প্রস্তুতকারক: মুনতাসির মাশরুর শোয়াইব; শিক্ষার্থী; মুগদা মেডিকেল কলেজ
ভিটামিন-ডি মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভিটামিন। চর্বিতে দ্রবণীয় এই ভিটামিন দেহের হাড় গঠনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। এই প্রবন্ধের মাধ্যমে ভিটামিন-ডি এর বিভিন্ন উৎস, কাজ, অভাবজনিত সমস্যাসমূহ এবং ভিটামিন-ডি সম্পর্কিত কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
মানবদেহে দ্রবণীয়তার ওপর ভিত্তি করে দুই ধরনের ভিটামিন পাওয়া যায়। ১. চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন (ভিটামিন -এ, ডি, ই এবং কে) এবং ২. পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন (ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স ও সি)। ভিটামিন-ডি চর্বিতে দ্রবণীয় একটি ভিটামিন। প্রকৃতিতে উদ্ভিদে ও প্রাণিতে ভিটামিন ডি দুটি আলাদা রূপে পাওয়া যায়। উদ্ভিদদেহে Ergocalciferol বা Vitamin-D2 হিসাবে এবং প্রাণিদেহে Cholecalciferol বা Vitamin-D3 হিসাবে এই ভিটামিন পাওয়া যায়। উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন ডি মানবদেহে ভালোভাবে শোষিত না হওয়ার কারণে এটি মানবদেহের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ।
ভিটামিন-ডি এর উৎস:
বাহ্যিক উৎস→ প্রাণিজ উৎস যেমন: মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, যকৃৎ, দুগ্ধজাত খাবার থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
অভ্যন্তরীণ উৎস→ দেহের অভ্যন্তরে ত্বকের নিচে থাকা 7-dehydrocholesterol এর মাধ্যমে দেহের অভ্যন্তরেই ভিটামিন ডি প্রস্তুত হয়। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাবে এই 7-dehydrocholesterol ত্বকের অভ্যন্তরে cholecalciferol এ রূপান্তরিত হয়, যা ভিটামিন ডি এর সক্রিয় রূপ।
ভিটামিন ডি এর বিপাক (দেহের অভ্যন্তরে ভিটামিন ডি এর রূপান্তর):
খাদ্য উৎস থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন ডি৩ এবং দেহাভ্যন্তরে তৈরী হওয়া ভিটামিন ডি৩ যকৃতে এসে প্রথমে 25-hydroxycholecalciferol বা calcidiol এ রূপান্তরিত হয়। এটি পরবর্তীতে বৃক্কে এসে এনজাইমের প্রভাবে 1,25-dihydroxycholecalciferol বা calcitriol বা সক্রিয় ভিটামিন ডি-তে রূপান্তরিত হয়।
ভিটামিন ডি এর কাজের ধারা:
রক্তে সঞ্চারণরত সক্রিয় ভিটামিন ডি টার্গেট কোষের সাইটোপ্লাজম থেকে কোষের নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করে। সেখানে থাকা ভিটামিন ডি এর বিশেষ রিসেপ্টরের সাথে বন্ধন গঠন করে যা নিউক্লিয়াসের ডিএনএ এর সাথে যুক্ত হয়। নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরে এটি আরএনএ তৈরী করে। তৈরীকৃত আরএনএগুলি নিউক্লিয়াস থেকে বের হয়ে এসে সাইটোপ্লাজমে নির্দিষ্ট প্রোটিন তৈরী করে এবং প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করে।
ভিটামিন ডি এর কাজ:
১. রক্তে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের পরিমাণ বৃদ্ধি করা
২. শরীরে প্যারাথাইরয়েড হরমোনের কাজে সহযোগিতা করা
৩. অস্থিকোষের বৃদ্ধি এবং অস্থিতে মিনারেল সঞ্চয় করা
৪. দেহের অস্থিসমূহের আকৃতি রক্ষা করা
অভাবজনিত রোগ:
ভিটামিন ডি এর অভাবে দেহের অস্থিতে মিনারেল সঞ্চয় কমে যায়। এর ফলে শিশুদের রিকেটস এবং বয়স্কদের অস্টিওম্যালেসিয়া নামক রোগ হয়। এতে শিশুদের অস্থি বেঁকে যাওয়া, অস্থি ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া এবং বয়স্কদের অস্থি নরম হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়।
দৈনিক চাহিদা:
একজন মানুষে দৈনিক ১৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন হয়।
প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা:
সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি থাকে – এটি সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা। সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি থাকে না। তবে এটি ঠিক যে সূর্যের আলোতে থাকলে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাবে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরী হয়। এ বিষয়ে উপরে আলোচনা করা হয়েছে।