ هُنَاكَ حَيَاةُ فَهُنَاكَ مَوْتٌ: يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: كُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ وقَالَ أَيضًا: اَیۡنَ مَا تَكُوۡنُوۡا یُدۡرِكۡكُّمُ الۡمَوۡتُ وَ لَوۡ كُنۡتُمۡ فِیۡ بُرُوۡجٍ مُّشَیَّدَۃٍ ؕ

 وَقْتُ الْمَوْتِ غَيْرُ مَعْرُوفٍ لِلْحَيَوَانِ وَيُقَدِّرُهُ اللَّهُ فَقَطْ: يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى – اِذَا جَآءَ اَجَلُهُمۡ فَلَا یَسۡتَاۡخِرُوۡنَ سَاعَۃً وَّ لَا یَسۡتَقۡدِمُوۡنَ  وقَالَ أَيضًا:  هُوَ الَّذِیۡ خَلَقَكُمۡ مِّنۡ طِیۡنٍ ثُمَّ قَضٰۤی اَجَلًا ؕ وَ اَجَلٌ مُّسَمًّی عِنۡدَهٗ ثُمَّ اَنۡتُمۡ تَمۡتَرُوۡنَ .

وَمَكَانُ الْمَوْتِ غَيْرُ مَعْرُوفٍ لِلْمَخْلُوقِ وَيُقَدِّرُهُ اللَّهُ أَيْضًا: يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى  وَ مَا تَدۡرِیۡ نَفۡسٌۢ بِاَیِّ اَرۡضٍ تَمُوۡتُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ .

أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامُ، أَنَّ عَذَابَ الْمَوْتِ شَدِيدٌ جِدًّا، وَهُوَ شَدِيدٌ عَلَى الْجَمِيعِ، بَرًّا وَفَاجِرًا: جَاءَ فِي الْحَدِيثِ: أَنَّ عَائِشَةَ كَانَتْ تَقُولُ إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ بَيْنَ يَدَيْهِ رَكْوَةٌ أَوْ عُلْبَةٌ فِيهَا مَاءٌ يَشُكُّ عُمَرُ فَجَعَلَ يُدْخِلُ يَدَيْهِ فِي الْمَاءِ فَيَمْسَحُ بِهِمَا وَجْهَهُ وَيَقُولُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ إِنَّ لِلْمَوْتِ سَكَرَاتٍ ثُمَّ نَصَبَ يَدَهُ فَجَعَلَ يَقُولُ فِي الرَّفِيقِ الأَعْلَى حَتَّى قُبِضَ وَمَالَتْ يَدُهُ .

وَلَكِنْ بَيَانٌ خَاصٍّ عَنِ الْمَوْتِ الْأَلِيمِ لِلْكُفَّارِ وَأَعْدَاءِ اللَّهِ: يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى  – وَ لَوۡ تَرٰۤی اِذِ الظّٰلِمُوۡنَ فِیۡ غَمَرٰتِ الۡمَوۡتِ وَ الۡمَلٰٓئِكَۃُ بَاسِطُوۡۤا اَیۡدِیۡهِمۡ ۚ اَخۡرِجُوۡۤا اَنۡفُسَكُمۡ ؕ اَلۡیَوۡمَ تُجۡزَوۡنَ عَذَابَ الۡهُوۡنِ بِمَا كُنۡتُمۡ تَقُوۡلُوۡنَ عَلَی اللّٰهِ غَیۡرَ الۡحَقِّ وَ كُنۡتُمۡ عَنۡ اٰیٰتِهٖ تَسۡتَكۡبِرُوۡنَ.

أَيُّهَا الْحَاضِرُونَ الكِرَامُ وَفِي الخِتَامِ الآنَ أُلْقِي أَمَامَكُمْ  ، أَهَمِّيَّةَ ذِكْرَى المَوْتِ وَالِاسْتِعْدَادِ لِمَا بَعْدَ المَوْتِ: كَمَا جَاءَ فِي الْحَدِيثِ:   عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ ‏”

 اَلِاسْتِعْدَادُ لِلْحَيَاةِ بَعْدَ الْمَوْتِ قَبْلَ الْمَوْتِ: يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى  – وَ اَنۡفِقُوۡا مِنۡ مَّا رَزَقۡنٰكُمۡ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّاۡتِیَ اَحَدَكُمُ الۡمَوۡتُ فَیَقُوۡلَ رَبِّ لَوۡ لَاۤ اَخَّرۡتَنِیۡۤ اِلٰۤی اَجَلٍ قَرِیۡبٍ ۙ فَاَصَّدَّقَ وَ اَكُنۡ مِّنَ الصّٰلِحِیۡنَ

تَلْقِيْنُ الكَلِمَةِ قَبْلَ الْمَوْتِ: كَمَا جَاءَ فِي الْحَدِيثِ: لَقِّنُوا مَوْتَاكُمْ لَآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، فَإِنَّ نَفْسَ الْمُؤْمِنِ تَخْرُجُ رَشْحًا، وَنَفْسَ الْكَافِرِ تَخْرُجُ مِنْ شِدْقِهِ كَمَا تَخْرُجُ نَفْسُ الْحِمَارِ.

بَارَكَ اللَّهُ لِي وَلَكُمْ فِي الْقُرْآنِ الْعَظِيمِ، وَنَفَعَنِي وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيهِ مِنَ الْايَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيمِ. أَقُولُ قَوْلِي هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيمَ الْجَلِيل، لِيْ وَلَكُمْ وَلِسَائِرِ الْمُسْلِمِينَ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ فَاسْتَغْفِرُوه أَنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.

সংকলন, সম্পাদনা, পরিমার্জন ও আরবী তরজমা: ইমরান মাহমুদ (পিএইচডি গবেষক, আরবী বিভাগ, ঢাবি)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More To Explore

Scroll to Top